একটি অপূর্ণতা ও আশা

Please log in or register to like posts.
পোস্ট

১৪/০৯/২০১৭

 

আজকের ক্লাসে মনটাকে কোনোভাবেই বসাতে পারছিলাম না । স্যারের লেকচার গুলো শুধু শুনেই যাচ্ছি, আর হুম হুম বলে যাচ্ছি , অনেকটা সদ্য কথা বলতে শিখা শিশুর মত ,ভাবটা এমন যেন বুঝে সব একাকার। মনের সাথে যুদ্ধ করতে করতে হঠাৎ চোখ পড়লো ঘড়িতে , দেখেই মনটা ভাল হয়ে গেলো। আর মাত্র ১০ মিনিট পরেই টি ব্রেক। চোখের সামনে যেন শিশির ভাইয়ের চা চলে এলো। কল্পনাতেই এক কাপ চায়ের স্বাদ নিলাম।  আআহহ……

 

চায়ের বিরতি চলছে । আমারা কয়েক জন উত্তেজিত মনোভাবে নিচে নামতেই শিশির ভাইয়ের চায়ের দোকান দৃষ্টি গোচর হলো। শিশির ভাইয়ের দোকানটা ছোটখাটো, মালামালের তেমন বালাই নেই। স্বল্প পুঁজিতে নিজের দক্ষতাকে কাজে লাগানোর মানসিকতার লোক । ৬ কাপ চা চলে আসলো । চাতে চুমুক দিতেই সকলের মধ্যে সতেজতার একটা বিস্ফোরণ হলো। কথায় কথায় অনেক কথাই হলো। আমি তেমন কিছু না বললেও আড্ডার স্বাদটুকু নিতে কার্পন্য করি নি। চা-গল্পে বিরতির সময় কেটে গেলো।

 

সবাই মিলে যখন ক্লাস ফিরে যাচ্ছিলাম তখন আমাদের সম্মুখ দূরে একটা মানুষকে দেখে আমার কপালে ভাঁজ পড়লো। তাকে দেখেই মনের মধ্যে একটা অবাধ্য ইচ্ছা জাগলো।  হাঁটছি আর তাকে লক্ষ করছি। সেও ঠিক সমবেগেই আমাদের দিকেই এগিয়ে আসছে। দূরত্ব যত ক্ষীণ হচ্ছে মনের ইচ্ছার সাথে বিবেকের দ্বন্ধ জ্যামিতিক হারেই বাড়ছে। দূরত্ব ঘুচিয়ে  সে যখন আমাকে পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছে তখনো আমি লোকলজ্জার ভয়ে কিছুই বলতে পারলাম না। আমি হঠাৎ কিছু একটা ভেবে দাড়িয়ে গেলাম। নিজের এত স্বাদের ইচ্ছেটাকে এভাবে মাটি করে দেয়া যায় না।  তাই তাকে ডাক দেওয়ার ইচ্ছেটাকে জোর করে বুকের ভেতর থেকে মুখে নিয়ে এলাম। তাকে ডাক দিলাম। সে ঘুরে দাড়ালো।

 

এই মামা দাড়াও …এই পাখিওয়ালা মামা দাড়াও দাড়াও …।

লোকটা আমাদের থেকে বড়জোর দশ কদম দূরে দাঁড়ালো। আমি লোকটার কাছে এলাম, দেখি বেশ কয়েক জোড়া পাখি , ততক্ষণে আমার সাথের বন্ধুরাও চলে এসেছে। লক্ষ্য করলাম আমার মত আমার বন্ধুরাও পাখি দেখে উত্তেজিত। যে লোকলজ্জার ভয় পেয়েছিলাম সেটাই এখন সাহস হয়ে দাঁড়ালো।

 

অনেক গুলো পাখির মধ্যে একজোড়া পাখি আমাকে খুব টানলো। পাখি জোড়া মাঝারি সাইজের ছিল।

রংটা বলেতে পারছি না,  । রং এর নামের ব্যাপারে আমি নিরব। পাখি জোড়ার নামটা মনে নাই ।তবে এইটা বলেতে পারি পাখি জোড়াটার রাসায়নিক বন্ধনটা বোধয় বেশ শক্ত ছিল। সবচেয়ে মজার যে ব্যাপারটা ছিল পাখি জোড়া নাকি মাসের অন্তরে রং পালটায় । পাখি জোড়া যেহেতু পছন্দই হয়েছে নিজের করে নিতে পারলে ষোলকলা পূর্ণ হবে। পকেটের অবস্থা না জেনেই জিজ্ঞাস করলাম…

 

-মামা কত হলে দিতে পারবেন ?

 

-একদাম তিনশ হলে দিয়া দিমু । নিয়ে নেন মামা আফনে জিতবেন। এই জাতের পাখি এক জোড়াই আছে ।

 

দাম শুনে  একটু অবাক হলাম। যা ভেবেছিলাম তার চেয়ে কম। অন্যরাও বলল দামটা ঠিক আছে । কিন্তু পকেটে তার অর্থেক থাকলেও কর্য করে নিয়ে নেয়া যেত । বোহেমিয়ান  ব্যাচেলর হলে যা হয় আরকি ।

 

-ধন্যবাদ মামা। কিন্তু নিতে পারছি না ।

-আচ্ছা ঠিক আছে ।

লোকটা হাল্কা-পাতলা গড়নের, ছিমছাম, চোয়াল দুইটা একটু ভাংগা কিন্তু দাড়ির কারনে তেমন বুঝা যায় না।  দেখলেই বুঝা যায় খেটে খাওয়া মানুষ। হেঁটে হেঁটে পাখি বিক্রি করে । কিন্তু বিক্রি না করতে পারায় তার মধ্য তেমন হতাশা লক্ষ করা গেলো না। সে তার মত করে চলে গেল আমরা আমাদের মত করে ক্লাস  এ চলে আসলাম।

 

শখটা প্রকৃত পক্ষে সেদিন থেকেই মনের মধ্যে লালন করে আসছি এখনো। নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারে এমন অনেক শখ শুধুই শখ ই থেকে  যায়। তবে পাখি আমি একজোড়া হলেও পালবো । পাখিজোড়া যে শুধু অর্থের জন্য খরিদ করতে পারি নি ব্যাপারটা এমন না, পাখি রাখার জন্য জায়গা ও  তো লাগে। থাকি মেচে ,মানুষ থাকতেই হাপিয়ে যাই আবার পাখি রাখবো কই। একটা বারান্দাও নেই বাসায় । আর আমি যে বোহেমিয়ান স্বভাবের । ইচ্ছাটা জিইয়ে রেখেছি । ব্যাচেলরের তকমা সরলে হয়তো একটা সুযোগ হবে ।  

ফেসবুক কমেন্টস

Reactions

0
0
0
0
0
0
Already reacted for this post.

প্রতিক্রিয়া

মন্তব্য করুন