রোকেয়ার বিয়ে পরবর্তি কর্ম জীবন

Please log in or register to like posts.
পোস্ট

১৮৯৮ সালে ১৮ বছর বয়সি রোকেয়ার বিয়ে হয় ভাগলপুরের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেনের সাথে। বিয়ের পরপর ই তিনি “বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন” নামে পরিচিত হন। বিয়ের পর বেগম রোকেয়ার সাহিত্য সাধনা ও শিক্ষা অর্জনে ব্যাঘাত আসতে পারত, কিন্তু তাঁর স্বামী মুক্তমনের মানুষ ছিলেন। রোকেয়াকে তিনি কোন বাধা দেন নি, বরঞ্চ রোকেয়াকে তিনি লেখালেখি করতে উৎসাহ দেন। তিনি একটি স্কুল তৈরির জন্য কিছু অর্থ আলাদা করে রাখেন, কারন তিনি তাঁর অর্ধাঙ্গিনীর স্বপ্ন সম্পর্কে জানতেন এবং তা পুরন করতে তিনি অন্তর থেকে চেয়েছিলেন। রোকেয়া সাহিত্যচর্চা শুরু করেন। ১৯০২ সালে “পিপাসা” নামের একটি গল্প লিখার মধ্যেদিয়ে তাঁর সাহিত্য জগতে অগ্রযাত্রা শুরু হয়।এর পর থেকে তাকে পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। হ্যা বাধা ছিলো প্রতি পদে, কিন্তু সে সব রোকেয়াকে তার স্বপ্ন থেকে পিছিয়ে দিতে পারেনি।

সাল ১৯০৯, সাখাওয়াত হোসেন মৃত্যুবরণ করেন। এর মাত্র পাঁচ মাস পর বেগম রোকেয়া ভাগলপুরে “সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল” নামে একটি মেয়েদের স্কুল প্রতিষ্ঠা করে তাঁঁর স্বপ্ন পূরন এর পথে আরো এক ধাপ এগিয়ে যান। ১৯১০ সালে সম্পত্তি নিয়ে নানাবিধ ঝামেলার ফলে স্কুল বন্ধ করে তিনি কলকাতায় চলে আসেন। সেখানেই ১৯১১ সালের ১৫ই মার্চ তিনি সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল পুনরায় চালু করেন। প্রাথমিক অবস্থায় ছাত্রী ছিল ৮ জন। চার বছরের মধ্যে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৮৪-তে। ১৯৩০ সালের নাগাদ হাই স্কুলে পরিণত হয়।

তিনি স্কুল পরিচালনা ও জ্ঞানচর্চার পাশাপাশি জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত রোকেয়া নিজেকে সাংগঠনিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত রাখেন। ১৯১৬ সালে তিনি মুসলিম বাঙালি নারীদের অগ্রগতির জন্যে “ আঞ্জুমানে খাওয়াতিনে ইসলাম” নামে সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। বিভিন্ন সভায় তিনি তাঁর বক্তব্য তুলে ধরেন। রোকেয়া ১৯২৬ সালে কলকাতায় অনুষ্ঠিত বাংলার নারী শিক্ষা বিষয়ক সম্মেলনের ও সভাপতিত্ব করেন।তিনি বলেন,

“কোনো ভগ্নী মস্তক উত্তোলন করিয়াছেন, অমনি ধর্মের দোহাই বা শাস্ত্রের বচন-রূপ অস্ত্রাঘাতে তাঁহার মস্তক চূর্ণ হইয়াছে। …………….”

——–বেগম রোকেয়া

তাঁর উল্লেখযোগ্য রচনার মধ্যে “Sultana’s Dream” অন্যতম। যার অনূবাদ কৃত রূপের নাম সুলতানার স্বপ্ন। এটিকে বিশ্বের নারীবাদী সাহিত্যে একটি মাইলফলক হিসেবেই ধরা হয়। তাঁর অন্যান্য গ্রন্থগুলির মধ্যে পদ্মরাগ, অবরোধবাসিনী, মতিচুর উল্লেখযোগ্য। নবনূর, সওগাত, মোহাম্মদী ইত্যাদি পত্রিকায় তাঁর বিভিন্ন লেখা প্রকাশিত হয়। তিনি তাঁর প্রবন্ধ, গল্প, উপন্যাসের মধ্য দিয়ে তিনি নারীশিক্ষার প্রয়োজনীয়তা আর লিঙ্গসমতার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেছেন সুন্দরভাবে। তিনি হাস্যরসের সাহায্যে পিতৃতান্ত্রিক সমাজে নারীর অসম অবস্থান ফুটিয়ে তুলেছেন। তাঁর রচনার মাধ্যমে তিনি সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টির চেষ্টা করেছেন, ধর্মের নামে নারীর প্রতি অবিচার রোধ করতে চেয়েছেন।তিনি শিক্ষা আর ইচ্ছা অনুযায়ী পেশা নির্বাচনের সুযোগ ছাড়া যে নারী মুক্তি আসবে না সে সম্পর্কেও বলেছেন।

১৯৩২ সালের ৯ ডিসেম্বর, বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন ইহলোক ত্যাগ করেন। সেসময় তিনি ‘নারীর অধিকার’ নামে একটি প্রবন্ধ লিখছিলেন। তাঁর কবর উত্তর কলকাতায় অবস্থিত, যা পরবর্তীকালে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক অমলেন্দু দে দ্বারা আবিষ্ককৃত হয়।

পরবর্তিতে রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন এর স্মরণে বাংলাদেশ গণপ্রজাতন্ত্রী সরকার একটি গণউন্নয়নমূলক প্রতিষ্ঠান স্থাপন করে। বাংলাদেশের রংপুর জেলার অন্তর্গত মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দ গ্রামের পৈতৃক ভিটাতেই ৩ দশমিক ১৫ একর ভূমির উপর নির্মিত হয়েছে বেগম রোকেয়া স্মৃতি কেন্দ্র। এতে আছে অফিস ভবন, আধুনিক গেস্ট হাউজ, ডরমেটরি ভবন, গবেষণা কক্ষ, লাইব্রেরি ইত্যাদি ।এই স্মৃতিকেন্দ্র পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত আছে বাংলাদেশ সরকারের শিশু ও মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

বাংলাদেশের ৭ম বিভাগ হিসেবে রংপুর বিভাগের একমাত্র পূর্ণাঙ্গ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ‘রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়’ ৮ অক্টোবর ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত করা হয়। অতঃপর ২০০৯ সালেই ‘নারী জাগরণের অগ্রদূত’ হিসেবে তাঁর নামকে স্মরণীয় করার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়টির বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় নামকরণ করেন । উল্লেখ্য , নারীর নামে এটি বাংলাদেশে প্রথম কোন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। মহিয়সী বাঙালি নারী হিসেবে বেগম রোকেয়ার অবদানকে চিরস্মরণীয় করে রাখার জন্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের আবাসন এর “রোকেয়া হল” নামকরণ হয়।

নারী জাগরনের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া তাঁর লেখনির মাধ্যমে সমাজের ঘুমন্ত বিবেক কে জাগানোর আপ্রান চেষ্টা করে গেছেন।তিনি আমরন কাজ করে গেছেন নারীকুল এর অবস্থার উন্নয়নে ও তাঁদের শিক্ষা ব্যবস্থান কে প্রসারের লক্ষ্যে। এমন সাহসী ও তেজস্বী নারী, জ্ঞান সাধনায়, সাহিত্য রস আহরনে যার তুল্য সে সময়ে বা এ সময়ে খুব কমি আছেন।

রেফারেন্স 1. https://en.m.wikipedia.org/wiki/Begum_Rokeya

ফেসবুক কমেন্টস

Reactions

0
0
0
0
0
0
Already reacted for this post.

প্রতিক্রিয়া

মন্তব্য করুন