বন্দিনী আফিয়া সিদ্দিকা

Please log in or register to like posts.
পোস্ট
aafia_siddiqui

একজন আফিয়া সিদ্দিকার জন্ম আর মৃত্যু নিয়ে আলোচনা করে কি হবে , যেখানে পৃথিবী থেকে মানবাতরা আজ বিদায়ের পথে। তবু আমরা কথা বলি দেশ বিদেশের ঘটনা নিয়ে। অনেক দূরের কোন বন্দিনীর জীবন নাড়া দিয়ে যায় আমাদের । আসুন আজ জেনে আসি একজন বন্দিনী আফিয়া সিদ্দিকা সম্পর্কে।

ডঃআফিয়া সিদ্দিকাকে  করাচি  থেকে গ্রেফতার করা হয়েছিলো। পরবর্তীতে পাকিস্তানে কোন বিচার কার্য না করেই আফিয়াকে সরাসরি আফগানিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়। এতে পাকিস্তান সরকার ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন।  একজন মানুষকে বিচারের অধীনে না এনেই রায় দিয়ে দেওয়ার নজীর খুবই কম , আবার হালের দুনিয়ায় এর ঘাটতিও নেই। এর ফলে তাকে অপহরণের অভিযোগ ওঠে। পরে তাঁর বিপক্ষে আল কায়দার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়।  তাঁর তিন সন্তান সহ গ্রেফতার করা হয়।স্বামী আল-কায়দার হলে স্ত্রীও আল-কায়েদার হয়ে যায় এমন কোন নিয়ম, মার্কিন দেশ পরের কথা পৃথিবীর কোথাও আছে বলে আমার জানা নেই।

 

যে সময়টায় আফগানিস্থানে বন্দী ছিলেন সে সময় তাঁর বিরুদ্ধে অমানবিক  অত্যাচারের অভিযোগ আসে। এখন মনে প্রশ্ন আসতেই পারে কী এমন প্রমাণ ছিলো যার ভিত্তিতে আফিয়াকে শাস্তি পেতে হচ্ছে?  তাঁর স্বামী আল-কায়েদার বলে? নাকি তাঁর স্বামী ৯/১১ এ অভিযুক্ত ষড়যন্ত্রকারী খালিদ শেখের ভাইপো বলে? আরেকটি তথ্য জেনে রাখা ভাল, আফিয়া আমেরিকায় থাকা কালেই বেশ পরিচিত মুসলিম এক্টিভিস্ট ছিলেন। হয়ত তখন থেকেই তাঁর উপর নজরদারি করা হচ্ছে।  এমনও অভিযোগ আছে তাঁকে যৌন ও শারিরিকভাবে হেনস্তার শিকার হতে হয়েছে। তাঁকে দিনের মধ্যে কয়েকবার ধর্ষণ করা হত এমন অভিযোগও আছে। যেসব বন্দী বাগরাম কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছিলো তাঁদের অনেকের মন্তব্য এই যে, নির্যাতনের সময় আফিয়ার আত্মচিৎকার অন্য বন্দীদের জন্যেও অসহনীয় ছিলো।

 

কি ছিলো এই বিচারের ভিত্তি?  শুধুই কিছু ডকুমেন্ট? আর সন্দেহপ্রবণ মন ?  ব্যাগের মধ্যে একটা মানচিত্র যদি থাকে শহরের বিশেষ জায়গার, তাহলে আপনি টুরিস্ট নন, টেররিস্ট এমনটাই আধুনিক বিচার আজকালের।  আর নাইট ভিশন গগলস বা মিলিটারি বিষয়ক বই কিনলেই বুঝি কেউ সন্ত্রাস হয়ে যায়? যদি ধরা হয় আফিয়া সন্ত্রাসী তবে তবে এই ধর্ষণ কি বিচারের অংশ ?  আচ্ছা যদি অনুমানের ভিত্তিতেই তাঁর সাজা হয়ে থাকে, তাহলে চার দেওয়ালের মাঝে আফিয়ার ধর্ষণ ও কি এই বিচারের অংশ। তাহলে এই ধর্ষণেরও তো বিচার হওয়ার কথা । আসল বিচারপতির বিচারে দিন আসল সত্য নিশ্চই উন্মচিত হবে। একজন মুসলিম নারী হওয়াটাই কি আফিয়ার দোষ? একজন আমেরিকান বন্দিনীকে ধর্ষন করলে নিশ্চই মানবতা আজ চুপসে থাকতোনা বিশ্বের । সব কিছু জানার পরও বাকি থাকে অনেক কিছু জানার, বোঝার । আফিয়ার সেই সব ইন্সট্রুমেন্ট এর কথাই বলছি। সে সব সন্দেহ জাগানিয়া ছিল বটে, তবে কারো ব্যাগে ছুড়ি থাকলেই তো তাকে খুনি বলে ফাসিতে চড়াতে পারেন না। নাকি জোর যার মুল্লক তাঁর? সেটাই হবে হয়তো!  খালিদ শেখ মহাম্মদকে নির্যাতন করা হয়, ফলাফল সরূপ আফিয়ার বিরুদ্ধে সে সাক্ষী দেয়। এটা জোর পুর্বক সাক্ষী আদায় নাকি স্বেচ্ছায় সাক্ষ দা আমার জানা নেই। তাই এই সাক্ষির উপর সম্পূর্ন আস্থা রাখা যায় না মোটেই। ওই নারীর উপর নির্যাতন বন্ধ করতে অন্য বন্দিরা অনশন করেছিলো এমনটা জানা যায়।

 

২০০৩ থেকে ২০০৮ আফিয়ার হদিস কেউ পায়নি! নাকি তাকে গুম করা হয়েছিলো? এর পরেই হঠাৎ আফিয়ার উদয় ঘটে  আর তাঁকে বন্দী করে স্থানান্তর করা হয় নিউইয়র্কের এক গোপন কারাগারে। তাকে পুরুষ দের সাথে ঐ কারাগারে থাকতে হয়েছে। পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেটার দাবি করেন যে  ড. আফিয়া সিদ্দিকাকে পাকিস্তানের কর্তৃপক্ষের মধ্যে যার বিনা বিচারে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দিয়েছেন তাঁদের অবশ্যই বিচারের আওতায় আসতে হবে। আফিয়া সিদ্দিকাকে ৮৬ বছরের জন্য কারাবাসের আদেশ দেওয়া হয় । তিলে তিলে মারার বিশেষ নিয়ম বুঝি এই। হাজার বার ধর্ষনের চাইতে মৃত্যু হয়ত আফিওয়ার জন্যে কাংখীত স্বপ্ন। তাঁর বিরুদ্ধে মামলার শেষ নেই, তবে প্রমানের ঘাটতি আছে।   তাকে জিজ্ঞাসা বাদের নামে নির্যাতন করা হয়। এই বিষয়ে সরকার পক্ষের আইনজীবী বলেন যে-আফিয়ার কাছে গুরুত্বপূর্ন স্থানের মানচিত্র পাওয়া গিয়েছে। আগেই বলেছিলাম, এখন পকেটে মানচিত্র নিয়ে ঘোরা তাও বিপদের কারন হয়ে দারাতে পারে। ধরুন আপনার কাছে ম্যানহাটনের মানচিত্র আছে , আর আপনি মুসলিম, এর মানে এই দাড়াতে পারে যে আপনি সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে জড়িয়ে পরেছেন। ড.আফিয়াকে ৮৬ বছরের কারাবাসের নির্দেশের পর পাকিস্তানের রাস্তায় বিক্ষো্ভ হয় । অনেকেই কিন্তু মনে করছেন, তিন সন্তানের দুঃখিনী মা হার্ভার্ডের পিএইচডি অর্জন করা আফিয়া সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধের আরেকটি শিকার , যে কিনা নির্দোষ।

 

আফিয়ার জন্যে বিক্ষোব কারীদের যুক্তি মোটেই খর্ব করা যায় না। তাঁদের মতে নিশ্চিত ভাবে দোষী প্রমাণ হওয়ার আগ পর্যন্ত যে কোন অভিযুক্ত ব্যক্তি নির্দোষ বলে বিবেচিত হয়।  ফলে তারা কিছু সুবিধা পায়। আফিয়ার ক্ষেত্রে ঠিক এর উলটো টাই ঘটেছে। তাঁর উপর নির্যাতনের বিষয়টি আলোচিত হয় কারাগার থেকে লেখা তাঁর আলোচিত চিঠির কারনে। চিঠি থেকে আফিয়ার দাবি থেকে জানা যায় যে – তাঁর উপর শারীরিক ভাবে নির্যাতনের পাশাপাশি চলেছে একের পর এক ধর্ষনের পাশবিক অত্যাচার।এখন তিনি আসলেই অপরাধী কিনা অপরাধী নন এই ব্যাপারটা নিয়ে বিতর্ক করার চেয়ে , এটা চিন্তার বিষয় সন্দেহের বশে আপনি কয় জন মানুষকে শূলে চড়াবেন? শিক্ষিত্ আফিয়া কি এই সন্দেহের রোষানলে পুড়েছে? অভিযুক্ত আফিয়ার বিরুদ্ধে কিছু বিবৃতি ছাড়া নিদ্দৃষ্ট প্রমান কই?  নাকি মুলিম নারী বলেই প্রমান ছাড়াই বলা যায় সে অপরাধী ! ড.আফিয়া সিদ্দিকির মৃত্যু নিয়ে গুঞ্জনের শেষ নেই। তবে তিনি বেঁচে আছেন নাকি মরে গেলেন সেটার চেয়ে তিনি কিভাবে ছিলেন এটাই অনুতাপের বিষয়। একজন নারী ধর্ষনের শিকার হয়ে তিলে তিলে মরার চেয়ে নিজের অকাল মৃত্যু তেই বোধ করি খুশি হবে বেশি। আর আফিয়ার মৃত্যু চিন্তায় তে কেদে লাভ কি! সে তো প্রতিবার ধর্ষনের সময় একবার করে মৃত্যু বরন করছিলো !

 

সবকিছুই আল্লাহ জানেন। তিনিই জানেন আসল অপরাধী কে।প্রমাণিত হওয়ার আগেই  অপরাধের সন্দেহে কোন ব্যক্তিকে শাস্তি দেওয়ার বিচার ও তাঁর হাতেই নিশ্চই আছে । আফিয়া অপরাধী হলে সে এ জগতে কষ্ট তো পাচ্ছেই ,পরের  জগতেও শাস্তি পাবে । আর যদি না হয় তবে তাকে বিনা অপরাধে শাস্তি দেওয়া মানুষ গুলো নিশ্চই পরকালে নিস্তার পাবেনা। আর বন্দিনীর উপর পাশবিক অত্যাচারে হিসেব টা হয়ত বিধাতার আলাদা খাতায়  লেখা থাকবে ।

ছোট বেলায় শুনতাম আইন অন্ধ,ভাবতাম আইন অন্ধ হলে বিচার কিভাবে করে!  পরে জেনেছিলাম আইন সবাইকে সমান ভাবে দেখে বলেই এই কথা প্রচলিত আছে, তবে এখন বেশ বুঝি আসলেই আইন অন্ধ  মাঝে মাঝেই।  

আফিয়া সিদ্দিকা সম্পর্কে আরো লেখা পড়তে নিচের লিঙ্কে  ক্লিক করুন  –

 

                                                                                  একজন মুসলিম বন্দিনীর জীবন কথা

রেফারেন্স   en.wikipedia.org

  

             www.breakingnews.com  

            bn.wikipedia.org

ফেসবুক কমেন্টস

Reactions

0
0
0
0
5
0
Already reacted for this post.

প্রতিক্রিয়া

5

মন্তব্য করুন