জিশু স্যার আপনি কোথায়?

Please log in or register to like posts.
পোস্ট

সবার জীবনে একজন শিক্ষক থাকেন,যিনি জীবন বদলে দেন।  একজন শিক্ষক থাকে ,যার আদর্শে একজন ছাত্র বেড়ে উঠতে চায়। অনেক প্রিয় শিক্ষক আছেন, কিন্তু তাদের মধ্যে যদি একজনের নাম বলতে হয়,  তবে জিশু স্যারের নাম না বললেই নয়। প্রথম তার সাথে দেখা , জি ই সি এর ভূইয়া গলির এক কোচিং সেন্টারে । আমি ছিলাম ছন্নছাড়া। কোচিং এর জন্যে বের হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে  কোচিং এর শেষ টাইম এ গিয়ে ঢুকতাম। ক্লাস শেষ হলে সবার আগে বেরিয়ে পরতাম। একদিন একি ভাবেই দেরি করে কোচিং এ গেলাম , যেনো সময় শেষ হয়ে যায়। গিয়ে দেখি কেউ নাই। একজন লোক বসে আছেন। আমি তার পাশে গিয়ে বসলাম। শুনলাম আজকে কোচিং ছুটি ছিলো,আমি খবর রাখতাম না ,তাই খবরটা পাই নি।

বসলাম, লোকটা কে দেখে ভালো ঠেকছিলোনা, কেমন যেন ভয় ভয় লাগে।   লোকটা বললেন “ নাম কি তোমার?” বললাম”জুনাইদ” তিনি বললেন আমি তোমাদের গনিতের স্যার, দেখে স্যার স্যার মনে হয় না, না?  একটু ভেবাচেকা খেয়ে তার পাশ থেকে উঠে পরলাম, তিনি বললেন, বসো বসো, স্যার স্যার না লাগায় আমি খুশি, বেশি স্যার স্যার লাগলে গল্প করা যায় না। হঠাৎ কেমন কেমন লেগেছিল স্যার কে প্রথমে, এর পর থেকে ভালো লাগতে লাগলো, স্যারের কথায় ও ছন্নছাড়ার টান ছিল কিনা!স্যার গনিতে মারাত্মক ছিলেন, তিনি যখন গনিত কষতে দিতেন, মজা নিয়ে সেটা কষতাম ।  তিনি প্রায় একটা কথা বলতেন, গনিত সম্পর্কে, “ লেবু বেশি কচলালে তিতা হয়, কিন্তু  গনিত এমন এক জিনিশ যেটা যত বেশি কচলাবা তত রস বের হবে” সে রস গনিতের।  গনিত বিরক্ত লাগত খুবি ,কিন্তু আস্তে আস্তে গনিতের প্রতি ভালোবাসা জন্মালো। জিশু স্যার যখন অঙ্ক করাতেন, মনে হত বুঝি সাহিত্য পড়ছি।

জিশু স্যারের হাতের লেখা ছিল দেখার মত।  লেখার উপরে সোজা টান না দিয়ে, আকা বাঁকা রেখা। সে স্টাইল কপি করতে গিয়ে   কয়েক টা পরিক্ষায় সম্পূর্ন উত্তর লিখতে পারিনি । জিশু স্যার সেটা লক্ষ্য  করেছিলেন বোধয়। একদিন কাধে হাত দিয়ে বললেন, “জুনাইদ দেখো, অন্যকে কপি না করে ,নিঝের মত হওয়ার চেষ্টা করো,সেটাই আরো কাজে দিবে, আর আমার এই সুন্দর লিখা দিয়ে আমি নিজেই দ্রুত লিখতে পারিনা,তুমি কিভাবে লিখবে?”  সেই থেকে কপি বাদ। রাস্তায় স্যারের সাথে দেখা হলে গল্প হত । স্যার বলত ” বাইরে বন্ধু, কিন্তু পড়ার টাইমে স্যার, আবার বন্ধু বলে গায়ে উঠে পরোনা যেনো”  । কি আর বলবো, স্যারের ভক্ত হয়ে পরলাম। খুব কম স্যার ছাত্র- ছাত্রির মনের কথা বোঝে,জিশু স্যার ছিলেন তাদের একজন।  আমি নিজের মতই চলতাম, মাসে দু মাসে একবার চুল কাটতাম, কেও বললেও কাটতাম না। কিন্তু শীতের সকালে একদিন ঝাকড়া চুল নিয়ে কোচিং এ ঢুকার পর,জিশু স্যার হঠাত গর্জে উঠলো সবার সামনে, চুল না কেটে আসলে ক্লাস করতে পারবানা । অন্যেরা তাকিয়ে হাসছিলো। রাগে,অপমানে চোখে পানি নিয়ে বেরিয়ে আসলাম। বাসার পথে অর্ধেক গিয়ে ফিরে আসলাম। জিশু স্যার এমন করতে পারেন না। আমাকে তার ক্লাস থেকে বের করে দিতে পারেন না। ঢুকে গেলাম স্যালুনে, চামড়া ছাট দিয়ে ফিরে গেলাম কোচিং এ। জিশু স্যার নির্বিকার, যেন জানতেন আমি চুল কেটেই আসবো।

স্যার সবাইকে গনিতে ৮০% নম্বর পেলে একটা করে কলম দিতেন  । সে কলমের আশায় রাত দিন অঙ্ক কষতাম। কখনো পারতাম, কখনো নয়। কিন্তু আর কারো কথা জানিনা, ৭৫% পেলেও কলম টা আমি স্যার থেকে আদায় করে নিতাম। জিশু স্যার একদিন অনেক কথা বলেছিলেন,ব্যাক্তিগত কথা ,কাউকে না বলার কথা দিয়েছিলাম। এখনো  কাওকে বলিনি স্যার। কিন্তু আপনার সাথে একবার দেখা করার অনেক সাধ। স্যার কে হঠাৎ হারিয়ে ফেললাম,কোচিং ছাড়ার পর,সে যুগে এইট -নাইন এর ছেলেদের মোবাইল ছিলোনা। ফ্যামিলিতেও ছিলোনা বোধয়। জিশু স্যার কে পরে অনেক খুজেছি, পাইনি। জিশু স্যার আপনি কোথায়? আমাকে দেখলে আপনি এখন না চিনলেও আপনাকে আমি চিনে নিব। একদিন নিশ্চই দেখা হবে স্যার, ।স্যার আমার নাম্বার ০১৮১৫৭৯৫৪৯৯  ,যদি লেখাটা দেখে থাকেন, প্লিস, স্যার একবার কথা বলতে চাই। আপনি যেখানেই থাকুন, আমি চলে আসব, আবার গল্প হবে ,আবার আড্ডা হইবে, আবার গনিতের কাব্য হবে।

 

ফেসবুক কমেন্টস

Reactions

0
0
0
0
0
0
Already reacted for this post.

প্রতিক্রিয়া

মন্তব্য করুন