মেসির পরশে আর্জেন্টিনার বদলে যাওয়ার গল্প নাকি জয়ের কাছে গিয়েও হতাশার গল্প!লিওনেল মেসির জন্ম ১৯৮৭ সালে ২৪ জুন আর্জেন্টিনার রোজারিওতে। তাঁর পূর্ন নাম লিওনেল আন্দ্রেস মেসি কুচ্চিত্তিনি । লিওনেল মেসি নামটা পরিচিত? খুব পরিচিত? খুব স্বাভাবিক । ফুটবল মাঠে নান্দনিক সৌন্দর্যের জন্ম দেওয়া মানুষটা কে -কে না চিনে! মাঠের খেলাই তাঁর পরিচয়। অন্যদলের সমর্থক কিন্তু মেসির খেলায় মুগ্ধ নন এমন দর্শক কমি খুজে পাওয়া যাবে। যারা ফুটবলকে ভালোবাসে তারা লিওর পায়ের জাদুতে মুগ্ধ না হয়ে পারে না। মেসির বাবার নাম হোর্হে হোরাসিও মেসি । কাজ করতেন ইস্পাতের কারখানায়। আর লিওনেল মেসির মা ছিলেন একজন পরিচ্ছন্নতা কর্মি, নাম-সেলিয়া কুচ্চিত্তিনি। পারিবারিক অর্থকষ্ট পারেনি মেসিকে দমিয়ে রাখতে , অন্য ভাবে বলতে গেলে ভাগ্য তাঁর পক্ষে ছিলো। অথবা লিও হয়ত এটাই প্রমান করলেন প্রতিভা কখনো চাপা থাকেনা।
তাঁর পিতার দিক দিয়ে বিবেচনা করলে তাঁদের আদি নিবাস ইতালির আকোনা শহরে। যার জন্ম হওয়ার কথা আর্জেন্টিনায় ,দিয়েগো আর্মান্দো মারাদোনার দেশে তাঁর সে দেশে জন্ম হওয়ার পেছনে রয়েছে ইতিহাস। মেসির পূর্বপুরুষদের মধ্যে একজন ইতালি ছেড়ে আর্জেন্টিনায় পাড়ি জমান ১৮৮৩ সালে । নাহলে মেসি হয়ত আর্জেন্টাইন না হয়ে ইটালিয়ান তারকা হয়ে উঠত। অথবা কে জানে আর্জেন্টিনায় জন্ম না হলে আজকের মেসিকে হয়ত আমরা দেখতাম না। ফুটবল জাদুকর মেসির রয়েছে দুজন বড় ভাই আর একজন ছোট বোন। মেসির ফুটবল খেলার শুরু সেই শৈশবে । সেই তখন থেকেই তাঁর পায়ের জাদুতে মুগ্ধ দর্শকরা। পাঁচ বছর বয়সে মেসি স্থানীয় ক্লাব গ্রান্দোলির হয়ে ফুটবল খেলা শুরু করেন। কোচ ছিলেন স্বয়ং তাঁর বাবা।
পালা বদলের গান বা কবিতা যাই বলুন সেটার শুরু ১৯৯৫ সালে । এই সময় মেসি রোজারিও ভিত্তিক ক্লাব নিওয়েল’স ওল্ড বয়েজে যোগদান করেন। শীঘ্রই তিনি স্থানীয় যুব পরাশক্তির অংশ হয়ে ওঠেন । পরাশক্তি বলার কারন এটাই যে এই দল টি পরবর্তি চার বছরের খেলায় পরাজিত হয়েছিলো মাত্র একবার এবং “দ্য মেশিন অফ ৮৭” (“The Machine of ’87”) হয়ে উঠেছিল তাঁদের স্থানীয় পরিচয়। দলটির এমন পরিচয় এর কারন ছিলো দলের খেলোয়াড়দের জন্মসাল ছিলো ১৯৮৭।
এর পর আসে জীবনের পরীক্ষার সময় । ১১ বছরে মেসির গ্রোথ হরমোনের (Growth Hormone Deficiency – GHD ) সমস্যা ধরা পরে। সে সময় স্থানীয় ক্লাব রিভার প্লেট মেসির প্রতি আগ্রহ দেখালেও তারা মেসির চিকিৎসা খরচ বহন করতে সক্ষম ছিলোনা। চিকিৎসা খরচের জন্যে প্রতিমাসে ৯০০ ডলার মার্কিন ডলারের প্রয়োজন ছিলো। আবার পালাবদলের গান। বর্তমানের কাতালান জায়ান্ট বার্সেলোনার সে সময়ের ক্রীড়া পরিচালক কার্লেস রেক্সাস মেসির প্রতিভা সম্পর্কে অবগত হন।
তিনি মেসির খেলা দেখে মুগ্ধ হন। বলে দিতে হয়না তিনিও হয়ে পড়েছিনে লিও ভক্ত ।মেসিকে চুক্তিতে সাক্ষর করাবার জন্য তাঁর অবদান অনেক। হাতের কাছে অফিসের কাগজ পত্র নেই । এখন কি করবেন? হাতের কাছে এমনকি নেই কোন কাগজ ! আগত্যা একটি ন্যাপকিন এর পেপারে তিনি মেসির পিতার সাথে চুক্তি সাক্ষর করেন। বার্সেলোনা মেসির চিকিৎসার সকল দায়িত্ব গ্রহন করতে রাজি হয়। এর পরের গল্পটা আবার দেশান্তরের। মেসি আর তাঁর বাবা বার্সেলোনায় পাড়ি জমান। লিওর বার্সেলোনা প্রীতির এর চেয়ে বড় কারন আর কি লাগে! যারা তাকে নতুন জীবনের একটি সুযোগ দিয়েছিলো, তারা তাঁর একটা পরিবার হয়ে উঠবে এ কথা বলে দিতে হয়না। মেসিকে অবশেষে লা মাসিয়া’র সদস্য করে নেওয়া হয়। যেটা ছিলো বার্সেলোনার যুব একাডেমি। প্রনয় জীবনে মেসি তাঁর প্রেমিকা আন্তনেলা রোকুজ্জোর সাথে বসবাস শুরু করেন ২০০৮ সালে।রোকুজ্জোর গর্ভে দুটো পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। থিয়াগোর জন্ম হয় ২০১২ সালের ২ নভেম্বর আর মাতেওর জন্ম হয় ২০১৫ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ।তাঁদের বিয়েটাও ধুমধাম করে হয়ে যায় ২০১৭ সালের ১ জুলাই।
চিকিৎসা শেষ হওয়ার পরপরি মেসি হয়ে উঠেন বার্সেলোনার বেবি ড্রিম টিম এর গুরুত্বপুর্ন সদস্য । অনেক দেশের ক্লাবে লোভনীয় অফারের পরেও ছেড়ে যান নি বার্সেলোনা। জাতিয় দলের হয়ে মাঠ মাতিয়ে দর্শকদের মন জয় করেছেন ।জয়ের দ্বার প্রান্তে গিয়েও তাঁর জেতা হয়নি বিশ্বকাপ ।তাই ২০১৮ এর ফুটবল বিশ্বকাপ হবে তাঁর জন্যে একটি সুবর্ন সুযোগ । অনেক পাওয়ার মাঝে না পাওয়ার আক্ষেপ-একটি বিশ্বকাপ ।দুই বারের বিশ্বকাপ জয়ী আর্জেন্টিনার জন্যে তাঁর আর একটি বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন পুরনের এ সুযোগ তিনি কাজে লাগাতেই চাইবেন।
২০১৮ বিশ্বকাপ এর মূল পর্বে উঠতে বাছাইপর্বের মরা-বাঁচার শেষ ম্যাচে সবাই দেখেছে মেসি জাদু। আজ যখন ২০১৮ বিশ্বকাপ এর ১ম রাউন্ড থেকে আর্জেন্টাইনদের বিদায়ের কথা সবার মুখে মুখে, তখনি মেসি নিজের জাত চিনালেন, তার ও আরেক তরুনের দেওয়া গোলে ২য় রাউন্ডে পৌছে গেলো আর্জেন্টিনা, নাইজেরিয়াকে ২-১ গোলে হারিয়ে।১ম গোলের জাদুর স্পর্শ আসে মেসির পা থেকেই।
রেফারেন্স en.wikipedia.org