১২/৬/২০১৭
২৭ রমজানের রাত, ২০১২ ।
এমনি একটা লাইলাতুল কদরের রাত ছিল সেদিনও।
আমি..
কদরের নামাজের পর প্রিয় বন্ধু Naushad Hussain Liton ও Mohammad Tausif সাথে শপিংয়ে ছিলাম। সেহেরীর আগে করে বাসায় আসলাম। হাতে নিয়ে আমার প্রিয় পান্ঞ্জাবীটা। আর তোমার জন্যে জুতা। বাসায় এসে দেখি তোমার সামনে বন্ধ কোরআন, আর হাতে লাগাচ্ছো তোমার সবচেয়ে প্রিয় “মেহেদী”।
আমি বলি, একি!
তুমি বললে তুই জানিস না হাতে মেহেদী দেওয়াটা আমার কত পছন্দের??
এত রাতে মেহেদী দেওয়ার কোন মানে আছে?
আরে গাধা, দিয়ে নিচ্ছি আরকি; পরে যদি সময় না পাই?
তুমি বললে,
খাবার টেবিলে রাখা আছে, যা খেয়ে নে। আমি টেবিলে রাখা সেহেরী খেয়ে বাইরে বের হচ্ছিলাম।
তুমি বললে, এখন আযান দিবে পানি খেয়ে রোজার নিয়ত করে নে। খেলাম তোমার হাতেই।
বললে, যা নামাজ পড়ে আয়; তারপর ঘুমাবি।
ফজরের নামাজ শেষে গেলাম ঘুমাতে।
ঘুমাতে না ঘুমাতে কানে আসতে লাগলো তুমি কেমন জানি করছো বুকে হাত দিয়ে। ঘরে সবার সোরগোল শুনে আমিও চোখ ভাঙ্গা ঘুমে বিচলিত হয়ে গেলাম। কি করবো বুঝে উঠতে পারছিলাম না। তাড়াতাড়ি উঠে তোমাকে নিয়ে ছুটলাম হাসপাতালে। অত ভোরে রিকশাও পেয়ে গেলাম।
যাওয়ার পথে ভাবছি,
তুমি তো কখনো এমন করনি। এত তাড়াহুড়ো, বুকে হঠাত্ ব্যাথা। আমি কেমন যেন ভয় পেয়ে গেলাম তোমার অবস্থা দেখে। রীতিমত হতবাক তোমাকে নিয়ে।
হাসপাতালের ইমারজেন্সি রুমে ঢুকানোর সময়ও আমার হাত শক্ত করে ধরে ছিলে তুমি, যেমনটা ছিলে সারা পথে। ইমারজেন্সি রুমে ঢুকতে বারণ ছিল পুরুষের। স্ট্রেচারে করে তোমাকে রুমে ডুকানোর সময় হাত যখন ছেড়ে দিলে আমার, তখন চোখে ভয় দেখলাম আমি তোমার চোখে।
কয়েক মিনিট পর,
এক নার্স দৌড়তে এসে বলল, “আপনার মা আর নেই”। কথাটি ভালো করে শোনার আগেই আমি ফ্লোরে দপ পড়ে গেলাম। পুরাই অচেতন আমি, কেন যেন নড়তে পারছিলাম না।
কেমন যেন ঘুরছিল সবকিছু চোখের সামনে। কিভাবে সম্ভব? এভাবে চলে যাওয়ার কোন মানে হয় না। হুট করে বলে দিল ওরা, তুমি নাকি নেই আর এই মহাজগতে।
অথচ,
রাতে যখন হাতে মেহেদী দিচ্ছিলে তখনও তোমার চোখটা আমি বুঝিনি। এভাবে ফাঁকি দিয়ে চলে যাবে চিন্তাও করিনি কখনো। তোমার হাসি মাখা মুখখানি যে আর কখনো দেখা হবে না কল্পনা করিনি।
সময়টা বড়ই নিষ্ঠুর।
দেখতে দেখতে চলে গেল ৬টি বছর চোখের পলকে। তোমার চলে যাওয়াটা মেনে নিতে পারিনি এখনো। মেনে নেওয়াটা অসম্ভব।
খুব কান্না পায় তোমার জন্য।
আচ্ছা, কান্না করলে কি আর তুমি আবার ফিরে আসবে? এসে কি টেনে নিবে বুকে তোমার?
জানো মা..
তুমি যে শাড়িটা কিনেছিলে শখ করে ঈদে পড়বে বলে, সেটা এখনো আলমারিতে দ্বিতীয় তাক-এ আছে। ঠিক যেভাবে রেখে গিয়েছিলে তুমি ভাজ করে। মাঝেমধ্যে খুলে দেখি ওটা, তোমার পরশ অনুভব করি।
তোমার সাজানো সংসারটা আছে। নতুন ঘর হয়েছে। তোমার ছেলেরাও বড় হয়েছে। প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পথে। কিন্তু সুখটা কেমন হয় দেখে গেলে না তুমি।
জানো “মা” আমার চাকরিটা অনেক ভালো। খুব ভালো মাইনে দেয়। ইচ্ছে ছিল প্রথম পাওয়া বেতনটা তোমার হাতেই তুলে দিব। ইচ্ছেটা আর পূরণ হলো না।
তুমি তো চলে গেলে অবেলায় চিরতরে। তোমার সন্তানদেরকে একা করে দিয়ে। দূর থেকে দেখো আমাদের, তোমার সন্তানদের। তোমার ভালোবাসায় সিক্ত হতে খুব ইচ্ছে করে “মা”।
গত ৬টি বছর ধরে মা বলে ডাকা হয়না আমার। আমার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এই ইচ্ছাটা কখনোই পূরণ হবে না আর।
ভালো থেকো মা….
আর কিছু লিখতে পারছি না, চোখের জলে ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে সবকিছু।