জীবনের তিক্ত অভিজ্ঞতা

Please log in or register to like posts.
পোস্ট

গত ছয়মাস ঢাকায় চিকিৎসা শেষে গত বৃহস্পতিবার আম্মাকে নিয়ে চিটাগাং ফিরি। যেহেতু উনার পক্ষে আজীবন ঢাকা থাকা সম্ভব না তাই চট্টগ্রাম ফেরাটা অবশ্যম্ভাবী ছিলো। তাছাড়া গত কিছুদিন ডায়ালাইসিস নিয়ে উনি ভালোই ছিলেন। চট্টগ্রামে ফেরার পর এখানকার হসপিটাল ও ডায়ালাইসিস সেন্টারগুলোতে খোজ নেই এবং শুধুমাত্র ডায়ালাইসিস করাতে শনিবার মাকে নিয়ে মেহেদীবাগের অধুনা স্থাপিত ম্যাক্স হাসপাতালে আসি। উল্লেখ্য এটি বর্তমানে চট্টগ্রাম শহরের সবচে বড় প্রাইভেট হাসপাতাল। ডায়ালাইসিস শুরু করার সময় উনার শ্বাসকষ্ট শুরু হয় এবং ব্লাডে স্যাচুরেটেড অক্সিজেন ফল করতে থাকে। উনি বুকে ব্যাথা অনুভব করতে থাকলে তারা ইসিজি করতে বলে, সাথে সাথে ইসিজি রিপোর্ট নরমাল আসে। যদিও আমি তাদের জানাই যে গত একমাসে দুইবার ট্রপোনিন আই এবং একবার ইকো করেও হার্টে কোন এবনর্মালিটি পাওয়া যায়নি(তারপর ও তারা গত দুইদিনে দুইবার ট্রপোনিন আই টেষ্ট করে)। আমি বলি একজন ডাক্তার কল করতে বললে তারা জানায় তাদের ডায়ালাইসিস সেন্টারে তারা ডাক্তার রাখেনা, পাশেই তাদের আইসিইউ; আমি যাতে সেখানে ভর্তি করাই। সে অনুযায়ী সাথে সাথে (গত পরশুদিন বিকেল চারটায়) আমি মাকে আইসিইউতে ভর্তি করাই। (পরে জানতে পারি উনাকে আইসিইউ নয়, এইচডিইউ তে রাখা হয়েছে।) তারপর উনাকে অতিরিক্ত চার্জ নিয়ে HDU তেই ডায়ালাইসিস দেয় হয় এবং উনি স্বাভাবিক বোধ করেন, উনার প্রতিটি রিপোর্ট নরমাল আসায় আমাকে জানানো হয় রাতটা রেখে পরদিন সকালে উনাকে ছেড়ে দেয়া হবে। কিন্ত সেদিন শেষ রাতের দিকে বলা হয় উনার অবস্থা ভালোনা। পরদিন তাই উনাকে হাসপাতালে রাখা হয়। আমাকে বলা হয় ব্লাড যোগাড় করতে, উনাকে আগামিকাল(আজ) বিকেলে আবার ডায়ালাইসিস দেয়া হবে। আমি বলি “উনার তো হিমোগ্লোবিন ১০ এর মত, ব্লাড দেয়া কি জরুরি? ডোনার রেডি আছে। আগেভাগে জনাবেন কারণ রক্ত বাইরে থেকে আনতে হবে।” (যেহেতু এতো বড় হাসপাতাল ফেঁদে বসলেও তাদের কোন ব্লাড স্ক্রিনিং, ক্রস ম্যাচিং বা রক্ত দেয়ার ব্যাবস্থা নেই)। কিন্তু তারা আমার সাথে আলাপ না করেই সেদিন দুপুর ১২টায় আবার ডায়ালাইসিস শুরু করে। তখন আমি জানতে চাই উনার ক্রিয়েটিনিন ও কম(৪.৫) আর ১২ঘন্টা আগেই শেষ ডায়ালাইসিস হয়েছে আবার কেন আগামিকালকের বদলে আজকেই ডায়ালাইসিস শুরু করা হলো আর কেনই বা তখন ব্লাডের কথা বলে এখন ব্লাড ছাড়াই ডায়ালাইসিস শুরু করলেন। তখন তারা জানায় হিমগ্লোবিন ১১এর উপরে আছে। অথচ আমি নিজে ৯.৮ দেখেছি রিপোর্টে। একজন ডায়ালাইসিস রোগী হিসেবে আম্মার দিনে ৫০০ এমএল এর উপর তরল গ্রহণ নিষেধ, অথচ তারা শুরু থেকেই HDU তে আম্মাকে তরল খাবার খাওয়াতে থাকে যা আজ সকালে দৃষ্টি আকর্ষণ করার পর তারা সংশোধন করে তরলের বদলে নরম খাবার দিচ্ছে, এর মাধ্যমেই এদের জ্ঞান এবং দক্ষতার অভাব অত্যন্ত প্রকটভাবে লক্ষণীয়। ম্যাক্স হাসপাতালে নেফ্রোর কন্সাল্টেন্ট হিসেবে থাকেন চট্টগ্রাম মেডিকেলের নেফ্রোর রেজিষ্ট্রার, তিনি এমবিবিএস এবং এমডি। এখানে উনি সম্ভবত ডিরেক্টর, নামের শেষে কিডনি বিশেষজ্ঞ লিখেছেন। উনার নাম আগে শুনিনি এবং আম্মা শ্রদ্ধেয় প্রদীপ স্যার এর পুরোনো রোগী বিধায় সন্মানিত প্রদীপ স্যার কে কল করে আনি, স্যার নিজেও কেন ১২ঘন্টা পর আবার ডায়ালাইসিস দেয়া হলো সে ব্যাপারে বিরক্তি প্রকাশ করেন এবং আমাকে বলেন আশা করি কাল(আজ) নিয়ে যেতে পারবেন, অবস্থা খারাপ না।

ভর্তির ২৭ ঘন্টা পর আমি একাউন্টস সেকশানে বিল কত হয়েছে জানতে চাই। তারা জানায় এখন পর্যন্ত বিল ৫০ হাজার টাকা। আমি খুব অবাক হই এবং তাদের কাছে জানতে চাই সিটভাড়া তো মাত্র ৪হাজার টাকা আর আমি ডায়ালাইসিসের টাকা তো ক্যাশ পেমেন্ট করেছি একদিনে ৫০হাজার টাকা বিল কেমনে হয়! তিনি এটা সেটা বুঝ দিয়ে ৪০হাজারের হিসেব দেন। (যেমন উনার নাকি একদিনে ৮ বার ডায়াবেটিস মাপা হয়েছে এবং সে বাবদ ১২০০টাকা বিল হয়েছে, অর্থাৎ একবার মেশিনের স্ট্রিপ দিয়ে ডায়াবেটিস মাপতে ১৫০টাকা পর্যন্ত চার্জ করা হয়েছে যা করতে বড়জোর ১৫টাকা খরচ। আমি নিজে বাসায় করলে আমার ২৫টাকা খরচ পড়ে। অর্থাৎ দশগুণ লাভ!) আমি বলি যেভাবে হোক ৪০হাজার বুঝ দিলেন কিন্তু বাকি ১০হাজার? তিনি জানান ১০হাজার টাকা সার্ভিস চার্জ। এই হাসপাতালে শতকরা ২০% সার্ভিস চার্জ রাখা হয়। আমি বললাম ডায়াবেটিস মাপতে ১৫০টাকা তারপরেও সার্ভিস চার্জ! বেচারা ক্যাশিয়ার আর কি বলবে সে বললো ডিরেক্টর সাহেবকে বলেন। আজ ম্যানেজিং ডিরেক্টর লিয়াকত সাহেবের সাথে দেখা করে এসব বললাম। তাদের দশজন জটিল রোগীর আইসিইউতে মাত্র একজন ডাক্তার কেন তার জবাবে তিনি বললেন, দুইজন থাকার কথা কিন্ত একজন আছে। লাকি নামে এক ডাক্তার যিনি রক্তের ব্যাপারে মিসইনফরমেশন দিয়েছেন তার ব্যাপারে বললে তিনি বললেন লাকি নামে তাদের কোন ডাক্তার নেই। পরে চ্যালেঞ্জ করার পর খোজ নিয়ে বললেন ভুল হয়ে গেছে কারণ লাকি নামের উনি লাকি তাদের বিকল্প ভাড়াটে ডাক্তার। আমি বললাম আংকেল আপনাদের তো সবই ভাড়াটে। লিয়াকত সাহেবকে বলে এসেছি, এতো টাকা বিল সাথে ২০% অন্যায্য সার্ভিস চার্জ আমি দিতে পারবোনা। এখনো হাসপাতালে আছি, না জানি কত টাকা বিল তুলে ফাইনালি। আমার আম্মা সুস্থ্য হবার নন কিন্তু টাকা দিয়ে যদি পারফেক্ট সার্ভিস পেতাম তবে আফসোস থাকতো না। এতোদিন ডাক্তারদের অভিযোগ ছিলো ব্যাবসায়ীরা হাসপাতাল চালায়, তাদের কাছে ডাক্তাররা জিম্মি। কিন্তু এই ম্যাক্স হাসপাতাল তো ৮০জন ডাক্তারের সমবায়ে করা। তারা দলবেঁধে একজোট হয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রিকে দিয়ে, একশো গরু জবাই দিয়ে মেজবান খাইয়ে উদ্ভোধন করেছেন এ বছরই, নাম দিয়েছেন ম্যাক্স হাস্পাতাল। এই ম্যাক্স মানে যে প্রফিট ম্যাক্সিমাইজেশন তা এখন স্পষ্ট!

(ঢাকার তিক্ত অভিজ্ঞতা আর আমার দেখা কিছু ভালো ডাক্তারদের কথাও লিখবো পরে) 

ফেসবুক কমেন্টস

Reactions

0
0
0
0
0
0
Already reacted for this post.

প্রতিক্রিয়া