এডভোকেট আজিজ আহমেদ চৌধুরী : একজন আইনজীবীর গোড়ার কথা

Please log in or register to like posts.
পোস্ট
একজন-আইনজীবীর-গোড়ার-কথা, আজিজ আহমেদ

এডভোকেট আজিজ আহমেদ চৌধুরী – একজন আইনজীবীর গোড়ার কথা

এডভোকেট আজিজ আহমেদ চৌধুরী –  চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালীর কালীপুরে এক অভিজাত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। ইনি কালীপুর গ্রামের গর্বিত মাতার গর্বিত সন্তান। ১৯৩৪ সালে যখন ইউনিয়ন পরিষদ গঠিত হয় তখন তিনি সরকারীভাবে ১৯৩৪ হতে ১৯৪০ সাল পর্যন্ত চেয়ারম্যান তথা প্রথম প্রেসিডেন্ট ছিলেন দীর্ঘ সাত বছর। এডভোকেট আজিজ আহমেদ চৌধুরী আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয় হতে বিএ এলএলবি পাশ করে  আইন পেশায় যোগদান করেন। তিনি বৃটীশ বিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়ে কারাভোগ করেন। শুনেছি ঘোড়ায় চড়ে – এক মায়ের এক সন্তান জেলে চলে যায় বলতে বলতে জেলের  পথে যাত্রা করেন তিনি। উকিল সাহেবের মায়ের নাম মাহাফুজা খাতুন এবং বাবার নাম আব্দুর রাজ্জাক।

এডভোকেট আজিজ আহমেদ চৌধুরী আমার বাবা। বাবা ৮ বৎসর থাকা অবস্থায় আমার দাদা আব্দুর রাজ্জাক মারা যান । বাবার এক বোন ছিল। এই বোন বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় বৈলছড়ি নিবাসী খানবাহাদুর বদি আহমদ চৌধুরির ভাই মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরীর চাচার সাথে। আমার দাদী মাহাফুজা খাতুন সেই আমলে জমি বিক্রি করে একমাত্র ছেলে আজিজ আহমেদকে লেখাপড়া করায় ভারতের আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে । সেই যুগের মহিলা কিভাবে ছেলেদের ভারতে লেখাপড়া করালো এটা ভাবার বিষয় ।  আজিজ আহমেদ চৌধুরী প্রথম বিবাহ করেন বাগমারার জমিদার বাড়ি হতে। আমাদের প্রথম মা মারা যাওয়ার পর বাবা দ্বিতীয় বিবাহ করেন ফটিকছড়ির সিকদার বাড়ি হতে। ভাগ্যের পরিহাসে আমাদের দ্বিতীয় মায়ের ও মৃত্যু ঘটে স্বল্প সময়ে।২য় মায়ের মৃত্যুর পর আমার বাবা আজিজ আহমেদ ৩য় বিয়ে করেন সাতকানিয়ার তেমুহানির চৌধুরি বাড়ি হতে।

এডভোকেট আজিজ আহমেদ চৌধুরির ৬ ছেলে, এবং পাঁচ মেয়ে। বর্তমানে ছয় ভাই সন্তানদের নিয়ে একি ছাদের নীচে বাস করেন।  বড় ছেলে মহিউদ্দিন আহমদ সরকারী চাকুরীজীবী ছিলেন। তিনি ১৯৮৮ সালে ইন্তেকাল করেন । মেজ ছেলে অধ্যক্ষ জহিরউদ্দিন আহমদ রোড় এক্সিডেন্টের ফলে ২০০৬ সালে ইন্তেকাল করেন। একি গাড়িতে আমিও ছিলাম। তিনি বাঁশখালী কলেজ প্রতিষ্ঠায় সহকারী সম্পাদক ছিলেন।  তিনি বড় চাকুরী ছেড়ে কলেজ প্রতিষ্ঠায় লেগে যান। তিনি বারইয়ার হাট কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ। ৩য় ছেলে অধ্যাপক ইউছুফ জাফর বাঁশখালী কলেজে বাংলার জনপ্রিয় অধ্যাপক ছিলেন। বর্তমানে মাইজভান্ডার দর্শন ও বিভিন্ন বিষয়ের উপর তিনি পত্রপত্রিকায় লিখে চলেছেন। ৪র্থ জন, আমি – নাজিম উদ্দিন। বাঁশখালী ডিগ্রী কলেজের  রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ছিলাম। ৫ম ছেলে এ,কে,এম হেলাল উদ্দিন ডব্লিউ ডব্লিউ শিপ ব্রেকিং এর ম্যানেজার। ৬ষ্ঠ ছেলে বোরহান উদ্দিন , মাস্টার্স পাশ করে KEPZ এ যোগদান করেন।

আমার দাদি মাহাফুজা খাতুন যদি সেই আমলে আমার আব্বাকে লেখাপড়া না করাতেন, তাহলে হয়ত সবার ব্যাপারে এভাবে এত লেখা লিখতেও পারতাম না। বাবার সাথে ওকালিত পেশায় যারা নিয়জিত ছিলেন  তারা অনেকেই অনেক জমি জমার মালিক। বাবা জমি জমার দিকে না গিয়ে ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া করিয়েছেন। সেটার অনুকরেনে ছেলেরাও নিজেদের ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া করিয়েছে। সব ভাইয়ের ছেলেমেয়েরা মোটামুটি পড়ালেখা করে ভালো অবস্থায় আছে। সবাই মিলে কিভাবে উকিল সাহেবের স্মৃতি ধরে রাখবে, এই চেষ্টা সবার থাকে। আশাপাশেই হাজারো উকিল থাকা অবস্থায় ও উকিল বাড়ি বলতেই আমদেরটা দেখিয়ে দেওয়া হয় ,এটা বেশ ভালো লাগে।

যদিও আমরা ভাইদের মধ্যে অনেকেই প্রফেসর বা অধ্যক্ষ তবে  এখনো সবাই উকিল বাড়ি বলেই আমাদের বাড়িকে একনামে চিনে।  আমাদের প্রথম ও দ্বিতীয় মায়ের স্পর্শ বা আদর মনে হয় ভাই-বোনদের কেউ পায়নি। ৩য় মা ফিরোজা বেগমকেই সবাই মা বলে জানতেন।  উনি সবাইকে নিজের ভালোবাসা দিয়ে আকড়ে রেখেছিলেন, এবং ছেলেরাও সবাইকে সেভাবেই দেখে রাখছেন। ফিরোজা বেগমের সুনাম এখনো গ্রামে লোক-মুখে শুনা যায়।

উকিল বাড়ির শান্তি ও সম্বৃদ্ধি কামনা করে লেখা এখানেই শেষ করছি।      

ফেসবুক কমেন্টস

Reactions

0
0
0
0
0
0
Already reacted for this post.

প্রতিক্রিয়া

মন্তব্য করুন