বহদ্দারহাট বাজারের ভেতরটা সবসময় সরগম থাকে। দিন হোক বা রাত, বৃষ্টি বা রোদ। কাঠ ফাটা রোদ্দুরে যেমন মানুষের আনাগোনা তেমনি বৃষ্টির মাঝেও থাকে হরদম কেনা বেচা। আমি আর বন্ধু মাহামুদ আমাদের বাসায় ছিলাম। আমার পিতা-মাতা গিয়েছিলেন পরিজন ভ্রমনে। মাহামুদ ব্যাচেলর মানুষ, একা থাকা তাঁর ধাতে আছে। আমার ধাতে নেই,গাতেও সয় না।
সে ছিলো বলে ভরসা। দুপুর বেলা দুমুঠো খাওয়ার একটা আশা আছে। এ না থাকলে হয়ত চা-আর বিস্কুট খেয়েই বেলা পার করতাম। যাক বন্ধুর সাথে হাটছিলাম বাজারের পথ ধরে। মাহামুদের বাজারে আবার বিশেষ ধরন । সারা বাজার ঘুরে এখান থেকে আধা কেজি, ওখান থেকে আধা-পোয়া, ওখান থেকে ২০০ গ্রাম, সেখান থেকে ১ কেজি। একটা সব্জির ১ কেজি নিবে কিন্তু ভালোমত বাজিয়ে নেবে। পোকা আছে কিনা, সবজি তাজা কিনা , ভাংলে পটর পটর শিমের আওয়াজ হয় কিনা সব দেখে নিবে। যাক অনেক গবেষনার পর এক দুই ঠোঙ্গা বাজার করে আমরা বাসার পথ ধরলাম।
আমার চায়ের তেষ্টা পেলো। মাহামুদের আবার তেষ্টা খুব কম, যা খাবে ঘরে। তবুও তাকে নিয়ে একটা দোকান খুজে পেয়ে ঢুকে পরলাম।
দুটো চা আর বিস্কিট এর অর্ডার করলাম। দোকানের চায়ের কাপে বিস্কিট চুবিয়ে চুবিয়ে খেতে একটা আলাদা মজা আছে। এ মজা গ্রিল চিকেন ছিড়ে খাওয়ার থেকে বেশি, এ আয়েশ অন্যরকম। চুবিয়ে দুটো বিস্কিট খেয়ে আরেকটি চাইতেই, মাহামুদ বলে উঠে,”দুইটার বেশি না, “excess of anything is bad”
, আজকে দুইটা খাবি, কালকে দুইটা”
আমি তাকে বুঝিয়ে বললাম যে”কালকে না খাই, আজকে চারটি খাই”। নাহ সে বুঝবেনা। দোকানদার আমাদের অবস্থা দেখে হাসছে।
আসার আগে দোকানদার জিজ্ঞেস করলো, “বাড়ি কোথায় আপনাদের ? হঠাৎ জিজ্ঞেস করলাম কিছু মনে করবেন না যেন” ।
আমি আর মাহামুদ হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছি। নাহ আমাদের প্রশ্ন করেছেন বলে নয়। সে প্রশ্নটা করেছে নির্ভুল ইংরেজিতে। আমরা খানিকটা অবাক হয়েই নিজেদের পরিচয় দিলাম। বাশখালী গ্রামের অন্তর্গত কালীপুরে আমার জন্ম, আর মাহামুদ সাতকানিয়ার।
মনের মধ্যে প্রশ্নটা খচ-খচ করছিলো , কিন্তু জিওজ্ঞেস করতে পারছিলাম না। এভাবে ইংরেজি জানা,শিক্ষিত দোকানদার এর সম্মুখীন খুব কম হয়েছি। তাই ধুম করে প্রশ্ন করে বসতে ভয় লাগছিলো বটে। লোকটা মধ্যবয়স্ক,মাথায় চুল কম,কিন্তু চোখ দেখে মনে হয় বুদ্ধি বেশি। লোকটা সেই বুদ্ধিদীপ্ত চোখ নাচিয়ে জিজ্ঞেস করলো ”বাবার নাম কি?”
আমি সাধুর মত বলে দিলাম,”নাজিম উদ্দিন”
‘তোমার বাবাকে আমার সালাম দিবে, উনি আমার স্যার”
“আপনি কি…?”
“হ্যা আমি বাশখালী ডিগ্রী কলেজের ছাত্র ছিলাম”
“ও” আমি এর বেশি কিছুই বললাম না। মনে মনে চিন্তা করছিলাম নিশ্চই ইয়ার ড্রপ দিয়ে এখন দোকানের পথ ধরেছে। আবার এর কাছে আসতে হবে ,এর পুরো গল্প জানার জন্য। একদিনে সবটা জানতে চাইলে হয়ত কিছুই জানা হবেনা।
সেদিনের মত বিদায় নিয়ে চলে আসলাম।