বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা – জাফরুল্লাহ চৌধুরী –
আজকের দিনে চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলায় জন্ম হয় জাফরুল্লাহ চৌধুরীর। তাঁর জন্ম ১৯৪১ সালের ২৭ ডিসেম্বর। তিনি একাধারে একজন চিকিৎসক ,রাজনীতিবিদ । তাঁর সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য পরিচয় তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা।তিনি বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা যিনি তাঁর সমাজ সেবার জন্য বহুল পরিচিত। আমাদের আলোকিত চট্টগ্রামের একজন সন্তান তিনি।
তাঁর শিক্ষাজীবনের বেশিরভাগ কেটেছে ঢাকায়। তিনি ঢাকার নবকুমার স্কুল থেকে মেট্রিকুলেশন পাশ করেন। ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমেডিয়েট সম্পন্ন করেন। এরপর ১৯৬৪ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাশ করেন। এফারসিএস প্রাইমারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন বিলেতের রয়্যাল কলেজ অব সার্জনস থেকে। বিলেতে গেলেও সবাই দেশের মায়া ছাড়তে পারেনা। অনেকেই বিদেশে গিয়ে দেশকে ভুলে যায় , আর অনেকেই দেশের টানে দেশের স্বার্থে সব কিছু ছেড়ে চলে আসে দেশে। জাফরুল্লাহ চৌধুরী ছিলেন এমনি একজন।
তিনি যখন বিলেতে অধ্যয়নরত ছিলেন তখন বাংলাদেশ জড়িয়ে পড়ে স্বাধীনতা যুদ্ধে। পাকিস্তানী বাহিনী ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ নিরীহ নিরস্ত্র বাঙ্গালির উপর ঝাপিয়ে পড়ে। যুদ্ধ শুরু হলে জাফরুল্লাহ চৌধুরী পড়ালেখা সমাপ্ত না করেই দেশে ফিরে আসেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ার জন্য লন্ডন থেকে ভারতে আসেন। এরপর আগরতলার মেলাঘর এর প্রশিক্ষন কেন্দ্র থেকে গেরিলা প্রশিক্ষন নেন।
পরবর্তীতে ড এম এ মবিনের সাথে মিলিত হয়ে ৪৮০ শয্যাবিশিষ্ট ফিল্ড হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন। ফিল্ড হাসপাতালের প্রতিষ্ঠা তিনি ও পরিচালনা তাঁর কর্মময় জীবনের গুরুত্বপূর্ণ কাজের একটি। ফিল্ড হাসপাতাল অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকার দ্বারা সরাসরি পরিচালিত একমাত্র যুদ্ধচলাকালীন স্বাস্থ্য সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান।
যুদ্ধের সময় হাতে সময় ছিলো অল্প। এই স্বল্প সময়ে তিনি অনেক নারীকে প্রাথমিক স্বাস্থ্য বিষয়ে জ্ঞানদান করেন। এভাবেই তারা পরবর্তীতে মুক্তিযুদ্ধে আহতদের সেবা করতেন। তাঁর এই সেবা পদ্ধতি পরবর্তিতে বিশ্ববিখ্যাত জার্নাল ল্যানসেট থেকে প্রকাশিত হয়।
বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনন্য কাজের জন্য পরিচিত। তাঁর কাজের জন্য তিনি তিনি বিভিন্ন ক্ষেত্রে সম্মানিত হয়েছেন। তিনি জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রনে অনবদ্য অবদানের জন্য ১৯৭৭ সালে স্বাধীনতা পুরষ্কার লাভ করেন। বিকল্প নোবেল হিসেবে পরিচিত রাইট লাভ্লিহুড লাভ করেন ১৯৯২ সালে । এছাড়াও মানবতার সেবার জন্য কানাডা থেকে ডক্টরেট ডিগ্রী পেয়েছেন তিনি ।
আলোকিত মানুষ তিনি। যিনি নিজের কর্মের মাধ্যমে করেছেন মানবতার সেবা।