
হেনরিক ইবসেনের “এন এনিমি অব দা স্টেট” এর ভারতীয় রুপ দিয়েছিলেন আমাদের সত্যজিত রায়। ডাক্তার অশোক গুপ্ত (অভিনয় করেছিলেন সৌমিত্র চট্টপাধ্যায়) তার চেম্বারে জন্ডিস রোগি বেড়ে যাওয়ায় চিন্তিত হয়ে পড়লেন। পরীক্ষা করলেন নদীর জল। যা ভেবেছিলেন তাই – জন্ডিসের জীবানুতে পরিপূর্ণ। মানবদরদী ডাক্তার কতৃপক্ষকে জানালেন। সমাধানতো হলোই না উল্টো ধমক খেলেন। পত্রিকার জন্য আর্টিকেল লিখলেন, পত্রিকা ছাপাতে সাহস পেলনা । সভা ডেকে জনগনকে জানাতে চাইলেন, হামলায় সভা পন্ড হল – ঘোলা জল পরিস্কার হলে যে অনেকেরেই সমস্যা।
আরো পরে স্টিফেন সডারবার্গ সত্য ঘটনা অবলম্বনে ছবি ”ইরিন ব্রোকভিচে” নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন জনপ্রিয় হলিউড অভিনেত্রি জুলিয়া রবার্টস। মূল ঘটনাটা ছিল ক্যালিফোর্নিয়ার পেসিফিক গ্যাস এন্ড ওয়েল কম্পানী তাদের ক্রোমিয়াম বর্জ ফেলছিল পুকুরে। আর তা মিশে যাচ্ছিল মাটির নিচের পানির সাথে। দূষিত হতে থাকে পানি, অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায় ক্যান্সার। ল অফিসের ক্লার্ক ইরিন ব্রোকোভিচের নজরে আসে ব্যাপারটা। আইনের ডিগ্রী তাঁর নেই কিন্তু আইনজিবীদের সাথে কাজ করতে যতুটুকু শিখেছেন তা দিয়ে দাঁড় করান মামলা। তাঁকে ঠেকাতে অর্থ, ক্ষমতা, ঘুষ সবকিছুই ব্যবহার করে প্যাসিফিক গ্যাস এন্ড ওয়েল। তবে শেষ পর্য্ন্ত পরাজয় মানতে হয়।যুক্তরাষ্টের ইতিহ্সে সবচেয়ে বড় ক্ষতিপূরন গুনতে হয় তাদের। আর এ নিয়ে ছবি বানিয়ে অসংখ্য পুরস্কার জিতেন সডারবার্গ, জুলিয়া রবার্টস সহ আরো অনেকে।
Yeassir Arafat Babon লম্বায় আমার চেয়ে কিছুটা খাট। তাই যখন জড়িয়ে ধরেছিল তার মাথাটা লেগেছিল আমার বুকে। মৃত্যুর খলিফা বোধাহয় বুঝতে পেরেছিল ঈদের কোলাকুলিটা তার সাথে আর হবে না, তাই ঈদের কয়দিন আগেই এই আলিঙ্গন। আমার দু‘ছেলেকে তার ভীষন পছন্দ। তারও একটি ছেলে – বছর দুই বয়স। খুশির স্বরে জানাল তার স্ত্রী আবার সন্তান সম্ভবা। তার মৃত্যুর কারণ নির্ণয়ের বৈজ্ঞানিক জ্ঞান আমার নেই। তবে প্যাথলজিকাল রিপোর্টে টাইফয়েড আর হেপাটাইটিস ই এর উপস্থিতি দেখা গেছে। এই দুটি রোগ যে পানিবাহিত তা বোধহয় সাধারণ জ্ঞান।
চলচিত্রের কথাই বলছিলাম। হালের হিন্দি মুভি থ্রি ইডিয়টস এ ড্রোন নিয়ে ভিন্নধর্মী গবেষনায় কর্তপক্ষের অবহেলায় আত্মহত্যা করে এক ছাত্র। তার শেষকৃত্যে অধ্যক্ষের পাশে দাঁড়িয়ে আরেক ছাত্র (অভিনয়ে আমির খান) বলে এটি আত্মহত্যা ছিল না ছিল হত্যা। সত্যি আমরা অনেকসময় হত্যা আর স্বাভাবিক মৃত্যুকে গুলিয়ে ফেলি। দূষনে যাদের মৃত্যু, দূষনকারীকি তাদের হন্তা নয়?
দূ:খ লাগে, এক স্থবির জাতিতে পরিণত হচ্ছি আমরা। আমাদের মাঝে ডাক্তার অশোক গুপ্ত নেই, ইরিন ব্রোকভিচ নেই, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই রন্চোর মত ছাত্র যে বন্ধুর জন্য জীবন দেবে, হাসি ঠাট্টায় ভেঙে গুঁড়িয়ে দেবে ব্যার্থ সব সিস্টেমকে। হয়ত বাবনদের অনাগত সন্তান এমন কিছু করবে।