রিপন কে তার পরিবার আর ফেলে আসা অতীত সম্পর্কে আর বেশি কিছু জিজ্ঞেস করার সাহস পেলাম না। যার জীবনে সুখের ছোয়া নেই, জীবন যার পালিয়ে বেড়ানোর খেলা মাত্র তাকে অতীত জিজ্ঞেস করে কষ্ট দিতে নেই।রাত প্রায় ১ টা বাজে। রিপন ঘুমিয়ে পড়েছে , আমি থেমে আসা বৃষ্টির থেমে থেমে হয়ে যাওয়া কান্নার শব্দ শুনছি।
রিপন থেমে থেমে ফুপিয়ে উঠছে,যেন ঘুমের ভেতরেও অজানা কোন ভয় তাকে তাড়া করছে অথবা বুকের ব্যাথায় দুমড়ে মুচরে উঠছে শরীর। রাত টা কোন ভাবে কাটিয়ে সকালে বাড়ি ফিরে যাবো চিন্তা করছি। রিপনের চেহারার দিকে তাকিয়ে ঘরে ফেরার তাড়া অনুভব করছিলাম। ঘরের ছেলে পরের হলে কি যে দুঃখ তা রিপনকে দেখে হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি।
বসে বসে আজে-বাজে ভাবতে ভাবতেই বুঝি চোখটা লেগে এলো। হঠাৎ একটা ফোপানির শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেলো। উঠে বসে দেখি রিপন বসে বসে কাঁদছে । ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম সবে ২;৩০ বাজে। রিপনের বোধয় তার মায়ের কথা মনে পড়েছে। যত কষ্টই হোকনা কেনো, মাকে ফেলে আসা রিপনের মোটেই ঠিক হয়নি। তাকে বোঝাতে হবে ব্যাপারটা । তাকে ফিরে যেতে বলতে হবে মায়ের কাছে।
আমি কিছু বলার আগেই বিকার গ্রস্থের মত সে আমার কাছে এসে বলল, আমি পাপ করছি , আমি আপনারে মিথ্যা কইসি অনেক, আমারে পুলিশে দেন। আমি বন্যাপারটা বুঝতে পারলাম না ঘর থেকে পালিয়ে আসা নিশ্চই পুলিশে দেওয়ার মত পাপ নয়। আমি রিপন কে জিজ্ঞেস করলাম, কিসের অপরাধে তোমাকে পুলিশে দিবো?রিপন ছোট একটা উত্তর দিলো।
সে শুধু বলল,”খুন”।
“কাকে খুন করছ?” যদিও উত্তরটা জানতাম ,তবুও প্রশ্ন করলাম।
“ওই লোকডারে যে মাইয়েরে প্রতি রাতে মারত, ওই লোকড়ারে যে সবার সামনে মারে দেওয়ালে মাথা ঠুইকে বাড়ি খাওয়াইতো, ওই লোকরে যে মায়ের সব সম্পত্তি নিজের নামে কইরে নিয়ে মারে ঘর থেকে বাইর হইয়া যাইতে কইল ” ।
তাকে পুলিশে দেওয়া উচিৎ নাকি যে সমাজের আস্কারা পেয়ে মানুষ এমন পশুর পর্যায়ে নেমে যায় সেই সমাজকে কাঠগরায় দাড় করানো উচিৎ আমি ভেবে পাইনা। রিপনের দোষ যদি হয় খুন করা, তবে এই সমাজ সেই খুনির স্রষ্টা হিসেবে চির-দায়ি থাকবে। (সমাপ্ত)
আরোঃ
রিপন কথন, ১ম পর্বঃ তার সাথে পরিচয়
এই লেখকের আরো লেখনী পড়তে ক্লিক করুনঃ
জাভেদ করিম-ইউটিউবের সহ-প্রতিষ্ঠাতা,পর্ব-১
আমার জীবনের গল্পটা অন্যরকম ও হতে পারতো
একজন জিহাদের বদলে যাওয়ার গল্পঃ সে প্রোডাক্ট নয়-একজন মানুষ