বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মদ (সঃ): পর্ব -১ , মরুময় প্রান্তর আরবের পরিচিতি

Please log in or register to like posts.
পোস্ট

 বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মদ (সঃ): পর্ব -১ , মরুময় প্রান্তর আরবের পরিচিতি

আরবের প্রান্তরে জন্ম হলো বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানবের। সমগ্র বিশ্বের শান্তির আর মুক্তির দূত হিসেবে মহান আল্লাহ তাকে প্রেরন করলেন মরুময় আরবের প্রান্তরে। বিশ্বনবী সম্পর্কে জানার আগে আসুন জেনে নি তার জন্মস্থান সম্পর্কে। আরব দেশের নামকরন নিয়ে ঐতিহাসিক দের মধ্যে মতভেদ আছে।

আরবি ভাষাবিদগনের অনেকেই বলেন, আরব নামের উৎপত্তি “আরবাতুন” শব্দ থেকে। সে সময়ের আরবের বিখ্যাত কবিরা তাঁদের কাব্যে “আরবাতুন” শব্দটি ব্যবহার করেছেন অনেক ক্ষেত্রেই। আরবি অভিধানে দেখা যায়, আরবাতুন” শব্দের অর্থ বিশাল শুষ্ক এলাকা বা তরুলতা হীন মরুময় প্রান্তর। হয়ত এজন্যেই ঐতিহাসিকগন ধারনা করেন আরব নামের উৎপত্তি “আরবাতুন’ শব্দ থেকে। উচ্চারনে ভিন্নতা থাকলেও অর্থ গত দিক থেকে  “আরব’ আর “আরাব” এর ভিন্নতা থাকলেও অর্থ গত দিক থেকে দুটো শব্দের অর্থই হলো মার্জিত পরিচ্ছন্ন ভাষা।

আবার অনেক ভূগলবিদের মতে “আরব’ শব্দটি শুরুতে  ‘আরবাহ’ ছিল।  যার অর্থ অনাবাদ ভূমি বা প্রান্তর। আরবী ভাষায় ও  অনাবাদ প্রান্তর এবং গ্রাম্য লোকদের কে ‘আ’’রাব’ বলা হত।  অনেকের মতে আরব শব্দটির মূলে ‘গারব’ ছিল। যার অর্থ পশ্চিম দিকে। এ স্থান টি ফোরাত নদীর পশ্চিম দিকে অবস্থিত। এখানে আদিম অধিবাসী আ’দ জাতির বাসস্থান ছিল। মতভেদ ছাড়াই বলা যায়  ‘আ ‘দ’ জাতি আরব বংশোদ্ভুত ছিল। আরবী শব্দ ‘আ ‘দ’ অনারবী নয়। হিব্রু ভাষা বিবেচনা করলে ‘আ ‘দ’ শব্দের অর্থ উচ্চ বা বিখ্যাত।  তাঁদের কে ‘আ ‘দ’ বলার অন্য একটি কারন হতে পারে এটা যে , তাঁরা তৎকালীন সময়ে বিশাল অট্টালিকা ও বিশাল পাহাড় কেটে শৈল্পিক কর্ম করেছিল।  সর্বোপরি এটা বলতেই হয় প্রকৃত সত্য একমাত্র আল্লাহই ভালো জানেন।

আরবী ভাষা বা এবং শব্দের অর্থের দিকে খেয়াল রেখেই হয়ত গোটা দেশ টার নাম আরব রাখা হয়েছে।  কারন ‘আরব’ ‘আরাব’ বা ‘আরবাতুন’  শব্দের অর্থ মরুময় প্রান্তর,তাই এই দেশের নাম ‘আরব’ রাখা  অবাঞ্চনীয় নয়। ইতিহাস অবশ্যই দলিলের উপর ভিত্তি করে কথা বলে তথাপি আল্লাহই সর্বজ্ঞ,তিনি ই সব জানেন।

‘আরাব’  বা ‘আরব’ শব্দের অর্থ পরিচ্ছন্ন ভাষা । আরবের অধিবাসীগন নিজেদের ভাষার সাথে সাথে নিজেদের ও শ্রেষ্ঠ মনে করত।  আর অন্যদের হীন জ্ঞান করত। এটা ছিল তাদের অজ্ঞতার আর মূর্খতার ফল। একি কারনে তারা আরবের বাইরের মানুষ দের ‘আজম’ নামে অবিহিত করতো ।  ভাষা আরবি হওয়ার কারনে একটা অহংবোধ আরব বাসীদের মন আচ্ছন্ন করে রেখেছিলো। ইসলাম আসলো, এসে সেই অহংকারের দূর্গে আঘাত করে তাকে ধুলিস্মাৎ করে দিলো।

বিশ্ব নবী হযরত মোহাম্মদ (সা:) উদাত্ত কন্ঠে ঘোষনা করেছিলেন :  হে মানব মন্ডলী ! অবশ্যই তোমাদের প্রতিপালক এক এবং পিতাও এক । সুতরাং কোন আরবীর আজমীর উপর শ্রেষ্ঠত্ব নেই,। এমন কি কোন আজমীর ও কোন আরবীর উপর  শ্রেষ্ঠত্ব নেই। সাদা বর্নের কোন মানুষের কোন কালো বর্নের মানুষের এবং কালো বর্নের মানুষের শ্বেত বর্নের মানুষের উপর শ্রেষ্ঠত্ব নেই। শুধু মাত্র আল্লাহ ভীতি ই হচ্ছে মর্যাদার একমাত্র মান্দন্ড। (আত তাবারী, নায়লুল আওতার , মুনতাকাল আখবার )

 

আরব এবং আরবের অধিবাসীদের নিয়ে গবেষণার শেষ নেই। বিভিন্ন ঐতিহাসিক বিভিন্ন মত ব্যক্ত করেছেন আরব এবং আরবের অধিবাসীদের নিয়ে । এর একমাত্র কারন হয়ত এটাই যে , পৃথিবীর অধিকাংশ প্রাচীন ঘটনা বলির জন্ম এই আরবে। গবেষণার জন্যে এর থেকে চমৎকার স্থান আর কি হতে পারে ,আপনারাই বলুন।  আরবের অধিবাসীদের কে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে । প্রধানত গবেষকগন আরবের অধিবাসীদের তিনটি ভাগে ভাগ করেছেন। আসুন জেনে আসি সে সম্পর্কেই।

আরবে কিছু  জাতি ছিল যারা ইসলাম আগমনের বহু পূর্বেই ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। তাঁদেরকে ঐতিহাসিকগন আরবে বায়েদা নামে চিহ্নিত করেন। আরবনে বায়েদার বসবাস ছিল আরব ভূমির ইয়েমেনে ।  আর আরবে বায়েদার পরে যে জনগোষ্ঠীর সূচনা হয়েছিল তারা আরবে আরেবা নামে পরিচিত  ।  সেই ইয়েমেন প্রদেশেই এদের বিস্তৃতী ঘটেছিল। অপর একটি জঙ্গোষ্ঠী হল আরবে মুস্তারেবা । মূলত তারা ছিল হেজাজের অধিবাসী এবং এই আরবে মুস্তারেবা-ই ছিল হযরত ঈসমাইল আলাইহিস সালাম এর বংশধারা।

হযরত ঈসমাঈল আলাইহিস সালাম এর বংশধর রাই মূলত  আরবের মূল অধিবাসী ছিল। এদের আবার অনেক শাখা প্রশাখা ছিল।  ঠিক যে সময় টায় ইসলাম পৃথিবীর মানুষের মুক্তির দূত হিসেবে আসে তখন বনু কাহতান ও বনু ঈসমাঈল বংশকে স্মবোধন করা হত আদনানী গোষ্ঠী নামে।  আরব ভুমিতে বিক্ষিপ্ত ভাবে ইহুদী  জনগোষ্ঠী ছড়িয়ে ছিল। তাদের মধ্যেও ছিল শাখা -উপশাখা ।   এই সমস্ত মানব সম্প্রদায় ইয়েমেন থেকে শুরু করে সুদূর ইরাক পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। ইসলাম প্রচারিত  হওয়ার অনেক আগে থেকে বনু কাহতান এবং বনু ইসমাঈলগন রাষ্ট্র হিসেবে সু প্রতিষ্টিত ছিল। ইসলাম আসার পরেই আরবের চিত্র পালটে যায়।

ইতিহাস বেত্তা গনের মতে তৎকালীন আরবে বেশ কিছু আরব রাজ বংশ প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিল।  ইতিহাস বেত্তাদের মতানুসারে পাঁচ টি রাজবংশ প্রাধান্য লাভ করেছে। হযরত ইসমাঈল আলাইহিস সালাম  এর সন্তান নাবাতের এর বংশ ধরেরা যে রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করেছিল তাদের বলা হত নাবাতি রাজবংশ।  আরেক টি রাজ বংশ ছিল যেটি মাঈনী রাজবংশ নামে পরিচিত ।  ইয়েমেন নামক প্রদেশের মাঈনী নামক  স্থানে এর সুচনা হয়েছিল। ইয়েমেনের হাজারমাউতে যে রাজ বংশের সূচনা হয়েছিল তাকে হাজারমাউতি রাজবংশ বলা হয়।  বর্তমানে ধ্বংস প্রাপ্ত একটি এলাকা কাতবানের আদন। সে এলাকায় যে রাজ বংশ প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিল তার নাম কাতবানী রাজবংশ ।  পবিত্র কোরআনে ক্কাওমে সাবা নামে যে জনগোষ্ঠীর উল্লেখ করা হয়েছে  তাদের রাজবংশ সাবাঈ রাজবংশ নামে পরিচিতি পেয়েছিল।  অনেক রাজ্য ছিলো,তবে সকল রাজ্যের মধ্য মনি ছিল আরবের দক্ষিনাংশে ইয়েমেনের পূর্বাঞ্চলে।  মাআরেব ছিলো,সাবা রাজ্যের প্রানকেন্দ্র তথা রাজধানী । এই রাজধানীর আরেক পরিচয় ছিল সাবা শহর।

কাহতানী বংশের একটা বিখ্যাত শাখার নাম সাবা ।  সাবা বংশের আদী পুরুশের নাম ছিল ওমর বা আবদে শামস,যার উপাধি ছিল সাবা। সাবা বংশের অনেক গুলো শাখা ছিলো। বিভিন্ন শিলালিপি পাঠ করে ঐতিহাসিক গন একটা সধান্তে পৌছান যে হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম এর জন্মের প্রায় ৮০০ বছর পূর্বে সাবাঈদ সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

পবিত্র কোরআনে যে সব জাতির উত্থান-পতনের ইতিহাস বিভিন্ন সূরায় বর্ননা করা হয়েছে ,তা শুধু মাত্রই পাঠের জন্যে নয়। এসব কাহিনী থেকে শিক্ষা গ্রহন করার জন্যেই এসব তুলে ধরা হয়েছে কোরআনে ।  আর সাবা জাতির ইতিহাস জানা প্রয়োজন এ কারনেই যে, যে মহামানবের সম্পূর্ন জীবন আমরা আলোচনা করতে চাই, সেই মহা মানবের বংশধরেরা কোথা থেকে এসেছে সেটা জানা আমাদের একান্ত প্রয়োজন।   ইতিহাস থেকে এটা জানা যায়, আমরা বুঝতে পারি যে পৃথিবীতে যে জাতি উন্নতির চরম শিখড়ে আরোহন করে পরবর্তিতে ধ্বংস হয়েছে  তা বিনা কারনে হয়নি। এটা তাদেরি কর্ম ফল। ইতিহাস বেত্তারা বলেন হযরত নূহ আলাইহিস সালাম এর সন্তান সাম,আর সামেরই বংশধর রাই হলো সাবা জাতি।  সাবা জাতির ভাগ্যাকাশে যে গযব নেমে এসেছিল তা তাদের কর্মের ফল হিসেবেই এসেছিল।

লেখার পদ্ধতি সম্পর্কে সাবাঈদের যথেষ্ট জ্ঞান ছিল, ব্যবসা বানিজ্যে তারা লেখন পদ্ধতি ব্যবহার করত বলে উল্লেখ পাওয়া যায়। পবিত্র কোরআনে  সাবার রানী বিলকিস , হুদহুদ পাখি, আর হযরত সোলাইমান আলাইহিস সালাম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন করেছেন । হামেরী বংশের রাজা হযরত যুলকারনাইন আলাইহিস সালাম  কে নিয়েও কোরআনে আলোচনা করা হয়েছে। তাওরাতেও এদের সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।

রেফারেন্স :  ১ আত তাবারী, নায়লুল আওতার , মুনতাকাল আখবার

                ২ https://en.wikipedia.org/wiki/Muhammad


ফেসবুক কমেন্টস

Reactions

0
0
0
0
0
0
Already reacted for this post.

প্রতিক্রিয়া

মন্তব্য করুন