একজন এ,কে,এম, হেলালের যাপিত-জীবন

Please log in or register to like posts.
পোস্ট
বাঁশখালী, এ_কে_এম_হেলাল, A_K_M_Helal, Helal, হেলাল, বাংলাদেশ, ছবিয়াল-_জুনাইদ, pc_Jonaid_Bin_Kayes

মুক্তিযুদ্ধের আগের বাংলাদেশে যাদের জন্ম, যারা ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান এর সাক্ষী, ৭১ এর রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের সাক্ষী, তাঁদের মধ্যে একজন তিনি। জন্ম ১৯৫৮ সালে। সে যুগে জন্ম নেওয়া অনেকেরি সালের হিসেব থাকলেও দিনের হিসেব ছিলোনা। জন্ম হয় বাঁশখালীর কালীপুর গ্রামে।  ছয় ভাই এর  মাঝে একজন তিনি, নাম- এ,কে,এম, হেলাল(A.k.M. Helal) । 

 

এখন ধীরে ধীরে সবাই শহরে অবস্থান করলেও সে সময়ের কথা ভিন্ন। গ্রাম ছিলো সবার মূল বাসস্থান। গ্রামের টান্ ছিন্ন করে দূর দেশে মানুষ কম যেত। তাঁর জন্মের সময় গ্রামেই ছিল তাঁর পরিবার-পরিজন। কালীপুর গ্রামেই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠ শেষ করেন।

ক্লাস সিক্স আর সেভেন এ বড় ভাই এর  তত্ত্বাবধানে চকরিয়ার বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেন। খেলার খুব শখ ছিল। তখন কার ছিলোনা খেলার শখ?  এখনকার মত তখনকার শিশু কিশোররা তো ঘরে বসে মোবাইলে গেমস খেলতোনা।  তখনের খেলা ছিলো মাঠে , বৃষ্টিতে ভিজে,কাদায় গড়াগড়ি খেয়ে ।  ছোট বেলা থেকেই খেলা ,বিশেষ করে ফুটবলের সাথে জড়িত ছিলেন তিনি।  ৭৪ সাল থেকে স্কুল, আর কলেজের হয়ে মাঠ দাবড়ে বেড়িয়েছেন। কখনো জিতেছেন,কখনো হেরেছেন। কিন্তু খেলেছেন মনের আনন্দে।  থাকতেন স্কুল আর কলেজের একাদশে। সে সময় বাংলাদেশে ক্রিকেট নয় ফুটবলের জোয়ার ছিলো। বিভিন্ন ক্লাবের হয়ে খেলতেন।

 

এলাকা ভিত্তিক ফুটবল খেলা হত তখন । ফুটবল খেলতে দলের সাথে তিনি চলে যেতেন-খানখানাবাদ,সরল, চাপাছড়ি গ্রামে। এক গ্রামের সাথে আরেক গ্রামের খেলা হত।  সে সময় জুনের খেলা বলতে একটা গা শিরশিরে ব্যপার ছিলো।  রাস্তায় মানুষের ঢল নামতো, উৎসবে মেতে উঠতো গ্রাম। বাড়ির দরজা বন্ধ করে সবাই ছুটত মাঠে। খেলা শুরুর কয়েকদিন আগেই মাইকিং হতো। জান-দিয়ে লড়তেন খেলোয়াড়েরা। ফুটবল পায়ে নিজের গ্রাম বা শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিত্ব করতেন তাঁরা।

 

এটা ছিলো তেমনি একটা সময়,  জুনের খেলা চলছিল। কালীপুর ,বানীগ্রামের মাঠে ম্যাচ খেলতে গিয়েছিলো। সম্ভবত সেমি-ফাইনাল, বা ফাইনাল ছিলো সেদিন। প্রথমেই কালীপুরের ছেলেরা ফুটবল জড়িয়ে দেয় বানীগ্রামের জালে।  ১-০ তে এগিয়ে যায় এ,কে,এম, হেলালের দল।  এর পরের ঘটনা এখনো লোক-মুখে ঘুরে ফিরে আসে।  নিজ এলাকায় প্রথম গোল হজম করাটা বানীগ্রাম যেন মেনে নিতে পারছিলোনা।  স্বাগতিক দল হওয়ায় নিজ গ্রামে তাঁদের দাপড় বেশি ছিল। কালীপুরের ফুটবল একাদশের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়লো তাঁরা।  সে এক রক্তা-রক্তি কান্ড। কালীপুরের ছেলেদের রক্তাক্ত অবস্তায়  জীপে করে গ্রামে, এন্তুমিয়াদের বাড়ী নিয়ে যাওয়া হয়।  গ্রামে তাঁদের সেবা করা হয়। গ্রামের ফুটবল ইতিহাসে সেই দিনটার কথা অবশ্যই লেখা থাকবে। তৎকালীন বাঁশখালী ডিগ্রী কলেজের বাংলার অধ্যাপক , এ,কে,এম,হেলালের বড় ভাই এ,ওয়াই,এম জাফর  এবং হিমাংশু স্যার ম্যাচ ও পরবর্তি ঘটনার সাক্ষী হয়ে আছেন।

 

এ,কে,এম, হেলাল ছিলেন বাঁশখালী ডিগ্রী কলেজের ছাত্র।  ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন প্রত্যক্ষদর্শী। তখন সেভেন ,এইটে পড়েন।বোঝেন সবকিছু। বঙ্গবন্ধুর ডাকে বাংলার সন্তানেরা ঝাপিয়ে পড়েছে এ খবর  আর সবার মত তাঁর তাঁর প্রানেও শিহরন জাগিয়েছিলো। বাড়ী ছিলো প্রধান সড়কের পাশ ঘেষে। সঙ্গত কারনেই, পাঞ্জাবীদের তথা পাকিস্তানী হায়েনাদের আর রাজাকারদের নিজ চোখে দেখেছেন তিনি।  সরাসরি যুদ্ধে অংশ গ্রহন করেছেন এমন অনেক কেই চিনতেন।  নিজে কিশোর হলেও বাঙ্গালীদের প্রানের দাবী তাঁর ভেতরটাও নিশ্চই নাড়িয়ে দিয়েছিলো।আরো অনেকের মতই,  কালীপুর গ্রামে হিন্দুদের উপর হায়েনাদের অত্যাচারের তিনি নির্মম, নির্বাক সাক্ষী ।  নিজের কানে ফায়ারিং এর আওয়াজ শুনতেন, শুনতেন সর্বহারাদের, আর্তনাদ।

এ,কে,এম হেলাল, A.K.M.Helal
               নিজ বাড়ীতে, কালীপুর, বাঁশখালী , চট্টগ্রাম

 

বাঁশখালী ডিগ্রী কলেজের ‘৭৮ ব্যাচের ছাত্র তিনি।  ‘৭৫ এ মুজিব হত্যার পরবর্তি থমথমে অবস্থার সাক্ষী তিনি। জিয়াউর রহমানের হত্যার সময় তিনি ছিলেন পতেঙ্গায়।

 

পরবর্তিতে শুরু হয় চাকরী জীবনের।। ১৯৮২ তে সীতাকুন্ডর কুমিরায় গোমতী এন্টারপ্রাইসে চাকরি করেন। ১৯৮২ থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত সেখানেই ছিলেন। এরপর কিছুদিন ব্যবসা করেন, এর পরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে চাকরি করেন।  বিয়ে করেন ৯০ এর দশকে । দুই সন্তানের মধ্যে বড় ছেলের নাম সৌহার্দ্য ও ছোট ছেলের নাম সৌরিক।২০১০ থেকে শুরু করে, বর্তমানে কুমিরায় ওও ট্রেডিং এন্ড শিপ ব্রেকিং (  OWW TRADING AND SHIP BREAKING  ) এ  জি,এম  হিসেবে কর্মরত আছেন । 

 

১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল এর ঘূর্নিঝড়, যা নিহতের সংখার বিচারে স্মরন কালের ভয়াবহ ঘূর্নিঝড় গুলোর মধ্যে একটি বলে আজো অভিহিত হয়। সেই নির্মম অতিতের সাথে তিনি জড়িয়ে। সে সময় কত লাখ-লাখ মানুষের  যে প্রান গেলো আর কত  মানুষ  সব হারালো!  সে সময় তিনি ছিলেন চট্টগ্রাম শহরের সতিস বাবু লাইনে,বড় বোনের বাসায়। উপকূলীয় ক্ষয়ক্ষতি দেখেছেন, বিকেল বেলায়, বা বলা ভালো শেষ বিকেলের কান্না দেখেছে সর্বহারাদের। লাশের পর লাশ দেখেছেন।

 

বর্তমানে কাজের জন্য তাঁর অবস্থান -কুমিরা, সীতাকুন্ড ।  বর্তমানে তিনি আছেন  OWW TRADING AND SHIP BREAKING এর G.M. হিসেবে। সেখানে ২০১০ সালে যোগ দিয়ে এখন পর্যন্ত নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন তিনি। কালের ইতিহাসের সাক্ষ বহন কারী, বাংলাদেশের ইতিহাসের একজন সাক্ষী তিনি।

ফেসবুক কমেন্টস

Reactions

0
0
0
0
0
0
Already reacted for this post.

প্রতিক্রিয়া