মুনীর চৌধুরীর ছাত্র ও কর্ম জীবন

Please log in or register to like posts.
পোস্ট

মুনীর চৌধুরীর ছাত্র জীবন ও কর্ম মুখর জীবন ছিল নানা অর্জনে পূর্ণ  । তিনি ছিলেন একাধারে নাট্যকার , প্রাবন্ধিক , সাহিত্যমনা , জ্ঞানপিপাসু  এবং একজন বুদ্ধিজীবী

বর্তমানে আমরা যা  ঢাকা কলেজ নামে চিনি সেখান থেকে মুনীর চৌধুরী ১৯৪১ সালে । ১ম বিভাগ পেয়ে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় পাশ করেন।তখন এই শীক্ষা প্রততিষ্ঠানের নাম ছিল ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল। পরবর্তিতে ১৯৪৩ সালে আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২য় বিভাগ নিয়ে আই এস সি পরীক্ষায় উত্তির্ন হন।  এর পর তাঁর শিক্ষার যাত্রা থেমে থাকেনি। বরং তিনি তাঁর মেধার চর্চা করেছিলেন যথার্থ ভাবেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উভয় ক্ষেত্রে ২য় শ্রেনী নিয়ে ১৯৪৬ সালে ইংরেজিতে অনার্স এবং ১৯৪৭ সালে মাস্টার্স পাশ করেন । সে সময় সলিমুল্লা হলের তিনি একজন্ আবাসিক ছাত্র ছিলেন। বক্তৃতার নৈপুন্যের কারনে জিতেন সেরা বক্তার খেতাব প্রোভোস্ট কাপ। মুনীর চৌধুরি নিখিল বংলা সাহিত্য প্রতিযোগিতায় সর্বাধিক পুরস্কার জিতেন,১৯৪৬ সালেই।  তাঁর তখন থেকেই বেশ লেখার হাত্ ছিল। নাটক লেখার শুরু ছত্রাবস্থায়। জন্ম দিনে লিখে ফেলেছিলেন এক অঙ্কের নাটক “রাজার জন্মদিনে” । তাঁর জীবনের গল্পে রয়েছে নানা মোড় । আসুন জেনে আসি সে গল্পটা।

 

মুনীর চৌধুরি বাম্পন্থী রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন।  মূলত রাজনীতিতে সময় দিতে গিয়ে তাঁর পরীক্ষার ফল কিছুটা খারাপ হজয়েছিল।  বাম্পন্থী রাজনিতীতে মাত্রাতিরিক্ত জড়িত থাকার কারনে হল থেকে বহিষ্কৃত হন তিনি। সে একি রাজনীতির কারনে পিতার সাহায্য থেকেও তিনি বঞ্চিত হন।  তবে তিনি আয় করছিলেন তাঁর লেখনির মাধ্যমে। সে সময় তিনি ঢাকা বেতার কেন্দ্রের জন্য নাটক লিখে আয় করতেন। কে জানে! পিতৃ ছায়া তলে থেকে হয়ত তাঁর সেই মেধার বিকাশ হতনা!মুনীর চৌধুরি দেশের জন্য ভাবতেন। বাংলা ভাষা প্রানের ভাষা ।এ ভাষার জন্য ১৯৪৭ সালের ৬ ডিসেম্বর তিনি ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে তাঁর বক্তব্য উপস্থাপন করেন।পরবর্তিতে ১৯৪৯ সালে তাঁর শিক্ষকতা শুরু হয়  খুলনার ব্রজলাল কলেজে।যোগদেন করেন ইংরেজির অধ্যাপক হিসেবে।সেখানে তিনি কিছুদিন বাংলাও পাঠ দান করেছলেন। রাজনৈতিক তৎপরতার কারনে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে রাজনীতি না করার অঙ্গিকারের কারনে তিনি ছাড়া পান।১৯৫০ সালে যোগ দেন ঢাকার জগন্নাথ কলেজে,পরে ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ে যোগ দেন শিক্ষক হিসেবে।

 

সাল ১৯৫২। ২১ এ ফেব্রুয়ারিতে পুলিশের ধাক্কায় পরে যান বিশ্ব বিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে গিয়ে। তাঁর পর ও তাঁর প্রতিবাদি কণ্ঠ থেমে থাকেনি। ২৬ এ ফেব্রুয়ারি শিক্ষকদের প্রতিবাদ সভায় আহভান করতে গিয়ে গ্রেপ্তার হন এবং চাকরি চ্যুত হন।দুই বছর তাকে কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে জীবন যাপন করতে হয়। এমন প্রান শক্তি যার, তাঁর আবেগ কে কারাগারের মাঝে বন্দী করা যায় না।  ১৯৫৩ সালের ২১ এ ফেব্রুয়ারি কারাগারের বন্দিদের অভিনয়ের জন্য লিখেন “কবর” নামের একাঙ্গিকা। এটা তাঁর শ্রেষ্ঠ নাটোক হিসেবে খ্যাত। এর প্রথম মঞ্চায়ন হয় জেলখানার ভিতরেই। কারাবন্দিরাই এতে বিভিন্ন চরিত্রে অংশ গ্রহণ করেন। কারাবন্দী সঙ্গি অধ্যাপক অজিত গুহের কাছে মুনীর চৌধুরী তিনি প্রাচীন ও মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের পাঠ গ্রহণ করেন। সে রুদ্ধ দুয়ারের ভেতর থেকেই, সেই অন্ধকার কারাগার থেকেই বাংলায় প্রাথমিক এম এ পরীক্ষা দেন এবং প্রথম শ্রেনীতে প্রথম স্থান অধিকার করেন।কারাগারে চার দেওয়ালে বন্দী থেকেও তাঁর অন্তরে জ্বলছিল  জ্ঞানের বহ্নি শিখা ।

 

পরবর্তিতে ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের ক্ষমতায় আসার কল্যাণে তিনি কারাগার থেকে মুক্ত হন। এরপর  শেষ পর্বের পরীক্ষা দিয়ে তিনি কৃতিত্বের সাথে বাংলায় মাস্টার্স ডীগ্রী লাভ করেন।১৯৫৬ সালের দিকে বাংলার প্রভাষক হিসেবে ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ে তাঁর চাকরি স্থায়ি হয়।  এই জ্ঞান পিপাসু মানুষটি ১৯৫৮ সালে হার্ভাড। বিশ্ব বিদ্যালয় থেকে ভাষাতত্তেআরো একটি মাস্টার্স ডিগ্রী নিয়ে দেশে ফিরেন।তিনি বাংলা টাইপরাইটারের জন্য উন্নত মানের কীবোর্ড  উদ্ভাবন করেন। যা মুনীর অপটিমা নামে পরিচিত।এই টাইপরাইটার নির্মানের লক্ষ্যে তিনি বেশ কয়েকবার পূর্ব জার্মানিতে যান।

 

বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। তিনি বাংলা  সাহিত্যে মনোনিবেশ করেন,বেশ কিছু মৌলিক নাটকের পাশাপাশি অনুবাদ নাটক ও লিখেন। তাঁর রচিত নাটকের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ,রক্তাক্ত প্রান্তর(১৯৬২),চিঠি(১৯৬৬),কবর(১৯৬৬), দন্ডকারন্য(১৯৬৬) , পলাশী ব্যারাক ও অন্যান্য(১৯৬৯)।  তাঁর বিখ্যাত অনুবাদ নাটকের মধ্যে, কেউ কিছু বলতে পারেনা(১৯৬৯) যা জর্জ বার্নাড শ এর( you never can tell) ,এর অনুবাদ উল্লেখযোগ্য।এছাড়াও আরো অনুবাদ গ্রন্থের মধ্যে আছে, রূপার কৌটা(১৯৬৯), মুখরা রমনী বশীকরন(১৯৭০০।তার প্রবন্ধ গ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো মীর মানস (১৯৬৫), রণাঙ্গন(১৯৬৬) , বাংলা গদ্যরীতি(১৯৭০)। ১৯৮২ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত আনিসুজ্জামানের সম্পাদনায় চার খন্ডে মুনীর চৌধুরীর রচনাবলি প্রকাশিত হয়।

 

বাংলার স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয়। ১৯৭১ সালের মার্চে মুনীর চৌধুরী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরে আসার প্রায় কিছুদিন পরেই বাংলার স্বাধীনতার যুদ্ধ শুরু হয়। তাঁর সদ্য কৈশোরে পা দেয়া ছেলে মুক্তিযুদ্ধে চলে যায়।এসময় তিনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আদেশক্রমে ইংরেজি বিভাগের প্রধান হিসেবে নিযুক্ত থাকেন। জুলাই মাস থেকে  কাজ করেন কলা বিভাগের ডীন হিসেবে।, এর পর আসল সেই ভয়াল রাত, নিষ্ঠুরতার নির্মম চিত্র দেখল দেশ। ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর আল বদর দের সহযোগিতায় পাকিস্তানী হানাদার রা তাকে তাঁর বাবার বাড়ি থেক অপহরন করেন এবং সম্ভবত ওই দিন ই তাকে হত্যা করা হয়।

বাংলার স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয়। ১৯৭১ সালের মার্চে মুনীর চৌধুরী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরে আসার প্রায় কিছুদিন পরেই বাংলার স্বাধীনতার যুদ্ধ শুরু হয়। তাঁর সদ্য কৈশরে পরা ছেলে মুক্তিযুদ্ধে চলে যায়।এসময় তিনি বিশ্ব বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আদেশক্রমে ইংরেজি বিভাগের প্রধান হিসেবে নিযুক্ত থাকেন। জুলাই মাস থেকে  কাজ করেন কলা বিভাগের ডীন হিসেবে।, এর পর আসল সেই ভয়াল রাত, নিষ্ঠুরতার নির্মম চিত্র দেখল দেশ। ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর আল বদর দের সহযোগিতায় পাকিস্তানী হানাদার রা তাকে তাঁর বাবার বাড়ি থেক অপহরন করেন এবং সম্ভবত ওই দিন ই তাকে হত্যা করা হয়।মুনীর চৌধুরী ছিলেন সমসাময়িক বিষয় তাঁর লেখনিতে ফুটিতে তুলতে সচেষ্ট ছিলেন। যিনি প্রমান করে দিয়েছিলেন কারাগারের লৌহ কপাট মুক্তচিন্তার পথ বন্ধ করতে পারেনা। কারাগারে থাকা অবস্থায় ও  তাঁর লেখায় ফুটে উঠত বিদ্রহের দাবানল। তিনি রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন,তবে তাঁর চেয়ে বেশি তিনি তিনি যুদ্ধ করেছিলেন তাঁর লেখনির মাধ্যমে। তাঁর লেখনির মধ্যে ফুটে উঠে ছিল সমসাময়িক বাঙালিরমুক্তির দাবী, রাষ্ট্র ভাষার দাবী। শহীদ বুদ্ধিজীবি দিবসে আমরা তাকে সম্মানের সাথে স্মরন করি।

ফেসবুক কমেন্টস

Reactions

0
0
0
0
0
0
Already reacted for this post.

প্রতিক্রিয়া

মন্তব্য করুন