সাকিব আল হাসান বাংলাদেশের ক্রিকেটকে বিশ্ব দরবারে উচ্চ আসনে বসানোর রুপকথার রাজকুমার।সাকিব আল হাসান শুধু মাত্র একটি নাম নয়।সাকিব আল হাসান এখন বিশ্বের তাবদ দেশে খেলছেন,নিজের দেশের ঝান্ডা উড়াচ্ছেন। একজন সমীহ জাগানো ক্রিকেটার। বাংলার হাজারো শিশু কিশোর এর আইকন ক্রিকেটার তিনি। সবাই সাকিব হতে চায়। অসুবিধা কই, এমন সাকিব আর কয়েকটা হলে দেশের ই লাভ। তবে এটাও সত্য এমন সাকিব বলে কয়ে জন্মায় না। শত বছরে এদের কদাচিৎ আগমন ঘটে। বদলে যাওয়ার জন্য, বদলে দেওয়ার জন্য। সাকিব যখন যেকোন দেশের ক্রিকেট প্রাঙ্গনে যে কোন জার্সি গায়ে নামে, চায়ের দোকানে ভিড় জমে জায়। না শুধু উইকেট পাওয়া নয়, নিজের দেশের রত্ন গর্ভা মায়ের ছেলে টা কে একপললক দেখার জন্যে মানুষে্র এ আবেগ। বলতে গেলে বাংলাদেশ এবং দেশের ক্রিকেটের ব্র্যাণ্ড সাকিব আল হাসান। একটা সময় ছিল যখন শচীনটেন্ডুলকার, এডাম গিলক্রিস্ট , কপিল দেব, ব্রায়ান লারা এদের খেলার প্রসংশা করা আর আনন্দ উপভোগ করাই ছিলো বাঙালিক্রিকেট প্রেমিদের একটা আবেগের অংশ। মাঝে মাঝে বাংলাদেশের খর্ব শক্তির দেশ গুলোর সাথে আসা জয় ছিল ক্রিকেট প্রেমিদের জন্য ঈদের চাঁদ। অন্যান্য দেশের কিংবদন্তিদের জয়গান ছিলো আমাদের কন্ঠে , কারন একটাই নিজের দেশের সেই উচ্চতার একটা ক্রিকেটিও কিংবদন্তির অভাব। সে অভাব ঘুচিয়ে দিলেন সাকিব আল হাসান, চিনিয়ে দিলেন প্রথম থেকেই তার জাত।
তিনি শুধু খেলতেই আসেন নি, তিনি ক্রিকে্ট কে কিছু দিতে এসেছেন। অন্য দেশের কিংবদন্তি দের গুনকীর্তন বাদ দিয়ে বাঙ্গালী মেতে উঠলো বাংলার এক দামাল ছেলের জয় গানে। যে কিনা অল্রাউন্ডার নৈপূন্যে একে একে ছিনিয়ে নিচ্ছিলেন ক্রিকেটের সেরা অল্রাউন্ডারের সব ফরমেটের আসন। ক্রিকেটের তিন ফরমেটে সাকিব আল হাসানের নামটাই জেন মানায় বেশি। দেশ বিদেশের অন্যদের ছাপিয়ে অল্রাউন্ডার সাকিব রীতিমতো বিশ্ব কাপাচ্ছেন এখন।বাংলাদেশে একজন কিংবদন্তি তূল্য ক্রিকেটারের অভাব ছিল, সেটা সাকিব বেশ ভালোই ঘুচিয়েছেন। দেশ-বিদেশের ক্রিকেট গ্রেট আর ভক্তদের প্রশংসা সাকিবের সাথে সাথে বাংলাদেশের ক্রিকেট কেও নিয়ে গেলো অন্য উচ্চতায়।
এসব কি এক দিনে হলো? সাকিব এলেন, দেখলেন এবং জয় করলেন? মোটেই নয়। আসুন জানি তার জীবনের গল্প, তার কিংবদন্তি হওয়ার পেছনের এবং পরের কিছু কথা।
সাকিবের জন্ম ১৯৮৭ সালের ২৪ মার্চ।তার অভিষেক হয়েছিল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচের মধ্য দিয়ে। সাকিবের শুরুটা ছিলো অল্রাউন্ডার হিসেবে। এখনো সে জায়গাটা বেশ শক্ত করেই ধরে রেখেছেন।বাম হাত্তি ব্যাটসম্যান , বলিং ও বামহাতি অর্থডক্স স্পিনার হিসেবেই করেন। বলারদের বিপক্ষে তার ব্যাট ধারালো তরবারি হয়ে উঠে প্রায়। বলিং টাও করেনবিশ্ব মানের বা্ম হাতের ঘূর্নিজাদুতে অনেক নাম করা খেলোয়াড়ের উইকেট তিনি নিমিশেই তুলে নেন।সাকিব বিকেএসপির প্রাক্তন শিক্ষার্থী।দলের নির্ভরযোগ্যতার প্রতীক তিনি। হয়ে উঠেন সময়ের সাথে দলের ওয়ান ম্যান আর্মি, দলের প্রান ভোমরা।২০১৫ সালে টেস্ট ,ওয়ানডে আর টি ২০ ক্রিকেটের এই তিন ফর্মেটে এক নম্বর অল্রাউন্ডার হয়ে উঠেন।সাকিব আল হাসান প্রথম বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে ওয়ানডে ক্রিকেটে চার হাজারে রান করার গৌরব অর্জন করতে সক্ষম হন৷ এছাড়া দ্বিতীয় অলরাউন্ডার হিসেবে টি২০তে ১০০০ রান ও ৫০ উইকেট লাভ করেন ৷
আসুন জেনে নি সাকিব আল হাসানের প্রথম দিকের জীবন ও তার ক্রীড়া প্রেম নিয়ে।
তারুন্যেই তার খেলার প্রতি ছিল অমোঘ টান।বড় হয়েছিলেন ফুটবল পাগল পরিবারে , এর পরেও কমেনি ক্রিকেটের প্রতি নেশা। নইলে আমরা আমাদের সাকিব আল হাসান কে পেতাম কিভাবে! তার অসাধারন ক্রিকেট দক্ষতার সুবাদে তাকে গ্রামে গ্রামে খেলার জন্য নিয়ে যাওয়া হত।সেখানেই একজন আম্পায়ার এর সুনজরে পরেন তিনি। যিনি তাকে সুযোগ করে দেন ইসলামপুর পাড়া ক্লাবের হয়ে খেলার যেটা মাগুরার ক্রিকেট লীগের একটি দল।সাকিবের ঘূর্নি জাদুর শুরু এখান থেকেই। তার ব্যাটিং ছিলআক্রমনাত্তক। ইসলামপুর দলের হয়ে তিনি প্রথম কাঠের বলে খেলা শুরু করেন। কাঠের বলে বল করলেন,এবং উইকেট পেলেন। প্রথম বলেই! , এর আগে তিনি টেপ টেনিস দিয়েই খেলতেন।
মাত্র ১৫ বছর বয়সেই সাকিব অনূর্ধব ১৯ দলে খেলার সুযোগ পান।২০০৫ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যেই সাকিব অনূর্ধব ১৯ এর হয়ে ১৮ টি এক দিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেন।৩৫.১৮ গড়ে সাকিব মোট ৫৬৩ রান সংগ্রহ করেন ব্যাটের সাথে পাল্লা দিয়ে ২০.১৮ গড়ে নেন মোট ২২টি উইকেট।২০০৫ এ অনূর্ধব ১৯ এর ফাইনালে ৮৬ বলে সেঞ্চুরি ও ৩ উইকেট নিয়ে দল কে জেতাতে ভূমিকা রাখেন।২০০৬ সালের জিম্বাবুয়ে সফরে প্রথম বাংলাদেশ জাতিয় দলের হয়ে খেলার সুযোগ পান।একদিনের আন্তর্জাতিক খেলায় সাকিবের অভিষেক হয় ৬ই আগস্ট। তার সর্ব প্রথম শিকার হন এল্টন চিকাম্বুরা ।৩৯ রান দিয়ে ১ উইকেট, এই ছিল তাঁর সেদিনকার বোলিং ফিগার।ব্যাট হাতে ৩০ বলে ৩০ রান করে অপরাজিত থাকজেন। পরবর্তিতে চুক্তিবদ্ধ হন বোর্ডের সাথে।
২০০৭ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ এ আওজিত ক্রিকেট বিশ্বকাপ এর জন্য ১৫ সদস্যের স্কোয়াডে ডাক পান। বাংলাদেশ টুর্নামেন্ট শেষ করে সাত নম্বর দল হিসেবে। হারায় সে সময়ের শক্তিশালী দল ইন্ডিয়া কে, টপকে যায় ১৯২ রানের টার্গেট, হালফ সেঞ্চুরি পান তামিম ইকবাল ,মুশফিক, সাকিব আল হাসান।সাকিব ৯ ম্যাচে ২৮.৮৫ গড়ে ২০২ রান করেন। দেশের পক্ষে সর্বোচ্চ রান করেন মোহাম্মদ আশরাফুল (২১৬)। সাকিব আল হাসান ৪৩.১৪ গড়ে ৭টি উইকেট নিজের ঝুলিতে পুরে নেন।২০০৭ এই ভারত বাংলাদেশ সফরে আসে ২ টেস্ট ও ৩ ওয়ানডে খেলার জন্য। সময় টা ভালো যায়নি সাকিব আল হাসানের ।সেপ্টেম্বরে আইসিসি আওয়জিত টি২০ আসরে ওয়েস্টিন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশ জয় লাভ করে, ম্যাচ টি তে সাকিব আল হাসান ৩৪ রানে ৪ উইকেট নেন। ধীরে ধীরে সাকিব প্রমান করছিলেন নিজেকে। ২০০৭-এর ডিসেম্বর মাসেই টাইগার রা দুই টেস্ট ও তিন ওয়ানডে খেলতে নিউজিল্যান্ড আসে।প্রথম টেস্টে খেলার সুযোগ পান নি সাকিব তবে পরের টেস্টেই সাকিব এনামুল হক জুনিয়রকে রিপ্লেস করেন তার ব্যাটিং কোয়ালিটির জন্য। এটা ছিল সাকিবের ৪র্থ টেস্ট। সে সময় পর্যন্ত সাকিব টেস্টে উইকেটশূন্য ।তারপর, প্রথম টেস্ত উইকেট এর স্বাদ পান, সাকিবের প্রথম টেস্ট শিকার হন নিউজিল্যান্ডের ক্রেইগ কামিং।২০০৮ , ফেব্রুয়ারি-মার্চে ২ টেস্ট ও ৩ ওয়ানডে খেলার জন্য দক্ষিণ আফ্রিকা, বাংলাদেশে আসে। দুই টেস্টেই সফরকারী দল জয়লাভ করে ভালোভাবেই।। সাকিব ১২২ রান দেন,বিনিময়ে মাত্র একটি উইকেট নেন তবে ব্যাট হাতে ৭৫ রান করেন। ওয়ানডে সিরিজে দক্ষিণ আফ্রিকা ৩-০ তে জয়ি। এই সিরিজেই সাকিব ওয়ানডেতে এক হাজার(১০০০)রানের মাইলফলক ছুয়ে ফেলেন ।মাত্র ৩৯ ম্যাচ খেলে সাকিবের ব্যাটিং গড় সে সময়টায় ৩৫.৩৭।
সাকিবের অল্রাউন্ডার হয়ে উঠার পথ কঠিন ছিল। কিন্তু তিনি সাকিব আল হাসান , জানেন কিভাবে স্নায়ুচাপ সামলে এগিয়ে যেতে হয়। আসুন জানি সে গল্পটা।
২০০৮ থেকে ২০০৯ সাকিবের অল্রাউন্ডার হয়ে উঠার গল্পের শুরু।২০০৮ এর নিউজিল্যান্ড সফরে ৩৭ রানে তুলে নেন ৭ উইকেট, হতাশ করেন নি কোচ আর ভক্তদের।১৭.৮০ গড়ে ১০ উইকেট নিয়ে সিরিজের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি হন।এর পরের মাসেই টাইগার দল ২ টি টেস্ট, ৩ টি ওয়ানডে ও একটি টি-২০ খেলতে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যায়। সাকিবের বোলিং এর ঘূর্নি জাদু এখানেও দেখা যায় । ১ম টেস্টের ১ম দিন সাকিব উইকেটশূন্য থাকে।,পরবর্তিতে মোহাম্মদ সালাহউদ্দীন, তাকে বলে ‘ফ্লাইট’ দেবার পরামর্শ দেন। গুরুর উপদেশ শিরোধার্য করে সাকিব ২য় দিনেই পাঁচ-পাঁচটি উইকেট শিকার করেন। ২য় টেস্টে সাকিব আবারও এক ইনিংসে ৫ উইকেট তুলে নিয়ে রেকর্ড করেন।সেই সিরিজ শেষে সাকিবের ভাগে জমা হলো ২০.৮১ গড়ে ১১টি উইকেট। ২০০৯ সালের ২২ জানুয়ারি সাকিব আইসিসি’র ওডিআই অল-রাউন্ডার র্যাঙ্কিংয়ে উঠে আসেন ১ নম্বরে।বাংলাদেশের একজন ক্রিকেটার রেংকিং এ শীর্ষে ভাবতেই তখন শিহরিত হতাম।এরপর তার মান বুঝে ২০১১ সালে আইপিএল এর নিলামে তাকে ৪ লাখ ২৫ হাজার ডলারের বিনিময়ে কিনে নেয় শাহ রুখ খানের কলকাতা নাইট রাইডার্স ।
২০০৯ এর শুরুতে টানা হারের বলয়ে ঘুরতে থাকা বাংলাদেশের নেতৃত্ব আশরাফুল হয়ে মাশরাফির হাতে আসে। পরে মাশরাফির ইঞ্জুরিতে পরায় নেতৃত্ব চলে আসে সাকিব আল হাসানের হাতে।সে সময় সাকিব আল হাসান অধিনায়ক ছিলেন ২০০৯ থেকে ২০১০ পর্যন্ত।এই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ খেলে ওয়েস্টিন্ডিজ,জিম্বাবুয়ে,ইংল্যান্ড সফর করে, অংশ গ্রহন করে এশিয়া কাপে। বছর জুড়ে ধারাবাহিক অবদানের কারণে সাকিব আইসিসি কর্ত্ক ‘টেস্ট প্লেয়ার অব দ্য ইয়ার, ২০০৯’ ও ‘ক্রিকেটার অব দ্য ইয়ার, ২০০৯’ এর জন্য মনোনীত হয়ে ভক্ত দের উল্লাসিত করেন।। তিনি প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে এ ধরণের ক্যাটাগরীতে মনোনীত হন।২০১০ সালে নিউজিল্যান্ড ও জিম্বাবুয়ের সাথে সাকিব সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন।নিউজিল্যান্ডেরে বিপক্ষে বাংলাদেশ সিরিজ জিতে ৪-০ তে।৪র্থ ম্যাচে সাকিব শতক এর দেখা পান এবং ৩ উইকেট নিয়ে দলের বিজয় নিশ্চিত করেন। ২১৩ রান করেন তিনি, সাকিব আল হাসান সিরিজের সর্বোচ্চ স্কোরার হন একি সাথে ১১ উইকেট নিয়ে হন সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী।সর্বশক্তির কোন টেস্ট খেলুড়ে দলের বিরুদ্ধে এটাই বাংলাদেশের প্রথম জয়। জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে সিরিজ জয় হয়। সাকিব ১৫৬ রান করে ২য় সর্বোচ্চ স্কোরার হন, ঘূর্নি জাতুতে তুলে নেন মূল্যবান ৯ টি উইকেট।
নতুন নেতৃত্বের বাংলাদেশ দলের ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ শুরু হয় অক্টোবরে ১১ তারিখ।।সাকিব অধিনায়কত্ব থেকে মুক্তির পর আরো দারুন পারফর্মেন্স দেখা। বাংলাদেশী হিসেবে টেস্ট এবং ওডিআইয়ে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী হওয়ার সাথে সাথে সাকিব বাংলাদেশের শীর্ষ রান সংগ্রহকারী্র তকমা নিজের গায়ে জড়িয়ে নেন।এবং শীর্ষ উইকেট শিকারী হন ।নিজ দেশের মাটিতে টেস্ট সিরিজ ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের ২য় টেস্টে তিনি ১ম বাংলাদেশী খেলোয়াড় হিসেবে একটি শতরান (তাঁর সেরা ইনিংস ১৪৪) এবং সাথে একই টেস্টে ৫ উইকেট নেন। সিরিজের পর তিনি আইসিসির টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ে ১ নম্বরে উঠে আসেন।বিশ্ব চিনলো বাংলার ও বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার কে।২০১২ সালে এশিয়া কাপের ফাইনালে মাত্র ২ রানে হারের আক্ষেপে পুড়তে হয় বাংলাদেশ কে। সাকিব তার অসাধারন পারফর্ম্রন্স এর জন্য হন সিরিজ সেরা.২০১৫ সাল, ভারতের বিপক্ষে বৃষ্টি বিঘ্নিত একমাত্র টেস্ট ম্যাচে তিনি ২০৪ রান তোলেন। সাকিব বলতেই বাংলাদেশ, বাংলাদেশ বলতেই যেন সাকিব কেই বোঝানো হত। অন্যান্য নায়ক রাও ছিলেন সাকিবের যোগ্য সঙ্গ হয়ে। এর মধ্যে তামিম,মুশফিক,মাহামুদুল্লাহ, তো সাথেই ছিলেন।
ক্রিকেট বিশ্ব কাপ ২০১৫। বলে দিতে হয়না এর অবধারিত এবং অন্যতম সদস্য সাকিব আল হাসান।গ্রুপ পর্বে আফগানিস্থান এর বিপক্ষে অসাধারন নৈপুণ্য দেখান তিনি। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ১ দিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে ৪০০০ রানের মাইল ফলক ছুলেন।সাকিব আল হাসানের রেকর্ড ও পরিসংখান সাকিবের শ্রেষ্ঠত্বের প্রতিফলক।টেস্ট ও ওয়ান্ডে তে দেশের মাটিতে ২০০০ রান এবং ১০০ উইকেত নেওয়ার কৃতিত্ব আছে সাকিবের।যা এর আগে একমাত্র জ্যাক ক্যালিসের ছিল।
আসুন জেনে নি পরিসংখান কি বলছে সাকিব সম্পর্কে। এক নজরে দেখে নি সাকিবের , টেস্ট , ওডিয়াই ,ওটি ২০ ক্যারিয়ার।
টেস্ট –
ব্যাটিং এ – ৫১ ম্যাচে ৯৬ ইনিংস ব্যাট করেছেন। নট আউট ছিলেন ৭ বার। মোট রান ৩৫৯৪,বল মোকাবেলা করেছেন ৫৭৮৭ টি। সর্বোচ্চ ২১৭।ব্যাটিং গড় ৪০.৩৮। শতক হাকিয়েছেন ৫ বার, ২০০ ত রান করেছেন ১ বার ,অর্ধ শতক আছে ২২ টি।
বোলিং এ ৫১ ম্যাচে ৮৬ ইনিংস এ ১২০৯২ বার হাত ঘুরিয়ে ১৮৮ উইকেটের বিনিময়ে দিয়েছেন ৬০৮৫ রান।৫ উইকেট নিয়েছেন ১৭ বার ,১০ উইকেত ২ বার।ইকোনোমি ৩.০২।এক ইনিংস এ সর্বোচ্চ উইকেট শিকার ৩৬ রানে ৭ উইকেট, আর এক ম্যাচে সর্বোচ্চ ১২৪ রানে ১০ উইকেট।
ওয়ান্ডে-
ব্যাটিং এ ১৮৫ ম্যাচ খেলে ব্যাট করেছেন ১৭৪ ইনিংস।২৪ বার নট আউট ছিলেন.৩৪.৯৫ গড়ে ৫২৪৩ রান করেছেন।সর্বোচ্চ ১৩৪।বল মোকাবেলা করেছেন ৬৪৬৮ টি।শতক হাকিয়েছেন ৭ টি,অর্ধশতক ৩৭ টি।স্ট্রাইক রেট ৮১.০৬।
বোলিং এ ১৮৫ ম্যাচে ১৮২ ইনিংস এ বল করেছেন।হাত ঘুরিছেন ৯৩৪৩ বার , রান দিয়েছেন ৬৯২৪। ৪.৪৫ ইকোনোমিতে উইকেট নিয়েছেন ২৩৫ টি।৫ উইকেট ১ বার।বেস্ট বোলিং ৫ উইকেটে ৪৭ রান।
টি ২০-
ব্যাটিং এ ৬৩ ম্যাচ এ ৬২ ইনিংস ব্যাটিং করেন.১০২৪ বল মোকাবেলা করে ১২৩৭ রান করেন,২২.৪৯ গড়ে।স্ট্রাইক রেট ১২২, অর্ধশতক ৬টি।
বোলিং এ ৬৩ ম্যাচ খেলে ৬২ ইনিংস বোলিং করেন।১৩৬৭ টি বল করে ১৫৪৫ রান দেন।সর্বমোট উইকেট ৭৫।বেস্ট বোলিং ৪ উইকেটে এ১৫ রান ।ইকোনোমি রেট ৬.৭৮।
আইসিসি র্যাঙ্ককিং এ ব্যাটিং এ টেস্ট, ওডিয়াই ও টি২০ তে যথাক্রমে ২১,৩১,৪৫ নম্বর এ আছেন এবং বোলিং যথাক্রমে ১৯,২৩ ও ১২ নম্বর এ এ আছেন। আইসিসি অল্রাউনডার রেংকিং এ টেস্ট এ ১ নম্বর, ওডিয়াই এ ১ নম্বর এবং টি ২০ তে ৩ নম্বর এ আছেন বর্তমানে।
২০১২ সালের ১২ই ডিসেম্বর। সাকিব আল হাসান যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী উম্মে আহমেদ শিশিরের সাথে বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে জীবনের আরেকটি অধ্যায়ের সূচনা করেছিলেন।মাঠে ও বাইরের বিভিন্ন কাজের কারনে সাকিব বিভিন্ন সময় সমালোচিত হয়েছেন।২০১৪ সালে তিনি ৬ মাসের জন্যে নিষিদ্ধ হন।সাকিব ক্যারিয়ার আজ পর্জন্ত অনেক প্রশংসা তুল্য রেকর্ডের জন্ম দিয়েছে। তার রেকর্ড তার হয়ে কথা বলে। তার মত সাহসী ক্রিকেটার বাংলার টাইগারদের আত্মবিশ্বাস তুঙ্গে পৌছে দেয়।সর্বশেষ নিদহাস ট্রফিতে সাকিব আম্পায়ার বিতর্কের কারনে মাহামুদুল্লাহ রিয়াদ ও রুবেল কে ম্যাচ ছেড়ে চলে আসতে বলেন। অনেকেই একে উদ্ধত বলেছেন। তবে এটাও সত্য এতটুক সৎ সাহসের দরকার ও আছে। শেষ পর্যন্ত ম্যাচ টি বাংলাদেশ টান টান উত্তেজনার মধ্য দিয়ে, মাহামুদুল্লার বিশাল ৬ এ, এক বল হাতে রেখে জিতে নেয়।
সর্বশেষ ২০১৯ বিশ্বকাপে সাকিব আছেন দুর্দান্ত ফর্র্মে। দুটি সেঞ্চুরি দুটি অর্র্ধশতক নিয়ে রান সংগ্রহের দৌড়ে সমানে পাল্লা দিচ্ছেন সেরাদের সাথে। ওডিআই অলরাউন্ডার রেঙ্কিংয়ের সেরার মুকুট আবারো তার মাথায়। চোখ বন্ধ করে অলরাউন্ডার দের তালিকায় ইতিহাস সেরাদের অগ্রগামী স্যার সাকিব আল হাসান। ব্যাট্সমেন সাকিব ও কি কম সেরা বা বোলার ?
এমন ক্রিকেটার কম ই থাকেন যারা মানুষের আবেগে নাড়া দিয়ে যান, যে মাঠে নামলে বাংলাদেশ জেগে উঠে, বাংলাদেশের মানুষ এখন টেন্দুলকার বা ভিরাট কোহলি কে বা এ,বি্ডি ভিলিয়ার্স এর জন্যে রাস্তায় জমাট বাধেনা। তারা সাকিবের জন্য অপেক্ষা করে, সে,মুখে থাকে সলজ্জ,নির্লিপ্ত হাসি ।তার প্রতিটা রানে উল্লাসে মাতে দেশ। তার প্রতিটা উইকেট পাওয়ার সাথে সাথে তার সাথে গর্জে উঠে বাংলাদেশ, তার উইকেটের জন্য প্রতিটি আপিলের পেছনে থাকে লাখো ক্রিকেট অনুরাগির হৃদয় নিগড়ে দেওয়া ভালোবাসা। তার সাথে আপিল করে পুরো স্টেডিয়াম, সাথে থাকে সম্পুর্ন দেশ। তার আবেগ কে সম্মান জানাই, তার প্রতিবাদের ভাষা কে স্যালুট। তার চোখের অশ্রু রক্ত ক্ষরন ঘটায় লাখো ক্রিকেট ভক্তের অন্তরে। তার হাসির সাথেই হেসে উঠে দেশ। তার ও টাইগার দের আরো অসংখ্য জয়ের প্রত্যাশায় দেশ। তারা জিতলেই জিতে যায় দেশ। সাকিবের জায়গা তার ভক্তদের বুকে অন্যরকম, সাধে বলা হয়না সাকিব আল হাসান ,বাংলাদেশের জান ,বাংলাদেশের প্রান। সাকিব আর সাকিবরা যখন খেলার টান টান উত্তেজনায় আবেগে কাপে বাংলার প্রতিটা ক্রিকেট প্রেমি তখন সহ্য শক্তির পরীক্ষা দিতে,দাতে দাত চেপে আরেকটা জয়ের জন্য অপেক্ষা করে। একটা পরাজয়, পুরু দেশ যেন নিস্তব্দ, আবার পরের ম্যাচের আগেই খেলা দেখতে বসে যাই আমরা,অনেকেই এক ম্যাচ হেরে গেলে বলি আর দেখবনা , না দেখার কথা বললেও সাকিব রা মাঠে নেমেছে,শুনার পর আমরা আর না দেখে থাকতে পারিনা।, আর এক এক টা জয়ের পর উত্তেজনায় কেদে ফেলি আমরা,জড়িয়ে ধরি বাসের আরেক ক্রিকেট প্রেমিকে, তালি মেরে হাত লাল করে ফেলি,হাসতে থাকি,চোখে আনন্দাশ্রু নিয়ে। এভাবেই সাকিব দের হাত ধরে এগিয়ে যাক বাংলাদেশের ক্রিকেট। জন্ম হোক আরো।
রেফারেন্স ১. http://www.cricbuzz.com/profiles/544/shakib-al-hasan#profile
২. https://en.wikipedia.org/wiki/Shakib_Al_Hasan