আমাদের বাস টা সাই সাই করে অন্য বাস গুলোকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাচ্ছে। আমি জানালার পাশের সীটে বসে ছিলাম, আর আমার পাশের সীট খালি ছিল। বৃষ্টি শুরু হলো খুব।একটা স্পটে বাস দাড়ালো। কেও উঠলো। আমি তাকাইনি,তখনো বাইরে তাকিয়ে বৃষ্টি দেখছি। এমন সময় কেও বলে উঠলো,
“একটু জায়গাটা ছাড়বেন ভাইয়া”
“না, আমি জানালার পাশেই বসি সব সময়”
“ও” বলে মানুষ টা বসে গেলো খালি সীট টায়।
নিজের থেকেই কথা বলছে প্রানীটা,
“ভাইয়া কি করেন”
“কিছু করিনা”
“কিছু তো করেন”
“নাহ, আমি কিছুই করিনা”
“এই কিছু না করাটাও একটা কিছু কিন্তু”
আমি চুপচাপ বসে আছি, প্রানীটার মুখের ভাষা আমি কেড়ে নিতে পারছিলাম না।এর মধ্যে জানলাম তার নাম রিপা। পুরা নাম জিজ্ঞেস করার সাহস পাইনাই, জিজ্ঞেস করলে হয়তো পুরো ইতিহাস বলে বসবে।
আমি বেশ বুঝতে পারছি রিপা প্রানীটা এক পর্যায়ে, ভাব জমিয়ে আমার জায়গা দখলের চেষ্টা করবে।আমি তাই মুখে কুলুপ আটলাম।কিন্তু রিপার মুখে কুলুপ আটে কার সাধ্যি! এক পর্যায়ে বলল, বলুন তো আমার প্রিয় ফুলের কালার কি?
আমি বললাম” জানিনা”
সে বলল “অনুমান করেন”
“অনুমান করার ক্ষমতা আমার কম”
“তবুও করেন”
” হলুদ”
“আয় হায় ঠিক বলেছেন, একশ ভাগ সত্য”
“আন্দাজ এ বললাম”
“বাহ আপনার আন্দাজ তো খুব সেরকম “
আমি তখন চিৎকার করিয়া কাঁদিতে চাহিয়া করিতে পারিনাই চিৎকার টাইপ অবস্থা। প্রানীটার কথার লাইন ট্রেনের বগির মত লম্বা আর পেচানো। আচানক বলে উঠলো,
“জানেন ভাই খুব শখ ছিল বৃষ্টির সময় বাসে, জানালার পাশে বসে যাবো, বাসে “
“হুম”
“আর অন্য কেও হলে বলতাম না, আপনি ভাই টাইপের তাই চিন্তা করছি আরকি, আপনি আমাকে বসার সুযোগ দিতেই পারেন”
“হুম, আসেন বসেন জানালার পাশের সীটে”
সীট না ছাড়া পর্যন্ত কান শেষ করে ফেলবে এই ভয়ে সীট ছেড়ে দিলাম। মেয়েটা সীটে বসেই বলল,
“কিছু মনে করবেন না ভাইয়া আপনি একটু বোকা টাইপের”
“অ, ভালো”
“এটা মোটেই ভালো হতে পারেনা”
“হুম খারাপ”
বাস চলে, এর চাইতে বেশি বেগে চলে প্রানীটার মধুর বচন। একবার বলতে চাইলাম, আপু আমার না বমি আসছে, করে দিব,ভয়ে হয়ত সীট ছেড়ে দিবে, আবার আমাকেই না সীট ছাড়া করে, এই ভয়ে কিছু বললাম না।এক পর্যায়ে আবার বলল তার পছন্দের ফুল হলুদ, কট কটে হলুদ রঙের। আহ! মানুষ ফুল নিয়ে এত কথা কেমনে বলে। মেয়েটা আবার বলে উঠলো,
“জানেন আমার হলুদ ফুল দেখলেই খুশু খুশি লাগে,আপনার কেমন লাগে?”
“আমি হতাশ হয়ে বললাম, হলুদ ফুল দেখলেই আমার ক্ষিদা লাগে”
এক সময় হলুদ ফুল প্রেমি প্রানী ঘুমিয়ে পড়লো, এদিকে আমার নেমে যাওয়ার সময় হয়ে এলো। ঠিক তখন,একটা ছোট মেয়ে উঠলো বাসে, অনেক গুলো হলুদ ফুল নিয়ে, পাশের প্রানীটা কে ডাকতে ইচ্ছে হলো,আবার কথা শুরু করে দিবে এই ভয়ে ডাকলাম না। ফুল আনা মেয়েটা নেমে যাচ্ছিল।কি জানি মনে হলো ডাক দিলাম,
“এই ফুল”
“জি ভাইয়া,ফুল নিবেন”
“হুম, এখানে কত টাকার আছে?
“১৫০ টাকার”
“দাও, সব দাও”
রিপা প্রানীটা তখন ও ঘুম। মনে হয় হলুদ ফুলের স্বপ্ন দেখে ঘুমের মধ্যেও। আমি আস্তে করে কাশলাম, প্রানীটা উঠে গেলে, আমার একপদ,দুই পদ, বিপদ সব হবে।আরো কিছুক্ষন পরে নামার সময় ডাকা যাবে প্রানীটাকে,এখন ডাকলে আবার ঝিক ঝিক করে আবার কথার ট্রেন ছুটবে।
শেষে নেমে যাওয়ার সময় হলে, আমি হলুদ ফুল নিয়ে উঠে দাড়ালাম।রিপা কে ডাক দিলাম,
“এই যে, শুনছেন”
“রিপা, আড়মোড়া ভেঙে উঠলো”
“ধরেন আপনার হলুদ ফুল”
রিপা ফুল গুলো নিয়ে একটা ধন্যবাদ ও দিলোনা, শুধু বলল এত্ত গুলো ফুল কেন?
আমি বললাম, আপনার আরো দূর যেতে হবে “আধেক হলুদ ফুল খাবেন, আর আধেক ফুল দেখে দেখে যাবেন!”
প্রানীটা কি জানি বলতে চাইলো।আমি বাধা দিয়ে বললাম “কি বললেন ঠিক বুঝি ননাই, আর ভাই শুনেন কিছু বলার দরকার নাই, ফুল ভালো বাসেন তাই ফুল দিলাম, পছন্দ না হলে ফেলে দিয়েন”
রিপা বলল ” আমি কখন বললাম পছন্দ হয়নাই,অনেক পছন্দ হয়েছে, আর জানেন…..”
আমি তাকে আবার থামিয়ে দিলাম,নামতে নামতে হাসতে হাসতে বললাম, আজকে আমার কান শেষ, আপনার কথার স্পিডে, তাই হয়ত ভুল শুনেছি”
রিপা হয়ত এখন,
হা করে তাকিয়ে আছে, কি অসভ্য ছেলে, সে কথা একটু বেশি বলে, তাই বলে বাসের সবার সামনে বলতে হয়!রিপা হলুদ ফুল গুলো দেখেই আবার খুশি হয়ে উঠবে হয়ত,আমার কথা বেমালুম ভুলে যাবে, নাকের একটু দূরে রেখে আদিম সুগন্ধ নিবে ফুলের।
তারপর আমার খালি সীট টায় কেও বসবে,আর রিপা শুরু করবে, দেখেন কত গুলো ফুল, কি হয়েছে জানেন…………