একজন জা-বাজ সৈনিক ও দূরদর্শি নেতার গল্প

Please log in or register to like posts.
পোস্ট

  তিনি দ্রুত উন্নতি করতে থাকেন, বিশ্বস্ততা অর্জন করে হয়ে উঠেন একাধিক প্রদেশের গভর্নর। সর্বোপরি তিনি একজন সফল সেনাপতি ছিলেন। যুবরাজ আওরঙ্গজেবের সাথে তাঁর ঘনিষ্ঠতা বারে গোল্কন্দার সম্রাটের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সময়। শায়েস্তা খাঁর পদন্নোতি হয়ে তিনি আমির-উল-উমারা উপাধি পান আওরঙ্গজেব সাম্রাজ্যে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর ।তিনি এ পদন্নোতি পান আওরঙ্গজেবেরই ভাই দারা শিকোর বিরুদ্ধে গ্রহন কৃত পদক্ষেপ এর ফলে।শায়েস্তা খাঁ বাং লার সুবেদার পদে অধিষ্ঠিত হন ১৬৬৩ খ্রিস্টাব্দে,  মীর জুমলার মৃত্যুর পরে । আওরঙ্গজেব ১৬৬০ সালে ডেক্কনের শিবাজীকে পরস্ত করার জন্য শায়েস্তা খাঁ কে নিযুক্ত করেন। পুনেতে তাবু স্থাপন করে শায়েস্তা খাঁ কঠোর নিরাপত্তায় বেষ্টিত হয়ে মহলে প্রবেশ করেন। মারাঠা ব্যক্তিদের কোন প্রবেশ অধিকার ছিলোনা পুনেতে।

একদিন শিবাজী এবং তাঁর বাহিনী বর পক্ষ সেজে একটা বিয়ের অনুষ্ঠানে প্রবেশ করেন পুনেতে। শিবাজী শায়েস্তা খাঁর মুখমুখি হন স্বয়ং নিজে, তার তরবারির আঘাতে শায়েস্তা খাঁর বৃধাঙ্গুলি সহ তিনটি আঙ্গুল কেটে যায়। ফলে তিনি সংজ্ঞা হারান।  পরবর্তিতে শায়েস্তা খাঁর অধীনস্তরা তাঁকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে পৌছে দেন। এই ঘটনায় আওরঙ্গজেব বিক্ষুব্দ হয়ে শায়েস্তা খাঁ কে দুরব্ররতি স্থান বাংলায় প্রেরন করেন।         বাং লায় আগমনের পরে শায়েস্তা খাঁ পাহাড়ী বিদ্রোহীদের দমন করেন।শায়েস্তা খাঁ আরকানের রাজাকে প্রবল হুমকির চিহ্ন হিসেবে মনে করতেন আরকান রাজের সামরিক শক্তির কারনে । বিচক্ষন শায়েস্তা খাঁ তখনি মুঘল দের নৌ-বাহিনীর উন্নয়নে জোর দেন   এক বছরের মধ্যে নৌবহরের সংখ্যা পৌছে যায় ৩০০ এর কাছা কাছি। তিনি ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির এবং পর্তুগীজ দের সমর্থন অর্জনের জন্যে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালান।

 

 শায়েস্তা খাঁ সন্দ্বীপ আক্রমনে মুঘল দের নেতৃত্ব দেন। যা ছিল আরকান দের দখলে।  শায়েস্তা খাঁ আরকান ও পর্তুগিজদের মধ্যকার সমস্যার সুবিধা লাভ করেন আক্রমনের ক্ষেত্রে। চট্টগ্রামের বিরুদ্ধে শায়েস্তা খাঁ সেনা অভিজান শুরু করেন ১৬৬৫ সালের ডিসেম্বরে। তখন চট্টগ্রাম ছিল আরকান দের রাজধানী।  চট্টগ্রামে সাগরে এবং পরবর্তিতে কর্নফুলীতে নৌ-যুদ্ধ হয় প্রচন্ড। পর্তুগিজদের সহযোগিতায় মুঘলরা জয় লাভ করেন। আরকান নৌবাহিনীর কিছু সৈন্য একটি দুর্গে আশ্রয় নেয় তবে বেশি দিন তারা টিকে থাকতে পারেনি। ১৬৬৬ সালের ২৬শে  জানুয়ারি শায়েস্তা খাঁ দুর্গ টি দখল করেন। মুঘল সাম্রাজ্য পুনঃপ্রতিষ্টিত হয় কুচবিহার ও কামপুরায়। কয়েক হাজার কৃষকের মুক্তির জন্যে তিনি নির্দেশ দেন আরকান দের বিরুদ্ধে জয়ের পর পরই। গভর্নর হিসেবে তিনি বিভিন্নশাসক গোষ্ঠী এর সাথে সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটান।

  

সাত গম্বুজ মসজিদ ঢাকার মোহাম্মদপুরে অবস্থিত মুঘল আমলে নির্মিত একটি মসজিদ

 তাঁর শেষ সময়ে শায়েস্তা খাঁ  ঢাকা ছেড়ে দিল্লিতে ফিরে যান।   যাবার আগেই কিন্তু তিনি ঢাকাকে পরিনত করেন বাণিজ্য ,সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক প্রাণকেন্দ্রে ইউরোপিয়দের সাথে ব্যাবসায়িক সম্পর্কের উন্নয়নের ফলে তার অবস্থান সুসংহত হয়।  ।তাঁর প্রচেষ্টায় ঢাকা একটি ক্ষুদ্র দাপ্তরিক কেন্দ্র থেকে উন্নত শহরে পরিনত হয়। শায়েস্তা খাঁর কীর্তি এর কথা বলতে গেলেই বলতে হয় তাঁর তৈরি মসজিদের কথা।যা বাংলাদেশ সরকার দ্বারা বর্তমানে সংরক্ষিত আছে।  মিটফোর্ডে অবস্থিত শায়েস্তা খাঁর মসজিদ। আরো রয়েছে তাঁর নির্মিত ছোট কাটরা। এছাড়াও মোহাম্মদপুরে অবস্থিত সাত গম্বুজ মসজিদ উল্লেখযোগ্য। শায়েস্তা খাঁর দপ্তর ছিল ঢাকার লাল বাগে। স্থাপত্যের প্রতি তাঁর যে ভালোবাসা তা প্রকাশ পায় তাঁর নির্মিত স্থাপত্যের মাধ্যমে।তাঁর স্থাপত্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বকশীবাজারে অবস্থিত  হোসেনী দালান।

ফেসবুক কমেন্টস

Reactions

0
0
0
0
0
0
Already reacted for this post.

প্রতিক্রিয়া

মন্তব্য করুন