ঘরের মেয়ে ঘরেই থাকুক

Please log in or register to like posts.
পোস্ট

অন্য আটদশটি দিনের মত করে আজও মাথায় কাপড় দিয়ে শালিন পোশাক পড়ে বের হলাম। বাসা থেকে কিছুদূর হেটে যাওয়ার পর একটা রিকশা নিলাম ভাগ্য খারাপ বলে গন্তব্যে যাওয়ার আগেই রিকসার চাকা পানচার হয়। 

ভাড়া মিটিয়ে একটা বাসে উঠি তারপর সামনে থেকে এক লোক উঠে আমার পাশে বসলো। লোকটা কাকে যেন ম্যাসেজ করছিলো চোখ পড়তে দেখলাম

” নীল জামা আর সাদা ওড়না। আমার পাশে দি বসি আছে। সময় বুঝে এটাক করমু। তুই রেডি থাকিছ” 

যা দেখলাম আমার হাত পা ঠান্ডা হতে আর এক সেকেন্ড সময় নিলো না। আমি বুঝতে পারছিলাম না ঠিক কি করবো কারণ যেটুকু বর্ণনা দেখলাম তাতে স্পষ্ট যে আমায় নিয়ে কোন প্লান চলছে। লোকটাকে ভালোভাবে একবার দেখে নিলাম। 

সুযোগ বুঝে ছবি তুলার চেষ্টা করলাম কিন্তু তুলতে পারিনি। আরো কিছুদূর  যাওয়ার পর এক শপিং মলের সামনে নেমে গেলাম। 

দ্রুত হেটে এক দোকানে কিছু শাড়ির আড়াল থেকে লোকটাকে নজরবন্দি করলাম। লোকটা এই মুহুর্তে ঠিক আমার সামনে কাকে যেন ফোন দিয়ে বললো 

“আমি তো হারাই ফালাইলাম। মাইয়াডা কই গেছে খুঁজে পাইতেছি না। স্যার তো আজইজকা মাইরা ফেলবো আমারে। তুই তাড়াতাড়ি আয় মাইয়াডারে খুইজতে অইবো” 

আমি চুপচাপ করে কথাগুলো রেকর্ডিং করলাম। এবারও জানতে পারলাম না ওরা কেন আমার পিছু নিলো। আমি ভাবতে ভাবতে খেয়ালও করিনি আমার সামনে থেকে কেউ শাড়ি নিয়ে গেছে তাই জন্যে আমায় দেখে ফেলে লোকটি পিছন থেকে কাপড় দিয়ে আমার চোখ বেধে ফেলে আর বাধতে বাধতে বলছিলো

“নিজেরে বহুত চালাক ভাবস না হারামজাদি! খাড়া আইজকা তোরে চেটেপুটে খাবো। আর মাত্র কয়েক ঘন্টা স্যার একবার আসুক…..”

আমিও কিছু না বলে চুপচাপ হেটে যাচ্ছিলাম তাদের কথা মতন। কারণ আমার এখনো জানা হয়নি এত কিছুর পিছনের কারণ কি! যখন দেখলাম বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে আমি আর দেরি না করে দুজনের অবস্থান বুঝে ডান হাতে একজনের চোখে আর বাম পায়ে আরেকজনের নিতম্বে আঘাত করি খুব দ্রুত।

 উপস্থিত এই বুদ্ধিকে কাজে লাগানো আমি মার্শাল আর্ট ক্লাস থেকে শিখেছিলাম। 

যাইহোক, ওরা যতক্ষণ আহ উহ করতে থাকলো আমিও দেরি না করে নিচে থেকে প্রথম জনের ফোন আর পিস্তল ব্যাগে ঢুকিয়ে একটা বোরকার দোকানে ঢুকে গেলাম। ব্যাগ থেকে ফোন বের করে কিছু কন্টাক্ট নাম্বার আর ম্যাসেজ দেখলাম।নতুন একটা বোরকার টাকা মিটিয়ে দিয়ে শান্তভাবে বের হয়ে গেলাম।

 আবারও একটা দোকান থেকে ওদের উপর নজর রাখলাম। মিনিট দশেক এর মধ্যে ওরা নিজেদের সামলে নিয়ে ফোন খুঁজতে লাগলো। তারপর ভিড়ের একজন থেকে ফোন নিয়ে কাকে যেন ফোন দিয়ে জানালো

 ‎

“বস আমি রফিক। মাইয়াডা বহুত চালাক। আমাদের মাইরা পালাইছে আমার ফোনও নিয়া নিছে। এখন কি করমু বস?” 

মুখের ভঙ্গি দেখে যা বুঝলাম বসের এক গাধা ঝারি খেয়েছে।  

 এত কিছুর মধ্যে যেটা খেয়াল করলাম আমায় চোখ বেধে নিয়ে যাওয়া থেকে ওদের আহত করা অব্দি এতগুলো মানুষ সব তামাশা দেখছিলো তারমধ্যে কেও ছবি তুলা নিয়ে ব্যস্ত হয়তো সোসালমিডিয়াতে পোস্ট করে লাইক আর কমেন্টদারী হবে। একটা মেয়েকে হেল্প করার ম্যান্টালিটি তাদের কারো ছিলো না বা সামান্য হাতে পিস্তল দেখে ভয়ে সবাই মুর্তি।

 আমি আর কিছু না বলে সেখান থেকে বেড়িয়ে একটা রিকসা নিলাম। রিকসায় উঠে তানিমকে ফোন দিলাম আর এইমুহুর্তে দেখা করতে বললাম। তানিম আমার বয়ফ্রেন্ড। আমি খুব সুন্দরী না তাও তানিম আমায় ভালোবাসে। তানিম বেশ বড়লোক ঘরের একমাত্র সন্তান। বাবা মা বেশ প্রভাবশালী বলতে হয়। ওদের বাড়ির কেওই আমায় ভালো চোখে দেখে না তার কারণ হলো আমি দেখতে সাদা চামড়াসম্পুর্ণ নই, আমার বাবার টাকা নেই। 

কিন্তু আমি গর্বিত স্বরে বলতে পারি আমার বাবা একজন সৎ ব্যাক্তি,ইমানদার ব্যাক্তি। যে কোনদিন কারো হক খায়নি কিংবা কারো সম্পদে হাত বাড়ায়নি। বাবাকে বিশ্বস্ত একজন বলে গণ্যমান্য করা হয় ত্রিএলাকা মিলে। সেই সুত্রে আমাদেরও নাম ডাক। কিন্তু তাও তানিমদের বরাবর হবে না কখনো।

 তাও তানিম আমায় পাগলের মত ভালোবাসে। আমি ওর লাইফে আর থাকবো না বললে সে পাগলের মত হয়ে যায়। মাঝেমাঝে আমারি খারাপ লাগে ছেলেটা প্রতিনিয়ত আমাকে তার পরিবারের একজন করে নিতে সর্বক্ষণ লড়াই করে যাচ্ছে পরিবারেরি সাথে। আমার সাথে সে যায় না। He deserve better then me! 

 ‎

 ‎তানিমকে  একটা রেষ্টুরেন্টে দেখা করতে বললাম। আমি আসার আগেই সে এসে বসে ছিলো। আমায় বোরকা পড়ে সে চিনতে পারলো না। আমিও বেশ মজা নিচ্ছিলাম তাই সোজা এসে ওর সামনের চেয়ারে বসে পড়লাম।

 ‎

 ‎– কে আপনি? এখানে কেন বসেছেন? আমার গার্লফ্রেন্ড আসবে। ও এসে দেখলে আমার সাথে রাগ করবে আপনি প্লিজ উঠেন। (তানিম)

 ‎– করলে করবে আমার কি?(আমি)

 ‎– করলে করবে মানে? আপনি উঠেন বলছি(তানিম)

 ‎– উঠবো না কি করবেন? (আমি)

 ‎– কি করবো মানে? এটা আমি বুকড করেছি। আমার গার্লফ্রেন্ড আমাকে জরুলি কাজে দেখা করতে বলছে। ও এসে আপনাকে আমার সাথে দেখলে কষ্ট পাবে। আপনি উঠেন প্লিজ! ফর গড সেইক( তানিম)

 ‎– উঠবো না আমি(আমি)

 ‎– আচ্ছা তাহলে আমিই চলে যাচ্ছি অন্য টেবিলে। (তানিম)

 ‎– এই দাড়াও দাড়াও!( আমি)

 ‎ও উঠে যেতেই ওর হাত ধরে থামিয়ে দিলাম। অন্যহাতে বোরকার মুখোশ খুলে দিলাম।

 ‎– তুলনা তুমি! বোরকা কেন? আগে তো কখনো পড়নি!(তানিম)

 ‎– বলছি সব বলছি আগে একটু ঠান্ডা পানি অর্ডার কর প্লিজ? গলা শুকিয়ে আছে।(আমি) 

 ‎– আমি জুস অর্ডার করেছি আগেই। এখনি দিবে। এবার বল কি হয়েছে তোমার?  আমার খুব টেনশন হচ্ছে! প্লিজ আর্লি বলো।(তানিম)

 ‎– কিছু লোক আমার উপর হামলা করেছে। জানি না কারা। তবে আন্দাজ করতে পারছি ওরা কার লোক ছিলো।(আমি)

 ‎– কি বলো? আমায় ফোন দাওনি কেন? আর তোমাকে না বলেছি একা একা বাসা থেকে বের হবে না? (তানিম)

 ‎– তুমি তো ক্যাম্পাসে ছিলে তাই ডিস্টার্ব করিনি।(আমি)

 ‎– ডিস্টার্ব?  এসব তুমি কি বলো তুলনা! তোমার কোথাও লাগেনি তো? তুমি ঠিক আছ তো না?(তানিম)

 ‎– আমি একদম ঠিক আছি। তুমি চিন্তা করিও না তো।(আমি)

 ‎– আচ্ছা এসব কি বাবা করেছে বলে তোমার ধারণা?(তানিম)

 ‎– হুম। (আমি)

 ‎– তারমানে বাবা তোমাকে মেরে ফেলতে চাইছে?(তানিম)

 ‎– হয়তো(আমি)

 ‎– আমি আজি বাবার সাথে আবার কথা বলবো।(তানিম)

 ‎– না তানিম। খবর্দার না। আমার জন্যে তুমি বাবা মার সাথে সম্পর্ক খারাপ করো না। আমি নিজের কাছে ছোট হয়ে যাবো। (আমি)

 ‎– তুমি এত ভালো বাবা কেন বুঝে না আমি তোমাকে ছাড়া বাচবো না। আমি তোমাকে বড্ড বেশি ভালোবাসি। আমাদের ভালোবাসার কাছে টাকাপয়সা বড় নয়। (তানিম)

 ‎– চোখমুখ বন্ধ করে আমি আবারও তানিমকে বললাম। তুমি আমাকে ভুলে যাও তানিম। তোমার পরিবার কখনো আমায় মানবে না। (আমি)

 ‎– তোমার পরিবার তো মানবে। দরকার হয় আমি ঘর জামাই থাকবো। তোমার পরিবার রাখবে তো আমাকে তুলনা? আমি না হয় তাদের ছেলে হয়ে থাকবো। (তানিম)

 ‎– জানি না মানবে কিনা। (আমি)

 ‎– আমি কি বলে দেখবো? (তানিম)

 ‎– এখন? তোমার তো গ্রাজুয়েশন শেষ হয়নি। (আমি)

 ‎– তোমার কি প্রব্লেম হবে আন্ডার গ্রাজুয়েশন করা এক ছেলেকে স্বামী হিসেবে মানতে?(তানিম)

 ‎– না তা হবে কেন? স্বামী হিসেবে তো তোমাকে ভালোবাসার প্রথম দিন থেকেই মেনে নিয়েছিলাম। (আমি)

— তাহলে এটাই কথা রইলো কাল বিকেলে তোমার বাবা বাড়ি ফিরলে আমায় জানাবে আমি আনকেলের সাথে আমাদের কথা বলতে আসবো। যে যা বলবে বলুক আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না। আমার তোমাকে চাই ই চাই।(তানিম)

— আমিও তোমাকে চাই। ফিউচার হাজবেন্ড।(আমি) 

আমার পরিবারের কর্তা আমার বাবাকে বেশ কয়েকবার বুঝানোর পর বাবা রাজি হয়ে ধুমধাম করে আমাদের বিয়ে দেয়। ওর আর আমার পড়াশুনার খরচ বাবাই বহন করে। ওর চাকরির জন্যেও বাবা ওকে তৈরি করে। বিয়ের আগে তানিম তার বাবা মার কাছে আরো একবার বুঝাতে গিয়েছিলো কিন্তু শেষবারের মত ফিরে এলো। 

ওর বাবা ওকে আর ত্রিসীমানায় যেতে বারণ করেছে। ওর চেহারা দেখবে না বলে দিয়েছে। তাই শেষবারের মত বাবা মাকে সালাম করে চলে আসে। আমিও আর জোর করে বলিনি ওকে যেতে। কারণ যতবারি ও যায় এক সমুদ্র কষ্ট বুকে নিয়ে ফিরে আসে। ওর কষ্ট আমার সহ্য হয়না। 

আমার মা বাবা ওকে ঠিকি ছেলের জায়গা জুড়ে দিয়েছে আর ঠিক তেমনি আমার বাবা মাকে ও নিজের বাবা মার চেয়েও বেশি ভালোবাসে। সত্যি বলতে আমার বাবা মা আমায়ই কম ভালোবাসে সারাক্ষণ তানিম তানিম করে।  এদিকে যেতে তানিম ওদিকে যেতে তানিম।

 উঠতে তানিম বসতে তানিম। তুলনা বলতে যেন তাদের কোন মেয়ে কখনো ছিলোই না। মাঝে মাঝে তো আমারই হিংসে হয় আমি কেন এত আদর পাচ্ছি না আমিই তো বাবা মার সন্তান ও তো জামাই মাত্র। তাও ঘর জামাই। 

ফেসবুক কমেন্টস

Reactions

0
0
0
0
0
0
Already reacted for this post.

প্রতিক্রিয়া

মন্তব্য করুন