ছেলেবেলার গল্প

Please log in or register to like posts.
পোস্ট

ছোট বেলায় আমি সাহসী ও ভিতু দুটোই ছিলাম। কিন্তু ভূতের ভয় পেতাম খুব। মাঝে মাঝে ভাইয়া ভুতের গল্প করতো আর আমরা দুই ভাই শুনে রাতে ঘরের বাইরে বের হতে পারতাম না(কারণ বেশির ভাগ গল্প রাতে করা হতো)। আমি ছোট ভাই মনিকে সেই গল্পগুলো আরো বেশি ভয়ংকর ভাবে শুনাতাম। ও ভয়ে কেঁদে ফেলতো আর আমি খুব মজা পেতাম। দেখা যেত তারপর আমিও ভয়ে কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছি। যা হোক ভয় নিয়ে অনেক কিছু মজার স্মৃতি মনে পড়ে————-

 

এক.

আমরা তিন ভাই এক খাটে ঘুমাতাম। আমি ছিলাম সবচেয়ে হ্যাংলা (এখনো আছি) আর মনি ছিলো নাদুস নুদুস। একদিন রাতে ঘুমিয়েছি তখনও ভাইয়া আসেনি দোকান থেকে। কখন মনি আর আমি ঝগড়া করতে করতে ঘুমাইছি মনে নাই (ঝগড়া করার পর আমার হাতে প্রচুর মাইর খাইতো। আর ভাইয়া এসে আমারে পিটাইতো)। হঠাৎ মাঝরাতে আমার ঘুম ভেংগে গেলো। আমার পাশে দেখি মনি নাই। আর আমার বুকের উপরে ইয়া মোটা একটা হাত। আমি প্রচন্ড ভয় পেলাম, কেননা হাতের মালিক পাশে নাই আর মনিও পাশে নাই।আমি ভয়ে কেঁদে ফেলার উপক্রম। কাঁদতেও পারছিনা হাতটা যদি কিছু করে? আমি আস্তে আস্তে করে ছুঁয়ে দেখলাম প্রায় মোটা দুইজন মানুষের হাতের সমান মোটা হাত। অন্ধকার ঘরে সেন্ডেল কোথায় আছে তা না খুঁজে বিছানা থেকে নেমেই দৌড় দিবো ভাবলাম। যেই কথা সেই কাজ! বিছানা থেকে নেমে দৌড় শুরু করেই ভয়ের ঠ্যালায় লাইট জ্বালিয়ে দিলাম আর থমকে গেলাম। কারণ আমার ভয় এবার রাগে পরিণত হয়েছে। আমি যেটা হাত মনে করেছিলাম সেটা আসলে মনির পা! ঘুমের ঘোরে ওর পায়ের জায়গায় মাথা আর মাথার জায়গায় পা হয়ে গেছে(ঘুমালে ও ছোট মানুষ উলটা পালটা হয়ে যেত)। আর ওর পা ঘুমের ঘোরে আমার বুকের উপর পড়েছে। আমি সেইটাকে হাত মনে করে অল্পের জন্যে বিছানা ভাসাচ্ছিলাম। রাগ ধরে ওকে ঘুম আবস্থায় মারলাম এক থাপ্পড়।সেই চোটে তড়াক করে উঠে হতভম্ব হয়ে গেলো।

 

দুই.

বাজার থেকে আসতেছি দুই জন। দুইটাই মোটামুটি পিচ্চি সাইজের। রাতে আসার সময় বাড়ির খানিকটা দূরে বাঁশবাগান পড়ে। সেই বাগানের দুই পাশে বাঁশ আর মাঝখানে ঘুটঘুটে অন্ধকার রাস্তা। সেই রাস্তা ধরে আসার সময় সামনে দেখি ইয়া লম্বা সাইজের কোন কিছু! ধরাস করে কলিজা আর ফুসফুস বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো হলো।পাশের পিচ্চি ততক্ষণে ভয়ে ডুকরে কান্না আরম্ভ করে দিয়েছে। আমিও কান্না জুড়ে দিয়েছি হাল্কা সুরে। দুই জনে কাঁপতে কাঁপতে যখনি আবয়বটার কাছে এসেছি, দেখি ওটা আবয়ব নয়। দুইটা গাছ পাশাপাশি বেড়ে উঠে মাঝখানে আলো পড়ে এমন সৃষ্টি হয়েছে।(হালার ভূত)!

 

তিন.

সবাই মিলে গোল্লাছুট খেলার সময় আমার দলের সাথে আরেক দলের ঝগড়া বেঁধে গেলো। প্রায় মারামারি থেকে বের হয়ে বাড়ি রওনা হতে সন্ধ্যা হয়ে গেলো। বাঁশবাড়ি পার হয়ে এসেছি এমন সময় বুঝলাম আমার পিছে পিছে কেউ হাটতেছে। আমি সাথে সাথে ঘুরে দেখি কেউ নাই। শরীরটা ঈষৎ কেঁপে উঠলেও সাহস নিয়ে আবার চলা শুরু করলাম। আবারো একই আবস্থা! আবার কেউ পিছে পিছে হাটতেছে! এইবার ভয়ে জোরে হাটা শুরু করলাম। অবাক কান্ড পিছনে কে যেন জোরে হাটতেছে! এইবার আর সাহসের ডিব্বা কাজ করলো না। জোরে হাউমাউ করে চিৎকার করে কেঁদে দিলাম। সামনের বাড়ি থেকে নানী দৌড়ে এসে কি হয়েছে জানতে চাইলে সব খুলে বললাম। নানী আমার প্যান্টের দিকে তাকালেন সাথে সাথে হাসির রোল পড়ে গেলো(ইতিমধ্যে অনেকে এসেছে)। বাঁশবাড়ি পার হবার সময় প্যান্টের পিছনে বাঁশের কঞ্চি আটকে গেছিলো। সেটা মাটির সাথে ঘষা লেগে পিছনে কেউ হাটার মত শব্দ হয়েছিলো।সেদিন সবার অট্টহাসি আর উপহাসে থিতু হয়ে বাড়ি এসেছিলাম।

পরিশিষ্টঃ আমার জীবনে অনেক ঘটনা আছে যা আমার বাড়ি আর বন্ধুসকল জানে। অনেক ঘটনার ব্যাখ্যা নেই। এসব তো সত্যিই ঘটে আমার সাথে। কিন্তু ছেলেবেলার সেই মিছিমিছি ঘটনাগুলো মনে পড়লে আজো হাসি পায়।আবার স্মৃতিপটে ভেসে ওঠে কত স্মৃতি……

  • ( রচনাকাল : ২০ মে ২০১৮ )

ফেসবুক কমেন্টস

Reactions

1
0
0
0
0
0
Already reacted for this post.

প্রতিক্রিয়া

1

মন্তব্য করুন