সৈয়দ মোহাম্মদ শামসুজ্জোহার মৃত্যু ও একটি চেতনার জন্ম

Please log in or register to like posts.
পোস্ট
শহীদ, বুদ্ধিজীবী, সৈয়দ, মোহাম্মদ, শামসুজ্জোহা

আজকের দিনে/  সৈয়দ মোহাম্মদ শামসুজ্জোহার মৃত্যু ও একটি চেতনার জন্ম-

সৈয়দ মোহাম্মদ শামসুজ্জোহা -একজন বাঙালি অধ্যাপক এবং শিক্ষাবিদ । সৈয়দ মোহাম্মদ শামসুজ্জোহা ছিলেন  রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের সহযোগী  অধ্যাপক । জন্মগ্রহন করেন ১৯৩৪ সালের ১ মে , পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলায় ।বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের দায়িত্ব পালনকালে ১৯৬৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন চলাকালীন সময়ে  পাকিস্তানী সেনাদের হাত থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের প্রাণ বাঁচানোর চেষ্টায় নিজের প্রাণ উৎসর্গ করেন। 

তার পিতার নাম মুহম্মদ আব্দুল রশীদ। তিনি ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের একজন স্বল্প বেতনভুক্ত চাকরিজীবী । পরিবারে তিন ভাই ও তিন বোনের মধ্যে   তিনি ছিলেন ২য়। ব্যক্তিগত জীবনে ড. সৈয়দ মুহম্মদ শামসুজ্জোহা বিবাহবন্ধেন আবদ্ধ হন নিলুফার ইয়াসমিনের সাথে।  ১৯৬৬ সালে তাদের ঘর আলো করে এক কন্যাসন্তানের জন্ম হয়।

১৯৬৯  সাল- বাংলার ইতিহাসে গণআন্দোলনের  মাধ্যমে  একটি স্মরণীয় অধ্যায়ের জন্ম দেয়  । পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ ৬৬ এর ছয়দফা ও ১৯৬৯ এর  ১১ দফা দাবি আদায়ের জন্য এবং শেখমুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে করা আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার প্রতিবাদে বিপুল গণআন্দোলন গড়ে তোলে।  ১৯৬৯ সালের ২০ জানুয়ারি আইয়ুব খানের পতনের দাবিতে আন্দোলনে থাকা অবস্থায় আমানুল্লাহ আসাদুজ্জামান শহীদ হন। পরবর্তীতে ফেব্রুয়ারির ১৫ তারিখে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় দায়ী করা অন্যতম আসামি সার্জেন্ট জহরুল হককে হত্যা করা হয় ঢাকা সেনানিবাসে।  দেশের মানুষ আর অন্যায় অত্যাচার সহ্য করার পক্ষে ছিলনা মোটেই। শিথিল করা তো দূরের কথা এ দুটো হত্যাকাণ্ডের ফলে আন্দোলন আরো বেগবান হয়ে উঠে। আন্দোলন দাবানলের মোট ছড়িয়ে পড়তে থাকে। পরিস্থিতি তৎকালীন সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। কেন্দ্রীয় সরকার তৎপর হয়ে উঠে সামরিক বাহিনীর মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য। জারি করা হয় সান্ধকালীন আইন।  তবে এতে ছাত্ররা দমে যাবার ছিলোনা।রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল করতে তৎপর হয়। সে সময় প্রক্টর শামসুজ্জোহা জানতেন আন্দোলনকারী ছাত্রদের জীবননাশের আশঙ্কা আছে। তাই প্রক্টর শামসুজ্জোহা নিজের পরিচয় দিয়েছিলেন সেনাসদস্যদের। সেনাসদস্যরা তার কথা শুধু উপেক্ষাই করেনা , বরঞ্চ বেয়নেটের আঘাতে তাকে খুঁচিয়ে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়।  

ছাত্রদের জন্য তার এ ভালোবাসা  , সর্বোপরি তার এই নিঃস্বার্থ আত্মত্যাগের প্রভাব ছিল সুদূরপ্রসারী, যা আমাদের দেশকে স্বাধীন করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।  শামসুজ্জোহার মৃত্যু নাড়িয়ে দিয়েছিলো তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের ভীত। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরে তার এই আত্মত্যাগের প্রতি কৃতজ্ঞতাস্বরূপ তাকে শহীদ বুদ্ধিজীবীর সম্মানে ভূষিত করা হয়।

সৈয়দ মোহাম্মদ শামসুজ্জোহাকে গণ্য করা হয় দেশের প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী হিসেবেপরবর্তীতে শামসুজ্জোহার মৃত্যু এর  পরপরই  রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনির্মিত আবাসিক হলের নাম রাখা হয় শহীদ শামসুজ্জোহা হল। নাটোরে তার নাম প্রতিষ্ঠিত হয় একটি কলেজ। তার সম্মানে রাজশাহী বিশ্যবিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে প্রতিবছর জোহা সিম্পজিয়াম পালন করা হয়।  বর্তমানে দেশের শিক্ষক সমাজ দাবি জানিয়ে আসছেন শামসুজ্জোহার মৃত্যুদিবসকে জাতীয় শিক্ষক দিবস হিসেবে পালনের।২০১২ সালে তার স্মরণে নির্মিত হয়েছে স্মৃতি স্মারক স্ফুলিঙ্গ  তারই  নামানুসারে নির্মিত শহীদ শামসুজ্জোহা হলের মূল ফটকের পাশেই।

ভিন্ন ভিন্ন  মানুষের মৃত্যু আমাদের জীবনকে ভিন্নভাবে   প্রভাবিত করে। কিছু মৃত্যু জীবনকে নাড়া দেয়   । কিছু মৃত্যু শাসকের পায়ের তলার মাটিকে কাঁপিয়ে দেয় ।অধ্যাপক  শামসুজ্জোহার মত  কিছু মানুষের মৃত্যু একটা  রাষ্ট্রকে, রাষ্ট্রীয় চেতনাকে  নাড়া দেয়। এমনি প্রভাব ছিল শামসুজ্জোহার আত্মত্যাগের।   

ফেসবুক কমেন্টস

Reactions

1
0
0
0
0
0
Already reacted for this post.

প্রতিক্রিয়া

1