আমার মা আমার কাছে এক মহিয়সী নারী ।তিনি যে সংসার ই গুছিয়ে রেখেছিলেন শুধু তাই , নয় বরঞ্চ মানুষ করেছিলে দশ টি মেয়ে কে। তিনি দশ টি মেয়ের মা। আমার মাকে দেখে বা আমাদের ঘরের ভিতরে ঢুকে কেও বুঝতে পারবেনা, এই ঘরে দশ টি বাচ্চা বা মেয়ে আছে। কারন ঘর এত সুন্দর আর পরিপাটি থাকতো যা ৫০ বছর আগে কেও কল্পনা করতে পারতনা। সে সময় ঘরের আসবাব আর ঘর গোছানোতে ছিল আধুনিকতার ছোয়া।
আমার বয়স বর্তমানে ৫০ বছর। ৫০ বছর আগেও ঘরে এমন সব জিনিস ছিল যা অনেকেই এ যুগে এসে দেখেছে। আব্বা এমন সব মজাদার খাবার আনত যা এযুগের পাওয়া দুষ্প্রাপ্য,এই যুগেই আধুনিকি। এক কথায় বলতে গেলে সব দিক থেকেই আব্বা আমদের আদরে – যতনে রাখতেন। আব্বা আজ বেঁচে নেই । মহাল আল্লাহ রাব্ববুল আলামীন আমার বাবা কে সহ সকল মুললমান মুমিন মৃতদের বেহেশত নসিব করুন,এই দোয়া করি আল্লাহর কাছে।
আবার ফিরে আসছি আমার মায়ের কথায়। আমাদের ঘরে সেই ছোট কাল থেকেই দেখছি ফ্লোর পাকা । আব্বা ছিলেন প্রথম শ্রেনীর কনট্রাকটর । আব্বা ছিলেন অনেক বিলাসী মানুষ। হাসি খুশি আর সৌখিন । সবসময় হাসিখুশি থাকতেন। হঠাৎ মনে চাইল তিনি ডুপ্লেক্স ঘর করবেন। অমনি সামনের উঠনে একটি বড় রুম আর ভেতরে শিড়ির মাধ্যমে উপরে আরেকটি বড় রুম বানালেন। ভাগ্যের খেলা, ঘর শক্ত পোক্ত হওয়ার আগেই তুমুল ঝড়ে সে ঘর ভেঙ্গে গেলো । আমাদের সে কি কান্না । শখের ডুপ্লেক্স পানিতে ভেসে গেলো। আব্বার কোন দুঃখ নেই।
আম্মার ঘর গছানো এত নিপুন ছিল যে ,
অনেকেই এসে বলত , “ আপনাদের কি আজকে মেহমান আসবনে?’
“কেন?” আম্মা অবাক হয়ে বলতেন।
কারন আসলে তখন গ্রামে এত সুন্দর করে কেও ঘর গোছাতনা।
আমি বাগান থেকে আস্ত সুপারি গাছের চারা ,ফুলের গাছ, মানি অল্যান্ট দিয়ে খুব সুন্দর এবং আধুনিক সাজে সাজাতাম আমদের ছোট্ট ডড়ইং রুম টাকে। আমার ঘর সাজানো দেখে চাচা জেঠারা ঈদের আগের দিন বলে রাখতেন যেন ঈদের দিন তাদের ঘর সাজিয়ে দেই।
চাচা জেঠারা চাচি জেঠিমাদের কে বলতেন “দেখ- সংসার , সন্তান কিভাব চালাতে হয়। রুমীর মার কাছে শিখে নাও”
আমার বড় আপার নাম রুমী তাই আম্মাকে সবাই রুমির মা নামেই ডাকে। এজন্য আমাদের অনেক মন খারাপ হত।
আব্বাকে বলতাম,” শেলীর মা ডাকেনা কেন?”
আব্বা বলতেন” বড় সন্তানের নাম ধরেই ডাকা হয়”
আমাদের বাড়ির নামে নামকরন করা হয় কালীপুর এজহারুল হক উচ্চ বিদ্যালয়ের । আমার বাবার বাড়ীর নাম হলো, এজ হারুল হক চৌধুরী বাড়ী।পেছনে একটা পুকুর আছে। সামনে আছে একটা বড় উঠোন । আর আরো সামনে বড় পুকুর। সে পুকুরে গ্রামের ছোট্ট ছেলেমেয়েদের সে কি দাপাদাপি। চলত মাছ ধরার মহা উৎসব । বড় জাল দিয়ে ঘেরাও করে মাছ ধরা হত। অনেকেই বড়শি দিয়ে মাছ ধরতো । আমরা বড় পুকুরে নামতাম না, তবে বাড়ীর পেছনের পুকুরে আমাদের জন্যে জল ঘাটের ব্যবস্থা ছিলো,যেটা ছিলো পর্দার আচ্ছাদনে মোড়ানো। তবে ছোট ছোট বাচ্চাদের পুকুরে দাপাদাপি দেখতে ভালই লাগতো। পুকুরে যেদিন মাছ ধরত , সেদিন চারদিকে হিড়িক পরে যেত।
কার চেয়ে কে বড় মাছ ধরে এই প্রতিযোগিতা চলত। বড়শির টোপ মাছে গেলার সাথে সাথেই দে টান । সে এক টান টান অবস্থা। আবার বড় জাল দিয়ে মাছ ধরার সময় মানুষ ভিড় করে থাকতো দেখার জন্যে। একটা সময় ছিলো তখন, পুকুর ছিলো মাছে ভর্তি। অনেক সময় চাল ধুতে পুকুরে গেলে, ঝাকায় মাছ উঠে আসত অনেক, সে মাছ দিয়ে একবেলা খাওয়া হয়ে যেত । এখন পুকুর ও নেই, সেই মাছ ও নেই।
এভাবেই দিন যেতে থাকে, একদিন কলেজে ভর্তি হলাম। কলেজের প্রথম দিন নিয়ে একটা কবিতা লিখেছিলাম।কবিতাটির নাম ছিল “কলেজের করিডোরে” । অনেকেই মনে করেছিল, কাওকে নিয়ে নিদৃষ্ট ভাবে এটা লেখা হয়েছিল। কিন্তু এক্মাত্র সর্বজ্ঞানী আল্লাহ জানে এটা নিদৃষ্ট কাওকে নিয়ে লেখা নয়। কবি মন থাকলে যখন যা মনে আসে তা নিয়ে ,যা ইচ্ছে লেখা হয়। এটা অবশ্যই আল্লাহ প্রদত্ত। কারন বাস্তবে সবকিছুই আল্লাহর দান। সকল প্রশংশা একমাত্র আল্লাহর। যাই হোক কলেজ জীবনের কথা লিখতে গিয়ে মনে পড়লো, আমি/আমরা সবাই বেশ ভালো, sports man ছিলাম। সব বোন ছিল, গান-কবিতা-নাটক আর খেলাধুলায় বেশ ভালো। সে কথায় আরেক দিন আসব।