আমি বাগান থেকে আনা আস্ত সুপারী গাছ, ফুলের গাছ, মানি প্ল্যান্ট দিয়ে খুব সুন্দর এবং আধুনিক আসজে সাজাতাম আমাদের ছোট্ট ড্রইং রুমটাকে। আমার ঘর সাজানো দেখে আমাদের বাড়ীর চাচা-জেঠারা বলে রাখতো ঈদের দিন যেন তাদের ঘর সাজিয়ে দি। চা-জেঠারা চাচা , চাচি-জেঠিমাদের বলত , “দেখ, সংসার-সন্তান কিভাবে চালাতে হয়, রুমীর মায়ের কাছ থেকে শিখ” । আমার বড় আপার নাম রুমী। তাই আম্মাকে সবাই রুমীর মা বলে ডাকত।
এজন্যে আমার খুব মন খারাপ হত। আব্বাকে বলতাম সবাই, শেলীর মা কেন ডাকেনা। আমার নাম শেলী আব্বা-আম্মার ২য় মেয়ে। আব্বা বলত বর সন্তানের নাম ধরেই সবাই ডাকে। এটা জগতের নিয়ম। আমার বাবার বাড়ীর নাম হলো-এজহারুল হক চৌধুরী বাড়ি। আমাদের বাড়ির নামে নামকরন করা হয় কালীপুর এজহারুল হক উচ্চবিদ্যালয়ের।
এভাবে দিন যেতে যেতে একদিন কলেজে ভর্তি হলাম।কলেজের প্রথজম দিন নিয়ে একটা কবিতা লিখে ফেললাম।কবিতার নাম ছিলো কলেজের করিডোরে।কবিতাটি পড়ে অনেকেই হয়ত মনে করবে বা করতো কবিতাটি নিদ্দৃষ্ট কাউকে নিয়ে লিখেছিলাম।কিন্তু একমাত্র সর্বজ্ঞানী আল্লাহ জানে এটি নিদ্দৃষ্ট কাউকে নিয়ে নয়। কবি-মন থাকলে যখন যা মনে আসে তা নিয়ে যখন-তখন যা ইচ্ছে লিখে কবি। এটা মানুষ হয়ত চাইলেই লিখতে পারেনা, আমিও নই। কারন এটা আল্লাহ-প্রদত্ত ক্ষমতা।তিনি না চাইলে কেউ লিখতে পারবেনা।
বাস্তবে সকিছু আল্লাহর দান। সকল প্রশংশা একমাত্র আল্লাহর। যাক কলেজের কথা লিখতে গিয়ে আরো অনেক কথা মনে পড়ে গেলো। আমরা বোনরা সবাই ভালো স্পোর্টস ম্যান ছিলাম। সব বোন গান-কবিতা-নাটক আর খেলাধুলায় খুব পারদর্শি ছিলাম। আমি ১০০ মিটার স্প্রিন্টে তীব্র দৌড় দিতাম। আমার সময়ে কলেজে আমি সেরাদের একজন ছিলাম। ২০০ মিটার, ৪০০ মিটার, ৮০০ মিটার দৌড় এ ও এগিয়ে থাকতাম। হাই জাম্প, লং জাম্প, সাইকেল চালানো, ব্যাট্মিন্টনে এক কথায় অংশগ্রহন করা প্রত্যেক সব প্রতিযোগীতায় প্রথম স্থান অধীকার করতাম। আমার নাম সেসময় বাশখালীর আনাচে কানাচে স্পোর্টস ম্যান চ্যাম্পিয়ন শেলী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিলো।
সেই সময়ের স্মৃতি গুলো আমার কাছে এখনো গোল্ডেন ডেইস। অসাধারণ ছিলো কলেজে কাটানো আর শৈশব ,কৈশোরের সময় গুলো। অসাধারণ ছিলো ফেলে আসা দিন গুলো। জানি অতীত ফিরে পাওয়া যায় না, অতীত মনের ভেতরে থাকে শুধুই অতীত হিসেবে ।