জীবন জীবনের জন্য : আপিল ফর রাঙ্গামাটি

Please log in or register to like posts.
পোস্ট
bangladesh, Appeal_for_humanity, humanity

সময়টা খারাপ যাচ্ছিলো, দেশের পরিস্থিত ভালো ছিলোনা, সামনে ঈদ। ২০১৭ সালের কথা । সব কথা বরাবর হয়ত মনে নেই, তবে কিছু দৃশ্য আজো ছবির মত ভাসে মানসপটে ।সেবার টানা বর্ষনে মুখরিত জনপদ থেকে রাঙ্গামাটি সহ অনেক স্থান রুপ নিলো মৃত্যুপুরিতে । তবে সেবার দেখেছিলাম দেশের মানুষের জন্যে দেশের মানুষ একসাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়িয়ে কি লড়াই টাই না করতে পারে।

আসিফ ভাই বলছিলো, তাঁদের জন্যে কিছু করার কথা। কতটুকু কি করতে পারতাম, জানতাম না, তবে সীদ্ধান্ত নিয়েছিলাম শেষ পর্যন্ত থাকবো । হিমেলের উৎসাহ দেখে ভালো লাগলো, কম বয়সের কেউ যখন সমাজ সেবায় ঝাপিয়ে পড়তে  প্রস্তুত হয়ে থাকে তখন দেখতে ভালই লাগে।

 

হঠাৎ করেই তোড়জোড় শুরু হয়ে গেলো। প্রথম প্রশ্ন ছিলো ,টাকা কিভাবে আসবে, কে দিবে, কিভাবে টাকা সংগ্রহ করবো এসব। বাঁধা ছিলো বেশি ,তবে এটা ঠিক হৃদয়ে যদি শক্ত বিশ্বাস থাকে, সামনের কোন প্রাচীর তখন তাকে রুখতে পারেনা।

 

জুনের ১৫/১৬ ত্যারিখের দিকে ব্যস্ততা শুরু হলো।  সব থাকার পরেও একটা  জিনিশের খুব অভাব ছিলো, মানব শক্তি, মানুষের অভাব নেই, কিন্তু সেই রোজার মাসে পাশে দাড়াবার মত মানুষ কম ছিলো, যারা ছিলাম, তারা একে অপরের কাছে কৃতজ্ঞ।মিঠু ভাইয়ের বাসা ছিলো মিটিঙের জন্যে বরাদ্য। 

আমাদের ইচ্ছে ছিলো, রাঙ্গামাটির ৫০০ পরিবার কে সাহায্য করা। সেটা সহজ কোন ব্যপার ছিলোনা, একেতো আমাদের কোন দল ছিলোনা, আমরা কোন দলের ছিলামনা, এমনকি কাজটা শুরু করার আগে আমরা সবাই সবাইকে চিন্তাম ও না। এর পর একে একে পরিচয় হলো মিঠু ভাই, আলি ভাই, রাহাত, সালমিন ,ইমরান  , হৃদয় , বাপ্পি আর সালাউদ্দিন ভাই এর সাথে । পরিচিত এর মধ্যে ছিলো আমার –আসিফ ভাই, হিমেল, নেহাল। আসিফ ভাইয়ের ইচ্ছার প্রতি অদম্য প্রত্যয় দেখে  আমরাও সীদ্ধান্ত নিলাম, পথে পথে ভিক্ষে করে দরকার হয় এক এক টাকা করে উঠাবো। আর আসিফ ভাই ব্যক্তিগত ভাবেই বেশ কিছু টাকা জোগাড় করেছিলো বিকাশের মাধ্যবে, সেটাও আমাদের জন্যে একটা ভালো শুরু ছিলো ।

 

 

Bangladesh, Appeal_for_humanity, humanityসে সময়ে টাকা সংগ্রহ করতে যে কষ্টের মুখে আমরা পরেছিলাম, তা থেকে জীবনের শিক্ষাও কম পাইনি। সে সময়ের পরিস্থিতি নিয়ে আমার একটি লেখা এখানে শেয়ার করছি ।

 

রাঙামাটির জন্যে আকুতি বা মিনতিপূর্ণ আবেদন করেছি অনুদানের জন্য। আমরা সবাই যারা আপিল ফর রাঙামাটির সাথে জড়িত। অনেক   বাধা সামনে ছিল। প্রাথমিক জড়তা কাজ করেছিল। মানুষ পাওয়া যাচ্ছিলনা একসাথে সকলের কাজ পরে
যাওয়ায়!  তবে আমরা যারা ৫/৬/৮ জন ছিলাম রাস্তার মানুষের এবং তার চেয়ে বেশি পথ শিশুদের সাড়া পেয়ে নিজেকে ধন্য মনে করছি। একটা পথশিশুর একটাকা আমাদের অনেকের টাকার চাইতে মুল্যবান। সেই পথ শিশু যখন টাকা দিতে পারে। হাতে আইসক্রিম নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের ১০ বার ভাবতে হয় ১০ টাকা বের করতে। তাকে পাশ দিয়ে চলে যাবার বেলায় আমাদের রাঙ্গামাটির জন্য আকুতি শুনে বলতে শুনি “টাকা কি ঝরে পড়ে ”  । টাকা ঝরে  পড়েনা ঠিকই তবে টাকা ঠান্ডা আইস্ক্রিমের লাভা হয়ে তার হাত বেয়ে ঝড়ে পড়ে।

 

ঠিক তখন একজন পথ শিশু যখন তার ভিক্ষে করা এক টাকা আমাদের দান করে। আমি পাশের জনের কাধচাপড়ে বলি। ” হিমেল টাকা থাকা লাগেনা দেওয়ার জন্য মন লাগে ” । আপুটি শুনেন এবং ঝরে পড়া আইস্ক্রিম ফেলে দিয়ে আমদের পিছন থেকে সরে দাড়ান।মিলিয়ে যান হাওয়ায়! অনেকেই আবার নিজে এগিয়ে এসেছেন। সাহস জুগিয়েছেন। আর্থিকভাবে সর্বনিম্ন থেকে সর্বোচ্চ নিজের সাধ্যের যতটুকু সম্বব সাহায্য করেছেন। অনেকেই কাপড় দিয়ে সাহায্য করেছে(কাপড় সাহায্যে: অরনেট টেইলারস।) অনেকে ১০টা টাকা দিতে ১০ টাররও বেশী প্রশ্ন করেছেন। অনেকে আমাদের উপর বিশ্বাস রেখে টাকা দিয়ে ও বিভিন্য ভাবে উপকার করেছেন। সব মিলিয়ে যতটুকু মানুষের কথায় ব্যথিত হয়েছি। অনুপ্রানিত হয়েছি এর চেয়ে বেশি। হাজার খারাপ কথার ভিড়ে একটি ভালো কথা যখন শুনি তখন মনে হয় পৃথিবিতে এখনো কিছু মানুষ আছে। বাকিদের পরিচয় আমি জানিনা।

 

১৭ জুন। তখনো টাকার পরিমান টা কম, ১৯৫০০ টাকা, এই টাকা দিয়ে ৫০০ মানুষকে  কিভাবে সাহায্য করা যায়! রোজার মধ্যে আমরা সবাই, যে যেভাবে পেরেছি সময় দিয়েছি, চিৎকার করে অনেকেই গলা ফাটিয়েছি একটা টাকার জন্যে, কেও পাগল বলেছে মাদের কেও  বাহবা দিয়েছে, কোনটাই নয় শুধু মাত্র সবার সযোগিতা চেয়েছিলাম, অনেকে দিয়েছেন ও, যারা দেন নি তাঁদের কথা আজকে থাক ।

 

আমাদের লোকবল কম ছিলো, মনোবল নয়। আমাদের ডাকে সাড়া দিয়ে মানবতার ডাকে সাড়া দিয়ে এগিয়ে এসেছেলো অনেকেই, তাদেরকে মনের গভীর থেকে ভালোবাসা জানাই।  টাকা সংগ্রহের জন্যে আমাদের বেশি কিছু ছিলোনা, শক্ত কাটুন কে, টেপ দিয়ে মুড়ে ,একটু কেটে নিয়ে মার্কেটের সামনে সবাই দাঁড়িয়ে থাকি , মানবতার জন্যে ভিক্ষে চাইতে ।

 

আফমি প্লাজার সামনে আমরা তখন দাঁড়িয়ে । ১৭ জুন।  কেউ ফিররে তাকাচ্ছে, কেও দেখছেনা । কেও বাজে বলছে, কেও ধান্ধা বলছে। দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য  করে যাচ্ছিলাম। আর সবাই অনুনয় করে যাচ্ছিলাম, রাঙ্গামাটির মানুষদের সাহায্যে এগিয়ে আসুন।

১৮ জুনে, আফমির সামনে ছিলাম, নিউমার্কেটে দাড়াতে চেয়েও সুযুগ পাইনি। ভিক্ষে দূরের কথা, চাওয়ার সুযোগটাই দেওয়া হয়নি। সেদিন মন্টা খুব খারাপ হলো, গুড়ু গুড়ি বৃষ্টি পড়ছিলো, টাকার বক্স দুটোর মধ্যে একটা খালি। অপমানিত হয়ে ফিরে আসার পথে নিজের পকেটের কিছু খুচ্রো টাকা সেই খালি বাক্সে দিয়ে নিজেকে সান্তনা দিলাম।

 

হিমেল আফমির সামনে একা দাড়িয়ে, করুন চেহারা, হবারি কথা ! এই দেশে লাখ টাকার গাড়ি চলে,  হাইফাই ফ্ল্যাট আছে, কিন্তু এসবি কিছু সীমীত মানুষদের জন্যে, যেন শুধু তারাই মানুষ । তাঁদের মত মানুষ আমরা হতে চাইনা।

 

১৮ জুন আমরা বলে দিলাম,

আমরা দল  হয়ে চারটা স্পটে অবস্থান নিয়ে সাহায্য সংগ্রহ করছি।
আমরা আজকে অবস্থান নিয়েছি
১।আফমি প্লাজা,
২।মিমি সুপার মার্কেট,
৩।নিউ মার্কেট,
৪।সি.ডি.এ মার্কেট, অলঙ্কার, এ.কে.খান এলাকা

 

জানতাম সাড়া খুব কম পাবো, কাছের মানুষদেরি পাইনি, এক আফমি প্লাজাতে দাড়াতেই আমাদের হিমশিম খেতে হজয়েছিলো, দুই তিন জন মানুষ তো আর ৩/৪ জায়গা কভার করতে পারেনা । ভালো লেগেছিলো, এটা দেখে যে আমরাই নয়, আমাদের মত আর পাগল সেখানে, রাঙ্গামাটির জন্যে সাহায্যের জন্যে রীতিমত কাঁদছে ।  আমাদের মানুষ কম ছিলো, হিম্মত হারাইনি আসিফ ভাইরা, আমারা, জিদ করে দাঁড়িয়ে ছিলাম, মাঝে মাঝে ঘন্টায় মিলে ৫০ টাকা পরে বক্সে, মাঝে মাঝে হঠাৎ  ৫০০ তাকা,১০০ তাকা দিয়ে চলে যায়। সে টাকা আমাদের নয় কিন্তু বুকের ভেতর সেই যে আনন্দ সেটা টাকায় কেনা যায়না।

 

 


Bangladesh, Appeal_for_humanity, humanity

 

   ১৯ জুন, আসিফ ভাই আর মিঠু ভাইয়ের ও অনেকের চেষ্টায় সি,ডি এ মার্কেট থেকে টাকা তোলা হলো, দোকান ঘুরে ঘুরে, হাটছিলাম, আর প্রতি দোকান থেকে যে যা দেয় নিচ্ছিলাম, কেও কটু কথা বললে সরে আসতাম, জানতাম, কিছু বলার সময় সেটা ছিলোনা, আমাদের তাড়া ছিল,রাঙ্গামাটি আমাদের ডাকছিলো । 

 

 

 

১৯ জুনের ইফতারির কথা আমি ভুলবোনা। আমি আর হিমেল ছিলাম আফমিতে। লোকজন নেই , দাড়াবার মত কাওকে পাচ্ছিনা। জিদ করে বললাম, হিমেল কে, আমরাই থাকবো আজকে, সেহেরি পর্যন্ত, সেদিনের সেই সিড়িতে বসে ইফতারি অন্যদিনের চেয়ে অসাধারন ছিলো।সালমিন,রাহাত, নুর মাহামুদকে ,  সাকিবকে , সাইমুনকে ধন্যবাদ, সময় দেওয়ার জন্যে। সালমিন কে আগে চিনতাম না। সেদিন চিনলাম, মানবতার জন্যে একসাথে দাড়াতে আসলে পরিচয় নিষ্প্রয়োজন ।

 

 

২০ জুন, সেটা ছিলো, আমাদের টাকা সংগ্রহের শেষ দিন। ওইদিন টায় সালমিন  আর সামিন(হিমেল) ছিলো সম্ভবত, আমি আসিফ ভাইএর সাথে ছিলাম, ত্রান সামগ্রী  ক্রয়ের জন্যে।   আসিফ  ভাই, মিঠু ভাই,হিমেল প্রচুর কষ্ট করেছে, সালমিন ও, সবাই করেছে, সবার জন্যে ভালোবাসা আর সম্মান আজীবন । মাহামুদ ও সাইমুন এর সাড়া পেয়েছিলাম। যে স্কুলে চাকরি করতাম সেখানে সাড়া পেয়েছিলাম। 

 

মিঠু ভাই কে ধন্যবাদ তাঁর সময়,শ্রম দেওয়ার জন্যে। ভুল বললাম ।ধন্যবাদ নয়, ভালোবাসা।  সে সময়ের সব কাজ বিস্তারিত ভিডিও সহ    Appeal-For-Humanity ( (#Appeal_for_Rangamati )  এই ফেসবুক পেজ  এ আপনারা পেয়ে যাবেন।

 

 

২১ এ জুন, আমরা প্রস্তুত ছিলাম, তবে সামনে কি অপেক্ষা করছিলো জানিনা, আমাদের সে প্রস্তুতির সময়টার কথা মিঠু ভাই যেভাবে বলেছেন আমি তুলে ধরছি…।

 

পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল রাঙ্গামাটিতে ভুমিধসে গৃহহীন অসহায়দের জন্য সংগৃহিত আর্থিক অনুদান সাহায্য থেকে আমরা রাঙ্গামাটির গৃহহীন অসহায়দের ত্রানসামগ্রী বিতরণের উদ্দ্যেশ্য ৫০০ পরিবারের জন্য গৃহস্থালী নিত্যাপ্রয়োজনীয় পন্য সামগ্রী ক্রয় করে এনেছি। এখন এসব নিত্যপ্রয়োজনীয় গৃহস্থালি পন্য সামগ্রী প্যাকেট করার কাজ চলছে। এখানে ত্রানসামগ্রী বস্তুগুলোর মধ্যে আছে পানির জগ, শুকনো খাবার সামগ্রী রাখার সংরক্ষনের জন্য জার/বাক্স,মোমবাতি,মশার কয়েল,সাবান ও কিছু টয়লেট সামগ্রীসহ ইত্যাদি কিছু প্রয়োজনীয় গৃহস্থালী পন্যসামগ্রী। এছাড়া শুকনো খাবার হিসেবে থাকছে বেলা বিস্কিট এবং মুড়ি। ইতিমধ্য এসব পন্যসামগ্রী প্যাকেট করার কাজ চলছে। আরো কিছু পন্য বাকি আছে আজ সময় স্বল্পতার কারনে সংগ্রহ করতে পারিনি। বাকি পন্যাসামগ্রীগুলো ইনশাআল্লাহ আমরা আগামিকাল ক্রয় করে নিব। আমরা সকল ত্রানসামগ্রী প্যাকট করার কাজ সম্পন্ন করে ইনশাআল্লাহ আগামিকাল সেহেরীর পর রাঙ্গামাটিতে অবস্থানরত গৃহহীনদের এসব ত্রাণসসামগ্রী বিতরনের উদ্দ্যেশ্য রওনা দিব। সকলের দোয়া কামনা করছি যাতে সফলভাবে আমরা রাঙ্গামাটিতে অসহায় গৃহহীন পরিবারগুলো কাছে ত্রাণসামগ্রীগগুলো পৌছে দিতে পারি।

আমরা পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল রাঙ্গামাটিতে ভূমিধসে গৃহহীনদের সহায়তা প্রদানের আহবান জানিয়ে মানুষের কাছ থেকে ব্যাপক সাহায্য সহযোগিতা পেয়েছি। আলহামদুলিল্লাহ। কেউ ব্যাক্তিগতভাবে নিজের ব্যাক্তিগত তহবিল থেকে এবং কেউ নিজস্ব ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানের তহবিল থেকে যার সাধ্য সামর্থ্য অনুযায়ি সহযোগিতা করে আর্থিক অনুদান প্রদান আমাদের এই আর্ত-মানতার সেবায়  মানুষেরা নিজ নিজ অবস্থান থেকে সাহায্য সহযোগিতা প্রদান করেছেন।

যারা সেচ্ছাসেবক হিসেবে এই পবিত্র রমজান মাসে রোজা রেখে আমাদের এই উদ্দ্যাগে বিগত তিন দিন যাবত টানা দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে আর্তমানবতার সেবায় নিয়োজিত হয়ে অর্থসংগহ করার পাশাপাশি অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাজে সম্মিলিত প্রচেষ্ঠার মধ্যামে এই ত্রানসামগ্রী বিতরনের জন্য সহায়তা ও সহযোগিতা করছেন সকলকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

একইসাথে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি সকল প্রবাসি বাংলাদশী ভাইদের যারা আর্থিক অনুদান প্রদান করে আর্থমানবতার সেবায় অংশগ্রহন করার জন্য। দেশের সকল ভাই ও বোনেরা যারা বিভিন্নভাবে বিকাশ এবং সরাসরি ব্যাক্তিগত পক্ষ থেকে আর্থিক অনুদান ও সহযোগিতা প্রদান করে রাঙ্গামাটির গৃহহীন অসহায় মানুষদের সাহায্য এগিয়ে এসেছেন সকলকেই আন্তরিক ধন্যাবাদ জানাই । 

 

 

 

 

Bangladesh, Appeal_for_humanity, humanity

২২  জুন, সেহেরির পর আমাদের রাঙ্গামাটির পথে রওয়ানা দেওয়ার কথা। সারারাত মানুষ গুলো যেভাবে খেটেছে, ভাসায় প্রকাশ করা যায়না,  ইফতারি আসিফ ভাই দের বাসায়, সেহেরিও সেখানে, মাঝ খানে, হাতে গোনা কয় একজন মানুষ মিলে সারারাত পরিশ্রম করে যেভাবে কাজটা করলো, সেটা অতুলনীয় , সালাউদ্দিন ভাই, নেহাল দূর থেকে চলে এলো আমাদের সাথে হাত মেলাতে,  সবার পরিচয় সবাই জান্তনা, কিন্তু পিঠে পিঠ লাগিয়ে মানবতার কাজ করতে আসলে পরিচয়ের প্রয়োজন খুব কম ।

Bangladesh, Appeal_for_humanity, humanity

২২ জুন, খুব ভোরে সেহেরি খেয়ে সবাই কাজ মোটামোটি গুছিয়ে এনেছে। ভোর হলো। এক ট্রাক বোঝাই পন্য, প্লাস্টিকের আচ্ছাদনে ঢাকা। শেষবারের মত সবাই দাড়ালাম, দেখলাম।  সবাই একসাথে যাওয়া সম্ভব ছিলোনা, জায়গার কারনে, আমি,আসিফ ভাই,হিমেল,নেহাল,সালাউদ্দিন ভাই যাত্রা শুরু করলাম বাকিদের থেকে বিদায় নিয়ে, তাঁদের কে কথা দিলাম প্রতিটা আপডেট জানানো হবে।

 

 

সেই সকালে রওয়ানা দিয়েছিলাম, ভেবছিলাম, শীঘ্রই পৌছে যাবো, বিধি বাম। রোজা ছিলাম সবাই, দুপুরের দিকে যখন প্রশাসন আমাদের ট্রাক আটকে দিলো তখন তেষ্টায় বুকের ছাতি ফেটে যাচ্ছে।  কি বলছে তাঁরা ! এই ট্রাক রাঙ্গা মাটির পথে যাবেনা! আমাদের ভেতরটা শুকিয়ে গেলো,এত কষ্ট, সব কি তবে বৃথা যাবে?  লোকগুলোকে আসিফ ভাই বারে বারে বোঝালো,আমরা বললাম,এটা ত্রানের গাড়ি , যেতে দিন। কোনভাবেই বড় ট্রাক তারা যেতে দিবেন না। আমরা অনুনয় করলাম,  সীদ্ধান্ত নিলাম, ইফতার দরকার হয় এখানেই রাস্তায় করবো তবু ফিরে যাবোনা। ইটস নাও অর নেভার ।

 

 

 

 

Bangladesh, Appeal_for_humanity, humanity, boat_journey

শেষে সীদ্ধান্ত হলো মিনি ট্রাকে করে যাওয়া যাবে। মিনি ট্রাক আসলো, ত্রাণগুলো ,খালাসের জন্যে কেও ছিলোনা, আমরাই এক  ট্রাক থেকে পন্য দুই ট্রাকে উঠালাম, রোজার মধ্যতে অসহনীয় তাপে সেটা সেটা সৃষ্টিকর্তার এক অগ্নীপরিক্ষা ছিলো বোধয়। শুধু ইচ্ছে হচ্ছিলো, এক আজলা জল খাই। শুয়ে পড়ি। আমরা শেষ পর্যন্ত পৌছালাম, নদীর ঘাটে। নৌপথে যেতে হবে! এবার ভাগ্য কিছুটা প্রসন্য হলো। কুলিরা পন্য তুলে নিলো , জাহাজ না, বর বোট কে জানে! আমাদের তখন যাই যাই দশা। এর মধ্যেও শহরে আমাদের টিম কে আপডেট  দিলাম। শেষ পর্যন্ত বিকেল চারটায় পৌছুলাম, রাঙ্গামাটি।

 

 

 

Bangladesh, Appeal_for_humanity, humanity

ত্রান সামগ্রি বিতরণের এক পর্যায়ে সেখানের স্থানীয়দের সাথে আমদের বেশ গল্প জমে যায়। তাঁদের থেকে, শুনি, স্বজন হারাদের কাছ থেকে শুনি তাঁদের জীবনের অভিশপ্ত দিনটির কথা

 

 

 

 

২৩ জুন, ত্রান বিতরন শুরু হলো। এর আগে আসিফ ভাই এর এক পরচিতর বাসায় আমাদের খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা হয়েছিলো। রাঙ্গামাটির মানুষদের  ব্যবহারে মুগদ্ধ ছিলাম। রাতে সবাই আবার প্যাকেট করতে বসলাম,। কিছু প্যাকেট করা বাকি ছিলো, আর পয়ারছিলাম না। সারারাত এভাবেই গেলো।

২৩ তারিখ ,

রাঙ্গামাটির ত্রান বিতরনের জন্যে যে সব স্পট ছিলো,সারাদিন ব্যাপী সেসব জায়গায় গিওয়ে নিজেরা উপস্থিত থেকে ত্রান বিতরন সম্পন্ন হলো, শেষ  ত্রানের থলে  টাও যখন দেওয়া  তখন একি সাথে আনন্দ আর অবসাদ  আমাদের পেয়ে বসলো ।একধরনের চাপা আনন্দ ছিলো, মুখে প্রকাশের ভাষা ছিলোনা, শরীর ও আর সায় দিচ্ছিলোনা, সবার মদ্ধ্যেই একটা উত্তেজনা,পরে বুঝছিলাম, প্রায়৭/৮ দিনের টানা পরিশ্রম আমাদের পেয়ে বসেছিলো।  এর মধ্যেই সালাউদ্দিন ভাই রাগ করে আগে চলে গেলো, মানুষতাকে ভালো লেগেছিলো সবার । কেও বাঁধা দেয়নি,দিয়ে লাভ নেই, আমরা তখন সবাই, একটু নিশ্চিন্ত ঘুম আর ঘরে ফেরার স্বপ্ন দেখছিলাম।  সালুদ্দিন ভাইএর সাথে পরে কথা হলো, ব্যপারটা তিনিও হয়ত পথে যেতে যেতে বুঝেছিলেন। যে যেভাবেই ঘরে ফিরিনা কেনো! একটা অজানা টান তৈরি হয়েছিলো সবার মাঝে। 

 

 

 

 

Bangladesh, Appeal_for_humanity, humanity

আমি , আসিফ ভাই, হিমেল নেহাল, সি এঞ্জি করে ফিরে আসলাম চট্টগ্রাম,  ইফতারের আজানের ঠিক দু মিনিটের মাথায় ।

সেই সময়টায় আনন্দটা উপভোগ করেছিলাম, ঘরে ফিরেছিলাম বলে নয়, আল্লাহর রহমতে দায়িত্বটা  সেরে এসেছিলাম বলে।

 

 

 

ফেসবুক কমেন্টস

Reactions

0
0
0
0
0
0
Already reacted for this post.

প্রতিক্রিয়া