———————–হাইস্কুলের ক্লাস নাইন- টেন ——————
আসসালামু আলাইকুম পাঠক, আমার জীবনীতে আজকে একটি সুন্দর স্মৃতিচারণ নিয়ে হাজির হলাম আপনাদের মাঝে। আশা করি আপনাদের অনেকের জীবনের সাথে মিলে যাবে অনেকখানি———
বড়খাতা হাইস্কুলে যখন আমি ক্লাস নাইনে পড়তাম, তখন ২০০৯ সাল ছিলো। ক্লাস নাইনে উঠেও আমি কিন্তু পিচ্চি ছিলাম, আমাকে সাবু স্যার ছোট মানুষ বলে ডাকতেন। এসেই বলতেন, এই যে ছোট মানুষ বেঞ্চের উপরে দাড়ান! আর আমি সটান হয়ে বেঞ্চের উপরে দাঁড়িয়ে যেতাম। তারপর স্যার আমাকে বেঞ্চের উপরেই পড়া জিজ্ঞেস করতেন। এই সময় আমাদের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ছিলেন শ্রদ্ধেয় সলিম স্যার। এই স্যার স্কুলে থাকাকালীন কোন ছাত্রছাত্রীর কলিজা কাঁপে নি, এটা মানা সহজ নয়। স্যার ক্লাসে এসেই পড়া জিজ্ঞেস করতেন, বলতেন এ বাপু, দাড়া দেখি, বল কালকে কি পড়া দিয়েছিলাম? বলতে না পারলে ক্লাসের সব্বাইকে তিনি তার বেতের জাদু দেখিয়ে দিতেন।একবার তো স্যার ণত্ব বিধান আর ষত্ব বিধানের একটা কবিতা পড়তে দিয়েছিলেন। তিনদিনেও কেউ যখন দিতে পারলো না। আখেরি পিটান পিটিয়ে স্যার সমাপ্ত করলেন,আর সেই আখেরি পিটানের তবারক ক্লাসের সবাই পেলো। কিন্তু আমার অতি কষ্টে মুখস্ত করা কবিতার তিনটি চরণ আজো আমি অজান্তে পাঠ করিঃ চাণক্য মাণিক্য গণ বাণিজ্য লবণ মণ, বেণু বীণা কঙ্কণ কণিকা। স্যার কে দেখলেই আমার সেই কথা মনে পড়ে যায়। ক্লাস নাইনে থাকাকালীন পাঠাগার থেকে সপ্তাহে তিনটি গল্পের বই নিতাম, আর স্কুলের পড়া রেখে সেই বই নাক ডুবিয়ে পড়তাম। দেখা যেত, সপ্তাহ শেষ না হতেই আমার বই পড়া শেষ। আবার পাঠাগারের আপাকে অনুনয় বিনয় করে বই নিতাম।আমি লাইব্রেরীর প্রায় বেশিরভাগ সায়েন্স ফিকশন আর গল্পের বই শেষ করে ফেলেছিলাম।
আমরা ক্লাস টেনে উঠার সময় সকল ছাত্রছাত্রীদেরকে দোতালায় ক্লাস করানো হয়।উপরের যে বেলকনী সিস্টেম আছে, সেখান থেকে ক্লাস সিক্সের মেয়ে দেখা যেত। ছেলেরা সব ওখানে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতো, আমি পিচ্চি বলে কখনোই তাদের দেখা উপর থেকে পাইনি। সে জন্য কত আফসোস ছিলো, অন্তত তাদের দেখতে না পারি দক্ষিণা বাতাস তো খেতে পারতাম! তাও হতো না। মসজিদে গিয়ে নামাজের পর মুনাজাতে বলতাম, হে আল্লাহ, আমাকে একটু লম্বা বানিয়ে দাও। আমাকে সবাই তিরস্কার করতো-বলতো তুই এত পিচ্চি ক্যা? হরলিক্স খা! মহান আল্লাহ আমার প্রার্থনা শুনেছিলেন। আমি ইন্টারে উঠে ৪ ইঞ্চি লম্বা হয়ে ৫.৬” হয়ে গেছিলাম।পাঠক, এখনো সেই লম্বাই আছি। আর বাড়িনি বা খাটো হইনি। ক্লাস টেনে টেস্ট পরীক্ষা খারাপ হওয়ায় আমরা খাতার গোডাউনে আগুন ধরিয়ে দিতে চেয়েছিলাম।কিন্তু সাহসের অভাবে পারিনি।সিনেমায় পেট্রোল বোমা দেখে মন্ত্রীর গাড়িতে পেট্রোল বোমা মারতে চেয়েছিলাম, কিন্তু বোমা পাইনি, অথচ সাইকেলের চাকা পাংচার হলেও আমরা জানের ভয়ে দৌড় লাগাই। শেষমেশ দেখা গেলো, আমরা এগারো জনের একটা দল থেকে দশ জন টেস্টে টিকে গেলাম। তাইজুল স্যারের কাছে গেলাম ইংলিশ প্রাইভেট পড়তে।স্যার সবাইকে পড়ালেন, কিন্তু আমাকে ডেকে বললেন “তুমি অন্য কোথাও প্রাইভেট পড়ো।আমি তোমাকে পড়াবো না”।তিনি কেন আমাকে সেদিন পড়ান নি, তা আজো জানতে পারিনি। সেদিনের ওই কথাটা আজো আমাকে কষ্ট দেয়।গণিত প্রাইভেট পড়তে পারিইনি। একদিন কাদের স্যারের কাছে পড়তে গেছিলাম, পড়ার সময় একটা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করার কারণে স্যার কি যেন বলেছিলেন। পরের দিন থেকে আর প্রাইভেট পড়িনি। এসএসসি পরীক্ষার আগে শুধু একমাস ইংরেজি প্রাইভেট পড়েছিলাম। ক্লাসের পিচ্চি বালকটি ক্লাস নাইন থেকে টেন,আর টেন থেকে এসএসসির গন্ডি পেড়িয়ে গেলাম। পরীক্ষা গুলো মোটামুটি ভালোই হলো।
এরপর শুধু অপেক্ষা, ফলাফলের অপেক্ষা,একটা সার্টিফিকেট এর অপেক্ষা!-
——— লেখাঃ সাঈদ আল রবি। রচনাকালঃ ১৪ ই জুন ২০১৯।