আপনারা নিশ্চই শুনেছেন অনেক অদম্য মেধাবী শিক্ষার্থীর কথা! এদের অনেকেই কালের গহ্বরে হারিয়ে যায় ,অনেকেই মাথা তুলে দাঁড়ায় সব বাঁধা ছাড়িয়ে। আজকে এমনি একজনের কথা তুলে ধরব আপনাদের সামনে। হয়ত কিছু পাঠক ইতিমধ্যেই সজীব রায়কে চিনে থাকবেন ।
বিখ্যাত পল্লী রাজের নয়, চাঁদের হাটে জন্ম নেওয়া কোন পুরুষের আদরে লালিত ছেলে নয়! আমাদের সজীব রায় একান্তই নিজস্ব কৌশলে যুদ্ধরতদের একজন!
দুবেলা দুমুঠো খাবার জুটেনা, বা জুটলেও অতি কষ্টে, এমন জীবনের বাহক ছিলেন সজীব রায়। ভাঙাচোরা ঘরের এক কোনে বেড়ে ওঠা সজীবের চোখে মুখে ছিলো হয়তবা আকাশ-ছোয়া স্বপ্ন । সে স্বপ্নের জোড়ে একে একে পার হয়েছেন মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার পথ। এবং পার হয়েছেন যথাযথ কৃতিত্ব দেখিয়েই।
তাঁর বাড়ি দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার কাটগর গ্রামে । তাঁর পিতা মনধর রায় গাছ কাটার শ্রমিক। মা চারুবালা ও শ্রমজীবী । ছোটবোন বৃষ্টি স্থানীয় বিদ্যালয়ের নবম শ্রেনীর ছাত্রি। ছোট বেলা থেকেই সজীব রায়ের স্বপ্ন ডাক্তার হবেন। দেশের-দশের সেবা করবেন। স্বপ্ন পূরন বেজায় শক্ত। তবে সে শক্ত পথের অনেকটাই সজীব পার হয়ে এসেছেন সুদৃঢ় প্রতিজ্ঞার জোড়ে।
প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় উপজেলার মধ্যে প্রথম হয়ে স্বপ্নের সিঁড়ি বেয়ে তাঁর যাত্রার শুরু। ২০১৩ সালে জেডিসি পরীক্ষায় পান জিপিএ-৫। দারিদ্রতার সাথে যুদ্ধ করেই এই সজীব এবার যথাক্রমে ২০১৬ ও ২০১৮ সালে গোপাল্গঞ্জ উচ্চবিদ্যালয় ও সৈয়দপুর ট্যাকনিকাল স্কুল এন্ড কলেজ থেকে জিপিএ-৫ অর্জন করেন।
সজীবের মা চারুবালা বলেন ”অভাবের কারনে সজীব কতদিন না খেয়ে স্কুলে গেছে ঠিক নেই”।
দারীদ্রতার সাথে যুদ্ধরত এই সজীব এবার ৩য় স্থান অর্জন মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। হুম , তিনি মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষায় ৩য় হয়েছেন। কিন্তু বিধিবাম দারিদ্রতা আরেকবার তাঁর সামনে এসে দাড়িয়েছে অসময়ের ঝড়ের মত।
সজীব ডাক্তার হতে চায়। সামনে তাঁর পথ তাঁর দিকে চেয়ে আছে। কিন্তু সে পথের খরচ মেটাতে সজীবের অপারগতা আজ তাঁর স্বপ্নের পথে অন্তরায়।
ভর্তি সহ ,আনুসাঙ্গিক খরচ মেটাতেই লাগে ৪০ হাজার আর এর পর প্রতিবছর যে সাত হাজার করে লাগবে সে খরচের জন্যই সজীবের চোখে হতাশার চিহ্ন। ভাঙাচোরা ঘর, যার চারপাশ টা বেড়া দেওয়া , সে ঘরের জন্যে এই স্বপ্ন দেখাটাই কি ভূল! তাঁর বাবা ছেলের স্বপ্ন যাতে ভেঙ্গে না যায় সে জন্যে অন্ধের যষ্ঠি ভিটে টাও বেঁচে দিতে প্রস্তুত!
সজিবের স্বপ্ন পূরনের মত টাকা অনেকের-ই আছে, মন কজনের আছে জানিনা!
লেখাটা শেষ করছি, এই মুহূর্তে শুধু এই দারিদ্রের মাঝে বেড়ে ওঠা একটি অম্লান হৃদয়ের স্বপ্নের কথা মনে আসছে ”শুধু চিকিৎসক নয় , নিজেকে মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই”।
ছবি ও তথ্যসূত্রঃ প্রথম আলো