মোঃ আব্দুল্লা ওয়াহিদের কষ্টে কেনা শৈশব
“ভাইয়া একটা ডিম নেন প্লিজ ” ছেলেটা এসেই বলল ৷
প্রথমে আমরা কথার ভিড়ে তাকে লক্ষ্যই করলামনা ৷ একেবারেই শিশু এখনো। ছেলেটা ডিমের বালতি নিয়ে অন্যত্র সরে গেলো ৷
সেসময় আমাদের মধ্য থেকে সাকিব বলে উঠল ছেলেটা এমন করে বলছে যখন একটা ডিম বোধয় খাওয়া যায়৷ রেজোয়ান ভাইও সম্মতি-সূচক মাথা নাড়ল ৷ ছেলেটাকে ডাক দিয়ে বলা হল একটা ডিম দিয়ে যেতে।
ছেলেটা আমাদের সlমনে এসে ডিমের খোসা ছাড়াতে শুরু করল।
রেজোয়ান ভাই জিজ্ঞেস করলেন “ডিম আর কটা আছে?”
ছেলেটা খোসা ছাড়াতে ছাড়াতে উত্তরে জানাল “এটাই শেষ ”
রেজোয়ান ভাই জানতে চাইলেন “ডিমের দাম কত? ”
ছেলেটা উত্তর দেওয়ার আগে ছোটখাট একটা ব্যাখ্যা দিল এভাবে “আগে এই হাসের ডিম ১২ টাকায় কিনে ১৭ টাকায় বিক্রি করতাম ৷ এখন কিনাই পড়ে ১৪ টাকা তাই ২০ টাকায় বেচি l ”
কথায় কথায় তাকে আমরা জিঞ্জেস করলাম তার বাড়িতে কেকে আছেন , তার নাম কি- এসব।
সে জানালো তার নাম মোঃ আব্দুল্লা ওয়াহিদ। তারা দুই ভাই এক বোন , সেই সবার বড় ৷
জিজ্ঞেস করলাম “বাবা কি করেন ?”
ছেলেটা জানালো “বাবা ডিওএইচএস গেটের দারোয়ান ” ।
“তুমি পড়ালেখা কর ?”
” স্কুলে ভর্তি হইসিলাম , মাঝখানে বাড়িতে চলে যাওয়ার কারনে পড়তে পারি নি , আবার শুরু করব “ I
ছেলেটা টাকা গুছিয়ে চলে যাচ্ছিল , তখন তাকে জিজ্ঞেস করলাম ,সে ডিম বেচে টাকা কি করে৷
সে জানালো – সে দিনে প্রায় ৬০-৬৫ টা ডিম বিক্রি করে , এবং সব টাকা ঘরে মাকে দিয়ে দেয় l
মা তাকে নাস্তা করার জন্য ১০ টাকা দেয় দৈনিক , সে সেটাই খরচ করে I
ছেলেটার তাড়া দেখে সেখানেই আমরা কথা শেষ করলাম । ছেলেটা হাসিমুখে বিদায় নিয়ে চলে গেলো ৷
আব্দুল্লা ওয়াহিদের মত এই বয়সে আমরা অনেকেই এমন জীবন সংগ্রামের মুখোমুখি হইনি I আমরা অনেকেই আমাদের শৈশব কাটিয়েছি বাবা দিন শেষে কি নিয়ে ঘরে ফিরবেন তার প্রত্যাশায় |আবার অনেকের শৈশব কেটেছে ওয়াহিদদের মত করে ৷ অনেকেই কঠোর পরিশ্রমের পর বদলে ফেলে নিজের জীবন৷ নিজের চেষ্টায় দীক্ষায়-শিক্ষায় অনেক ওয়াহিদ বদলে দেয় নিজেকে, বদলে দেয় অন্যকে ।
আব্দুল্লা ওয়াহিদের কষ্টে কেনা এই শৈশব এক দিন ও়াহিদকে পোড় খাওয়া , সংগ্রামী–স্বশিক্ষিত এক তরুণে পরিণত করবে এই প্রত্যাশাই করি।