কুতুবদিয়ার পথে আমরা কজন

Please log in or register to like posts.
পোস্ট

আরমান ভাইয়ের দিকে দেখছি আর ভাবছি কোথা থেকে শুরু করা যায় ।ঘটনার বর্ননা কিভাবে শুরু করবো এটা ভাবতে ভাবতেই চলে গেলো  বিশ মিনিট । আরমান ভাই ল্যাপটপের স্ক্রীনে বিশেষ নজর দিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। সেটা দেখে আমার গল্পের শুরুটা আর শুরু করতে পারছিনা। আরমান ভাই এর তীব্র মনের সংযোগ দেখে আমার মনের সংযোগ বাড়িয়ে  লেখাটা শুরু করেই দিলাম। আর ভেবে কাজ নেই ,ভাবছি লিখে ফেলি মনের মত করে , যা আসে মনে তাই দিয়ে। শুরুটা ছিল একটা বিয়ের নিমন্ত্রনের মাধ্যমে। রোজার ঈদের দিন কয়েক পরের কথা সম্ভবত ।কৈশোর কাল পার করছি তখন, সাল টা ঠিক মনে নেই, যে সময়ের কথা বলছি তখন বেজায় যাযাবর ছিলাম । দিন , মাস , আর সনের তোয়াক্কা করতামনা। ইহাব ভাই বলছিল, একটা বিয়ের নিমন্ত্রন আছে কুতুবদিয়া  দ্বিপে । শুনা মাত্র আমি রাজি, কারন তখন দূর পাল্লার যাত্রা মানেই আমার জন্যে ঈদের চাঁদের নামান্তর ছিলো।

এখন ঈদের বাড়ি তে এত মানুষ ফেলে কিভাবে যাই ! দায়িত্বজ্ঞান নয়, লোকলজ্জার ভয় ছিলো।  শেষ পর্যন্ত আম্মুকে বললাম কথাটা, কাওকে যেন না বলে। আর কেও না জানলেও সমস্যা ছিলোনা কিন্তু দূরে যাওয়ার আগে মাকে বলে না গেলে আমার ভ্রমন টাই পানসে ঠেকত । একটা সময় ঠিক করে আমি আর ইহাব ভাই রওয়ানা দিলাম। নৌপথে যেতে হবে  কুতুবদিয়া দ্বীপে সে আনন্দে পথের ক্লান্তি দূরে সরে গেলো। কুদুবদিয়া যাওয়ার একটি পথ হলো চট্টগ্রামের অভয় মিত্র ঘাট থেকে মাল বাহী ট্রলার। জনসাধারনের সুবিধার্থে কুতুবদিয়া যাওয়ার অন্য কয়েকটি যাত্রার পথের কথাও বলে রাখি, যদিও তা আমাদের যাত্রার বর্ননার অংশ নয়।  যদি চট্টগ্রাম শহর থেকে যেতে চান তাহলে চলে যান নতুন ব্রিজ ফেলে মইজ্জারটেক। এই মইজ্জার টেক আবার দুর্ঘটনার জন্য কুখ্যাত। যাই হোক মইজ্জার টেক থেকে সিএন জি করে চলে যেতে পারেন পেকুয়া পর্যন্ত । বাঁশখালির পাহাড় ঘেরা জনপদ ধরে আপনি পৌছে যাবেন পেকুয়া। পেকুয়া থেকে জীপে করে যেতে পারবেন মগনামা ঘাটে ।  এরপর মগনামা ঘাট থেকে বোট বা লঞ্চে করে পৌছে যাবেন কুতুবদিয়া তিরিশ থেকে পঁয়ত্রিশ মিনিটের মাথায়। আর হ্যা ঘাটে চাইলে খাবারের কাজ সেরে নিতে পারেন।

এখন আমার আর ইহাব ভাইয়ের কথায় ফিরে আসলে মন্দ হয়না। পথের বিচার অনেক হলো এবার ঘটনার যাচাই হোক।  আমাদের সাথে যাওয়ার জন্য আরেকজন আগেই ঘাটে অপেক্ষা করছিলো। আমি আর ইহাব ভাই যাত্রা শুরু করেছিলাম, বাঁশখালির, কালীপুর গ্রামের, ছফিরের দোকান নামক স্থান থেকে। আমরা ঘাট থেকে লঞ্চে করে যাত্রা শুরু করি । লঞ্চের উপরে সেকি হাওয়া , যে না চরেছে তাকে আমি লিখে মনে হয়না বুঝাতে পারবো। সেকি উদ্দাম নৃত্য লঞ্চের ,  পানির গা জুড়ে , সেই রোমাঞ্চ তাঁদের কিভাবে বোঝাই যারা এখনো সে রোমাঞ্চ গায়ে মাখেনি। লঞ্চের উপর দাঁড়িয়ে খাওয়া দাওয়া, হাওয়া সবি চলছিলো। হঠাৎ মনে হয় একাত তাঁর পরি ওকাত , ওহ সে কি ভীষন আবেগ মাখা অনুভূতি । মনে হচ্ছিলো এমন সময় কেও গেয়ে উঠেছিলো এই পথ যদি শেষ না হয় তবে কেমন হত তুমি বলতো। কেমন হত আমি জানিনা, তবে সব পথেরি শেষ থাকে, আর পথ শেষ না হলেও পথিকের জীবনের তো একটা শেষ থাকেই।   ছুটছে স্টীমার হাওয়ার বেগে। নানা রকম মানুষ তাতে। কেও পান চিবুচ্ছে , কেও সিগারের ধোয়ায় পরমানন্দে দূষিত করছে বাতাস। আমরা লঞ্চের শেষ মাথায় দাঁড়িয়ে পানির দিকে তাকিয়ে বেশ ভাবুক হয়ে পড়েছিলাম । কয়েকজন কে দেখলাম ভয়ে লঞ্চের গাত্রে যেনো মিশে যাবে, বুঝলাম সাঁতরে পার হতে পারবেনা তাই লঞ্চের উপরেই ভরসা, আর ভরসার লঞ্চ যখন একাত -ওকাত দোল খায় তাঁর প্রান পাখি নিশ্চই খাঁচা ছেড়ে খনিকের তরে হলেও পালায়।    এভাবে দেখতে দেখতে সময় ফুরিয়ে এলো। দেখা গেলো চর। কেও ডাক দিয়ে উঠলো “ অই চর দেহা যায় রে , গাট্টি বোচকা ল “ । আমাদের গাট্টি তেমন ছিলোনা , যাচ্ছি নিমন্ত্রন রক্ষা করতে, পকেটের মাল মশলাই সম্বল।  সবাই নামার পরে আমরা নামলাম।

একি কোথায় এলাম, মনে হলো কি দেখার কথা কি দেখছি! পৌছে গেলাম শেষ পর্যন্ত কুতুবদিয়া । কুতুবদিয়া পৌছেছিলাম বেশ সহজে, সেখানে ছিলাম এক রাত। সে রাতের কাহিনী নিয়েই কিন্তু গল্পের পূর্নতা।  গল্পের বাকি অংশটা আপনাদের সাথে বসে, শুনাতে পারলেই ভালো হত। সেই সুযোগ তো নেই, তাই লিখেই সে কাহিনী জানাবো আপনাদের, জানাবো কুতুবদিয়ার রাত্রির গল্প । রাতের গর্ভে আমরা কজনের গল্প, নিঝুম রাতে এক বিয়ের গল্প। জীবনের সেই গল্পের বাকিটা  শীঘ্রই লিখে ফেলবো ভাবছি, শীরোনাম টা লিখেই ফেলা যায় ।

আল্লাহর রহমতে বেঁচে থাকলে বাকি গল্পটা বলব “ রাত্রি গর্ভে কুতুবদিয়া দর্শন ও কিছু বিভ্রাট “   এই গল্পে। সেই পর্যন্ত ভালো থাকুন সবাই।শীরোনাম টা কিছুটা বদলেছি।

গল্পের বাকি অংশ পড়তে ক্লিক করুন নিচের লিংকে –

লিংক :    বিয়ের নিমন্ত্রন রক্ষায় কুতুবদিয়া ভ্রমন ও একটি অন্যরকম দীর্ঘ-রাতের গল্প

ফেসবুক কমেন্টস

Reactions

0
0
0
0
0
0
Already reacted for this post.

প্রতিক্রিয়া