এলন মাস্ক : একজন ব্যতিক্রমধর্মী এবং সফল উদ্যোক্তার গল্প

Please log in or register to like posts.
পোস্ট
elon_musk, amarjiboni.com

প্রথাগত ধারণার বাইরে এসেছেন জাকারবার্গ, স্টিভ জবস, সের্গেই ব্রিন এবং এলেন মাস্ক সহ আরো অনেকেই। তাদের দেখানো পথে হাটছে অনেক নতুন উদ্যোক্তা।দিনে দিনে পৃথিবী বদলে যাচ্ছে। সকাল থেকে বিকেল যেতে না যেতেই নতুন আবিষ্কার আর নতুন ধারনা বদলে দিচ্ছে পৃথিবী। পড়ালেখা শেষে চাকরি ধরে জীবনের চাকা ঘুরবে,এমন ধারনা এখন বদলে যাচ্ছে।বদলে দিচ্ছেন আমাদের মতই কিছু মানুষ। কিছু মানুষের যুগান্তকারী আবিষ্কার ও ধারনা এবং উদ্যোগ এর  কল্যানে মানুষের চিন্তা জগতে এসেছে পরিবর্তন,বাস্তবের জগতেও এই প্রভাব পড়ছে। মানুষ প্রথাগত   কর্ম পদ্ধতির বদলে এখন সব কিছু নতুন  ভাবে চিন্তা করে।ছেলে বড় হবে, চাকরি করে টাকা কামাবে এই প্রথাগত ধারণা এখন বদলেছে।এখন চাকরির জন্যে তীর্থেরকাক হয়ে থাকার সময়টা শেষ।

 

এলন রীভ মাস্কের জন্ম ২৮ জুন ১৯৭১ সালে।  প্রথাগত ধারনার সম্পূর্ন বিপরীত তিনি। 

তিনি একজন দক্ষিণ আফ্রিকান বংশোদ্ভুত কানাডীয় আমেরিকান  ব্যবসায়ী, বিনিয়োগকারী এবং প্রকৌশলী।তিনি মহাকাশ ভ্রমণ সংস্থা স্পেসএক্সের সিইও এবং সিটিও, বৈদ্যুতিক গাড়ির প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান টেসলা মোটরসের সিইও ও পণ্য প্রকৌশলী, সোলারসিটির চেয়ারম্যান ও পেপ্যালের একজন সহ-প্রতিষ্ঠাতা।এছাড়াও তিনি হাইপারলুপ নামক কল্পিত উচ্চ গতিসম্পন্ন পরিবহন ব্যবস্থার উদ্ভাবক।

 

২০১৬ সালের ডিসেম্বরে  তিনি ফোর্বসের বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ব্যক্তিদের তালিকায় ২১তম স্থানে ছিলেন। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত, তার মোট সম্পদের পরিমান ২০.৪ বিলিয়ন ডলার এবং ফোর্বসের তালিকায় পৃথিবীর ৫৩ তম ধনী ব্যক্তি হিসেবে রাখা হয়।

এলন মাস্কের জন্ম প্রিটোরিয়াতে। মে মাস্ক এবং এরল মাস্ক এর সন্তান।তার ছোট ভাই কিম্বাল এবং বোন টস্কার সাথে তার বেড়ে ওঠা।এলন মাস্ক প্রচুর বই পড়তেন ছোট বেলা থেকেই।৯/১০ বছর বয়স থেকেই তার ছিলো কম্পিউটার এর প্রতি প্রবল আগ্রহ।১২ বছর বয়সে সে তার প্রথম ভিডিও গেম বিক্রি করে তার জীবনের প্রথম আয় করেন,যার পরিমান ছিল ৫০০ ডলার।গেম টির নাম ব্লাস্টার(Blaster) এই গেম টির ওয়েব ভার্সন অনলাইনে এখনো আছে।সেখানেই থেমে থাকেন নি এলন মাস্ক নিত্যনতুন সৃষ্টিশীল  চিন্তা তাকে পথ দেখিয়েছে।

 

কম্পিউটারে তার আগ্রহ ছিল প্রচুর।মাত্র বারো বছর বয়সে তিনি কম্পিউটার প্রোগ্রামিং এর উপর শিক্ষা লাভ করেন।কুইন্স উনিভার্সিটিতে পড়ার জন্যে ১৭ বছর বয়সে তিনি কানাডায় যান।তিনি দুই বছর পর পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থানান্তরিত হন, যেখানে তিনি হোবার্ট স্কুল থেকে অর্থনীতি ডিগ্রি লাভ করেন এবং আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেস কলেজ থেকে পদার্থবিজ্ঞানে একটি ডিগ্রী লাভ করেন।তিনি ১৯৯৫ সালে স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে প্রয়োগিকৃত পদার্থবিজ্ঞান এবং পদার্থবিজ্ঞানে পিএইচডি শুরু করেন, কিন্তু দু দিন পরেই সেটা বাতিল করেন, হয়ত সেদিনের সিদ্ধান্ত না নিলে তিনি একজন এলন মাস্ক হয়ে উঠতেন না। এলন মাস্কের স্বপ্ন ছিলো অন্য কিছু, তিনি বেছে নেন উদ্যোক্তার কর্মজীবনের কঠিন,স্বপ্নিল, বর্ণিল পথ।এ পথে হাজার প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও, তার চোখে ছিলো সুন্দর আগামীর স্বপ্ন।

 

১৯৯৫ সালে মাস্ক এবং তার ভাই কিম্বলের হাত ধরে জীপ ২(Zip2) এর যাত্রা শুরু হয়। যা ১৯৯৯ সালে কম্প্যাকের  ৩৪০ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে কিনে নেয়। এলন মাস্ক সফলতার মুখ দেখতে শুরু করলেন বেশ ভালোভাবেই।মাস্ক তার ৭% শেয়ার এর জন্যে পেলেন ২২ মিলিয়ন ডলার। তার সফলতার অগ্রযাত্রা এখান থেকে শুরু হয়ে থেমে থাকে নি। যে মানুষ টি পৃথিবী বদলানোর স্বপ্ন দেখেন, তিনি এত টুকতেই সন্তুষ্ট হবার নন!

 

মাস্ক পরবর্তিতে ১৯৯৯ সালে জীপ২ থেকে প্রাপ্ত লভ্যাংশের ১০ মিলিওন ডলার দিয়ে X.com প্রতিষ্ঠা করেন।এটি একটি অনলাইন পেমেন্ট কোম্পানি। এটি ২০০০ সালে Confinity সঙ্গে একত্রিত হতে চুক্তিবদ্ধ হয় এবং PayPal (প্যাপল) এর পথচলা শুরু হয়।, যা অক্টোবর ২০০২ সালে ইবে  ১.৫ বিলিয়ন ডলার দ্বারা কিনে নেয়। এলন মাস্ক পান ১৬৫ মিলিওন ডলার। এ তো সবে পথ চলার শুরু।

 

এলন মাস্কের স্বপ্ন মঙ্গল এ বাস করার। সে লক্ষ্যে তার প্রচেষ্টার কমতি ছিলোনা। এলন মাস্ক স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসেন এবং সে স্বপ্ন কে বাস্তবে রুপান্তরিত করতে জানেন।শুরু হয় এলন মাস্কের স্বপ্ন যাত্রার প্রজেক্ট।মে ২০০২ সালে মাস্ক স্পেসএক্স নামে একটি মহাকাশ নির্মাতা এবং স্পেস ট্রান্সপোর্ট সার্ভিসেস কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন,  তিনি এই প্রতিষ্ঠানের সিইও এবং লিড ডিজাইনার পদে আছেন। ২০০৬ সালে স্পেস এক্স NASA এর সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়। এত কিছুর পর যখন তার বিলাসী জীবন ভোগ করে, আলসেমি করার মত অর্থের অভাব নেই তখনো এলন মাস্ক কর্মঠ।চোখে নতুন স্বপ্ন, নতুন প্রত্যয়, এমনই যদি না হন তিনি এলন মাস্ক হতেন না।

 

তার কর্মজীবন বহুমুখী। তিনি মাল্টি টাস্কার। তিনি থেমে থাকতে আসেন নি, স্থবিরতা তার জন্যে নয়,তিনি মানুষের দৃষ্টি ভঙ্গি বদলাবার আইকন। তিনি টেসলার  এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা যেখানে ইলেকট্রনিক গাড়ি ও সৌর প্যানেল প্রস্তুত করা হয়।তিনি বর্তমানে এর সি ই ও এবং পন্যের স্থপতি হিসেবে কাজ করছেন।

 

থেমে থাকেন নি মাস্ক। পরবর্তিতে২০০৬ সালে তার অনুপ্রেরনায় তৈরি হয় সোলারসিটি।এটি সৌরশক্তির সেবা মুলক একটি সংস্থা  বর্তমানে টেসলার একটি সহায়ক সংস্থা। এলন রীভ মাস্ক তার চেয়ারম্যান হিসাবে কর্মরত আছেন।

২০১৫ সালে মাস্ক সহ প্রতিষ্ঠিতা হিসেবে, OpenAI এর যাত্রা শুরু হয়। OpenAI একটি অলাভজনক গবেষণা সংস্থা যা বন্ধুত্বপূর্ণ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা  উন্নত করার লক্ষ্যে কাজ করে।

তিনি জুলাই ২০১৬  নিউরালিনক(Neuralink) এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন।এটি  ব্রেইন-কম্পিউটার ইন্টারফেস এর উন্নয়ন নিয়ে কাজ করা একটি নিউরোটেকনোলজির কোম্পানি  এবং মাস্ক তার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা।

 

নিত্যনতুন আইডিয়া আর চিন্তা এলন মাস্ক কে ধাবিত করে।হঠাৎ একদিন তিনি টুইট করলেন তার পরবর্তি প্রজেক্ট নিয়ে।যা ছিলো একটি বোরিং কোম্পানি। তিনি ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে একটি অবকাঠামো এবং টানেল নির্মাণ কোম্পানী, দ্য বোরিং কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন এবং তিনি এর  সিইও হিসেবে আছেন।

 

তার প্রধান ব্যবসা কার্যক্রম ছাড়াও, মাস্ক  হাইপারলুপ হিসাবে পরিচিত একটি উচ্চ গতির পরিবহন ব্যবস্থার উদ্ভাবক।এছাড়াও তিনি  সুপারসনিক জেট নামক বৈদ্যুতিক বিমান এর প্রস্তাব করেন।যেটা মাস্ক বৈদ্যুতিক জেট হিসাবে পরিচিত।

 

মাস্ক  বলেছেন যে স্পেসএক্স, টেসলা ও সোলারসিটি এর লক্ষ্য বিশ্ব ও মানবতার উন্নয়নের লক্ষ্যে নানাবিধ  পরিবর্তন করা।২০১৮ সালে  Bangabandhu-1  স্যাটেলাইট এর সাথে যুক্ত হন এলন মাস্ক। 

 

তার লক্ষ্যগুলির মধ্যে অন্যতম হলো সাস্টেইনেবল এনার্জির উৎপাদন এবং ভোগ নিশ্চিত করা। যার মাধ্যমে বৈশ্বিক উষ্ণতা হ্রাস করা সম্ভব। তিনি মানুষের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করতে  মঙ্গলে একটি মানব উপনিবেশ প্রতিষ্ঠা ইচ্ছা জানান।

 

প্রথাগত ধারনার বাইরের এই এলন  মাস্ক মানুষ্টা কল্পনা বিলাসী। তবে তিনি কল্পনাকে বাস্তবতার ছোয়ায় মানুষের খুব কাছে নিয়ে আসতেও জানেন। হয়ত মঙ্গল এর কোথাও এক কাপ কফি পান করতে করতে তার মৃত্যু হবে। এমনি খেয়ালি চিন্তা তার।তবে শুধু কল্পনায় তো আর এলন মাস্ক হওতা যায়না।করে দেখাতে হয়। এলন মাস্ক সেটা বেশ ভালোভাবেই পেরেছেন।তিনি নিজে বদলেছেন, বদলে দিয়েছেন অন্যদের দৃষ্টিভঙ্গি।

 

বলেছিলাম এলন মাস্কের বই এর প্রতি ভালোবাসা ছিল। প্রচুর সময় দিয়ে তিনি বই পরতেন।একটা কথা দিয়ে লেখাটা শেষ করব।

কথাটা এলন রীভ মাস্কের।

তাঁর শৈশব এ পড়া বই এর মধ্যে রয়েছে আইজাক আসিমভের ফাউন্ডেশন সিরিজ যা থেকে তিনি এই বিষয়টি তুলে ধরেন যে,

 

“আপনার সেই পদক্ষেপ গ্রহন করা উচিৎ যা মানব সভ্যতা কে দীর্ঘ করবে, একটি অন্ধকার যুগের সম্ভাবনা কমিয়ে দিবে, অথবা একটি অন্ধকার যুগের ক্ষতি কমিয়ে আনবে যদি তা ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে থাকে।”

এলন মাস্ক সম্পর্কে আরো জানতে ক্লিক করুন নিচের লিঙ্কে ঃ

                                                                                        মাস্কের কর্মজীবন

                                                                                    এলন মাস্কের বেড়ে ওঠা -শৈশব ও কৈশোর

 

রেফারেন্স :

     en.m.wikipedia.org

      www.biography.com

ফেসবুক কমেন্টস

Reactions

0
0
0
0
0
0
Already reacted for this post.

প্রতিক্রিয়া

মন্তব্য করুন