সিদ্দিকুর রহমান -বলবয় থেকে ক্যাডি,অতঃপর দেশবরেণ্য গলফার

Please log in or register to like posts.
পোস্ট
siddikur_Rahman

সিদ্দিকুর রহমান -বলবয় থেকে ক্যাডি,অতঃপর দেশবরেণ্য গলফার –

ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে, ” Where there’s a will, there’s a way “। এই প্রবাদ সম্পর্কে সিদ্দিকুর রহমান জ্ঞাত ছিলেন কিনা আমি জানিনা। তবে তার অদম্য উৎসাহ আর উদ্দীপনা যে তাকে তার প্রাপ্ত সম্মান এনে দিয়েছে এ কথা বলাই বাহুল্য। তার বর্তমান সম্পর্কে জানার আগে তার অতিত সম্পর্কে জানা উচিৎ বলে আমি মনে করি। তাহলেই বোঝা যাবে কি ত্যাগ আর সাধনার বলে তিনি আজ দেশ বরেণ্য একজন মানুষে পরিনত হয়েছেন।

সিদ্দিকুর রহমানের জন্ম মাদারীপুরে (১৯৮৪ সালের ২০ নভেম্বর)। বলে রাখা ভালো ভালো মাদারীপুর জেলা ঢাকা বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। পারিবারি সূত্রে তাঁর নাম মোহাম্মদ সিদ্দিকুর রহমান। পিতা আফজাল হোসেন ও মা মনোয়ারা বেগম। পরিবারে চার ভাইয়ের মধ্যে সিদ্দিকুর রহমান তৃতীয় । সিদ্দিকুরের পারিবারিক আর্থিক অবস্থা ভালো ছিলোনা মোটেও। পেটের ভাত যোগাতে ৭১ এর স্বাধীনতা যুদ্ধের পরপরই বাবা আফজাল হোসেন সপরিবারে উঠে আসেন ধামালকোটের বস্তিতে। পরিবারের সেই কঠিন অবস্থায় সিদ্দিকুর চেয়েছিলেন নিজের চেষ্টায় কিছু করতে। প্রতিবেশি এক ছেলের সাথে তিনি চলে যান ঢাকার কুর্মিটোলায় অবস্থিত সেনাবাহিনী গলফ ক্লাবে। সেখানেই জীবনের প্রথম উপার্জনের শুরু। ১০ টাকা যদিও নেহায়েত কম, তবুও সেটাই ছিল তাঁর নিজের জীবনে কিছু করার পথে প্রথম ধাপ। সে সময় ২য় শ্রেনী পড়ুয়া সিদ্দিকুর মোটামুটি ৩০ টাকার মত আয় করতে শুরু করেন। ঐ সময় সিদ্দিকুরের সুযোগ হয় রাজসীক গলফ খেলা কাছ থেকে দেখার।

ধীরে ধীরে সিদ্দিকুর রহমানের পছন্দের খেলা হয়ে দাঁড়ায় গলফ। কিন্তু তিনি চাইলেই পারছিলেন না সরঞ্জাম কিনে নিয়ে গলফ খেলার অনুশীলন শুরু করে দিতে। এই সব সাহেবি খেলার জিনিস পত্তরেরও যে অনেক দাম। তবুও স্বপ্ন তো আর বাস্তবতার বাঁধা মানতে চায়না। সিদ্দিকুর ছুটে গেলেন কামারের দোকানে। নিজের সীমিত সাধ্যে যাই ছিল তাই নিয়ে ছুটে গেলেন কামারের দোকানে। সামান্য কিছু টাকা দিয়ে কামারকে দিয়ে বানিয়ে নিলেন গলফ খেলার জন্য একটা আনকোরা , চলেমত ক্লাব। সেই ক্লাব দিয়ে তিনি শুরু করে দিলেন অনুশীলন।

এদিকে তিনি বলবয় থেকে হয়ে উঠলেন ক্যাডি। বলকুড়ানো বাদ দিয়ে তখন তিনি গলফ খেলোয়াড়দের সাথে ঘুরে বেড়ান আর তাদেরকে বিভিন্ন ভাবে সহায়তা করেন। ধীরে ধীরে তাঁর মন মগজে ঢুকে যায় গলফের পোকা। ১১ বছর বয়সে কুর্মিটোলা গলফ ক্লাবে প্রথম গলফ খেলেন তিনি। ২০০০ সালের দিকে প্রথম্ন ভালোভাবে গলফ অনুশীলনের এবং প্রতিযোগিতামূলক খেলায় অংশ গ্রহনের। একে একে জিতে যান ১২ টি অপেশাদার শিরোপা । বাংলাদেশ গলফকে তিনি অন্য উচ্চতায় নিয়ে যান যখন তিনি প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ২০১০ সালে এশিয়ান ট্যুরে অংশ নেন। একি বছর জিতে নেন ব্রুনাই ওপেন শিরোপা। সে বছরই এশিয়া গলফ র‍্যাংকিং এ উঠে আসেন ৯ এ।

এখানেই শেষ নয়। বরঞ্চ শুরু। তাঁর ঝুলিতে আছে ৪ টি পেশাদার শিরোপার। তিনি এশিয়ান ট্যুর শিরোপাজয়ী প্রথম বাংলাদেশি। সিদ্দিকুর রহমানের দাম্পত্তজীবনের সাথেও যেন ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে গলফ। স্ত্রী অরণির সাথে পারিবারিক ভাবে বিয়ে হলেও তাদের দেখাটা হয়েছিল আগেই- কুর্মিটোলা গলফ ক্লাবে। অরণিও গলফের পোকা। জাতিয় অ্যামেচার ওপেনে তিনবার হয়েছেন রানার্সাপ। বাংলাদেশ গেমস এ সেনাবাহিনী দলের হয়ে জিতেছেন ব্রোঞ্জ। দলগত ভাবে জিতেছেন সোনা। ২০১০ সালের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার পর অখন্ড অবসরে গলফের প্রেমে পরেন অরণি। সেখানেই সিদ্দিকুরের সাথে পরিচয় হলেও পারিবারিক ভাবেই তাদের বিয়েটা হয় ২০১৫ সালের ২০ জানুয়ারী।

সিদ্দিকুর আর অরণি দুজনের ভালোবাসা যেন গলফে এসে এক বিন্দুতে মিলিত হয়েছে। বিয়ে পরবর্তি জীবনে অরণি খেলোয়াড় হওয়ার চাইতে কোচ হওয়ার দিকেই ঝুকেছেন। তাকে অবশ্য সিদ্দিকুরের ব্যাকাপ ও বলা হয়! সিদ্দিকুরের এশিয়ান,ইউরিপিয়ান ও নানাবিধ ট্যুরের যাবতীয় কার্য সম্পাদনা করেন অরণি। সিদ্দিকুর আসলে শুধু বাংলাদেশের গলফকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেলেন তা কিন্তু নয়। দেশের গলফ ভবিষ্যতে তিনি লাগিয়ে দিলেন পালা বদলের হাওয়া।

সিদ্দিকুরের নামের সাথে জড়িয়ে আছে হিরো ইন্ডিয়া ওপেন ট্যুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কৃতিত্ব । তিনি রাতারাতি হয়েগেলেন দেশবরেণ্য গলফার। বাংলাদেশকে গলফ বিশ্বে পরিচয় করিয়ে দিলেন একা এই সিদ্দিকুর। শূন্য থেকে যার শুরু। বলবয় থেকে শুরু করে যিনি আজ খ্যাতিমান গলফার। যার স্বপ্ন দেশে একদিন আরো সিদ্দিকুর তৈরি হবে যাদের সাফল্যের কাছে তাঁর নিজেকেও ম্লান বলে মনে হবে।

ফেসবুক কমেন্টস

Reactions

0
0
0
0
0
0
Already reacted for this post.

প্রতিক্রিয়া