আমার জন্ম ও কিছু কথা

Please log in or register to like posts.
পোস্ট

জন্মের সময়ের কথা আমার জানার কথা নয়। যত টুক জানি, আশেপাশের মানুষের মুখে শুনেছি । জন্মের পর থেকেই কঠিন অসুখে ভুগতাম। কেও আশা করেনি বাঁচবো । আল্লাহ বাঁচিয়েছেন ।

আমার জন্ম কালীপুর গ্রামে। ১৯৬৮ সাল  এ। মুক্তি যুদ্ধের কিছু সময় আগে । ছোট বেলা থেকেই আমার লেখালেখির প্রতি বেশ আগ্রহ ছিল। কিন্তু জীবনের কঠিন পরিস্থিতে আমার লেখিকা হপ্যে ওঠেনি। ছোট বেলায় মা মনোয়ারা বেগম আমাকে শাসন করলে আমি,আমি মন খারাপ করে পড়ার টেবিলের সামনে বড় বড় অক্ষরে লিখে দিতাম।  লিখে দিতাম”দু:খে যাদের জীবন গড়া তাঁদের আবার দু:খ কিসের” ।আম্মা লেখাটা দেখে চুপচাপ হয়ে যেতেন। আমরা ১০ বোন ছিলাম। আমাদের ভাই এর জন্যে আফসোস কখনই ছিলনা ।১০ টা মেয়ে ছিল ,কোন ছেলে ছিলোনা। এটা দু:খ করার মত কিছুই না। কিন্তু সমাজের কাছে এটা একটা আশ্চর্যের ব্যাপার ছিল। আমার বাবা কোন দিন আমাদের উপর বিরক্ত প্রকাশ করেন নি। এত গুলো মেয়ে হওয়ার পরেও এমন বাবা কয় জনের হয়। বাবা এনামুল হক ইন্তেকাল করেছেন বেশ ক বছর আগে।  বড় সৌভাগ্যের বিষোয় মা এখনো আমাদের সাথেই আছেন।

 

আমার মা আমার কাছে এক মহিয়সী নারী ।তিনি যে সংসার ই গুছিয়ে রেখেছিলেন শুধু তাই ,  নয় বরঞ্চ মানুষ করেছিলে দশ টি মেয়ে কে। তিনি দশ টি মেয়ের মা। আমার মাকে দেখে বা আমাদের ঘরের ভিতরে  ঢুকে কেও বুঝতে পারবেনা, এই ঘরে দশ টি বাচ্চা বা মেয়ে আছে। কারন ঘর এত সুন্দর আর পরিপাটি থাকতো যা ৫০ বছর আগে কেও কল্পনা করতে পারতনা। সে সময় ঘরের আসবাব আর ঘর গোছানোতে ছিল আধুনিকতার ছোয়া।

 

 আমার বয়স বর্তমানে ৫০ বছর। ৫০ বছর আগেও ঘরে এমন সব জিনিস ছিল  যা অনেকেই এ যুগে এসে দেখেছে। আব্বা এমন সব মজাদার খাবার আনত যা এযুগের পাওয়া দুষ্প্রাপ্য,এই যুগেই আধুনিকি।  এক কথায় বলতে গেলে সব দিক থেকেই আব্বা আমদের আদরে – যতনে রাখতেন। আব্বা আজ বেঁচে নেই । মহাল আল্লাহ রাব্ববুল আলামীন আমার বাবা কে সহ সকল মুললমান মুমিন মৃতদের বেহেশত নসিব করুন,এই দোয়া করি আল্লাহর কাছে।

 

আবার ফিরে আসছি আমার মায়ের কথায়। আমাদের ঘরে সেই ছোট কাল থেকেই দেখছি ফ্লোর পাকা । আব্বা ছিলেন প্রথম শ্রেনীর কনট্রাকটর । আব্বা ছিলেন অনেক বিলাসী মানুষ। হাসি খুশি আর সৌখিন । সবসময় হাসিখুশি থাকতেন। হঠাৎ মনে চাইল তিনি ডুপ্লেক্স ঘর করবেন।  অমনি সামনের উঠনে একটি বড় রুম আর ভেতরে শিড়ির মাধ্যমে উপরে আরেকটি বড় রুম বানালেন। ভাগ্যের খেলা, ঘর শক্ত পোক্ত হওয়ার আগেই তুমুল ঝড়ে সে ঘর ভেঙ্গে গেলো । আমাদের সে কি কান্না । শখের ডুপ্লেক্স পানিতে ভেসে গেলো। আব্বার কোন দুঃখ নেই।

 আম্মার ঘর গছানো এত নিপুন ছিল যে ,

অনেকেই এসে বলত , “ আপনাদের কি আজকে মেহমান আসবনে?’

“কেন?” আম্মা অবাক হয়ে বলতেন।

কারন আসলে তখন গ্রামে এত সুন্দর করে কেও ঘর গোছাতনা।

 

 

ফেসবুক কমেন্টস

Reactions

0
0
0
0
0
0
Already reacted for this post.

প্রতিক্রিয়া

মন্তব্য করুন