রিপন এর আজ খুশির দিন। শহর থেকে খোরশেদ আসছে। রিপনের অতিব আনন্দিত হওয়ার কথা কিন্তু সে অতিব আনন্দিত হতে পারছেনা। সকাল থেকেই গুড়িগুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে,সাথে মেঘের গর্জন। সকাল গড়িয়ে বিকেল , খোরশেদের আসার নাম নেই। বিপদে পড়লো নাকি কোন? রিপন তার বাড়ির সামনের উঠোনে পায়চারি করছে । জীবন নিয়ে রিপনের চিন্তা ভাবনা অন্য রকম। সে জীবন কে উপভোগ করতে চায়। তবে ধর্মের বাইরে গিয়ে নয় । গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি রিপনের বেশ ভালো লাগছে। মনের মধ্যে যেন শান্তির একটা পরশ বুলিয়ে দিচ্ছে । মাগরিবের আজান শুনতেই রিপন দাঁড়িয়ে পড়লো । বাড়ি থেকে মসজিদ বেশ দূরে , পাক্কা ৩০ মিনিট হাটা লাগে। রিপনের মাঝে মাঝে আলসেমি আসলেও দোজোখের ভয়ে সে গুটিগুটি পায়ে মসজিদের দিকে যায়। আজকেও খোরশেদের চিন্তা মাথা থেকে বাদ দিয়ে মসজিদের দিকে হাটা দিলো।
মসজিদের ভেতর আলাদা একটা আনন্দ লাগে রিপনের । এ আনন্দের সাথে অন্য কোন আনন্দের তুলোনা চলেনা। রিপন মসজিদ থেকে নামাজ কায়েম করে বের হয়ে আসলো। বের হয়েই তার মুখ হাসি হাসি হয়ে গেলো। সামনে খোরশেদ দাঁড়িয়ে । সে খোরশেদের দিকে সহাস্যে এগিয়ে গেলো। মুখ হাসি হাসি করে ,সাথে কিছুটা চিন্তিত কন্ঠে বলল-
-কিরে আসতে এত দেরি কেনো?
-দেরি আর কই, গাড়ির চাকা নষ্ট হলো, অন্য গাড়ি ধরে এলাম। আর আমি ৩ টায় গাড়িতে উঠার কথা,উঠেছিলাম ৫ টায়।
-তো ,একটা কল তো করতে পারতি!
-আরে কল কি করতাম না? মোবাইলের চার্জ শেষ হয়ে গেলো যে!
-অহ ,ভালো, যাক আল্লাহর রহমতে সহিসালামতে পৌছাছস।
-হুম, চল এখন দাঁড়িয়ে থাকবি? নাকি তোর বাড়িতে যাবি?
-অবশ্যই, চল চল।
রিপন আর খোরশেদ গল্প করতে করতে এগিয়ে যায় । খোরশেদ সামনে হাটছিলো,তার হাতে ধরা টর্চের আলোটা তার হাটার তালে তালে নাচ্ছে। এমন গ্রামে যেখানে কারেন্ট নেই,সেখানে হারিকেন আর টর্চ ভরসা।তবে এসবের মধ্যে কোথায় যেন একটা আদিম আনন্দ আছে। অনেকদিন পর গ্রামের বাতাস তার দিল খোশ করে দিলো। খোরশেদ ভেবে পায়না, এত সুন্দর গ্রাম কিভাবে হয়, মসজিদ থেকে একটা মেঠো পথ, চারধারে গাছ , সে গাছের চতুর্পাশে হাজার জোনাকির যেন মেলা বসেছে। খোরশেদ দেখতে অনেকটা তাল গাছের মত।এক হারা গড়ন, চিকন ম্যাচের কাঠির উপর তার মাথা যেন ম্যাচের বারুদের গোল মাথা।
রিপন অনেকটা এগিয়ে আসলো । চিন্তিত,মুগ্ধ খোরশেদের দিকে তাকিয়ে আস্তে আস্তে বলল,
-বন্ধু প্রকৃতি দেখে তোর এই ভাবুক হয়ে যাওয়ার রোগটা কি যাবেন?
খোরশেদের এখন কোন কথার উত্তর দিতে ইচ্ছে করছেনা। শীতল হাওয়া গায়ে লাগিয়ে নিজেকে প্রকৃতির সাথে মিশিয়ে ফেললতে চাইছে সে। না পারতে বলল
-এ? হুম। এই ছাড়া আর শান্তি কোথায় বল? শহরের ইট-সুরকির মাঝে থেকে হাপিয়ে উঠেছি, কোথাও শান্তি নেই,সবাই দৌড়ায় টাকার পেছনে।
-টাকাই তো সব অসুখের মূল, টাকার লোভে মানুষ বাপ-দাদার ভিটেটা পর্যন্ত বিকিয়ে দেয়।
খোরশেদ উত্তরে কিছু বলতে গেলো, এর আগেই তারা দুজনি দাঁড়িয়ে পড়লো, দূরের মসজিদ থেকে ভেসে আসা এক গগন বিদারী চিৎকার শুনে। …
…চলবে