ইয়েটসকে ধরা হয় ঐতিহ্যগত ভাবধারার অত্যন্ত দক্ষতাসম্পন্ন একজন কবি।
১৮৬৭ সালে, ছেলে ইয়েটসের বয়স তখন দুই বছর। ওই বয়সে বাবা জন বাটলার ইয়েটস চিত্রশিল্প শেখার জন্য সপরিবারে স্থানান্তরিত হন লন্ডনে। ১৮৭৭ সালের ২৬ জানুয়ারি, শিশু উইলিয়ামের স্কুলযাত্রা শুরু হয়। তাঁকে ভর্তি করা হয় লন্ডনে, হেমারস্মিথের অন্তর্গত ডলফিন স্কুলে। এই স্কুলে তিনি চার বছর পড়ালেখা করেন। স্কুলের রিপোর্ট অনুযায়ী তিনি খুব ভালো মানের ছাত্র ছিলেন না। তার বাবা জন ইয়েটস সে সময় খুবি অর্থকষ্টে ভুগছিলেন।। ফলে ১৮৮০ সালে ফের ডাবলিনে ফিরে যেতে বাধ্য হয় তাঁদের পরিবার। সেখানে ১৮৮১ সালের অক্টোবরের দিকে উইলিয়াম আবার তাঁর শিক্ষাজীবন শুরু করেন। তাঁর পরিবারের সবাই ছিল শিল্পমনা। ফলে শহরের বড় বড় চিত্রশিল্পী ও সাহিত্যিকদের সঙ্গে পরিচিত হয়ে ওঠেন তিনি। ১৮৮৪ সালে দুই বছরের জন্য ভর্তি হন ডাবলিনের ‘মেট্রোপলিটন স্কুল অব আর্ট’ স্কুলে।
এ সময় তার কবিতার চর্চা বাড়তে থাকে।১৮৮৫ সালের ২১ অক্টোবর তাঁর ‘দ্য পোয়েট্রি অব স্যামুয়েল ফার্গুসন’ শিরোনামের কবিতাটি প্রথম প্রকাশিত হয় ডাবলিন ইউনিভার্সিটি রিভিউতে। তিনি তাঁর সাহিত্যকর্ম শুরু করেন মাত্র ১৭ বছর বয়স থেকেই। উইলিয়ামের শুরুর কবিতাগুলো ছিল শেলী এবং এডমন্ড স্পেন্সার দ্বারা প্রভাবিত।পরে অবশ্য তিনি অন্য ধারায় কাব্য রচনা শুরু করেন। পরে তাঁর সৃষ্টিকর্মে প্রি-রাফায়েল, আইরিশ লোকগাথা এবং সংস্কৃতিক প্রভাব ছিল সুস্পষ্ট। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর তিনি উইলিয়াম ব্ল্যাকের সৃষ্টিকর্মের গুণগ্রাহী হয়ে ওঠেন।১৮৮৭ সালে ইয়েটস পরিবার আবার স্থানান্তরিত হয় লন্ডনে। সেখানে একদল ব্রিটিশ কবি নিয়ে তিনি গঠন করেন রাইমার্স ক্লাব। পরে সেটি ট্রেজিক জেনারেশন হিসেবে পরিচিতি পায়। ১৮৯২ এবং ১৮৮৪ সালে সে সংগঠন থেকে দুটি সংকলন প্রকাশিত হয়।
১৮৯৯ সাল। উইলিয়ামের বন্ধু এডওয়ার্ড মার্টিন, লেডি গ্রেগরি এবং জর্জ মুর সম্মিলিতভাবে প্রতিষ্ঠা করেন অ্যাবে থিয়েটার বা আইরিশ লিটারেরি থিয়েটার। এটি আইরিশদের জাতীয় থিয়েটার হিসেবেও পরিচিত হয়। আইরিশ জাতীয় আন্দোলনে অসামান্য ভূমিকা পালন করে এ থিয়েটার।
তিনি ছিলেন বেশ সৃষ্টিশীল, এবং স্বপ্নবিলাসী কবি। আয়ারল্যান্ডের সাধারণ মানুষের লোকসংস্কার, লোকগাথায় তিনি ছিলেন বিমুগ্ধ। তাঁর সমসাময়িক পরিবেশ বুঝলে তাঁর কবিতার ভাব বুঝতে সুবিধে হয়।তাঁর কবিতা বুঝতে হলে সেই দেশের অতিপ্রাকৃত ও জাদুবিশ্বাস, ধর্মতত্ত্ব ও প্রতীকীবাদ সম্পর্কে ধারণা থাকা প্রয়োজন।
১৯১১ সালে উইলিয়াম বাটলার ইয়েটসের বয়স যখন ৫১, তখন তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয় জর্জ হাই লিজ নামে এক তরুণীর। বাড়ে ঘনিষ্ঠতা। ১৯১৭ সালের ২০ অক্টোবর সেই বান্ধবীর সঙ্গে বিয়ে হয় তাঁর। বয়সের অনেক পার্থক্য থাকার পরও তাঁদের দাম্পত্য জীবন ছিল সুখের। উইলিয়ামের সৃষ্টিকর্মে স্ত্রী নানাভাবে সহযোগিতা করতেন। এ সুখী দম্পতির দুটি সন্তান প্রথমটি কন্যা-অ্যান; জন্ম ১৯১৯ সালে। দ্বিতীয়টি ছেলে মাইকেল, জন্ম ১৯২১ সালে। উইলিয়াম তাঁর দুই সন্তানকে নিয়ে দুটি কবিতাও লেখেন। ১৯২২ সালে ইয়েটস আইরিশ সিনেট নির্বাচিত হন। ইংরেজি ও আইরিশ সাহিত্যে অসামান্য অবদানের জন্য এই বিখ্যাত সাহিত্যিক ১৯২৩ সালে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন।
ইয়েটস ডাবলিন কে ভালোবাসতেন।লন্ডনে অবস্থানকালে ইয়েটস প্রতি গ্রীষ্মে চলে যেতেন ডাবলিনে,তার প্রানের শহরে।