অবশেষে আল্লাহর দয়ায় ১৯৯২ সালে ২রা অক্টোবর শুক্রুবার সুব-হে সাদিক ফজরে আজানের সাথে সাথে আমার কোল জুড়ে আসল আমার ছেলে জুনাইদ। জন্মের সাথে সাথে জুনাইদ কে কোলে নেয় আমার ৬ নম্বর বোন মনিরা। মনিরার সেকি আনন্দ। আনন্দে আটখানা হয়ে দেখে কিসুন্দর একটা বাবু। মনিরা ছোট্ট বাবুটাকে মুখে পাউডার দিয়ে বলত-দেখ দেখ সাদা বিড়ালের মত লাগছে। আমার জুনাইদের নাম দেন মাইজভান্ডারের -জিয়াউল হক মাইজভান্ডারীর সহধর্মিনী(খালাম্মা) । খালাম্মা হলেন বৃষ্টির আব্বুদের আপন খালা। নাম রেখে তিনি জুনাইদের হাতে ৫০০ টাকা গুজে দিলেন।
সেই ছোট্ট সাদা ,ফর্সা, ইউরোপীয়ান ,ফরেনার জুনাইদ এখন আল্লাহর রহমতে। English এ Honours final পাশ করেছে। আমার ছেলে কৈশোরে অনেক ফাড়া কাটিয়ে আল্লাহর রহমতে এখনো পৃথিবীতে আছে। আমার ছেলের সেই কষ্টের দিনগুলো মনে পড়লে এখনো আমি নীরবে কাঁদি । আমার ছেলে পৃথিবীতে আছে, বেঁচে আছে এ কথা মনে আসলেই মনে হয় -রাখে আল্লাহ মারে কে? । ঐ কষ্টের দিনগুলোতে আল্লাহর আর আমার বেয়াই-বেয়াইন, জাবেদ(আমাদের জামাতা), নাজিম, ফরিদ – তাদের সাহায্য না পেলে হয়ত আমি আর আমার ছেলে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারতাম না। তাদের সহযোগীতা, সহমর্মিতা প্রকাশ করার ভাষা আমার কাছে নেই।
তাদের জন্য আমি কিছু করতে পারিনি। কিন্তু আমিও সারাজীবন তাদের জন্য দোয়া করে যাবো। যদিও জানিনা আমি গুনাহগার বান্দার দোয়া আল্লাহ কবুল করবেন কিনা! আমার মিষ্টি মেয়ে বৃষ্টির বিয়ে দিয়ে আমি আল্লাহর কাছে শোকরিয়া আদায় করেছি, করবো আজীবন। মেয়ের বিয়ে হয়েছিলো কত সালে এই মুহুর্তে সালটা ঠিক মনে নেই। হঠাৎ করেই মেয়ের বিয়েটা হয়ে গেলো।কিভাবে হলো, কিভাবে ব্যাবস্থা হলো একমাত্র আল্লাহই ভালো জানেন। মেয়েটাকে ছোট বেলায় অনেক শাসন করেছি তাঁর ভালোর জন্যই,তবে এখন সে কথা ভাবতে গেলেই খারাপ লাগে। এখন আবার আমার মেয়ে যখন তাঁর মেয়েদের শাসন করে আমি বাঁধা দেই। বাঁধা দিতে নিজের মনেও মাঝে মাঝে বাঁধা পাই,আমিও তো শাসন কম করিনি। নিজের সন্তানের ভালোর জন্য মা দের অনেক কঠোর হতে হয়। তবে নানী হয়ে সে কঠোরতা দেখতে ইচ্ছে হয়না। তথাপি এর দরকার আছে। কথায় বলে শাসন করা তারি সাজে সোহাগ করে যে। মার চ্যে তাঁর সন্তানদের বেশি কেই বা ভালোবাসে ! মেয়ের বিয়ের পর মেয়ের জন্য কেঁদেছি, ছেলের অসুখের সময় তাঁর জন্য কেঁদেছি, বরের অসুখের সময় ও কেঁদেছি। হয়ত চোখের পানির বিনিময়ে আল্লাহ আমাদের জন্য, পরিবারের জন্য ভালো কিছু রেখেছে।