লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির চিত্রকর্ম ও মোনালিসা রহস্য

Please log in or register to like posts.
পোস্ট

আজকে আমরা জানবো লিওনার্দ দ্য ভিঞ্চির সেরা কিছু চিত্রকর্ম সম্পর্কে।১৪৯৫ সালের দিকে লুডোভিও স্ফোরজা ও পরে মিলানের ডিউক, মিলানের সান্তা মারিয়া দেলে গ্রেইজির মঠের ডাইনিং হলের পিছনের দেওয়ালে “দি লাস্ট সাপার” আঁকতে দ্য ভিঞ্চিকে অনুমতি দেন।লিওনার্দো এর বিখ্যাত  চিত্রকর্ম “ দ্যা লাস্ট সাপার” । এই মাস্টারপিস টি সম্পূর্ণ করতে ভিঞ্চির সময় লেগেছিল প্রায় তিন বছর।চিত্র টি তে সেই মুহূর্তের ঘটনা টি ফুটিয়ে তোলার একটা চেষ্টা আছে যখন ঈসা বারোজন অনুসারীদের শেষ ভোজের জন্য একত্রিত করেছিলেন,আর তাদের কে জানিয়েছিলেন যে তাদের মধ্যে একজনই শীঘ্রই তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করবে।

এবার জানা  যাক তার “ ভিট্রুভিয়ান ম্যান” সম্পর্কে কিছু কথা।

 

বিজ্ঞান এবং কলার সংমিশ্রনে  ১৪৯০ সালে আঁকা “ভিট্রুভিয়ান ম্যান”  স্কেচ। । বর্গক্ষেত্র এবং একটি বৃত্ত উভয় এর ভিতরে  একটি পুরুষ চিত্র যার হাত পা বিভিন্ন দিকে আলাদা ভাবে ছড়ানো,   সুপারিম্পোসড(উপরে স্থাপিত করা-place one over another) অবস্থায় চিত্রিত রয়েছে যা “ভিট্রুভিয়ান ম্যান” নামে পরিচিত।স্কেচ টি তে লিওনার্দোর অনুপাতের সমীক্ষার বিষয়ে ধারনা প্রকাশ পেয়েছে, পাশাপাশি স্কেচ টি প্রকৃতির আথে মানুষের একটা সম্পর্ক বোঝানোর  ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। 

“Battle of Anghiari’ চিত্র কর্মটির সাথে জড়িয়ে আছে ভিঞ্চির নাম।১৫০৩ সালে ভিঞ্চি ছবিটির কাজ শুরু করেন।

মোনা লিসা:“মোনা লিসার”  রহস্যাবৃত হাসি সম্পর্কে নানা জনের নানা মত।

মোনালিসা” তৈরির সময় সাদা ক্যানভাসের উপরে বিভিন্ন স্তর তৈরির জটিল পদ্ধতি ব্যবহার করেন লিওনার্দো । আর এতে তিনি এতটাই দক্ষ আর সফল ছিলেন যে পরবর্তিতে আর কেউই এই পদ্ধতিতে সমানভাবে সফল হয়নি । বিভিন্ন অনুপাতের মিশ্রনের তৈলাক্ত স্তর ব্যবহার করে কাজটি করেন লিওনার্দো । এতে বিভিন্ন স্তরে আলাদা আলাদা ভাবে রং মিশিয়ে তিনি ধীরে ধীরে পূর্ণাঙ্গ রূপ দেন “মোনালিসা” এর ।  শুধু মোনালিসাই নয় আরও বেশ কয়েকটি চিত্রকর্মে লিওনার্দো এই একই পদ্ধতি ব্যবহার করে গেছেন । শিল্পজগতে লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চির এই কাজগুলো আজও সমান ভাবে রহস্যময় এবং শ্রেষ্ঠ । বিশেষজ্ঞদের ধারণা, রেনাসা যুগেরই কোনো শিক্ষানবীশ শিল্পী ভিঞ্চির মোনালিসা ছবিটি দেখে দেখে এ অসাধারণ কার্বন কপিটি এঁকেছিল । সাধারণ পেশাদারী ক্যামেরা অন্তত ২০ মেগাপিক্সেল ক্ষমতার হয়ে থাকে যা কিনা মৌলিক তিনটি রং নিয়ে কাজ করতে সক্ষম । কিন্তু Pascal Cotte এরবিশেষ ক্যামেরা ২৪০ মেগাপিক্সেল ক্ষমতার যা কিনা ১৩টি তরঙ্গদৈর্ঘ্য নিয়ে কাজ করতে সক্ষম, যার মাঝে ৪টি আমাদের দৃষ্টিসীমার বাইরে ।Pascal Cotte নামের এই  প্রকৌশলী তার উদ্ভাবিত শক্তিশালী একটি ক্যামেরা দিয়ে সর্বপ্রথম “মোনালিসা” চিত্রকর্মটি বিশ্লেষণ করেন।  ভিঞ্চি তার মডেলদের সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য অর্থাৎ কে, কবে, কোথায় তার ছবির মডেল হয়েছেন তার নোটবুকে রাখতেন । তবে  মোনালিসার মডেলের সম্পর্কে কোন তথ্য তার নোটবুকে পাওয়া যায়নি।  অনেক শিল্প-গবেষক রহস্যময় হাসির এই নারীকে ফ্লোরেন্টাইনের বণিক ফ্রান্সিসকো দ্য গিওকন্ডোর স্ত্রী লিসা গেরাদিনি বলে সনাক্ত করেছেন । লিওনার্দোর শিল্পকর্মটি ফ্রান্সের ল্যুভ জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে ।



 ২০০৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত একটি মার্কিন চলচ্চিত্র-দ্য দা ভিঞ্চি কোড (ইংরেজি ভাষায়: The Da Vinci Code) । দ্য দা ভিঞ্চি কোড উপন্যাসের উপর ভিত্তি করে নির্মিত এই চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেছেন রন হাওয়ার্ড । দ্য ডা ভিঞ্চি কোড বইয়ের কাহিনিতে ড্যান ব্রাউন লিখেছেন, মোনালিসা নামটি আসলে মিসরীয় দেবী আমন এলইসার নাম থেকে এসেছে । ড্যান ব্রাউনের এ উপন্যাসটি ২০০৩ সালে প্রকাশিত হয়েছিল ।ভিনসেতি বলেন, ‘লেওনার্দো প্রতীক ও সংকেতের প্রতি অনুরক্ত ছিলেন । এগুলো ব্যবহার করে তিনি বার্তা পৌঁছাতে চেয়েছেন ।এই হাসি আমরা দেখতে পেতাম না যদি শিল্পী মুখরে একটি রেখা অতি সামান্য ঘুরিয়ে দিতেন । ইতালির একজন গবেষক দাবি করেছেন, রেনেসাঁ যুগের শিল্পী লেওনার্দো দ্য ভিঞ্চির আঁকা চিত্রকর্ম ‘মোনালিসা’র চোখে একাধিক বর্ণ লেখা রয়েছে । অনেকে তো বলেন প্রায় কথায় কথায় যে মোনালিসার হাসি নিয়ে যে পরিমাণ গবেষণা হয়েছে তা দিয়ে একটা মহাকাব্য লিখা যাবে অতি সহজেই ।মোনালিসার দুই চোখে কয়েকটি বর্ণ রয়েছে । এখান থেকে ওই ছবিটির মডেল কে ছিলেন, তা জানা সম্ভব হতে পারে ।বলা হয়,  ইতালির ফ্লোরেন্সের এক বণিকের স্ত্রী ছিলেন সেই মডেল । যাঁর নাম ছিল লিসা গেরারদিনি । কিন্তু ইতালির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যবিষয়ক জাতীয় কমিটির সভাপতি ভিনসেতি বলছেন, মোনালিসার ডান চোখের মণিতে ‘এল’, ‘ভি’ বর্ণ দুটি লেখা রয়েছে; যা লেওনার্দোর নামের আদ্যক্ষর । আর বাঁ চোখে রয়েছে ‘বি’ অথবা ‘এস’ বর্ণ বা ‘সি’, ‘ই’ বর্ণদ্বয় । এ দুটি বর্ণও কোনো অর্থ বহন করে এবং সম্ভবত তা এই চিত্রকর্মটির মডেলের পরিচয় বহন করছে । তাঁর মতে, ফ্লোরেন্সের বণিকের স্ত্রী নন, বরং মোনালিসার মডেল ছিলেন অন্য কোনো নারী । কারণ লেওনার্দো ছবিটি ইতালির মিলান শহরে বসে এঁকেছিলেন ।

ভিঞ্চি  ছবির চোখে সূত্র রেখে গেছেন কারন ভিঞ্চি আমাদের জানাতে চেয়েছেন, মোনালিসার মডেল কে ছিলেন।লিওনার্দো দা ভিঞ্চি এমন একজন যার চিন্তা ভাবনা ছিলো তার সময়ের চাইতে অনেক এগিয়ে।পৃথিবীর ইতিহাসে এমন ক্ষণজন্মা পুরুষ কম , ৪৮৮ বছর আগে তিনি রেখে গেছেন অগণিত আধুনিক চিন্তা । তাকে আজও মানুষ স্মরণ করে । তার চিন্তা ছিল সুদূরপ্রসারী, তিনি ছিলেন মুক্তচিন্তার অধিকারী। এখনো  তার সৃষ্টির নান্দনিকতায় মুগ্ধ পৃথিবীর মানুষ।

লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি সম্পর্কে আরো জানতে ক্লিক করুন নিচের লিঙ্কে –

                                                                       ১)  লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির জীবনী

রেফারেন্স   en.wikipedia.org

ফেসবুক কমেন্টস

Reactions

1
0
0
0
0
0
Already reacted for this post.

প্রতিক্রিয়া

1

মন্তব্য করুন