ইয়েটস এর কর্ম জীবন

Please log in or register to like posts.
পোস্ট

এ সময় তার কবিতার চর্চা বাড়তে থাকে।১৮৮৫ সালের ২১ অক্টোবর তাঁর ‘দ্য পোয়েট্রি অব স্যামুয়েল ফার্গুসন’ শিরোনামের কবিতাটি প্রথম প্রকাশিত হয় ডাবলিন ইউনিভার্সিটি রিভিউতে। তিনি তাঁর সাহিত্যকর্ম শুরু করেন মাত্র ১৭ বছর বয়স থেকেই। উইলিয়ামের শুরুর  কবিতাগুলো ছিল শেলী এবং এডমন্ড স্পেন্সার দ্বারা প্রভাবিত।পরে অবশ্য তিনি অন্য ধারায় কাব্য রচনা শুরু করেন। পরে তাঁর সৃষ্টিকর্মে প্রি-রাফায়েল, আইরিশ লোকগাথা এবং সংস্কৃতিক প্রভাব ছিল সুস্পষ্ট। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর তিনি উইলিয়াম ব্ল্যাকের সৃষ্টিকর্মের গুণগ্রাহী হয়ে ওঠেন।১৮৮৭ সালে ইয়েটস পরিবার আবার স্থানান্তরিত হয় লন্ডনে। সেখানে একদল ব্রিটিশ কবি নিয়ে তিনি গঠন করেন রাইমার্স ক্লাব। পরে সেটি ট্রেজিক জেনারেশন হিসেবে পরিচিতি পায়। ১৮৯২ এবং ১৮৮৪ সালে সে সংগঠন থেকে দুটি সংকলন প্রকাশিত হয়।

ইয়েটস ডাবলিন কে ভালোবাসতেন।লন্ডনে অবস্থানকালে ইয়েটস প্রতি গ্রীষ্মে চলে যেতেন ডাবলিনে,তার প্রানের শহরে।
১৮৮৬ সালে তিনি স্বতন্ত্রভাবে প্রথম কাব্য-পুস্তিকা (পেমফ্লেট) ‘মসোজ : এ ড্রামাটিক পোয়েম’ প্রকাশ করেন।  পরবর্তিতে তাঁর পরিচয় ঘটে আইরিশের জাতীয়তাবাদী ও নারীবাদী কবি মট গনের সঙ্গে এবং ধীরে ধীরে তাঁকে গভীরভাবে ভালোবেসে ফেলেন। তাঁর প্রতি তিনি এতটাই অনুরুক্ত হন, ১৮৯১,১৮৯৯, ১৯০০ এবং ১৯০১ সালে পর পর চারবার বিয়ের জন্য প্রস্তাব দেন। কিন্তু বার বার তিনি প্রত্যাখ্যাত হন।

তাঁর ভালোবাসার মানুষ,সেই মট গন ১৯০৩ সালে বিয়ে করেন জাতীয়তাবাদী বিপ্লবী মেজর মেক ব্রাইটকে। মট গনের বিয়ের পরও কিন্তু তাঁদের মধ্যে প্রগাঢ় বন্ধুত্ব ছিল। পরবর্তিতে সেই মট গনই হয়ে ওঠে তাঁর কবিতা লেখার অন্যতম প্রেরণা।তার বিখ্যাত কবিতা”নো সেকেন্ড ট্রয়-No Second Troy”   অবশ্যম্ভাবী ভাবেই মট গন(Maud Gonne) কে উদ্দেশ্য করে লেখা। মট গন কে উদ্দেশ্য করে কবি বলেন,

“Why should I blame her that she filled my days

With misery,or that she would of late”

বিয়ের ১৩ বছর পর   মেক ব্রাইট মারা যান।  মট গনকে আবার বিয়ের প্রস্তাব দিয়েও প্রত্যাখ্যাত হন উইলিয়াম বাটলার ইয়েটস।
মট গনের প্রতি অপরিমেয় ভালোবাসা এবং তাঁকে না পাওয়ার বেদনাজাত উপলব্ধি থেকে সৃষ্টি হয়েছে তাঁর অনেক বিখ্যাত কবিতা।

তাঁর কবিতার অনেক গুলো ভলিউম এর মধ্যে উল্লেখ্যোগ্য গুলো হল: দি রোস(১৮৯৩),দি সেভেন উডস(১৯০৪),দি টাওয়ার (১৯২৮), ক্রসওয়েস(১৮৮৯), রেস্পন্সিবিলিটিস(১৯১৪),লাস্ট পোয়েমস(১৯৩৬-১৯৩৯)  ইত্যাদি।

কবি কল্পনাবিলাসী ছিলেন। লন্ডন যখন কবির কাছে থাকার জন্য কষ্টকর মনে হয় তখন তার কল্পনাবিলাসী মন সৃষ্টি করেছে কিছু অসাধারন কাব্যের।তাঁর “The lake Isle of Innisfree” কাব্যে তাই কবি লিখেছেন,

I will arise  and go now, and go to innisfree,

And a small cabin build there,of clay and wattles made”

তিনি ছিলেন বেশ সৃষ্টিশীল, এবং স্বপ্নবিলাসী কবি। আয়ারল্যান্ডের সাধারণ মানুষের লোকসংস্কার, লোকগাথায় তিনি ছিলেন বিমুগ্ধ। তাঁর সমসাময়িক পরিবেশ বুঝলে তাঁর কবিতার ভাব বুঝতে সুবিধে হয়।তাঁর কবিতা বুঝতে হলে সেই দেশের অতিপ্রাকৃত ও জাদুবিশ্বাস, ধর্মতত্ত্ব ও প্রতীকীবাদ সম্পর্কে ধারণা থাকা প্রয়োজন।


১৮৯৯ সাল। উইলিয়ামের বন্ধু এডওয়ার্ড মার্টিন, লেডি গ্রেগরি এবং জর্জ মুর সম্মিলিতভাবে প্রতিষ্ঠা করেন অ্যাবে থিয়েটার বা আইরিশ লিটারেরি থিয়েটার। এটি আইরিশদের জাতীয় থিয়েটার হিসেবেও পরিচিত হয়। আইরিশ জাতীয় আন্দোলনে অসামান্য ভূমিকা পালন করে এ থিয়েটার।
১৯১১ সালে উইলিয়াম বাটলার ইয়েটসের বয়স যখন ৫১, তখন তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয় জর্জ হাই লিজ নামে এক তরুণীর। বাড়ে ঘনিষ্ঠতা। ১৯১৭ সালের ২০ অক্টোবর সেই  বান্ধবীর সঙ্গে বিয়ে হয় তাঁর। বয়সের অনেক পার্থক্য থাকার পরও তাঁদের দাম্পত্য জীবন ছিল সুখের। উইলিয়ামের সৃষ্টিকর্মে স্ত্রী নানাভাবে সহযোগিতা করতেন। এ সুখী দম্পতির দুটি সন্তান প্রথমটি কন্যা-অ্যান; জন্ম ১৯১৯ সালে। দ্বিতীয়টি ছেলে মাইকেল, জন্ম ১৯২১ সালে। উইলিয়াম তাঁর দুই সন্তানকে নিয়ে দুটি কবিতাও লেখেন। ১৯২২ সালে ইয়েটস আইরিশ সিনেট নির্বাচিত হন। ইংরেজি ও আইরিশ সাহিত্যে অসামান্য অবদানের জন্য এই বিখ্যাত সাহিত্যিক ১৯২৩ সালে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন।

জগদ্বিখ্যাত এই মহান আইরিশ কবিই রবীন্দ্রনাথ এর গীতাঞ্জলী ইংরেজিতে অনুবাদ করতে সহযোগিতা করেন।পরবর্তিতে ১৯১৩ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গীতাঞ্জলীর জন্যে নোবেল পান।  যথার্থ ভাবেই বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের নোবেল পুরস্কার বিজয়ে তার ভূমিকা অনস্বীকার্য।


১৯২৩ সালে উইলিয়াম সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। তাঁর পুরস্কার প্রাপ্তি সম্পর্কে নোবেল কমিটির বর্ণনা ছিল, ‘অনুপ্রেরণা জাগানো কবিতা, যা খুবই শৈল্পিকভাবে পুরো জাতির স্পৃহা জাগানো ভাবটিকে প্রকাশ করেছে।’

ইয়েটস ছিলেন কোনো ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সম্মানপ্রাপ্ত প্রথম আয়ারল্যান্ডীয়। তাঁকে বলা হয় সেই গুটিকয়েক সাহিত্যিকদের একজন যাঁদের সর্বোৎকৃষ্ট কাজগুলো লিখিত হয়েছে নোবেল পুরস্কার জয়ের পর।শুরুর দিকে তার কবিতায় রোন্টিকতার ছোয়া থাকলেও তার পরবর্তি কবিতা সমূহ থিম এবং বিষয়বস্তুর দিক থেকে সম্পূর্ণ বাস্তব ধর্মী।                     ।১৯৩৯ সালের ২৮ জানুয়ারি এই সাড়াজাগানো কবি ইহলোক ত্যাগ করেন।

রেফারেন্স( https://en.m.wikipedia.org/wiki/W._B._Yeats)

ফেসবুক কমেন্টস

Reactions

0
0
0
0
0
0
Already reacted for this post.

প্রতিক্রিয়া

মন্তব্য করুন