চন্দ্রদ্বীপের প্রথিতযশা নারীবাদী ও কবি বেগম সুফিয়া কামাল –
১৯৯৯ সালের ২০ নভেম্বর , আজকের এই দিনে কবি ও লেখিকা বেগম সুফিয়া কামাল পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেছিলেন। বেগম সুফিয়া কামালের “উদাত্ত পৃথিবী” কাব্যগ্রন্থের সাথেই শুধু আমার পরিচয়। তাঁর অন্য কাব্যগ্রন্থ গুলো পড়ার সৌভাগ্য আমার হয়নি। বেগম সুফিয়া কামালের জন্মের তারিখটাও তাঁর মৃত্যুর তারিখের সাথে মিলে যায় বেশ।
১৯১১ সালের ২০ জুন বরিশালের শায়েস্তাবাদে তাঁর জন্ম। বরিশাল জেলার পূর্বনাম ছিলো চন্দ্রদ্বীপ যা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৭৯৭ সালে। যা কীর্তনখোলা নদীর তীরে অবস্থিত।
কবির পিতার নাম সৈয়দ আব্দুল বারী ও মাতার নাম সৈয়দা সাবেরা খাতুন। বাবা ছিলেন কুমিল্লার বাসিন্দা। বেগম সুফিয়া কামাল্কের জন্ম যে সময়ে ,সে সময়ে বাংলার মুসলিম নারীদের গৃহবন্দী জীবন কাটাতে হত। এসবের মধ্যে দিয়ে নিজের ইচ্ছা শক্তির জোড়ে সুফিয়া কামাল নিজেকে শিক্ষিত করে তুলছিলেন।
তাঁর বয়স যখন সাত, বেগম সুফিয়া কামালের বাবা সাধকদের অনুসরণে নিরুদ্ধেশ হয়ে যান। অনেক কষ্টে মা সাবেরা খাতুনের সঙ্গে বেগম সুফিয়া কামালের শৈশব কাটে নানার বাড়িতে।সুফিয়া কামাল বাংলা শিখেন তাঁর মায়ের কাছে। মায়ের উৎসাহে নানার বাড়িতে বড় মামার লাইব্রেরীতে চলতে থাকে তাঁর শিক্ষা।
মাত্র ১৩ বছর বয়সে সৈয়দ নেহালের সাথে তাঁর বিয়ে দেওয়া হয়। সৈয়দ নেহাল ছিলেন বেগম সুফিয়ার মামাত ভাই। নেহাল উদার মনা ছিলেন,ছিলেন আধুনিক ধ্যান ধারণার মানুষ। তাঁর সাহায্যে সুফিয়া কামাল সাহিত্য ও সাময়কি পত্রিকার যোগাযোগ ঘটে।
নারীবাদী ও বিখ্যাত কবি বেগম সুফিয়া কামালের কথা লিখতে গিয়ে বারবার মনে পড়ে যাচ্ছে সে সময়ের জনপ্রিয় সাহিত্যিক নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন -এর কথা। বেগম রোকেয়ার সাথে সাক্ষাত হয়েছিলো শিশু বেগম সুফিয়া কামালের। শিশু সুফিয়া কামালের অন্তরে বেগম রোকেয়ার কথা ও কাজ বিশেষ জায়গা করে নিয়েছে। এমনকি বেগম সুফিয়া কামালের কাজকর্মে বেগম রোকেয়ার কাজের ছাপ বা প্রতিফলন পাওয়া যাওয়া।
ধীরে ধীরে সাহিত্যপাঠের পাশাপাশি বেগম সুফিয়া কামাল সাহিত্য লেখা শুরু করেন। ১৯২৬ সালে তাঁর প্রথম কবিতা “বাসন্তী” সে সময়ের প্রভাবশালী সামইয়িকী “সওগাতে” প্রকাশিত হয়।
ধীরে ধীরে চন্দ্রদ্বীপের বেগম সুফিয়া কামালের সাহত্যের দখল বাড়ছিলো। এর কিছু বছর পর তিনি যার কথায় কাজে উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন সেই বেগম রোকেয়া ১৯৩২ সালে মৃত্যুবরন করেন। বেগম সুফিয়া কামালের সাহিত্য ভান্ডারে ধীরে ধীরে যোগ হতে থাকলো কাব্য,গল্প,ভ্রমন কাহিনী ।
তাঁর কাব্যগ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য “সাঁঝের মায়া, মায়া কাজল , মন ও জীবন , উদাত্ত পৃথিবী, অভিযাত্রিক ইত্যাদি। উল্লেখযোগ্য গল্প “কেয়ার কাটা”। উল্লেখযোগ্য ভ্রমন কাহিনী “সোভিয়েতে দিনগুলি” । তাঁর লেখা স্মৃতিকথা “একাত্তরের ডায়েরি” । তাঁর আত্মজীবনীমূলক রচনা “একালে আমাদের কাল”.
শিশুদের জন্য তাঁর লেখা “ইতল বিতল” ও “নওল কিশোরের দরবারে” ।
চন্দ্রদ্বীপের নারীবাদী ও কবি প্রতিযশা কবি তাঁর সাহিত্যের সূচনা সম্পর্কে এভাবে বলেছেন,
“‘এমনি কোনো বর্ষণমুখর দিনে মুসলমান সাহিত্য পত্রিকায় প্রকাশিত কাজী নজরুল ইসলামের লেখা `হেনা` পড়ছিলাম বানান করে। প্রেম, বিরহ, মিলন এসবের মানে কি তখন বুঝি? তবু যে কী ভালো, কী ব্যথা লেগেছিল তা প্রকাশের ভাষা কি আজ আর আছে? গদ্য লেখার সেই নেশা। এরপর প্রবাসী পত্রিকায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা পড়তে পড়তে অদ্ভুত এক মোহগ্রস্ত ভাব এসে মনকে যে কোন্ অজানা রাজ্যে নিয়ে যেতো। এরপর দেখতাম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন, বেগম সারা তাইফুর লিখছেন। কবিতা লিখছেন বেগম মোতাহেরা বানু। মনে হলো ওরা লিখছেন আমিও কি লিখতে পারি না? শুরু হলো লেখা লেখা খেলা। কী গোপনে, কত কুণ্ঠায়, ভীষণ লজ্জার সেই হিজিবিজি লেখা ছড়া, গল্প। কিন্তু কোনোটাই কি মনের মতো হয়! কেউ জানবে, কেউ দেখে ফেলবে বলে ভয়ে ভাবনায় সে লেখা কত লুকিয়ে রেখে আবার দেখে দেখে নিজেই শরমে সংকুচিত হয়ে উঠি।”
রেফারেন্সঃ উইকিপিডিয়া