এবি ডি ভিলিয়ার্সের জন্ম এবং তাঁর ব্যক্তিগত জীবন
এবি ডি ভিলিয়ার্স বলতেই চোখের সামনে ভেসে উঠে এক মারকুটে অথচ দৃষ্টিনন্দন ব্যাটসম্যান এর ছবি। এবি ডি ভিলিয়ার্স সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্যে আজকের এই চেষ্টা। কেমন ছিল এবি ডি শুরুর দিন গুলো? খেলোয়াড় এবি ডির পারিবারিক ও ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে কতটুকু জানি? আসুন জেনে নি তাঁর সম্পর্কে জানা অজানা তথ্য। তাঁর জন্ম ১৭ ফেব্রুয়ারী ১৯৮৪ সালে। সম্পূর্ন নাম আব্রাহাম বেঞ্জামিন ডি ভিলিয়ার্স । দলের কাছে এবং ভক্তদের কাছে এবি বা এবিডি নামেই বেশি পরিচিত তিনি। এবি ডি ভিলিয়ার্সের বাবার নাম আব্রাহাম পি ডি ভিলিয়ার্স, পেশায় তাঁর বাবা একজন ডাক্তার।এবিডির মায়ের নাম মিলি। তাঁর মা চাকুরী করেন রিয়্যাল এস্টেট কোম্পানীতে, তাঁর চেয়ে বড় পরিচয় এই যে তিনি এবির মা।এবি ডির রয়েছে দুই ভাই। একজনের নাম জান আরেকজনের নাম ওয়েসেলস।এবিডি শৈশব থেকেই ক্রিকেট অনুরাগী ছিলেন। ভাইদের সাথে নিয়ে খেলেছেন বিভিন্ন সময়ে। শৈশবের খেলাচ্ছলে খেলা বালক ক্রিকেটার একদিন তাঁর ব্যাটের মাধ্যমে ক্রিকেট বিশ্ব শাসন করবে কে জানত! এক সৃষ্টিকর্তা ছাড়া। এবিডির পড়াশোনা প্রিটোরিয়ার জনপ্রিয় সরকারী বিদ্যালয়ে । তাঁর অনেক সহপাঠি পরবর্তিতে টাইটান্স ও দক্ষিন আফ্রিকার পক্ষ হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেন। এদের মধ্যে অন্যতম জ্যাকুয়েস রুডলফ , ফ্রাঙ্কওইজ, দু প্লেসিস এবং হিনো কান।
প্রত্যেক খেলোয়াড়ের একটা ব্যক্তি জীবন থাকে। সে জীবনকে আমরা উপেক্ষা করতে পারিনা। খেলোয়াড় এবি কে চিনতে হলে জানতে হবে ব্যক্তি এবিকে। নাহলে জানাটাই যে অসম্পূর্ন থেকে যায়। খ্রীস্টান ধর্মের অনুসারী তিনি । এ ধর্ম বিশ্বাস কে তিনি হৃদয়ে লালন করেন। এই বিশ্বাসের উপর নির্ভর করে তিনি জীবনের চলার পথে সাহস পান। তাঁর মতে প্রভু যীশু তাঁর জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বিদ্যমান, এবির কাছে যীশু একজন মহামানব। এখানেই মেলে ব্যক্তি এবির পরিচয়। যীশুর প্রতি এবির রয়েছে অগাধ আস্থা আর ভালোবাসা । তাঁর মতে যীশুর উপর তাঁর এই আস্থা আর বিশ্বাস তাঁর দলের চেয়ে বড়। সকল দিক বিবেচনা করে বলাই যায় তিনি ধর্মকেই দলের আগে প্রাধান্য দিবেন। আমাদের মাশরাফির মতেও দিন শেষে ক্রিকেট একটা খেলাই। আসলেই দিন শেষে ক্রিকেট একটা খেলা। খেলোয়াড় এবি কোন ভাবেই ব্যক্তি এবির চাইতে বড় হতে পারেনা। স্ত্রীর নাম ড্যানিয়েল ডি ভিলিয়ার্স। ২০১৫ এর জুলাই এ আব্রাহাম নামের এক পুত্র সন্তানের বাবা হন তিনি। মি.৩৬০ ডিগ্রী আবার ফুটবলে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সমর্থক। মূলত রায়ান গিগস এর অভিষেক এর পর থেকেই তিনি এ দলের সমর্থনে আসেন। ব্যক্তি জীবনের এবি সদা হাসি মুখের একজন মানুষ । মাঠে নামলেই যেন তাঁর মাথায় খুন চাপে! এক একটা বলকে এক এক স্টাইলে সীমানা ছাড়া করেন তিনি। টেস্ট এ ও এবি কম যান না। সে ধৈর্য , মাঝে মাঝেই টেস্টেও খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসেন তিনি।
আসলে ব্যক্তি জীবনের এবি কে চাইলেও বোধয় আর খেলোয়াড় এবির জীবন থেকে আলাদা করা যায় না। দুই এ মিলে এক অমূল্য স্বত্বা ।
আব্রাহাম বেঞ্জামিন ডি ভিলিয়ার্স এর খেলোয়াড়ী জীবন
ডি ভিলিয়ার্স ছিলেন ডান হাতি মারকুটে তথাপি দৃষ্টি নন্দন ক্রিকেটীয় শটের একচ্ছত্র অধিপতি । ক্রিকেটের বরপুত্র তিনি । টেস্টে ব্যাট করেছেন ১১৪ বার । ১১৪ ম্যাচে ৫০.৬৬ গড়ে রান করেছেন ৮৭৬৫ টি । শতক হাকিয়েছেন ২২ টি , অর্ধশতক ৪৬ টি। ওয়ানডেতে সমান তালে ২২৮ ম্যাচে ৫৩.৫০ গড়ে রান করেছেন ৯৫৭৭ । সর্বোচ্চ ১৭৬। শতক হাকিয়েছেন ২৫ টি অর্ধশতক ৫৩ টি।টি ২০ বাদ যাবে কেনো! এখানেও ৭৮ ম্যাচে ২৬.১২ গড়ে রান করেছেন ১৬৭২ । সর্বোচ্চ রান ৭৯ । শতক নেই। ৫০ আছে ১০ টি । টানা ৭৮ টেস্ট ইনিংস এ শুন্য রান করেন নি একবারো, এ এক অনন্য রেকর্ড ।অবশেষে বাংলাদেশে এসে এর শেষ হয়। জানিনা মনে আছে কিনা, অনেকেরি হয়ত মনে থাকবে ২০১১-২০১২ সালের এবির কথা। সে সময় টায় অস্ট্রেলীয়া ও শ্রীলংকার বিপক্ষে নিজেকে মেলে ধরেন এবি। সেই শেষ টেস্টের কথা নিশ্চই মনে আছে যেখানে অপরাজিত ১৬৫* রান করে দলকে সিরিজ জেতানোয় ভূমিকা রাখেন এবি। ম্যান অদ দি সিরিজ হন, ১১৭.৬৬ গড়ে ৩৫৩ রান করেন ।
এর পরে পান অধিনায়কের দায়িত্ব । অধিনায়ক এবির নেতৃত্বে দক্ষিন আফ্রিকা জয় করে একাধিক ওডিয়াই সিরিজ, সেখানে বলে দিতে হয় না এবির ব্যক্তিগত নৈপুন্যের কথা। মনজুড়ানো সব ক্রিকেট শটে মাতিয়ে তুলেন ক্রিকেট বিশ্বকে। ২০১৫ সালের ৭ জানুয়ারি , ক্রিকেট সাউথ আফ্রিকা( CSA ) , ( Cricket South Africa ) কর্তৃপক্ষ ২০১৫ এর ক্রিকেট বিশ্বকাপের জন্যে ১৫ সদস্যের চূরান্ত তালিকা প্রকাশ করে। ডিভিলিয়ার্স কে দেওয়া হয় অধিনায়কত্বের ( captaincy ) দায়িত্ব। গ্রুপ পর্বের দ্বিতীয় খেলায় মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে ভারতীয় দলের বিপক্ষে হেরে যায় দক্ষিন আফ্রিকা। এটা ছিলো ভারতের বিপক্ষে তাদের ক্রিকেট বিশ্ব কাপের ইতিহাসে প্রথম হার। দলের ধীরগতির বোলিং এর কারনে অধিনায়ক এবি সহ অন্যান্য খেলোয়াড়কে ২০% জরিমানা করা হয়। ২০১৫ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি । গ্রুপ পর্বের তৃতীয় ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজ এর বিপক্ষে এবিডির অসাধারন ক্রিড়া নৈপুন্যে দক্ষিন আফ্রিকা সংগ্রহ করে তাদের বিশ্ব কাপের ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪০৮ রান- ৫ উইকেটের বিনিময়ে। সিডনির সেই ম্যাচের স্মৃতি এখনো হয়ত রোমাঞ্চ জোগায় এবিডি কে, যে ম্যাচে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ইতিহাসের দ্রুততম হিসেবে মাত্র ৬৪ বলে সংগ্রহ করেন ১৫০ রান । তাছাড়া তাঁর এই সংগ্রহটি বিশ্বকাপের ইতিহাসে দ্বিতীয় দ্রুততম শতক।
একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দ্রুততম ১৫০,১০০,৫০ রানের রেকর্ড এবির দখলে । বিশ্বকাপে বিশ্ব দেখেছে এবির অসাধারন ক্রিড়া শৈলি । এবি মাঠে নামলেই যেন ক্রিকেট প্রেমীরা রোমাঞ্চিত হয়ে ওঠেন। যে কোন বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২০ টি ছক্কা মারার রেকর্ড তাঁর দখলে।সকল বিশ্বকাপ মিলিয়ে সর্বোচ্চ ছক্কার রেকর্ড ও তাঁর দখলে। বল শুন্যে ভাসিয়ে মাঠের বাইরে পাঠিয়েছেন ৩৬ বার ( বিশ্বকাপের আসর গুলোতে) । ২০১৫ এর বিশ্বকাপে এবির টিম কোয়ার্টার ফাইনালে উত্তীর্ন হয়। এবির দক্ষ নেতৃত্বে দক্ষিন আফ্রিকা শ্রীলঙ্কাকে কোয়ার্টার ফাইনালে পরাজিত করে উঠে যায় সেমি ফাইনালে। তবে বরাবরের মত কপাল পুড়ে দক্ষিন আফ্রিকার । সেমি ফাইনালে নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে পরে এবি ডি ভিলিয়ার্স এর টিম। এই নিয়ে প্রোটিয়ারা বিশ্বকাপের সবকটি সেমি ফাইনালে চতুর্থ বারের মত পরাজয়ের তিক্ত স্বাদ গ্রহন করে ।এবি ছিলেন পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে আপন মহিমায় উজ্জ্বল । পুরো প্রতিযোগিতায় করেছেন ১ টি সেঞ্চুরি আর ৩ টি অর্ধ শতক । গড় ছিল চোখে পড়ার মত। ৯৬.৪০ গড়ে নিজের ঝুলিতে পুরে নেন ৪৮২ রান। প্রতিযোগিতায় ৩য় সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারি ছিলেন তিনি।
দেখতে দেখতে শেষ হয় ২০১৫ বিশ্বকাপ। বাংলাদেশ এ একদিনের সিরিজে এবি ডি ভিলিয়ার্স কে অধিনায়ক হিসেবে মনোনীত করা হয়। কিন্তু ২০১৫ এর বিশ্বকাপে সেমি-ফাইনালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দলীয় ধীর গতির বলিং এর মাশুল হিসেবে তার একটি ম্যাচ খেলার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।প্রথম উইকেট রক্ষক হিসেবে তিনি এক টেস্টে সেঞ্চুরি এর সাথে সাথে ১০ টি আউট করেন। রেকর্ডের বরপুত্র এবি ডি ,১৮ মার্চের ৩য় ওয়ানডেতে পাকিস্তানের বিপক্ষে হাশিম আমলার সাথে জুটি বেধে ৩য় উইকেটে ২৩৮ রানের রেকর্ড করেন।সেই ম্যাচে এবিডি করেছিলেন ১২৮ রান। ১২৮ রান তিনি সাজিয়েছিলেন ১২ টি চার ও তিনটি ছক্কার মারে।সবচেয়ে কম ওডিয়াই খেলে সাত হাজার রানের ক্লাবে ঢুকার রেকর্ডের মালিক ও এবি ডি ভিলিয়ার্স। রেকর্ড ভাঙ্গার গান বা কবিতা যাই বলেন সেখানেই থেমে থাকেনি। মাত্র ৩১ বল খেলে ওয়ানডে ইতিহাসের দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড ও এবির খাতায় সযত্নে লেখা আছে। ২০১৫ সালের ১৮ জানুয়ারি শতক টি এসেছিল ক্যারিবিয়ান দের বিপক্ষে।১৬ বলে ওয়ানডে ইতিহাসের দ্রুত তম হাফ সেঞ্চুরিও তাঁর দখলে। সবাইকে অবাক করে দিয়ে নানা গুঞ্জনের অবসান ঘটিয়ে ২০১৮ এর ২৩ মে দক্ষিন আফ্রিকার এই ডান হাতি হার্ড হিটার,স্টাইলিস্ট ব্যাটসম্যান অবসরের ঘোষনা দেন। দেশ-বিদেশের হাজারো ভক্তের মনে দাগ কেটে গেছে তাঁর এ বিদায়। ক্রিকেটের বরপুত্রের বিদায় মেনে নিতে পারছেন না অনেকেই।
বিদায় এবি ডি ভিলিয়ার্স-ভালো থেকো ক্রিকেটের রাজপুত্র
একজন ক্রিকেটার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কে কত টুকু দিতে পারে? এবিডি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কে যা দিয়েছে তা যাচাই করতে যাওয়ার সাহস হয় না আমার। তাঁর বিদায় বেলায় একটাই আক্ষেপ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কে তিনি অনেক কিছু উপহার দিয়েছেন, কিন্তু ক্রিকেট থেকে তাঁর পাওয়ার ছিল আরো বেশি কিছু। একটা বিশ্বকাপ তাঁর পাওনা ছিল বৈকি । কিন্তু আর নয়। এবিডি সীদ্ধান্ত নিলেন । এবার সরে দাড়াবার পালা । তিনি হয়ত জানেন বা জানেন না তাঁর এই সরে দাড়ানো ক্রিকেট আঙ্গিনায় কত বড় শূন্যতার সৃষ্টি করবে। কিন্তু হয়ত এবি ডির শরীর আর সায় দিচ্ছেনা। হয়ত তাঁর জন্যে এটাই সেরা সময় সরে দাড়ানোর।তিন ধরনের ক্রিকেটেই সমান তালে তাঁর জাদু দেখিয়েছেন এবি ডি । তাঁর নানান ধরনের শটে মুগ্ধ ক্রিকেট বিশ্ব। একি সাথে সাহসী, আগ্রাসী, আর সৃষ্টিশীল ব্যাটসম্যান ক্রিকেট বিশ্ব দেখেছে খুবি কম।
তিন ধরনের ক্রিকেটে সমান ভাবে তিনি রানের বন্যা বইয়েছেন, সুন্দর ব্যাটিং এর পশরা সাজিয়েছেন। আজ এই শেষ বেলায় এসে তিনি হয়ত কিছুটা ক্লান্ত। ভুলে গেলে চলেনা যে একজন ক্রিকেটার এর ও একটা ব্যক্তিগত জীবন থাকে,যে জীবনে থাকে পরিবার,ভালোবাসা। ক্রিকেট কে এত কিছু দেওয়ার পর এবিডি ক্লান্ত হতেই পারেন। কারন তিনি যখন মাঠে নামেন সর্বোচ্চ টা দিয়েই খেলেন,দলের জন্যে,দেশের জন্য । ২৩ মে,বুধবা্র ২০১৮ ! টুইটারে বার্তার মাধ্যমে এবিডি সকল ধরনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কে বিদায় জানালেন । শুধু আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ই নয়, এবিডি বিদায় জানিয়েছেন ফ্র্যাঞ্চাইজি ভিত্তিক ক্রিকেট কেও।হয়ত আর কিছুদিন খেলতে পারেন । দক্ষিন আফ্রিকার ঘরোয়া ক্রিকেটে টাইটান্সের হয়ে। স্পষ্ট ভাবে তিনি জানিয়ে দিয়েছেন এখানেই থামছে তাঁর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ারের রথ। নিজের অবসরের ঘোষনা দেওয়া এবি ডির বিদায় বার্তা জানানো ভিডিওর উচ্চারিত প্রথম দুটি শব্দ ছিলো “আমি ক্লান্ত” । তিনি সবাকে উদ্দেশ্য করে আরো বলেছেন, তাঁর এ ঘোষনা তাতক্ষনিক ভাবেই কার্যকর হবে।
৭৮ টি টি-২০ , ২২৮ টি একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ এবং ১১৪ টি টেস্ট খেলা এবি ডির মনে হয়েছে , এবার সময় হয়েছে হাল অন্য কেও ধরার ।টি ২০ তে ৭৮ ম্যাচে ২৬.১২ গড়ে রান করেছেন ১৬৭২ । সর্বোচ্চ রান ৭৯ । শতক নেই। ৫০ আছে ১০ টি । ওয়ানডেতে ২২৮ ম্যাচে ৫৩.৫০ গড়ে রান করেছেন ৯৫৭৭ । সর্বোচ্চ ১৭৬। শতক হাকিয়েছেন ২৫ টি অর্ধশতক ৫৩ টি। টেস্টে ১১৪ ম্যাচে ৫০.৬৬ গড়ে রান করেছেন ৮৭৬৫ টি । শতক হাকিয়েছেন ২২ টি , অর্ধশতক ৪৬ টি।
এবিডি এখন ক্লান্ত, হয়ত এখনো তাঁর ক্রিকেট কে আরো কিছু স্বপ্নিল হৃদয় ছুয়ে যাওয়া খেলা উপহার দেওয়ার সামর্থ আছে। তবে তাঁর অবসরের ঘোষনায় যুক্তিও আছে। ফুরিয়ে যাওয়ার আগেই নতুন কে সুযোগ করে দেওয়াটাই হয়ত একজন সত্যিকারে টিম প্লেয়ারের কাজ । তবু ও ভক্তদের হৃদয় মানছে কই! আগেই আভাস ছিল তিনি কয়েক টি ফরমেট থেকে অবসর নিবেন,তবে এভাবে সব ফর্মেট কে একসাথে বিদায় জানাবেন এটা হয়ত কারো কল্পনাতেও ছিলোনা। তিনি বেশি টাকার জন্যে খেলে বেড়াবেন এমন টাও নয়। ঘরের গন্ডিতেই নিজেকে আবদ্ধ রাখতে চান এবি। তাই বলতে হয় আইপিএলের ভাগ্যে শিকে ছিড়বেনা। সবকিছুর একটা শুরু আর শেষ থাকে। এখানেই এবি থামছেন। গোটা বিশ্বের ক্রিকেট ভক্ত আর দক্ষিন আফ্রিকার ভক্তদের জানিয়েছেন তাদের জন্যে তাঁর হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসার কথা। এবির কথার সূত্রে বলা যায় ঘরোয়া ক্রিকেটের টাইটান্সের হয়ে খেলে যেতে তিনি ইচ্ছুক, তবে দেশের বাইরে আর নয়, আইপিএলে হয়ত এটাই তাঁর শেষ বছর। তাকে বিদায় জানানোটা কষ্টের , আরো কষ্টের যখন তিনি তাঁর ক্যারিয়ারের ভালো সময়ের মধ্যে দিয়েই যাচ্ছেন। তাঁর সেই মন ভুলানো, নজর কাড়া ক্রিকেটের নিত্যনতুন শট ক্রিকেট প্রেমীরা মিস করবে বলে দেওয়াই যায়। এবিডি আজীবন দলের জন্যে ভালোটাই কামনা করবেন, দলের পাশে থাকবেন।তবে ফাফ দু প্লেসিস দের এবিডি ও মিস করবেন এটা বলা যায়। এবি জানিয়েছেন তিনি দক্ষিন আফ্রিকার কোচদের কাছে কৃতজ্ঞ ।আসলে সময়ে সময়ে ডি ভিলিয়ার্স এর বিরতিটা লাগছিলো ইদানিং । খেলার জন্যে এদেশ ও দেশ ছোটা ছুটি আর তাঁর শরীরে সইছিলোনা।এটাই হয়ত তাই কাল অনুযায়ী সীদ্ধান্ত ছিল এবির। ফর্মের তুঙ্গে থাকা অবস্থায় চলে গেলেন অবসরে । ভক্তদের মনে আক্ষেপ রেখে গেলেন এবি । আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ব্যাটের তুলির আঁচরে মাঠের সবুজের মাঝে তাঁর ৩৬০ ডিগ্রী শট গুলো আর দেখা যাবেনা , আর এবিডি ঝর তুলবেনা ২২ গজে। এবিডি এটাই চেয়েছিলেন, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের পর যেন ঘরোয়া ক্রিকেটে আরো কিছুদিন তিনি খেলে যেতে পারেন। ভারত ও অস্ট্রেলীয়া বধের পর পরি অবসর নেওয়া হয়ত তাই এবি ডির ভালো একটি সীদ্ধান্ত।
অবেলায় তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরে চলে গেলেন, ক্রিকেট বিশ্বের তাকিয়ে থাকা ছাড়া কিছুই করার নেই। অনেক ক্রিকেটার অবসরে সীদ্ধান্তের পর আবার ক্রিকেট আঙ্গিনায় ফিরে এসেছে। তাই এবি ডির ভক্তরা আশা করতেই পারে। তবে আপাতত এবি ডি ডিভিলিয়ার্স এর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কে বিদায় বলার সীদ্ধান্তকে মেনে নিতেই হচ্ছে। চোখের সামনে ভেসে আসে এবির হাওয়ায় উড়ানো বল, সীমান ছাড়িয়ে চলে যাচ্ছে। এবির ৩৬০ ডিগ্রী শট গুলো খুব বেশি মনে পরছে, তাকে বল করতে গেলে বোলার রা মাঝে মাঝেই দিশা হারিয়ে ফেলতেন। তাঁর ব্যাটিং দেখে এমন টা মনে হওয়া অপরাধ নয়, যে যেখানেই বল ফেলা হোক না কেনো এবি সেটা কে ছক্কা বানিয়েই ছাড়বেন। কিন্তু, ভারাক্রান্ত হৃদয়ে ক্রিকেটের রাজপুত্রকে আজ বিদায় জানাতে হচ্ছে। সাল ২০০৪।ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যাত্রা শুরু হয়েছিলো এবিডির। মাঠ টাও স্মরনীয় হয়ে থাকলো ,হ্যা পোর্ট এলিজাবেথের কথাই বলছি।সে যাত্রা থামলো ২০১৮ তে এসে, হঠাৎ করেই। আর বন্ধুদের সাথে জম্পেশ আড্ডায় বসে দেখা হবেনা এবিডির জাদু। ভাবতেই মনটা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। এবিডি ব্যাটিং এ নেমছে, শুনেই বসে যাওয়া হবেনা আর টিভির সামনে। টাইটান্সের হয়ে খেলার সময় বা ঘরোয়া কোন দলের হয়ে খেলার সময় তাঁর শট দেখে আবার মন খুশি হয়ে উঠবে। হয়ত তাকে দেখে আবার আক্ষেপ ও হবে। আহ কি হারালো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট। এখন অনেকের মত আশা করতেই পারি এবিডি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরে আসবে। এবির শেষ ম্যাচের সাক্ষী হয়ে রইলো অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলা জোহান্সবার্গের টেস্টা টা। ক্রিকেটের তিন ফর্মেট মিলিয়ে তাঁর ছক্কা ৩২৮ টি ।
ছোট বেলায় এবি টেনিস , রাগবি আর গলফ ও ভালো খেলতেন।হতে পারতেন অন্য কিছু অথবা বাবার মত ডাক্তার হয়েও যেতে পারতেন, ফলাফল বেশ ভালই ছিলো ইশকুলের ফাইনালে। না, সে সবের দিকে গেলেন না এবি, সব পিছনে ফেলেন চলে এলেন ক্রিকেটের ২২ গজে। ভাগ্যিস এসেছিলেন। না হলে যে ক্রিকেট বিশ্ব ক্রিকেটের এক রাজপুত্রের দেখা পেতনা। বিদায় এবি ডি ভিলিয়ার্স। ভালো থেকো ক্রিকেটের রাজপুত্র।