একটা সময়ে জীবনে আসলো বড় বিপদ। আমার স্বামী অধ্যাপক নাজিম উদ্দিন, আমার মেজো ভাসুর(অধ্যক্ষ) জহির উদ্দিন সহ আরো তিন জন সি,এন জি এক্সিডেন্ট করে। ১০ দিন পরে আমার ভাসুর( মেজ ভাই) ইন্তেকাল করেন। আল্লাহ্ যেন ওনাকে বেহেশ্ত নসিব করেন। মেজ ভাইয়ের মৃত্যু সংবাদ শুনে বৃষ্টির আব্বু হতবম্ভ হয়ে পড়ের। এর পর সে দুই বছরের জন্য অন্য জগতের মানুষ হয়ে যায়। ডাক্তারের চিকিৎসা সেবায় কোন ত্রুটি হয়নি। এই অবস্থায় আমার মেয়ের এইচ, এস সি ফাইনাল শুরু হয়ে যায়। আমি আর আমার মেয়ের চোখের পানিতে বন্যা বয়ে যেত । এভাবে অনেক সমস্যা আর দুঃখ কষ্টের মধ্য দিয়দে আমার মেয়৬এ এইচ এস সি দেয়। রেজাল্ট দেওয়ার দিন আমি শুধু মনে মনে আল্লাহর কাছে বলেছিলাম, আল্লাহ আমার মেয়ে যাতে ফেল না করে। আল্লাহর দয়ার শেষ নেই। আমার মেয়ে A+ পায়। রেজাল্ট শুনে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। এরপর চট্টগ্রাম পরীক্ষায় ভর্তি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় ২য় স্থান লাভ করে। ইংলিশ নিওয়ে অনার্স ফার্স্ট ইয়ার এ ভর্তি হলো। ফার্স্ট ইয়ার এর দিকেই জাদু মামা প্রস্তাব নিয়ে আসে আমার মেয়ের বিয়ের জন্য। পাত্র মিজানুর রহমান জাবেদ তখন আমার মনের অবস্থা ভালোনা। কারন মাত্র কয়েকদিন আগতে বৃষ্টির আব্বুকে ক্লিনিক থেকে আনা হয়েছে। প্রচুর টাকা খরচ হয়েছে। এ অবস্থায় কিভাবে মেয়ে বিয়ে দিব। আল্লাহর ইচ্ছায় সব হতে পারে। এ অবস্থায় আমার মেয়ের বিয়ে হয়ে গেলো। শশুর বাড়ীর বড় বৌ হয়ে গেলো। আমার চিন্তার শেষ নেই। কারন বৃষ্টির বাপের বাড়ীতে থাকা অবস্থায় মা-বাবার কড়া শাসনে থেকে পড়া-লেখা ছাড়া আর কিছুই শেখা হয়নি।
মনে মনে আল্লাহকে বলতাম আল্লাহ আমার মেয়ের বিয়ের পর তাঁর কোন কষ্ট আমি সহ্য করতে পারবোনা। তাই আল্লাহকে বলতাম আল্লাহ মেয়ের জামাই সহ সবাই যেন ভালো হয়। আর আমার মেয়েকে বলতাম, শশুর বাড়ীর সবাইকে আপন করে নেওয়াটা তোমার প্রথম কাজ। শশুর বাড়ীর লোক ভালো হলেও সংসারে অনেক সমস্যা থাকতে পারে। এগুলোকে সমস্যা না ভেবে পরিস্থিতি মনে করবা। আর শশুর বাড়ীর কোন সমস্যার কথা আমাকে বলবানা। কারন আমার মাও আমাদের কে এভাবে শিক্ষা দিয়েছেন। মিষ্টি মেয়ে পড়ালেখা, সংসার দেখা, সন্তানের জন্ম দেওয়া এই কঠিন কাজ গুলো একসাথেই করেছে আল্লাহর রহমতে। আল্লাহার সাহায্য আর জাবেদের ভালো মনভাব না থাকলে হয়ত এসব স০ম্ভব হতনা। এইদিকে আমার জুনাইদ নাসিরাবাদ স্কুলের অষ্টম শ্রেনীতে ফাইনাল পরীক্ষা দেয়। এসময় জুনাইদের আব্বু হঠাৎ খুব বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ে। তখন আমাদের বাসা মিমি সুপার মার্কেট সংলগ্ন হীল্ভিউয় হাউজিং এ। এত দূর থেকে বাশখালী কলেজে আশা যাওয়া করা খগুব কঠিন। সব্দিক বিবেচনা করে ভাব্লাম। ওঃকে সুস্থ করতে হলে আমাদের কে বাশখালী যেতে হবে। জুনাইদ এর টিসি আনতে গেলে টিচার রা বল্ল-আপনারা কি আপয়ান্দের ছেলের সম্পর্কে কিছু জানেন? আপনার ছেলের ইস্পাহানীর ছেলেদের পর্যায়ের। গ্রামে গেলে ওর উন্নতি হবেনা। ঠিক তাই হলো গ্রামে গিয়ে জুনাইদের আব্বু সুস্থ হয়ে উঠলো আর ধীরে ধীরে জুনাইদ অসুস্থ হতে লাগলো। ১ বছর পর আবার শহরে চলে আসতে হলো। সে অনেক কষ্টের ইতিহাস। বলে বা লিখে শেষ করা যাবেনা। অনেক কষ্টের মধ্যে দিয়ে আমার ছেলে এস এস সি পরীক্ষা কিভাবে দিলো আর পাশ করলো তা একমাত্র আল্লাহই ভালো জানেন। তাঁর অসুস্থতার কারনে মনে হয়েছে পড়ালেখা আর হবেনা।আল্লাহকজে বলতাম অন্তত পড়ালেখা না পারলেও যেন সুস্থ ও সু সন্তান হিসেবে সে বেঁচে থ্যাকে। আআর যদি সুস্থ ও সু সন্তান হতে না পারে তাহলে আল্লাহ আমার ছেলেকে তোমার কাছে নিওয়ে যাও।