বাংলাদেশের বিশিষ্ট্য দার্শনিক, সাহিত্যিক,শিক্ষাবিদ,প্রবন্ধকার সরদার ফজলুল করিম(মে ১ , ১৯২৫ — জুন ১৫, ২০১৪। তাঁর জন্ম বরিশালের আটিপাড়া গ্রামে। আটিপাড়া গ্রামের এক কৃষক পরিবারে তাঁর জন্ম। তাঁর বাবা খবির উদ্দিন সরকারের পেশা ছিলো কৃষিকাজ। পরিবারের দেখাশোনা করতেন মা সফুরা বেগম। দুই ভাই তিন বোনের সাথে সরদার ফজলুল করিমের শৈশবের দিনগুলো কেটেছে গ্রামে। কৃষক পরিবারে জন্ম নেওয়া ফজলুল করিম একদিন দেশ বরেণ্য মানূষ হবেন, কে জানত!
গ্রামেই মেট্রিকুলেশন পরীক্ষা দেন। মেট্রিকুলেশন শেষে ঢাকায় আসেন ১৯৪০ সালে। ১৯৪২ সালে ঢাকায় আই,এ অধ্যয়ন সমাপ্ত করেন। পরবর্তিতে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে । সেখানে অনার্স শুরু করেন দর্শন শাস্ত্রের উপর। পর্যায়ক্রমে ১৯৪৫ সালে দর্শন শাস্ত্রে অনার্স ও ১৯৪৬ সালে এম,এ ডিগ্রী লাভ করেন।
পাঠ শেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই তিনি শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৪৬ থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন শাস্ত্রের শিক্ষক হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। তিনি সাম্যবাদী বাম্পন্থী সামাজিক রাজনৈতিক আন্দোলনের সাথে যুক্ত ছিলেন। এই কারনে তাঁকে পাকিস্তান সরকারের রোষের সামনে পরেন এবং পাকিস্তান সরকার কর্তিক নিগৃহীত হন। তিনি ছিলেন রাজবন্দী হিসেবে। রাজবন্দী হিসেবেই দীর্ঘ ১১ বছর তিনি বিভিন্ন পর্যায়ে তিনি কারাজীবন ভোগ করেন। জেলে থাকা অবস্থায় ১৯৫৪ সালে তিনি পাকিস্তান সংবিধান সভার সদস্য হিসেবে কাজ করেন। তিনি দীর্ঘ দিন, ১৯৬৩ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত বাংলা একাডেমির সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক হিসবে কাজ করেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বরে তিনি পাকিস্তান হানাদার-দখলদার বাহিনী কর্তৃক গেফতার হন। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তি কালে ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫৬ সাল পর্যন্ত তিনি আবারো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন।
তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্তের মধ্যে রয়েছে “চল্লিশের দশকে ঢাকা“, “রুমীর আম্মা” , “নানা কথা“, “নানা কথার পরের কথা” , “নূহের কিশতি ও অন্যান্য প্রবন্ধ” , “গল্পের গল্প” । তাঁর অনুবাদকৃত গ্রন্থের তালিকাও কম নয়। সরদার ফজলুল করিমের অনুবাদকৃত গ্রন্থগুলো হলো- প্লেটোর “রিপাব্লিক” , প্লেটোর “সংলাপ” , এরিস্টোটল এর “পলিটিক্স” , এঙ্গেলস এর “এন্টি ডুরিংস“, রুশোর “সোশ্যাল কন্ট্রাক্ট” , রুশোর “দি কনফেশনস” । তাঁর অন্যান্য রচনার মধ্যে “দর্শনকোষ” , “শহীদ জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা স্মারকগ্রন্থ” , ও “সেই সে কাল” উল্লেখযোগ্য ।
তিনি স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার ও বাংলা একাডেমি পুরস্কার সহ আরো বিভিন্ন পুরস্কারের অধিকারী । এই সাহিত্যানুরাগী ব্যক্তি ২০১৪ সালে ৮৯ বছর বয়সে ঢাকার শমরিতা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যবরন করেন।