কফি হাউজের সেই আড্ডা টা আজ আর নেই

Please log in or register to like posts.
পোস্ট

অনার্সে   ভর্তি হওয়ার পর প্রথম যেদিন কলেজে গিয়েছিলাম,সেদিনটায় হয় তো আর ফিরে যাওয়া যাবেনা। কিন্তু স্মৃতিরা পাখা মেলে,উড়ে যায় সেই  ২০১২/২০১৩ সালের জীবনে । আমরা কজন কলেজে(হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ) ,আমাদের ইয়ার এর একটা বৃহৎ দলে পরিনত হলাম বছর ঘুরতে না ঘুরতেই। অনেক ঘটনা স্মৃতি পটে জমা আছে, আজকে নাহয় শুধু সবার সাথে  পরিচয় পর্ব টা সেরে নি। বাকি গল্প গুলো অন্য কোন দিন বলা যাবে ।

প্রথম দিন,সম্ভবত সেটা রিসেপশন এর দিন ছিল। সেদিন অনেকের মাঝে হারিয়ে গিয়েছিলাম, কারো সাথে পরিচয় হয়ে উঠেনি।  সেদিন হাসিনা ম্যাডাম সবাইকে তাদের অনুভূতি জানানোর জন্যে বলেছিলো। আমিও বলার জন্যে হাত তুলেছিলাম। কিন্তু কেও দেখেনি। হাসিনা ম্যাডাম ও না। আমার অনুভূতি রা চাপা পরে গেলো। সেদিনের পরে আরো কিছুদিন পর ক্লাস শুরু হলো। যদ্দুর মনে পড়ে অনার্স প্রথম বর্ষে আমরা সবচেয়ে বেশি ক্লাস পেয়েছিলাম।

ক্লাসে গিয়ে মাঝামাঝি,বা সামনে বসতাম।   পাশে কালো বা শ্যমালা করে একটা ছেলে বসলো একদিন। নাম জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম  নুর মাহামুদ। তাঁর সাথে প্রথম পরিচয়। কথা হলো, মোটা মোটি বন্ধুত্ব হয়ে গেলো। এর পর যতদিন যেতাম তাঁর সাথেই বসতাম ।   আরেক দিন পরিচয় হল একটা ভাবুক ছেলের সাথে, আমাদের দলের গোয়েন্দা, মিজবাহ। তাকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম একটা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চাকরি ও করে সে। তাঁর কথা বার্তায় একটা ভাব থাকতো সর্বদা, পরে সে ভাব ভেঙে আস্তে ধীরে আসল মিজবাহ এর পরিচয় পেলাম। দলে আসার পর তাঁর আর ভাব নেই, দলের বাইরেই তাঁর ভাব। আমরা তাঁর ভাব বাতিলের খাতায় ফেলে দিয়েছি আগেই, ভাবে গেলেই, “ কিরে ভাব নিশ” বলে বলে। তবে দলে একটা ভাবের ছেলে লাগে। সেটা মিজ বাহ।

আরেকজন খুবি লাজুক প্রকৃতির ছেলের সাথে পরিচয় হলো। পরে বুঝলাম এই লজ্জা তাঁর বাইরের আবরন। ভিতরে ভিতরে সে অনেক জানে, বুঝে।  তাকে নিয়ে আমার একটাই দুঃখ থেকে গেলো। ব্যোম মারলেও তাঁর পেটের কথা বের করা যায় না। যে কথা জানার জন্যে এত চেষ্টা,শেষ্টায় গিয়ে দেখা যেত এ কথা না জানলেও চলত। প্রথম দিকের খোলস ভেঙে সে ধীরে ধীরে আপন রুপে দেখা দিতে থাকলো।সাব্বির তালুকদার এর নাম   আর বলে দিতে হয় না।  পেয়ে গেলাম দস্যি কজনের আরেকজন। আরো বাকি আছে।

সিলেন্ডার সুমনের সাথে পরিচয় ও প্রথম দিকে। মিজ বাহ এর মাধ্যমে যদ্দুর মনে পড়ে । পরে তাঁর নাম অবশ্য গাল ফুলা সুমন হয়ে গিয়েছিল।   সাইমুনের সাথে পরিচয় সবার সাথে পরিচয় এর কিছুদিন পরেই হয়।  আমি কলেজে ঢুকতে গেলেই, একটা ছেলে বলত “ জুনাইদ ভাই তো জুনাইদ ভাই” মেজাজ খিচড়ে যেত। তখনো সে দলে ঢুকেনি বলে প্রতিশোধ নিতে পারতাম না। পরে পুষিয়ে নিয়েছি।  সে একদিন আমাদের কে এক লিটার এর একটা সফট ড্রিঙ্কস খাওয়ানোর পরে তাঁর নামে স্লোগান বের হলো, “ এক বড় না দুই বড় সাইমুন ভাই এর মন বড়”, তাঁর নামে  আর একটি প্রচলিত স্লোগান এখানে বলতে পারছিনা, বন্ধু ক্ষমা করিস, বিনিময়ে  হোটেল মদিনার ডিম পরটা পাওনা রইলো।

শেষে এমন হলো গ্রুপে, ছেলে দের থেকে মেয়ের সংখ্যা বেশি হয়ে গেলো। ভার্সিটির শেষে গিয়েও আর দলে ভারি হতে পারলাম না।  মেয়েদের মধ্যে কার সাথে প্রথম পরিচয় হিসেব মেলাতে পারছিনা।তনিমার সাথে সম্ভবত প্রথম মেসেজ এ কথা হয় ফেসবুকে। তাঁর কাছে অন্য দের সম্পর্কে জানতে পারি। প্রথম বছরের কলেজের অনুষ্ঠানে দল টা হঠাৎ করে হয়ে গেলো।

তনিমা কে দেখে বোঝা যায় না। প্রথম প্রথম ভাবতাম। কি ভাব দেখায়। পরে বুঝলাম সে ভাবের আড়ালে ছাই চাপা আছে আমারি মত এক বই পোকার জীবন। সেও  সাব্বির তালুকদার এর মত খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসলো।

মিজবাহ এর থেকে পেয়ে ছিলাম থেটাস জোহরার ফেসবুক আইডি। পাঠাবো কি পাঠাবোনা ভাবতে ভাবতেই  রিকুয়েস্ট পাঠিয়ে দিলাম।

প্রথম কথা হলো,  “ থেঙ্কস”,

সে বলল “মাই প্লেজার “।

 আমি  মনে মনে হাসছিলাম, পেয়ে গেলাম তাঁকে ।  তনিমার সাথে কথা হলো । এর পরদিন কলেজে গিয়ে তনিমা কে খুজি। আরেক জনের নাম শুনেছিলাম তূর্না ।   তনিমা,বা তূর্না কারো চেহারা সুরত তখনো দেখিনি।

তনিমা কে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম “তুমি তুর্না?”

সে বলল “হিহি, আমি তূর্না না”

,  নিয়ে গেলো আরেকজনের কাছে, বুঝলাম ইনি তূর্না ।  দলের সবচাইতে ছটফটে সদস্য আর তেলেবেগুলে জপ্লে উঠা সদস্য ইনি। পরে আবার অনেক ঠান্ডা হয়ে গিয়েছিল।  নাকি আগে ঠান্দা ছিল পরে জলে উঠেছিলো! তূর্না ,তনিমা ,আর মিজি আবার গানে পারাদর্শি।

মন উশখুশ করছিল,    জিজ্ঞেস করলাম তাদের কে,

“ জোহরা কই? আসবেনা?”  

 

, কিছুক্ষন পরে আবার জিজ্ঞেস করলমা, “কই আসবেনা?”

 তুর্না জিজ্ঞেস করলো, “এত জন থাকতে জোহরার কথা কেন?? “

বুঝে গেলাম ধরা পড়ার ভয় আছে, অনূভুতি কে চাপা দিলাম ছাই এর নিচে। সুর সুর করে উপরে উঠে আসলাম ক্লাসে। এক সুযোগে আবার নিচে গিয়ে দেখি। লাল হিজাব পরা একজন, সন্দেহ হলো এই, সে। নাহ লজ্জায় যেতে পারলাম না।কিছুক্ষন পর লজ্জার নাকে দড়ি বেধে নিয়ে  গেলাম তার কাছে ।

গিয়ে শুধু বললাম,”আমি জুনাইদ,”

সে বলল “আমি জোহরা’।

আর কিছু বললাম না। জোহরাকে  দেখে প্রথম প্রথম ভাবতাম,অনেক পড়া লেখা করে ,শেষে বুঝলাম, নাহ সেও আমাদের মত। পড়ুয়াদের মধ্যে আছে শুধু তাসমিয়া,তনিমা,সাব্বির,মিঝি,তাসনিয়া,তাহামিনা।

 বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে থাকত তাহামিনা, আমি বলতে গেলে ভয় পেতাম। পরে বুঝলাম তাঁর চোখ ই বড়। আমাকে আর তাঁকে ভাই বোন বলা হয়। আমাদের জন্ম তারিখ ও এক বলে কথা। মিন মিনে স্বভাবের তাসনিয়া। তাঁর গলার আওয়াজ এততাই চিকন, সামনে দাড়ানো মানুষকে কে পর্যন্ত কান নিচে নামতে হয়। তাঁর কন্ঠকে আমরা প্রায় নকল করি্‌ আর টেনে টেনে বলি্‌, “এইইই তোরা যাআআআবিনাআআআ?তাসমিয়া কে প্রথম দেখায় খুব বড় লোকের মেয়ে ভেবেছিলাম, তাই কথা কম বলতাম আমি।  চার টং এ গিয়ে যখন বলল দোকানের চা খাবেনা, সার্ফেক্সেলের গন্ধ লাগে,তখন বুঝলাম, নাহ একে দিয়ে দস্যি কজন হবেনা,  তবে সেই মেয়ে এখন সারফেক্সেল থেকে শুরু করে, ফেনা ওঠা চায়ের কাপে, আড্ডার ঝড় তুলে। স্বভাব জাত ভাবে সেও মাঝে মাঝেই ছেত করে উঠত।  এখন তাঁর রাগ কিছুটা কমেছে।

আবার সেই মিজবাহ এর মাধ্যমে পরিচয় হলো গোধূলীর আলোর সাথে। গোধূলীর আলোর নাম রুমা, জোহরার নাম ও রূমা। দুই রুমাকে একদিন সাদা কাপড়ে দেখা গেলো, ওয়ার সিমেট্রিতে ।  জোহর্‌ রুমা১, গধূলীর আলো, রুমা ২। রুমা ২ কে দেখে ভেবে ছিলাম বদমেজাজি, আমিও বুঝে শুনে চলতাম, পরে বুঝলাম এতটা না যতটা ভেবেছিলাম। তাঁর  কাগজের জিনিশ বা বিভিন্য,শৈল্পিক জিনিশ বানানোর দক্ষতা আছে বেশ। পরে সেও মিশে গেলো দস্যি কজনে। সাইমা ইফরাত(নওরিন) এর সাথে পরিচয় ও সে সময়ে । সব সময় হাসতে দেখি তাঁকে। তবে আমাদের ভার্সিটি লাইফে তাকেই জীবিনে দুঃখ পেতে দেখেছি বেশি। সাইমা মাঝে মাঝেই চলার পথে হারিয়ে যাওয়ার অভ্যেস আছে, অথবা গাড়ির সাথে ধাক্কা খাওয়ার অভ্যেস আছে। তাঁকে নিয়ে রাস্তায় দলের সবাই চিন্তায়  থাকি। আর আমি ভাবি,যাক আমার মত হারিয়ে যাওয়া ,আর গাড়ির সাথে ধাক্কা খাওয়া আরো আছে। মিজির  সাথে পরিচয় ফার্স্ট ইয়ার এর পরে।  শপিং এ ঢুকলে পুরোটা রাউন্ড না দিয়ে সে বের হবেইনা, সাথে আরো কয়েক জন কে নিয়ে ঘুরবে। সে দলের নতুন এবং সর্বশেষ সদস্য।

এত যে দল দল করছি, আসলে গঠন কেউ করিনি,হয়ে গেলো সময়ের আবর্তে ।  এ দলে সবার আসল নামের পেছনেও অনেক নাম আছে । সাইমাকে কেও মুরগি ডাকি, কেও খরগোশ ডাকে, বর্তমানে লাল মুরগি নামে পরিচিত। ।আমাকে শুনেছি পরিচয় হওয়ার আগে মেয়ে সকল ইঞ্জামাম ডাকত ,শুনেছি প্রায় দুই বছর পরে।  সাইমুনের আরেক নাম লেদু ওরফে ঢঙ্গি লেদু। । মিজবাহ এর আরেক নাম ডিটেক্টিভ।আমার মতে সেন্সিটিভ ডিটেক্টিভ হওয়া উচিৎ তার নাম। দলের একমাত্র গোয়েন্দা সে । সুমন এর পরিচয় তো গাল ফুলা সুমন বলেই দিতে হয়। নুর মাহামুদ কে বীরশ্রেষ্ঠ নুর বলি। নুরা, ও বলি,বর্তমানে  কুরা নামে অধিক পরিচিত। আবার এক সময় পিঙ্কি তকমাও লেগেছিল। মিজি কে মিজি কম  মিগি ডাকা হয় বেশি। আর তারা মিগি বললে আমার মাসুদরানার মিগ বিমানের কথা মনে পড়ে।তাঁকে অবশ্য এখন মশা মার্কেটের খিনেপরাইন্যে ডাকা হয়।   সাব্বির কে তালুকদার ডাকা হয় । আবার ফার্ম ও ডাকা হয়, সাবু ও বলা হয়ে থাকে। সাবু বলতেই আমার চোখের সামনে চাচা চৌধুরি গল্পের সাবুর কথা মনে পড়ে। । তাহামিনা বা মিনা  এখন কালের আবর্তে শুধু “তোদের ভাই” নামেই পরিচিত।  তনিমার নাম আমি দিয়েছিলাম মিনাম্মা। তাঁর সে নাম পছন্দ হয়নি,তাই এখন সে বাচুনি ১৯৬০ নামে পরিচিত। তাসমিয়ার আরেক নাম সারফেক্সেল, মধ্যে বেশি কাঁদত বলে কাদুনি। এখন সে ও পেতে যাচ্ছে “তোদের ভাই” তকমা  । বর্তমানে নায়িকা শাবানা নামে পরিচিত । তাসনিয়া সালসাবিল “আজলি” উপাধি পেয়েছে অনেক আগে। সে  এই উপাধি বেশ ভালো ভাবে ধরে রেখেছে। গাল ফুলা সুমনের আরেক নাম এখন সিলেন্ডার সুমন।রুমা ১ মানে ,জোহোরার নাম দিয়েছিলাম নদী, সে এখন বন্ধু মহলে জহুকানি নামি পরিচিত। আমি যদিও এখন নদী ডাকি। আমাকে মাস্টর ডাকা হয়। ইঞ্জামাম থেকে তো ভালো! তূর্নার আমার দেওয়া নাম তুর্না এক্সপ্রেস, এখন সে ছোট্টু নামে অধিক পরিচিত। গধূলীর আলো, আমাদের রুমা ২  আলু নামে সর্বজন স্বীকৃত।  সাব্বিরের মাধ্যমে পরিচয় হল তুর্য আর শাওন এর সাথে।পরে , পরিচয় হল ইশিতা,রাজিয়া,আর জাকিয়ার সাথে । কে যে রাজিয়া কেবা জাকিয়া এখনো ঠিক বুঝে উঠতে পারিনা।

একটা সময় ছিলো খুব দেখা হত, খুব গল্প হত, আড্ডা হত, এখন সবাই জীবনের আরেক ধাপে পা রেখেছি। সে সোনালি বিকেল গুলো আজ আর নেই। একসাথে বসে চা-কফি পান এখন আগের মত নিয়মিত হয়ে ওঠেনা।  তবে গল্প গুলো সবার নিশ্চই মনে আছে। আজকে শুধু পরিচিত হলাম , একে একে বলে যাবো সব গল্প,অন্য কোন দিন, ধীরে ধীরে, একটা একটা করে, আলাদা ভাবে  । একদিনে  সব লেখাটাও সম্ভব নয়। এতটাই গল্প জমে আছে।  হয়ত কফি হাউজের ,আর চায়ের টং এর সেই আড্ডা টা আজ আর নেই, কিন্তু আড্ডা জমে উঠতে কতক্ষন। আবার নিশ্চই দেখা হবে সবার, ঘাটে যাবো, বা ঘাটের নাম করে বের হয়ে হঠাৎ  প্ল্যান বদলে সি আর বি তে গিয়ে বসে থাকবো। আবার হয়ত একদিন রুমাল চুরি খেলতে খেলতে কারো পিছু ছুটবো, সবাই চিৎকার করে উঠবে “এই তুই দৌড়াস না কেনো জোরে” ঐ তুই ধরস না কেনো ওরে?” । কেও পা পিছলিয়ে পরবে, আর তাকে তুলতে গেলে বলবে, “দাড়া আগে হেসে নি” । আবার হয়ত একদিন কেও দোলনার জালে জড়াবে, তাকে তোলার জন্যে এগিয়ে গিওয়ে নিজেই জালে জড়াব। একদিন হয়ত আবার হবে হ্যা  আবার হবে…।

 

ফেসবুক কমেন্টস

Reactions

0
1
0
0
0
0
Already reacted for this post.

প্রতিক্রিয়া

1

2 comments on “কফি হাউজের সেই আড্ডা টা আজ আর নেই

  1. Pingback: প্রথম পরিচয় তিনি একজন মানুষ, ভালো আর খারাপের মিশেলে আর দশটা মানুষের মত

  2. Pingback: দেখতে দেখতে ভার্সিটির বড় ভাই থেকে হয়ে গেলেন আমাদের নুর ভাই

মন্তব্য করুন