একজন কালজয়ী বাঙ্গালী চিত্রশিল্পীর জীবনী আজ তুলে ধরব আপনাদের সামনে । বিংশ শতাব্দীর বাঙ্গালী চিত্রশিল্পিদের কথা বলতে গেলেই সামনে চলে আসে একজন কিংবদন্তীর নাম । দুর্ভিক্ষ নিয়ে আঁকা তাঁর চিত্রমালা আজো নির্মল আবেশে মিশে আছে বাঙ্গালীর সাথে। শুধু কি তিনি একেই গেলেন? না একি সাথে বাংলার চিত্র-শিল্প কে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার জন্যে তাঁর ছিলো অনন্য প্রচেষ্টা, তাই তো তিনি শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন।
তাঁর জীবনী মানেই তাঁর তাঁর চিত্র-কলার কথা, একজন চিত্রশিল্পীর কথা ,একজন কালজয়ী বাঙ্গালীর কথা। তাঁর চিত্র কর্মের কথা বলতে গেলেই চলে আসবে দুর্ভিক্ষ-চিত্রমালা, সংগ্রাম , সাঁওতাল রমনী ইত্যাদি । সাথে রয়েছে ঝড়, কাক, বিদ্রোহীর মত কালজয়ী চিত্রকর্ম। এই কালজয়ী চিত্রশিল্পীর জন্ম ময়মনসিংহ জেলার, কিশোরগঞ্জ মহকুমার কেন্দুয়ায়। তাঁর বাবা পেশায় ছিলেন পুলিশের দারোগা। নাম- তমিজউদ্দিন আহমেদ। মা জয়নাবুন্নেছা ছিলেন গৃহিনী। ৯ ভাই বোনের মধ্যে সবার বড় ছিলেন । শিক্ষা জীবনের হাতেখড়ি পরিবারের ভেতরেই। ভোরেই বোঝা যায় দিনটি কেমন যাবে! আর শিশু জয়নুল যে হাতে ছবি আঁকার যশ নিয়ে জন্মেছেন সেটা বোঝা গিয়েছিলো তাঁর ছোটবেলাতেই। তখন থেকেই ছবি আঁকতে পছন্দ করতেন। ছোট্ট জয়নুল পাখির বাসা, ফুল-ফল এঁকে মা-বাবা কে দেখাতেন। তখন থেকেই তাঁর চিত্রকলার প্রতি ছিলো আগ্রহ। তা না হলে সেই ছোট্ট কালে কেউ বন্ধুদের দের সাথে পালিয়ে গভর্নমেন্টস স্কুল অব আর্টস দেখতে কলকাতা চলে যায়? যে ছেলে একদিন কালক্রমে হয়ে উঠবে কালজয়ী চিত্রশিল্পী সাধারন লেখাপড়ায় তাঁর মন কেনই বা বসবে! নাহ, জয়নুলের আর ধরাবাঁধা পড়া লেখায় মন বসেনা। তাঁর মন পড়ে আছে কলকাতার গভর্নমেন্টস স্কুল অব আর্টস এ!
সামনে মেট্রিক পরীক্ষা,এযুগে যাকে আমরা বলি এস,এস সি। তাতে কি জয়নুলের আর মন টিকেনা। মায়ের অনুমতি সাপেক্ষে সব ছেড়ে,পরীক্ষা বাদ দিয়ে চলে যান কলকাতা। জয়নুল আবেদিনের মা, ছেলের আগ্রহ দেখে বিক্রি করে দেন নিজের গলার হার ,ছেলেকে সাহায্য করেন তাঁর স্বপ্নের গভর্নমেন্টস স্কুল অব আর্টস এ ভর্তি হতে। পাঁচ বছর, ১৯৩৩ থেকে ১৯৩৮ জয়নুল আবেদিন সেখানে পড়ালেখা চালিয়ে যান। পড়ছিলেন ড্রইং এন্ড পেইন্টিং ডিপার্ট্মেন্টে, সেখান থেকেই জয়নুল আবেদিন প্রথম শ্রেনীতে প্রথম হয়ে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন। জয়নুল আবেদিনের শৈশবের স্বপ্ন আলোর মুখ দেখে, কিন্তু হয়ত জয়নুল আবেদিন নিজেও জানতেন না, তাঁর সামনে আরো সুন্দরতম পথের এই মাত্র শুরু হলো!