ভ্যালেরি টেইলর এর জীবনের গল্প-বদলে দেবে আপনার জীবন দর্শন

Please log in or register to like posts.
পোস্ট

ভ্যালেরি টেইলরের জন্ম যুক্তরাজ্যের  কেন্ট শহরে।  সেখানেই কেটেছে তাঁর শৈশব ও কৈশোর। ১৯৪৪ সালের ৮ ই   ফেব্রুয়ারি  উইলিয়াম টেইলর ও মেরি টেইলরের ঘর আলো করে আসেন ভ্যালেরি টেইলর। তরুন বয়সে তিনি (VSO ) ( ভিএসও  – ভলান্ট্যারী সার্ভিস ওভারসীজ ) নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সাথে কাজ করতেন।  এই সংগঠনের কাজে ১৯৬৯ সালে তিনি  তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তান অর্থাৎ আজকের বাংলাদেশে আসেন।

 

সে সময় তাঁর উদ্দেশ্য ছিলো ফিযিওথেরাপির সেবা দান করা।  তিনি বাংলাদেশের বন্দরনগরী চট্টগ্রামের কাছেই অবস্থিত চন্দ্রঘোনা খ্রিস্টান হাসপাতালে  যোগ দেন ফিজিওথেরাপিস্ট হিসবে। তাঁর উদ্দেশ্য ছিলো স্বেচ্ছাসেবা, মানব সেবা। শত প্রতিকূলতা সত্তেও তিনি তাঁর লক্ষ্য থেকে পিছিয়ে আসেন নি।

 

১৯৭১ সালে শুরু বাংলাদেশের রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধ। যুদ্ধের কারনে তিনি বাধ্য হন  ইংল্যান্ডে ফিরে যেতে। তাঁর মানব কল্যানে নিয়োজিত মন তাঁকে বারবার মানব সেবায় অনুপ্রেরনা দিয়েছে। তিনি ফিরে এসেছিলেন এই বাংলার মাটিতে আবার। যুদ্ধ শেষ হতে তখনো মাস দুয়েক বাকি। তিনি ফিরে আসেন বাংলাদেশে। তাঁর কাজের ক্ষেত্র আরো বেড়ে গিয়েছিলো কারন যুদ্ধের কারনে পঙ্গুত্বের হার আশংকাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছিলো। তিনি নিবিড় সাধনার সাথে তাঁর কাজ করে যান, এবং সাফল্য পান। দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম হয়। স্বাধীনতার পর প্রায় দুই বছর তিনি বাংলাদেশে ছিলেন।

 

১৯৭৩ সালে তিনি আবারো ইংল্যান্ডে ফিরে যান। উদ্দেশ্য সেই একি – মানব সেবা।  মানব সেবার জন্যে তাঁর মনের স্বপ্ন কে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তিনি ইংল্যান্ডে গিয়েছিলেন।  উদ্দেশ্য ছিলো বাংলাদেশে একটি যথার্থ ফিজিওথেরাপি সংগঠন গঠনের জন্য অর্থ এবং অন্যান্য সাহায্যের ব্যবস্থা করা। ১৯৭৫ সালে তিনি আবার বাংলাদেশে ফিরে আসেন।

 

বাংলাদেশে ফিরে এসে তিনি নিজেকে মানবসেবার জন্য নিয়োজিত রাখেন।  কেটে যায় ৪ টি বছর।  তিনি সে সময় বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় অবস্থিত  সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন। তাঁর মানবসেবার জন্য তিনি অনেক প্রচেষ্টা এবং অপেক্ষার পর  হাস্পাতালের দুটো পরিত্যাক্ত গুদাম ঘর পেয়ে যান।  প্রথম বারের মত এখানেই ক্ষুদ্রাকারে প্রতিষ্ঠিত করেন ফিজিওথেরাপির স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ( সিআরপি – CRP ) ।  শুরু করেন রুগী ভর্তির কাজ।  সিআরপি প্রতিষ্ঠার পর থেকে তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম ও সাধনা করতে থাকেন এর উন্নয়নের জন্য।

 

সাইকেলে চেপে বাড়ী বাড়ী গিয়ে দিয়ে তিনি সাহায্য চান। এজন্য কম লাঞ্চনা-গঞ্জনা  সহ্য করতে হয়নি তাকি। এভাবেই তাঁর ত্যাগের মাধ্যমে ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠানটি  উন্নত হয়।  পরিনত হয় ৪০০ শয্যার এক দাতব্য হাসপাতালে ।  এক পর্যায়ে তাঁকে তাঁর           নেতৃস্থানীয়  পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।ফলে দাতব্য থেকে এটি একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রুপ লাভ করে।   পরে তিনি অবশ্য  তাঁর  পদ ফিরে পান।  তবুও এ প্রতিষ্ঠানের যে উদারনৈতিক স্বেচ্ছাসেবার  নীতি ছিলো তা বর্তমানে ব্যাহত হচ্ছে।

 

অনেক বাঁধা সত্তেও থেমে থাকেন নি তিনি । ১৯৯০ সালের পূর্ব পর্যন্ত তিনবার তাঁর চিকিৎসা স্থান পরিবর্তিত হয়। পরবর্তিতে সাভারে যা ঢাকা মহানগরীর অদূরে অবস্থিত একটি পক্ষাঘাত পুনর্বাসন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন। ভেলরির এই কেন্দ্রটি বর্তমানে সিআরপি নামেই অধীক পরিচিত ।

 

তাঁর জীবনের অধিকংশ সময় যায় এই মানব সেবার কাজে। নিজেকে এই কাজে নিয়জিত রাখতে গিয়ে তিনি বিয়ে পর্যন্ত করেন নি।  মানবতার এই সেবিকা পক্ষাঘাত গ্রস্ত ও পঙ্গু দুজন মেয়েকে দত্তক নেন।  তাঁর নাম জয়তি ও পপি।  এদেরকে তিনি নিজের সন্তানের মতই ভালোবাসেন। তাঁদের কে তিনি নিজ উদ্যোগে কাজ শেখান।  এদের মধ্যে একজন সিআরপি তে কাজের জন্য নিয়োগপ্রাপ্ত হয়। অপরজনের শারীরিক অবস্থা ভালো না হওয়ায় , সে ভেলরির সাথেই তাঁর বাসায় অবস্থান করে।

 

ভ্যালেরি  টেইলর তাঁর ৬৮ বছরের কর্মজীবনে  অনেক স্বীকৃতিসহ সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন  করেছেন । ভ্যালেরী টেইলর এর  কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৯৫ সালে ব্রিটিশ সরকার তাঁকে অর্ডার অব দ্যা ব্রিটিশ এম্পায়ার পদকে ভূষিত করে । বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৮ সালে তাঁকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করেন। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরীক সবীকৃতি হিসেবে তাঁকে স্বাধীনতা পদক প্রদান করা হয়। । মানবসেবাই তাঁর লক্ষ্য, দুস্তদের পাশে দাঁড়ানো তাঁর উদ্দেশ্য। 

একজন ভ্যালেরি টেইলর, একজন স্বেচ্ছাসেবী ,   বদলে দেয় মানুষের দৃষ্টি ভঙ্গী, বদলে দেয় জীবন।

ফেসবুক কমেন্টস

Reactions

0
0
0
0
0
0
Already reacted for this post.

প্রতিক্রিয়া