বিভিন্ন সময়ে বাংলার সুবেদার ছিলেন বিভিন্ন জন । বাংলার সুবাদার দের মধ্যে অন্যতম মীর জুমলা(১৫৯১-১৬৬৩)। তৎকালীন ঢাকায় পৌঁছার অল্পদিন পরই মীরজুমলা বাংলার সুবাহদার হিসেবে তাঁর নিয়োগের ফরমান লাভ করেন ১৬৬০ খিস্টাব্দে। সে সময়কার পূর্বাঞ্চলীয় ভারতীয় বাংলার নাম করা সুবাদার ছিলেন। মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের প্রতিনিধি ছিলেন মীর জুমলা। । দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে সচেতন ছিলেন কারন তিনি নিজে ব্যবসায়ী ছিলেন। মির জুমলার আমলে পর্তুগীজদের অর্থনৈতিক অবনতি ঘটে। তবে ইংরেজ ও ওলন্দাজ কোম্পানিগুলোর উত্থান ঘটে । কেরানি হিসাবে তিনি জীবন শুরু করেছিলেন ,হয়ে উঠেছিলেন সপ্তদশ শতাব্দীর একজন উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব। পরবর্তীতে তিনি একজন শ্রেষ্ঠ সেনানায়ক এবং মোগল সাম্রাজ্যের একজন যোগ্য গভর্নর হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন।
ঢাকা ও শহরতলি এলাকায় দ্রুত উন্নতির জন্যে তিনি দুটি রাস্তা ও সেতু নির্মান করেন। এর ফলে সৈন্য চলাচল দ্রুত করা সম্ভব হয় , যন্ত্র স্থানান্তর সহজ হয়। প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার প্রয়োজনে মীর জুমলা কয়েকটি দুর্গ নির্মাণ করেন। এর মধ্যে একটি ছিল ছিল টঙ্গী জামালপুরে, যা তৎকালীন ঢাকাকে উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে যুক্ত করে ( বর্তমানে: ময়মনসিংহ রোড) সড়কটির নিরাপত্তা বিধান করত। দুটি দুর্গ অবস্থিত ছিল খিজিরপুর এ। ফতুল্লা থেকে অদূরে পাগলা সেতুটি এই রাস্তায় অবস্থিত। তাঁর নির্মিত সড়ক ও দুর্গগুলির কিছু অংশ এখনও টিকে আছে। বুড়িগঙ্গার তীরে মীর জুমলার স্থাপন করা ২টি কামানের কথা উল্লেখ পাওয়া যায় ড. মুনতাসীর মামুন এর ‘ঢাকার হারিয়ে যাওয়া কামানের খোঁজে’ গ্রন্থতে
মীর জুমলার বড় সাফল্য গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো কামরূপ ও আসাম রাজ্য দখল করা। মীর জুমলা একটি বিরাট সৈন্য বাহিনী নিয়ে অগ্রসর হন তিনি কামরূপ রাজ্যের বিরুদ্ধে তাঁর মূল সৈন্য বাহিনী ও নৌবহর পাঠান । কোচবিহারের বিরুদ্ধে তিনি ব্যাক্তিগত ভাবে অগ্রসর হন। রাজা প্রান নারায়ন দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান মীর জুমলার অগ্রযাত্রার কারনে। দেড় মাসের মধ্যে কোচবিহার দখল করলেন মীর জুমলা। এর পর মীর জুমলা কামরুপ গামি মূল বাহিনির সাথে যোগ দেন। আসামের রাজা কামরুপ ত্যাগ করলেও তিনি আসাম দখলের সিদ্ধান্ত নেন।
মীর জুমলা সিমালুগড় অবরোধ করেন ১৬৬২ সালের ফেব্রুয়ারিতে। মারাত্মক হাতাহাতি লড়াইয়ের পর অহমীয়রা দুর্গ পরিত্যাগ করে পালিয়ে যায় ।মীর জুমলা ১৬৬২ সালের ১৭ মার্চ বীরদর্পে অহমের রাজধানী গড়গাঁয়ে প্রবেশ করেন এ বিস্ময়কর বিজয় লাভের পর । তিনি শুধুমাত্র আসামের রাজধানী গড়গা দখল করেছিলেন।তিনি সে দেশের রাজাকে বন্দি করতে পারেন নি বা গোটা রাজ্য দখলে আনতে পারেন নি । মীর জুমলা গড়গাঁ পর্যন্ত গিয়ে তাঁর যাত্রা রহিত করেন। বর্ষাকালে মোগল রা কয়েকটি উচু ভুমিতে আটকা পড়ে । আর এই সুযোগে অহমীয়রা মোগলদের নৈশ প্রহরে হয়রানি করত। অহমীয়রা পূর্বদিকে তাদের হারানো ভূখণ্ড বিনা কষ্টে, অনায়াসে পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়। মোগলদের অধিকারে ছিল কেবলমাত্র গড়গাঁও এবং মথুরাপুর।
মোগলরা মথুরাপুর শিবির পরিত্যাগ করে খাবার ও বিশুদ্ধ পানি না থাকাযর কারনে । বন্ধ হয়ে যায় রসদের সরবরাহ । খাদ্যের তীব্র ঘাটতি দেখা দেয় শিবিরে। সৈন্যরা ঘোড়া জবাই করে মানুষের জীবন বাঁচাতে। অনেক দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে মোগলরা পুরোপুরি ধ্বংস হওয়ার হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারে । মীর জুমলা সক্ষম হয়েছিলন লাখনৌ ও ঢাকায় মোতায়েন রাজকীয় নৌবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতে । মথুরাপুরে মোগল শিবিরে মহামারী দেখা দেয় খাদ্য ঘাটতির পাশাপাশি। মহামারির কারনে মীর জুমলা তার দুই-তৃতীয়াংশ সৈন্য হারান।মোগল সৈন্যবাহিনী তাদের আক্রমণাত্মক অবস্থান বজায় রাখতে সক্ষম হয় একমাত্র মীর জুমলার দৃঢ় নেতৃত্বের কারনে।
রেফারেন্স https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%AE%E0%A7%80%E0%A6%B0_%E0%A6%9C%E0%A7%81%E0%A6%AE%E0%A6%B2%E0%A6%BE