ভিডিও সহ শাহ-আলমের জীবনী দেখতে ভিসিট করুনঃ Video 1
যাত্রা পথের দৃশ্য-এর ভিডিও দেখতে ভিসিট করুনঃ Video 2
পরিকল্পনা ছিলো, বৃন্দাবন দিয়ে গিয়ে, বটতলা হয়ে দিয়াবাড়ী দিয়ে আপুদের বাসায় যাবো। দিনটা বৃহস্পতিবার , পরদিন শুক্রুবার বিধেয় কাজের চাপ কিছুটা কম আছে। তবু কাজে লাগবে ভেবে ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রী সাথে নিয়ে , মনে মনে দূরত্বটা মেপে নিয়ে, সাকিব এর সাথে রওয়ানা দিলাম। যাত্রাটা মনে রাখার মত হতে পারত শুধুমাত্র প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের কারনেই। কিন্তু সাথে একজন শাহ-আলম এর জীবন-কাহিনী যাত্রা পথকে করেছে আরো সংক্ষিপ্ত ও সুশ্রী ।
বৃন্দাবনের নিচে নামতেই, মাটির পথটা চলে গেছে কিছুদুর। চিন্তাছিলো হেটে পাড়ি দিবো, যতটা-দূর সম্ভন। কিন্তু টমটম দেখেই চেপে বসার ইচ্ছে হলো। দাম-দর করতে করতেই একটাতে চেপে বসলাম। যাত্রি বলতে আমি আর সাকিব,এই-মাত্র। বেশ একটা ভালো লাগা বোধ হচ্ছিলো, পুরোটা জুড়েই আমরা। ঢাকা-বাসিরা টম-টম কে কি বলেন আমি ঠিক জানিনা।
আমাদের টমটমের চালক, যাকে নিয়ে আজকের আয়োজন, সদ্য যৌবনের কাঠ-খড় পোড়ানো একজন। নাম-শাহ-আলম। গাড়িতে ওঠার পর থেকেই শাহ-আলমের সাথে কথা শুরু হলো। তিনি জানালেন, উন্নয়ন কাজ শুরু হওয়ার পর এই জায়গার সৌন্দর্য্য-ই কমে যাচ্ছে। শা-আলমের গ্রামের বাড়ি কুড়িগ্রাম। সুদূরের দেশ থেকে ঢাকায় আশা হয়েছে ভাগ্যের সন্ধানে। ঢাকায় এসেছেন, দীর্ঘ ১০ বছর আগে বা আরো বেশি। জীবনের হিসেব মিলাতে গিয়ে সময়ের হিসেব হয়ত তাঁর ঠিক মনে নেই।এর আগে গার্মেন্টস এ কাজ করতেন। জানালেন সে চাকরিতে যা পেতেন তাতে ঠিক মতো হতোনা।
বর্তমানে গাড়ির চাকা ঘুরিয়ে ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছেন তিনি , টম-টম চালিয়ে খরচ বাদ দিয়ে মাসে তাঁর রোজগার হয় ২০-২৫ হজার টাকা। এতে তাঁর ভালোই চলে। তবে হয়ত সমাজের কথা চিন্তা করে, আর স্টাটাস এর কথা ভেবে, কোন-রকমে একটা চাকরি ধরে বাঁচার আশা করলে, আজ হয়ত তিনি শুধুই বেঁচে থাকতেন সেই কোনমতেই। দিনে হাজার-খানেক টাকা চলে আসে এই টমটম থেকে, জানালেন আল্লার-রহমতে ভালোই আছেন তিনি। এই লাইনে কতদিন জিজ্ঞেস করতেই জানালেন-প্রায় পাঁচ বছর ধরে।
আসলে কি করছি বড় কথা নয়, সৎ ভাবে করছি কিনা এটাই বড় কথা। শাহ-আলম বুঝেছেন, সবাই বুঝলে দেশের বেকার ভাগ্যের চাকাও ঘুরবে আশা করি।
শা-আলমের পরিবার বলতে তাঁর মেয়ে, স্ত্রী ও মা। ঢাকায় থাকেন তারা। মেয়ে পড়া লেখা করে। শাহ-আলম কে তাঁর পড়া লেখা কদ্দুর জিজ্ঞেস করাতে জানালে- “আমি যা পড়ছি , তা পড়ালেখার সিরিয়ালে পড়েনা” । যাক তাঁকে ঘাটালাম না, পড়ালেখার ব্যাপারে। তবে কথা শুনে বুঝলাম তিনি সুশিক্ষিত না হলেও স্বশিক্ষিত । কথা বলতে বলতে আমাদের টম-টম অতিক্রম করলো চানপুরা ৭ নাম্বার ব্রিজ।
তাঁর বাবা তাদের জীবীকার সন্ধানে ঢাকায় নিয়ে আসেন ৯০ সালে , তাদের প্রথম আবাস বিমানবন্দরের পাশেই ছিলো । তখন থেকেই বেড়ে উঠেছেন এখানে।কথা বলতে বলতে চলছিলো ভিডিও। তিনি বললেন যেন ভিডিও তে চেহারা দেখা না যায়। বললাম যেখানে চেহারা দেখা গিয়েছে সে জায়গাটা বাদ দিব, তাই ভিডিও কিছু অংশ বাদ দিতে হয়েছে।একজন সন্ত্রাসীও সদর্পে ঘুরে বেড়ায় আর পরিশ্রমি শা-আলম রা সমাজের ভয়ে থাকে, লোক-লজ্জার ভয়ে থাকে। তিনি বললেন তাঁর ফ্যামিলির অনেকেই এটা ভালো চোখে দেখেনা। জিজ্ঞেস করলাম, তাঁর কাজ নিশ্চই চুরি-ডাকাতির চেয়ে ভালো, এটাতে ধিক্কার জানাবার কিছু তো নেই।একটা জায়গা পার হওয়ার সময় বললেন,” গ্রাম সোলাহাটি পার হচ্ছি”, আরো বললেন এ গ্রাম এখন রাজুকের আওতায়। দেখলাম গ্রাম টা বিলীন হওয়ার পথে।
তাঁর সাথে শেষ কথোপকথন আমি এখানে তুলে ধরলাম,তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম-
-মানুষের কথা বাদ দেন, আপনার কাজে আপনার কি খারাপ লাগে?
-না, তবে অনেক স্বজনেরা আছে, তাদের কথা চিন্তা করি, তারা এটা খারাপ ভাবে নেয়।
-চুরি-ডাকাতি করলে সবাই আপনাকে বলত চুরি ডাকাতি না করে ভিক্ষে করলেও ভালো হত।
শাহ-আলম আমার মুখের কথা কেড়ে নিয়ে শক্ত একটা জবাব দিলেন যা আমার না সমাজের মুখে পড়েছে আমি জানিনা।
তিনি বললেন – “সরকারী যারা চোর, সুধখোর তারা অনেক সম্মানী , সমাজে সন্ত্রাসীকে সবাই সালাম দেয়, ভালো মানুষ-রিকশাওয়ালাকে কেউ সালাম দেয় না” ।