“প্রাইমারী স্কুল”

Please log in or register to like posts.
পোস্ট

–        ———-“প্রাইমারী স্কুল“———–
————————————————–
২০০০ সালের কথা, স্কুলের বিস্কুটের লোভে স্কুলে যেতাম। স্কুল ছিলো বড়খাতা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। প্রাথমিক পাঠ বাড়িতেই শেষ করেছিলাম। তবুও বয়স কম হওয়ায় ছোট ওয়ানে( প্রাক-প্রাথমিক) ক্লাস করা শুরু করলাম। আজকে বড়খাতা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি যেমন আছে, তেমন আগে ছিলো না। ভাঙা একটা ক্লাস রুমে আমরা ক্লাস করতাম। চট বিছিয়ে আপা পড়াতেন, লেখাপড়া করে যে গাড়ি ঘোড়ায় চড়ে সে।আমার শিশুশিক্ষা আগেই শেষ হওয়ায় আমি আর কয়েকজন বড়ওয়ানের ভর্তি পরীক্ষা দিলাম। সেই ক্লাশ পাস  করায় ওয়ানে ভর্তি করে নিলো। শুরু হলো আমার প্রাথমিক শিক্ষাজীবন। ক্লাসের মথ্যে একমাত্র পিচ্চি আমি। তবে পিচ্চি মরিচের ঝাল বেশি, এটা আমার প্রিয় স্কুলের আপাগণ বুঝতে পেরেছিলেন আমার লেখাপড়ায়। আমার প্রিয় আপাগণ ছিলেন শ্রদ্ধেয়া কল্পনা, হালিমা,শামসুন্নাহার, ইসমোতারা, মমতাজ আর হিরা আপা।আর স্যারের মধ্যে ছিলেন শ্রদ্ধেয় আমিনুর স্যার।আমার মায়ের শিক্ষক ছিলেন তিনি।শামসুন্নাহার আপা ক্লাসে গল্প আর কবিতা শোনাতেন। হালিমা আপা আর ইসমোতারা আপা খুব সুন্দর করে ক্লাস নিতেন। হিরা আপা তো সবার অনেক অনেক প্রিয় ছিলেন।সবাই আমাদের অনেক মজা করে পড়াতেন। আমরা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে তাদের ক্লাস করতাম।আমিনুর স্যার অবসর নিয়েছেন। তাদের আমি অনেক অনেক প্রিয় ছিলাম। আমি ২য় শ্রেণিতে উঠলাম ষোল রোল করে। ২য় শ্রেণিতে পড়াশোনায় প্রচুর দক্ষ হয়ে উঠলাম। তবে দক্ষতা বেশি হয়ে যাওয়াতে একদিন উনুনের( চুলা) পাশে বসে দুখুর ছেলেবেলা ( কবি) পড়তে গিয়ে কাজী নজরুল ইসলামের মাথার অর্ধেক উনুনে পুড়িয়ে ফেলেছিলাম। শেষমেশ কি কান্ড, উনুন থেকে বই সরাতে গিয়ে আবার বাত্তি দিয়ে মাথার আমার চুল গেলো খানিকটা পুড়ে। পোড়া গন্ধ পেয়ে মা এসে আমাকে দিলেন একশ ছয় ডিগ্রী পিটুনি! ২য় শ্রেণি থেকে ৩য় তে উঠলাম ছয় রোল করে। আসলে ছয় রোল করলাম কেন তাও জানি না। আমার রোল হতো দুই, বা তিন ছয় হলো কেন? আপা বলতেন তিন দুগুণে ছয় হয়েছে।

 

থ্রি তে উঠে একদিন টিফিনে সবাই বাইরে গিয়েছে,শুধু আমি ক্লাশে।একা একা তাই বেঞ্চে শুয়ে পড়লাম। হঠাৎ কে যেন বেঞ্চ ধরে খুব ঝাঁকাঝাঁকি শুরু করে দিলো। আমি তো খ্যাপা হয়ে রেগে উঠলাম। রাগ ধরে উঠে দেখি কেউ নাই, কে যেন পুরো ক্লাস ধরে নাড়াচ্ছে।ভয়ের ঠ্যালায় ক্লাস থেকে মারলাম দৌড়! দেখলাম সবাই বাইরে এসে দাঁড়িয়েছে, ভূমিকম্প এসেছে। আসলে ছোট মানুষ ছিলাম তাই ভূমিকম্প কোনদিন দেখিনি। শেষে ভূমিকম্পকে দেখার জন্য দাঁড়িয়ে রইলাম, কিন্তু কখন আসলো আর কখন চলে গেলো খুঁজেও পেলাম না। ক্লাস থ্রিতে আমি হলাম ক্লাস ক্যাপ্টেন। কল্পনা আপা আমাকে ক্যাপ্টেন বানিয়ে দিলেন। ক্লাশে দরজা ধরে দাঁড়াতাম, আমাকে সবাই ঠেলে ফেলে দিয়ে হুরমুর করে বেড়িয়ে যেত। বড়দের শক্তির সাথে আমি পিচ্চি মানুষ পেরে উঠতাম না। আমার স্কুলের আপা গণ অনেক ভালো পড়াতেন। তাই স্কুল থেকে এসে আপাদের পড়া শেষ করতাম।আর পড়ের দিন বাহবা পেতাম। এভাবে যখন ক্লাস ফোরে পাঁচ রোল করে উঠলাম,অনেকে আমাকে হিংসা করতো। কেননা হয়তোবা এক রোল যদি করে বসি! একদিন স্কুল থেকে বাড়িতে এসে দোকান দৌড়ালাম। গিয়ে দুইটা পরাটা এনে মামা সহ বাড়ির পিছনে গাছের নিচে বসে আরামচে খাচ্ছি। হঠা্ৎ দেখি পরাটা তিতা লাগে,মামাকে দিলাম। মামা পুরোটা খেয়ে বললেন আসলেই তো তিতা লাগতেছে। আরেকটা পরাটায় তাকিয়ে দেখি কাকের গু! আসলে নিম গাছের উপর থেকে কাক মহাশয় ইয়ে করে দিয়েছে! মামা (নাম বলা যাবে না) হন্তদন্ত হয়ে চলে গেলো। ক্লাস ফোরে ইংরেজীতে একবার চল্লিশ পেয়েছিলাম। আমার চল্লিশ পাওয়াতে আমিনুর স্যার ধরে সে কি মাইর। শেষমেষ মায়ের সাক্ষর নেওয়ার জন্য আমার দ্বারা খাতা বাড়িতে পাঠালেন। স্যার যে কি ভূল করেছিলেন তা জানতেন না,আমি অর্ধ রাস্তায় খাতায় সুন্দর করে একটা সিগনেচার মেরে দিয়ে জমা দিয়ে দিলাম।ক্লাস ফাইভে আমার রোল পিছিয়ে বারো হয়ে গেলো। আসলে এই রোল পিছানোর জন্য আমিই দায়ী ছিলাম। কেননা আমি পড়াশোনার হাবুডুবুতে অমনোযোগী ছিলাম। বাড়িতে খুব বকা খেলাম। হালিমা আপা রীতিমত কানে ধরে উঠবস করালেন। কারণ আমি তাদের অনেক প্রিয় ছাত্রদের মধ্যে একজন ছিলাম।

 

ক্লাস ফাইভের মডেল টেস্ট পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিলাম। সব পরীক্ষা ভালো হলো। তবে গণিত পরীক্ষায় ভূল করে বসলাম। প্রশ্নে বাধ্যতামূলক এক ও দুই নম্বর সহ দশটা প্রশ্ন দেওয়ার কথা লেখা ছিলো। আমি ও দুটো না দিয়ে আট টা প্রশ্ন দিলাম। স্যার আর আপাগণ আমাকে বকলেন এই ভূল করার জন্য।বাড়িতেও সবাই বকলো। শেষমেষ দেখা গেলো আমি অঙ্কে ৮০ নম্বর পেয়ে ক্লাসে ফাস্ট হয়েছি। সেদিন কি যে খুশি হয়েছিলো সবাই, হেডস্যার আমাকে ডেকে নিয়ে পিঠে চাপড়( ব্যাথা পেয়েছিলাম স্যার) দিয়ে বললেন, সাবাস ছেলে! তারপর একটা মিষ্টি খাওয়ালেন। হালিমা আপা আর কল্পনা আপা সব ক্লাসে আমাকে নিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ৮০ পাওয়ার কথা বললেন।

 

এর কিছুদিন পর ক্লাস ফাইভের পরীক্ষা দিয়ে ৭ম স্থান অধিকার করে পাশের স্কুলে ভর্তি হতে চললাম। আমার প্রশংসাপত্র দেবার সময় আমি আপাদের চোখে জল দেখেছিলাম।সেদিনের চোখের জলকে বুঝতে পারিনি।এখন বুঝতে পারি সেই জল কেন ঝরেছিলো।আজ আমি অনেক বড় হয়েছি। তবুও আমার আপাদের সাথে দেখা করি। এখন স্কুলটি অনেক এগিয়ে গেছে, আগের তুলনায় পরীক্ষায় ফলও অনেক ভালো হয়। আজ থেকে প্রায় বিশ বছর আগে আমি বড়খাতা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলাম।বিশটি বছরে কত কিছু পরিবর্তন হয়েছে,স্যার আপাগণ কেউ অবসর,কেউ বদলী হয়েছেন। কিন্তু আমার মন বদলায় নি। আজো পড়ে আছে মনটি আমার প্রাথমিক পাঠশালায়। আজো কত স্মৃতি খুঁজে বেড়াই দেওয়াল ঘেরা স্কুলটির মাঝে..

….        ……  ..(সমাপ্ত)—–…—————–

      লেখাঃ সাঈদ আল রবি।
 রচনাকালঃ ১৯ শে মার্চ ২০১৯।

ফেসবুক কমেন্টস

Reactions

1
0
0
0
0
0
Already reacted for this post.

প্রতিক্রিয়া

1

One comment on ““প্রাইমারী স্কুল”

  1. Pingback: ডাক্তার দাদু- আঃ ছালাম ডাক্তার - আমার জীবনী

Comments are closed.