অন্ধ বিশ্বাসের পরিণতি

Please log in or register to like posts.
পোস্ট

গ্রামের  মুরব্বী ছাবুল মোল্লা।গ্রামের মানুষ তাকে ছাবুল্লা বলে ডাকে।ছাবুলের দুই বউ।প্রথম বউটা কোন এক অজানা রোগে মারা গিয়েছে।প্রথম বউয়ের ছিল এক ছেলে।ছেলের বয়স ছিল মাত্র ৩ বছর।ফলে ছাবুল্লা গ্রামের বিশ্বেস বাড়ির মেয়েকে বিয়ে করে ঘরে নিয়ে আসে।মেয়েটার আগে বিয়ে হয়েছিল।কিন্তু তার স্বামীও  রোগে মারা যায়।ছাবুল্লার দ্বিতীয় বউ ছেলেকে অনেক যত্ন করে।ছেলের নাম জাবিদ।জাবিদ ছিল সবার চোখের মণি।ছাবুল্লার দ্বিতীয় বউয়ের নাম জবা।মুলত ছাবুল তার বউয়ের নাম অনুসারে ছেলের নাম পরিবর্তন করেছে।উদ্দেশ্য,বউ যেন ছেলেকে নিজের ছেলে মনে করে।ঠিক সেটাই হল।জবা ছেলেকে এতটাই আদর-যত্ন করত যে,সবাই ভুলেই গিয়েছে জাবিদ তার সৎ ছেলে।ছাবুল ছেলেকে শিক্ষিত করবার জন্য স্কুলে ভর্তি করে।জাবিদের বয়স যখন ১০ বছর তখন জবার কোলে আসে একটা পুত্র সন্তান।ভাই পেয়ে তো জাবিদ অনেক খুশি।ছাবুল ছেলের নাম রাখে বিশা ।  জাবিদ ও বিশা দুজন অনেক আনন্দ করে।বিশার বয়স ৬ বছর হলে জবার কোল জুড়ে একটা ফুটফুটে কন্যা সন্তান আসে।বোন পেয়ে তো জাবিদ-বিশা খুশিতে লাফা-লাফি শুরু করে।বোনের নাম রাখে জুই।এত দিনে জাবিদ প্রাইমারি শেষ করে।এবার হাই স্কুলে যাবে।কিন্তু আশে-পাশে কোন হাই স্কুল না থাকায়  জাবিদকে শহরে পাঠান হবে।কিন্তু জাবিদ, বিশা ও জুইকে ছেড়ে যেতে চাই না।বাড়ি অন্যরা জাবিদকে ভাল করে বুঝায়।ফলে জাবিদ অবশেষে যেতে রাজি হয়।কয়েক দিন পর জাবিদের শহরে যাবার দিন চলে আসে।জাবিদ ও বিশা একে অন্যকে জড়ায়ে  কান্না শুরু করে। তাদের কান্না কেউ থামাতে পারে না।শেষ-মেষ জাবিদ চোখ মুছতে মুছতে চলে যায়।বিশা যতক্ষন ভাইকে দেখা যায় ততক্ষন নিরব দৃষ্টিতে তাকায়ে থাকে এবং কাঁদতে থাকে।এই দৃশ্য দেখে প্রায় সবার চোখেই জল চলে আসে।

জাবিদ শহরের পরিবেশকে মানিয়ে নিয়ে পড়া-শোনা করতে থাকে।এদিকে ছাবুল্লাহ বিশাকে স্কুলে পাঠাতে চাইল।কিন্তু বিশা স্কুলে যেতে রাজি হয়  না।তার একই কথা,বড় ভাই পড়ছে আমার পড়া লাগবে না।ভাই পড়লেই আমার পড়া হয়ে যাবে।বিশা ছাবুলের সাথে মাঠে কঠোর পরিশ্রম করে।ছাবুল্লার জমি-জমাও কম ছিল না।বিশা দিন-রাত খাটে।গাড়ি গাড়ি ধান,পাট,মসুরি,ছুলাতে বাড়ি ভরা থাকে।বিঘা বিঘা আখের চাষও করে।আখ থেকে রস তৈরি করে তা থেকে গুড়ও তৈরি করে।বাড়িতে সব সময় দুই-তিন কোলা গুড় থাকে।ছাবুল জমি কিনতে অনেক আগ্রহী।সে গ্রামে অনেক জমি কেনে।সব কিছু খুব ভালভাবে চলে।

জাবিদও পড়া-লেখা ভাল ভাবে করতে  থাকে।জাবিদ শহরে যে বাড়িতে থাকত,সেই বাড়িওয়ালার একটা মেয়ে ছিল। নাম সুরমা।জাবিদ এক সময় সুরমাকে পড়াতে শুরু করে।বাড়িওয়ালার বউ জাবিদকে খুব পছন্দ করে।পছন্দ করবেই না বা কেন? জাবিদ শিক্ষিত এবং দেখতেও মাশ্-আল্লাহ সুন্দর।তারা জাবিদকে জামাই  হিসেবে পেতে চায় ।তারা ছাবুলের কাছে বিয়ের প্রস্তাব পাঠায়।কিন্তু সুরমাকে দেখে ছাবুলের পছন্দ হয় না।তারপরেও জাবিদের সাথে সুরমার বিয়ে হয়।জাবিদ শহরেই একটা স্কুলে চাকরি পায়।জাবিদ শশুর বাড়িতেই ‍থাকে।

ছাবুল ছেলের শশুর বাড়ি থাকা পছন্দ করে না।তাই সে শহরে জমি কেনে এবং সেখানে পাঁকা বাড়ি তৈরি করে দেয়।গ্রামের বাড়ি থেকে বড় বড় গাছ কেঁটে বাড়ির দড়জা,জানালা ও আসবাবপত্র তৈরি করে।বিশা গাড়িতে করে সেগুলা শহরে নিয়ে যায়।বাড়ি ঠিক হলে জাবিদ সুরমাকে নিয়ে সেখানে বসবাস করা শুরু করে।

এদিকে জবার কোলে আরও চারটা কন্যা ও একটা ছেলে সন্তান হয়।জবার এতগুলা সন্তান দেখে সুরমা জাবিদকে কু-বুদ্ধি দিতে থাকে।আর জাবিদও বউয়ের বুদ্ধি শুনতে থাকে।

ছাবুল যত জমি কেনে সব জমির রেজিস্ট্রির কাজে জাবিদকে পাঠায়।বিশাও ভাইকেই যেতে  বলে।কারণ ভাই শিক্ষিত।আর জাবিদ এই সুযোগটাই গ্রহণ করে।সে সব জমি তার নিজের নামে করতে থাকে।এভাবেই সময় চলতে থাকে।

হঠাৎ একদিন কিছু একটা নিয়ে জাবিদের বাসায় জাবিদ ও ছাবুলের রাগা-রাগী হয়।জাবিদ ছাবুলকে তার বাসা থেকে বের করে দেয় ।ছাবুল কাঁদতে কাঁদতে চলে আসে।কিন্তু বাড়ির কাউকে কিছু বুঝতে দেয়  না।এরপর একদিন ছাবুল জমি চাষ করতে যায়।কিন্তু জাবিদ এসে তাকে বাঁধা দেয়  এবং বলে এইগুলা তার জমি।ছাবুল তখন যেন আকাশ থেকে পরে।ঐ মাঠেরই অপর দিকে বিশা জমি চাষ করছিল।ছাবুল বিশা যেখানে চাষ করছে ঐ জমির আইলের উপর বসে পরে।বাবার এমন অবস্থা দেখে বিশা দৌড়ে তার কাছে আসে।জিঙ্গাসা করে কী হয়েছে? ছাবুল তখন কান্না জড়িত কন্ঠে বলে,আমরা কার জমি চাষ করছি? এগুলা আমাদের জমি না।এগুলা সব জাবিদের জমি।ও আমাদের ফাঁকি দিয়েছে।আমরা ওকে অন্ধের মত বিশ্বাস করে ভুল করেছি।বিশা এইগুলা শুনে আর ঠিক থাকতে পারল না।কাঁদতে কাঁদতে হঠাৎ সে হাসতে শুরু করে।ছেলের এই অবস্থা দেখে ছাবুল তাকে দ্রুত বাড়ি আনে।ডাক্তার  তাকে দেখে বলে,সে পাগল হয়ে গিয়েছে।সবাই কাঁদতে থাকে।ঠিক তার কয়েক সপ্তাহ পর ছাবুল স্ট্রোক করে মারা যায় ।

এভাবেই  অন্ধ বিশ্বাস অনেক সময় ডেকে আনে ভয়ঙ্কর পরিণতি।

ফেসবুক কমেন্টস

Reactions

0
0
0
0
0
0
Already reacted for this post.

প্রতিক্রিয়া

মন্তব্য করুন