ধারাবাহিক জীবন পর্ব: টেনশনি রেজাল্ট

Please log in or register to like posts.
পোস্ট

                                                                    ধারাবাহিক জীবন পর্ব: টেনশনি রেজাল্ট 


আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক, আমার জীবনীতে আমার জীবনের ধারাবাহিক পর্বের আজকে আরেকটি পর্ব নিয়ে আসলাম।গত পর্বে ক্লাস নাইন-টেন নিয়ে লিখেছিলাম। আজকে এস এস সি পরীক্ষার রেজাল্টের একটি ভয়াবহ অভিজ্ঞতা নিয়ে আমার লেখনী ————–

 

আমাদের এসএসসি রেজাল্ট হয়েছিল 12 ই মে 2011 সালে। রেজাল্ট এর একদিন আগে না খাওয়া সব বন্ধ হয়ে গেছিল। যে দিন রেজাল্ট, সেদিন সকালে আমি আর আমার আরেক বন্ধু শফিক বুদ্ধি করে আমরা কাপড় চোপড় গুটিয়ে নিলাম। প্রচুর ভয় আর টেনশনে ছিলাম, আমি জানতাম আমি ফেল করব। পরীক্ষা যদিও ভালো দিয়েছিলাম তবুও মনে হত যে আমি ফেল করব। তাই বাড়ি থেকে বের হওয়ার জন্য কাপড় -চোপড় গুটিয়ে লন্ড্রির দোকানে রেখে আসলাম লন্ড্রি করতে। আসলে আমাদের ইচ্ছা ছিল যদি রেজাল্ট খারাপ হয় তাহলে আর বাড়ি ফিরে আসব না।

 

সকাল নয়টা হতেই শফিক আসলো আমার কাছে। আমরা দুজন মিলে ভ্যানে করে চলে গেলাম দোয়ানী ব্যারেজে। ব্রিজের রেলিং ধরে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলাম দুজন। প্রচুর টেনশনে সকালে খাওয়া হয়নি। দুজন মিলে একটা বিস্কুটের প্যাকেট 10 টাকা দিয়ে কিনে ভাগ করে খেলাম। তারপর আমরা নদীর ধার দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে চলে গেলাম অনেক দূরে। যেখানে কেউ নেই শুধু আমরা দুজন। দুজন বন্ধু ঘাসের উপরে বসে, কখনো শুয়ে রইলাম। আর দুজন মিলে ঢাকায় গিয়ে কি করবো তা চিন্তা করতে লাগলাম। শফিক বললো ঢাকায় গিয়ে গার্মেন্টসে ঢুকবো। আমি বললাম গার্মেন্টসে না অন্য কোনো চাকরি খুঁজব। কিন্তু দুজনের ভালো কোন আইডিয়া এলো না।আমরা চিন্তা করলাম আমরা এসএসসি পাস করলাম না, চাকরি করব কীভাবে? আমাদের চাকরি দেবে কে? এভাবে যখন বারোটা বাজলো, তখন আমরা চিন্তা করলাম আর থাকা যাবে না। বাড়িতে সবাই টেনশনে আছে আমরাও টেনশনে আছি। তাই আমরা আবার ফিরে আসলাম। বাজারে গিয়ে অনেকের সাথে দেখা হলো কিন্তু আমরা বাড়ীতে আসলাম না। মোবাইল থেকে মেসেজ পাঠিয়ে বসে রইলাম কখন রেজাল্ট আসে। কিন্তু বারোটা হতে শুরু করেও ফিরতি মেসেজ আসলো না। আসবে কিভাবে?রেজাল্ট তো দুইটার পর বের হয়। আমরা চারপাঁচ জন একসাথে ঠায় দাঁড়িয়ে রইলাম স্কুলের সামনে। একটা বাজলো, আর তর সয় না। বুকের মধ্যে ঢিব ঢিব করছে।

 

পাঠক, আপনারা নিশ্চয়ই এই লেভেল পার করেছেন, অথবা এই অভিজ্ঞতা হয়েছে, সুতরাং আপনারা জানেনই কি আবস্থা ছিলো তখন। সবচেয়ে মজার প্রশ্ন হলো, পরীক্ষার রেজাল্টের সময় বাড়ি থেকে পালানোর চিন্তা করেনি এমন কেউ কি আছে? পকেটের টাকা শেষ হয়ে গেলো,মোবাইলে টাকা তো ভরতে হবে। সোজা চলে গেলাম দোকানে। গিয়ে দশ টাকা নিয়ে মোবাইলে ভরলাম। সাথে সাথেই মেসেজ করলাম। তারপর সবাই আবার একসাথে হলাম। পাঠক, আরেকটা ব্যাপার হলো আমি বাদে সবার হাতেই একটা করে ব্যাগ ছিলো, যাতে ছিলো কাপড় চোপড় ভরা। মানে হচ্ছে আমার বন্ধুরাও পালানোর চিন্তা করেছিলো। কথা বলতে বলতেই আমার ফোনে মেসেজ আসলো, আমি ফাস্ট ডিভিশনে পাশ করেছি।

 

ইয়াহু! আর আমাকে ঠেকায় কে! সোজা দৌড়ে গেলাম দোকানে। হাঁপাতে হাঁপাতে আব্বুকে ডাকলাম। আব্বু আমাকে দেখে ভয় পেয়ে গেলেন। মনে করেছিলেন কোন দুর্ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু না,বললাম আমি এসএসসি পাশ করেছি। আব্বু শুনে অনেক খুশি হলেন, এতটাই খুশি হলেন যে, আব্বুর চোখের কোণা চিকচিক করছিলো। তারপর বাড়িতে আসলাম, বাড়িতে সবাইকে রেজাল্টের কথা বললাম।সবাই মাথায় হাত বুলিয়ে দোয়া করলো। আর বন্ধুরা? আমার বন্ধুরা সবাই পাশ করেছে।আর আমাদের কাউকে বাড়ি থেকে পালাতে হয় নি। লন্ড্রি ওয়ালাকে বলে দিলাম, কাপড় গুলো ভালো করে লন্ড্রি করতে। কারণ আমরা রেজাল্টের খুশিতে ঘুড়তে যাবো……..

 

লেখাঃ সাঈদ আল রবি।

রচনাকালঃ ২১শে জুন ২০১৯।

ফেসবুক কমেন্টস

Reactions

0
0
0
0
0
0
Already reacted for this post.

প্রতিক্রিয়া