রাত আসলেই কলহ পূর্ণ মানুষ গুলো যেন লাশের মত নিস্তব্ধ হয়ে পরে।পৃথিবীর সকল ক্লান্তি যেন এখানে এসে শেষ হয়েছে।জীবনের সকল গতি এখানে এসে তার আসল রূপটাকে হারিয়ে ফেলে।কতই না বৈচিত্রময় এই পৃথিবী!যতক্ষন আমাদের শরীরে শক্তি থাকে ততক্ষন আমরা নিজেকে সব থেকে বড় মনে করি।আর শক্তি ফুরালে ঠিক যেন রাতের অাঁধারে নিজেকে হারায়ে ফেলি।আমরা কি কখনো মৃত্যুর পরর্বতী সময়টাকে নিয়ে ভাবি?যদি আমরা ভাবতাম তাহলে আমরা এত নিষ্ঠুর হতাম না!
আজকের গল্পটা লিখতে গিয়ে নিজের অ-জানতেই চোখের কোণে জল এসে যায়।
“““ছবির মিয়া,ঢাকার একটা নামি কোম্পানীতে চাকুরী করত।দুই মেয়ে ও বউ নিয়ে ভালই চলতো।মাস শেষে ভাল অঙ্কের টাকা পেত।বর্তমান সমাজে অধীক টাকা ধারী মানুষ গুলোর ব্যতীক্রম ছবিরও ছিল না।টাকার আঁধারে সে তার আসল পরিচয় হারায়ে ফেলে।ছবিরের বাবা ছিল একজন দিনমজুর।ছবিরা দুই ভাই ছিল।ছবির যখন দশম শ্রেণীতে তখন তার বাবা-মা রোড এক্সিডেন্টে মারা যাই।বড় ভাই অনেক কষ্টে ছবিরকে লেখা-পড়া শেখাই।
পড়া-শোনা শেষে ছবির কোম্পানীর ম্যানেজার হিসেবে চাকুরী পায় ।যত দিন যায় ছবির তার ভাইকে ভূলতে শুরু করে ।টাকা ছাড়া সে যেন অন্য কিছু ভাবতে পারে না।
ছবিরের বড় ভাই-এর এক ছেলে্ ও এক মেয়ে।গরীব ভাই ছেলে-মেয়ে নিয়ে অনেক কষ্টে দিন কাটায়।দিন আনে দিন খায় ।ছবিরকে ফোন করলে এখন আর ধরে না ।আষাঢ় মাস,চারিদিকে শুধু পানি আর পানি।বৃষ্টির ভিতর কোন কাজ-কামও নাই।জমানো যা টাকা ছিল তা শেষ।এদিকে ছবির তার সিমটা পরির্বতন করায় তার নাম্বারটাও নাই।ছেলে-মেয়ের কান্না দেখে ছবিরের ভাই কি করবে বুঝতে পারছিল না।অ-সহ্যর জ্বালাই সে রাতেই ঘর থেকে বের হয়ে যায়।
পর দিন সকালে বাড়ি খবর আসে,চুরি করে ছবিরের ভাই ধরা পড়েছে ।শালিস করা হচ্ছে।খবর শুনেই ছেলে-মেয়ে নিয়ে ছবিরের ভাবী ওখানে ছুটে যায়।এদিকে শালিসে মেরে তাকে প্রায় আঁধা মরা করে ফেলেছে।ছবিরের ভাবী ভিড় ঠেলে স্বামীকে গিয়ে জড়ায়ে ধরে।আর চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে বলতে থাকে,“ওরে আর মেরেন না” “ওরে আর মেরেন না”।ছেলে-মেয়ে দুইটা হাঁও মাঁও করে কেঁদে বলে,“আমার বাজানরে আর মেরেন না।আমার বাজান মারা গেলে আমাদের কে দেথবে?চাচা আমার বাজানরে আর মেরেন না।বাজান আমাদের আর ক্ষিধা নেই।আমরা আর কাঁদবো না।
বাচ্চাদের এমন আহা-যারিতে পরিবেশ যেন ভারি হয়ে ওঠে।সবাই ততক্ষণে বুঝতে পারে,কেন সে চুরি করতে গিয়েছিল।এরপর যেন এমন কাজ আর না করে এই শর্তে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
ছবিরের ভাই প্রচন্ড অসুস্থ হয়ে পরে।ঘরে টাকা-পয়সা না থাকায় চিকিৎসাও করতে পারে না।ফলে অবশেষে সে মারা যায়।গ্রামের সবাই টাকা ওঠায়ে তার শেষ কার্য সারে ।ছবিরের ভাবি ভারসাম্য হারায়ে ফেলে। ছেলে-মেয়ে দুইটা মাকে নিয়ে ভিক্ষা করে জীবন-যাপন করে।
দীর্ঘ ছয় মাস পর ঈদে ছবির এক পিকাপ কাপড় নিয়ে গ্রামে আসে।ছবিরকে দেখে যেন সবার রাগ মাথাই উঠে গেছে।ছবির গাড়ী থেকে নেমে মাতব্বার চাচার সাথে কথা বলে:-
-চাচা কেমন আছেন?
-আছি বাবা মোটামুটি!তা কি মনে করে গ্রামে অাস-লে?
-অনেক দিন আসা হয় না।তাই আপনাদের সকলকে দেখতে আসলাম।আর আপনাদের জন্য কিছু কাপর-চোপর নিয়ে আসলাম।
-আচ্ছা বাবা,তুমি তোমার ভাই-এর খবর জানো?
-না চাচা।ঐকারণেই তো আসলাম।
-তাহলে চলো!আগে ভাই-ভাবির কাপর দিবে তারপর অন্যদের!(মাতব্বার চাচা ছবিরকে নিয়ে ছবিরদের বাড়িতে যায়)
-ভাই!ভাই! ছবির ঘরের বাইরে থেকে ডাকতে আরম্ভ করে।
ঘরের ভিতর থেকে বের হয়ে আসে নাবালক দুইটা শিশু ও ভারসাম্যহীন একটা মহিলা।শিশু দুইটা মাতব্বার চাচাকে জিঙ্গাসা করে,“দাদা,উনি কে?
মাতব্বার চাচা ছবিরকে জিঙ্গাসা করে,“এদেরকে চিনতে পারছো?ঐযে ভারসাম্যহীন মহিলাকে দেখছো ঐটা তোমার ভাবি আর ঐ শিশু দুটি তোমার ভাই-এর ছেলে-মেয়ে!
-আর আমার ভাই কোথায়?
-চাচা বাড়ির পিঁছনে চারিপাশ বেঁড়া দেওয়া একটা উচুঁ ঢিবি দেখিয়ে বলল,“ঐ যে তোমার ভাই গভীর ঘুমে মগ্ন আছে।তাই তোমার ডাক শুনতে পারছে না”
খাবারের অভাবে চুরি করতে গিয়ে ধরা পরেছিল।মার খেয়ে অসুস্থ্ হয়ে চিকিৎসার অভাবে মারা যায়।যে ভাই তোমাকে খেয়ে না খেয়ে টাকা দিয়ে লেখা-পড়া শিখায়ে মানুষ করেছে,তাকে আজ কেন খাদ্যের অভাবে চুরি করতে হয়েছে?কেন বিনা চিকিৎসা্য় তাকে মারা যেতে হয়েছে? এই প্রশ্ন গুলো উত্তর যদি দিতে পার,তাহলে আমরা তোমার কাপড় গ্রহণ করবো।তুমি কি এর এক টা প্রশ্নেরও উত্তর দিতে পারবা?
-ছবির যেন চারপাশ অন্ধকার দেখছে।
-জানি পারবা না!তোমাদের মত কুলাঙ্গারদের জন্যই সমাজের আজ এত অধঃপতন।
এই লেখকের আরো লেখা পড়তে ক্লিক করুনঃ