স্বপ্নের পিকনিক

Please log in or register to like posts.
পোস্ট

দিনটি ছিল ২০১০ সালের ১৩ ফেব্রূয়ারী,

অামি দশম শ্রেণীতে পড়ি।গ্রামের অন্যান স্কুলের মত আমাদের স্কুল থেকেউ প্রতি বছর পিকনিকে নিয়ে যায়।আর পিকনিকের সকল দায়িত্ব  প্রতি বছর দশম শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রীদের উপর  ই বর্তায়। ।সেই হিসেবে দায়ীত্বটা আমাদের উপরেই আসে।ক্লাসের সকলে মিলে কূয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে যাবার সিদ্ধান্ত নিই।আমরা স্যারদেরকে আমাদের সিদ্ধান্ত জানাই।স্যারেরা যাইতে রাজি হয়।এরপর স্কুলের সকল ছাত্র-ছাত্রীদের একটা ক্লাস রুমে বসতে বলা হয়।আমাদের প্রধান শিক্ষক তাদেরকে সিদ্ধান্তটা জানান আর কে কে যাইতে ইচ্ছুক তাদেরকে হাত উঠাতে বলেন।খাতায় তাদের নামের লিস্ট করা হয়।চাঁদা হিসাবে ৬০০ টাকা ও আধা কেজি চাউল ধার্য করা হয়।রান্না করবার জন্য স্কুলের নিকটস্থ বিভিন্ন গাছ থেকে কাঠ সংগ্রহ করা হয়।স্যারের সাথে শহরে গিয়ে একটা বড় বাস ঠিক করা হয়।

স্যারদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৩ই ফেব্রূয়ারী রাত ৯:৩০ টাই আমরা বাসে উঠি।আমাদের বাস অবশ্য সন্ধ্যার আগেই চলে আসে।কিন্তু বুঝতেই তো পারছেন,পিকনিকে যাবার  আগের মুহূর্তটা কতই না বৈচিত্রময় হয়।এক এক জন এক এক ভাবে সেজে এসেছে।সবাইকে অনেক সুন্দর লাগছে।বাস রাত ৯:৩০ টার পরে কূয়াকাটার উদ্দেশ্যে চলতে শুরু করে।

৪২ সিটের গাড়ী হলেও আমরা প্রায় ৬০ জন যায়।আমরা বন্ধুরা সবাই বাসের মাঝের ফাঁকা জায়গাতে বসবার জন্য চেয়ার ও ব্যাঞ্চ বসায়ে নিই।বাসের সামনের সিটগুলোতে স্যার এবং স্যারের স্ত্রীদের কে বসানো হয়।তাদের পরের সিটগুলোতে মেয়েদের এবং বাকী সিটগুলোতে ছোট ভাইদেরকে বসানো হয়।এভাবে পরম উদ্দীপনাই ছুটটে থাকে আমাদের স্বপনের যাত্রা।

প্রথম প্রথম আনান্দ করতে থাকলেও রাত্রি বাড়বার সাথে সাথে চক্ষুদ্বয় যেন ঘুম রাজ্যে পদার্পন  করতে চাই।বাসের প্রায় সকলেই ঘুমায়ে পরেছে।কিন্তু আমার চক্ষুদ্বয়কে আমি অনেক কষ্টে সজাগ রেখেছি।গাড়ীর সামনের দিকে বসাতে গ্লাসের ভিতরে দিয়ে সামনের সব কিছু দেখতে পারছি।রাস্তার আলোক সজ্জিত ছোট-বড় গাড়ী এবং তাদের আলোতে দুপাশের ঝাপসা গাছ-পালা ও বাড়ি-ঘর দেখেই চক্ষুদ্বয়কে সজাগ রাখার চেষ্টা করছি।মাঝে মাঝে কিছু বাজারও দেখছি।বেশির ভাগ বাজারের দোকান গুলো বন্ধ।কিন্তু কিছু দোকানের সামনের আলোকিত বাল্বগুলো বাজারটাকে পরিচিত করার কাজটা করছে।এগুলো দেখতে দেখতে কখন যে গিয়েছি বলতে পারবো না।

হঠাৎ ঘুম ভাঙ্গে কোন বাচ্চার কান্নার আওয়াজে।চোখ মেলে দেখি স্যারের মেয়ে কান্না করছে।স্যার ও ম্যাডাম তাকে ঘুম পাড়ানোর জন্য চেষ্টা করছে।তার কিছুক্ষন পরে অন্য স্যারের মেয়েও কান্না শুরু করল।স্যারের স্ত্রী তো রেগে আগুন।স্যারের দুইটা বাচ্চা।ফলে,স্যার সিট থেকে ওঠে এবং তাদেরকে ভাল করে ঘুমানোর ব্যবস্থা করেন।কি আর করা!চেয়ার থেকে উঠে স্যারকে বসতে দিই।আর আমি ঘুম জড়িত চোখ নিয়ে বাসের সামনের রেলিং ধরে দাঁড়ায়ে থাকি।

বাস রাত ৩:০০ টার দিকে বরিশাল শহরে পৌঁছায়।গাড়ির কি যেন মেরামত  করার জন্য গ্যারেজে রাখে।এই সময়টা সবাই প্রয়োজনীয় কাজ করে নেই।

কিছুক্ষন বিরতির পর আবার বাস চলতে শুরু করে।ফযরের আযানের সময় আমরা প্রথম ফেরীতে উঠি।খুব দ্রুতই উপারে পৌঁছাই।কারণ,নদীটা বেশি প্রশস্থ না।এরপর গাড়ি নিজের গতিতে চলতে থাকে।রাস্তার অবস্থা তেমন একটা ভাল নয়।রাস্তার কারণে গাড়ি নিজের ইচ্ছে মত গতিতে চলতে পারছে না।প্রায় ১ ঘন্টা পর গাড়ি হঠাৎ থেমে গেল।বুঝতে পারলাম না,কেন থেমে গেল!সামনে তাকায়ে দেখি আরও গাড়ি দাঁড়ায়ে আছে।সমনের গাড়ি থেকে কে বলল,ফেরীতে অনেক জ্যাম।কিছুক্ষন পরে চারিদিকে ভোরের আলো ফুটে ওঠে।বাস থেকে নেমে বন্ধুদের সাথে ফেরীর দিকে হাটা শুরু করি।ফেরীর কাছে গিয়ে দেখি,ফেরীটা অনেক ছোট।একত্রে ৪টির বেশি গাড়ি পাড় করতে পারে না।

সকাল ৮:০০ টার পরে দ্বিতীয় ফেরী পাড় হই।এভাবে আরও তিনটা ফেরী পাড় হয়ে প্রায় দুপুর ২:০০ টার দিকে কূয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে পৌঁছায়।এত সময় ভ্রমন করে সবাই ক্লান্ত হয়ে পড়ি।সকল ক্লান্তিকে ভুলে সবাই বাস থেকে নামি।যেহেতু দুপুরের সময়,তাই সকলে  গোসলের উদ্দেশ্যে সমুদ্র পাড়ে যায়।যে যার মত করে গোসল করা শুরু করি।গোসল শেষে বাসে ফিরে আসি।

এদিকে বাবুর্চির রান্না করা শেষ।তাই দেরি না করে কাপুর পাল্টায়ে সবাই খাবারের প্রস্তুতি নিই।বালির উপর পাটি পাড়ি।যেহেতু মানুষের সংখ্যা বেশি,তাই দুই মজলিসে খাবার পরিবেশন করা হয়।সকলের খাওয়া শেষে আমরা খাইতে বসি।খাওয়া শেষে যখন প্লেট পরিষ্কার করব,ঠিক তখন কেউ  যেন বলে উঠল “সূর্য ডুবে গেল” “সূর্য ডুবে গেল”।শুনার সাথে সাথে প্লেট রেখেই দৌঁড় দিই।গিয়ে দেখি সূর্য ডুবু  ডুবু ভাব। কিছুক্ষনের মধ্যে সূর্য তার আপন গতিতে পশ্চিম অাকাশে মিলিয়ে গেল।

সবাইকে বাসে উঠায়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে ফিরে আসি।কিন্তু পথে সেই একই সমস্যাই পরি।প্রথম ফেরীটা রাতে পাড় হতে পারলেও দ্বিতীয় ফেরীতে জ্যামের কারণে সকাল হয়ে যাই।যেহেতু আমরা কূয়াকাটাতে তেমন কিছু দেখতে পারি নাই।তাই,স্যাররা সকলে বরিশাল শহরের একটা মসজিদ দেখতে যাবার সিদ্ধান্ত নেন।সকাল ১০ টার পর আমরা সেখানে পৌঁছাই।বাস থেকে নেমে সবাই কিছু নাস্তা করি।তারপর ঘুরাঘুুরি করি।সব কিছু দেখা শেষে দুপুর পর আবার গাড়িতে উঠি।

ঠিক রাত ৮:০০ টা নাগাদ বাড়িতে এসে পৌঁছাই।এভাবেই শেষ হয় আমাদের স্বপ্নের পিকনিক। 

ফেসবুক কমেন্টস

Reactions

0
0
0
0
0
0
Already reacted for this post.

প্রতিক্রিয়া

মন্তব্য করুন